E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সিংড়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

২০১৭ আগস্ট ১৯ ১৯:৩৭:০৪
সিংড়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

নাটোর প্রতিনিধি : আত্রাই নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নাটোরের সিংড়ায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। এই নদীর পানি আরো বেড়ে সিংড়ায় বিপদ সীমার ৭২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ কারণে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। হুমকির পড়েছে কয়েকটি বাঁধ ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির-১ এর সিংড়া অফিস। বন্যা কবলিত অনেকেই বাড়ি ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। পৌরসভায় ৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সবচেয়ে মারাত্মক অবস্থা আমন ধানের। নতুন করে ৫ হাজার হেক্টর সহ মোট ৭ হাজার হেক্টর জমির ধান ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

গত শুক্রবার সাপের কামড়ে রোজিনা (২৫) নামে শেরকোলে একজনের মূত্যু হযেছে। সন্ধ্যায় নওদাপাড়া এলাকায় সিধাখালী নদীর বাধ ভেঙ্গে তেমুক নওদাপাড়া বিলের প্রায় ৮০০ বিঘা জমির ধান তলিয়ে গেছে। এছাড়া সিংড়া-টু-বলিয়াবাড়ি ৩ কিলোমিটার মূল পাকা সড়ক ডুবে (মাঝ খানে) যোগাযোগ বিছিন্ন হওয়ায় ওই এলাকার ১৫ গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার লোকের চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন এবং নাটোর সড়ক ও জনপদ বিভাগ বালির বস্তার বাঁধ দিয়ে রাস্তা রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

শনিবার বন্যার্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক চিত্রলেখা নাজনিন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম, উপজেলা চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম, ইউএনও মোঃ নাজমুল আহসান, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ ওহিদুর রহমান, সিংড়া পৌরসভার মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌস।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে সরকারী বরাদ্দকৃত ১ লাখ টাকা এবং ১০ মেট্রিক টন চাল বন্যার্তদের মাঝে বিতরন করেছেন, তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি। তিনি গত দুদিনে বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন এবং ত্রান বিতরন করেছেন। আরো বরাদ্দ চেয়ে পাঠানো হয়েছে।

সিংড়া পৌরসভার মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, আত্রাই নদীর পানি ভয়াবহ আকার ধারণ করায় সিংড়া পৌর শহরের বাজার এলাকার পানি নিষ্কাশনের ড্রেন দিয়ে উল্টো বাজারেই প্রবল বেগে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। এতে পৌর শহর ডুবে যাওয়ার আশংখা দেখা দিয়েছে। পৌরসভার প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দী ও দুই হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি সার্বক্ষনিক খোঁজ খবর নিচ্ছেন এবং ত্রান সামগ্রী বিতরন করছেন। ইতোমধ্য পৌরসভায় ৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। শতাধিক পরিবার সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন।

এছাড়া সিংড়ায় স্থাপিত পল্লী বিদুৎ সমিতির উপকেন্দ্রের চারিদিকে বন্যার পানি বাড়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হওয়ার আশংকা সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়দের আশংকা, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে যে কোন মুহুর্তে বিদ্যুত কেন্দ্রটিতে পানি ঢুকে কারিগরী এুটির কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে।

নাটোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ- বিভাগীয় প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম জানান, সিংড়া উপজেলার বলিয়াবাড়ি এলাকায় ৩ কি: মি: সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তিনি সার্বক্ষণিক ওই রাস্তা রক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। আর তাজপুর, বলিয়াবাড়ি, ভাগনগরকান্দিসহ বেশ কয়েকটি বাঁধ হুমকির মধ্যে রয়েছে বলে তিনি জানান।

নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার জানান, গতকাল শনিবার সকাল থেকে আত্রাই নদীতে বিপদ সীমার ৭২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৬/৭ টি স্থান হুমকির মধ্যে রয়েছে। সেখানে বালির বস্তা দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। আপাতত এসব ভাঙ্গার কোন সম্ভাবনা নেই বলে তিনি জানান।

উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ সাজ্জাত হোসেন জানান, বন্যার পানিতে এপর্যন্ত ৩ হাজার ৪০০ হেক্টর জমির রোপা ও বোনা আমন ধান সম্পূর্ণ ভাবে নিমজ্জিত হয়েছে। আর আংশিক নিমজ্জিত হয়েছে ৩ হাজার ৮০০ হেক্টর জমির ধান। তিনি বলেন, সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হওয়া ধান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে দুই একদিনের মধ্যে পানি নেমে গেলে ক্ষতি হবে না আর আংশিক ডুবে যাওয়া ধানের কোন ক্ষতি হবে না।

সিংড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নাজমুল আহসান জানান, বর্তমানে আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার ৭০ সে:মি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহম্মেদ পলক এমপি মহোদয়ের নির্দেশনা মোতাবেক ৪’শ পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এছাড়া আত্রাই নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে প্রায় ২৬ টি সুতিজাল পানি প্রবাহে বাধাগ্রস্থ করছে। সেগুলো অপসারনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।

অপরদিকে বারনই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নলডাঙ্গা উপজেলার কয়েকটি নদী তীরবর্তী গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ওই এলাকায় ২৩৫ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে। এরমধ্যে আউশ আংশিক ৫০ হেক্টর, সম্পূর্ন ২০ হেক্টর নিমজ্জিত। আর রোপা আমন আংশিক ৬৫ হেক্টর ও সম্পূর্ন ১০০ হেক্টর পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো হচ্ছে শরকুতিয়া, পুর্ব মাধনগর, পশ্চিম মাধনগর,ইয়ারপুর, পাটুল, হাপানিয়া, কালিগঞ্জ, আচঁড়াখালি, খাজুরা, চাঁদপুর, কোঁচকুড়ি এলাকা। নলডাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিসার আমিরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

(এলএইচ/এএস/আগস্ট ১৯, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test