E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বিশুদ্ধ পানি-খাদ্য সংকট

রাজারহাটে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও বানভাসিদের নানা ভোগান্তি

২০১৭ আগস্ট ২২ ১৪:৩৩:৩৮
রাজারহাটে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও বানভাসিদের নানা ভোগান্তি

প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) : কুড়িগ্রামের রাজারহাটে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরে সেখানকার মানুষ নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। নিন্মাঞ্চলগুলো এখনো প্লাবিত রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা ও উদ্ধার তৎপরতা চালাতে অনেক গৃহহীন পরিবার হিমসীম খাচ্ছে।

বন্যার সময় পানির স্রাতে রাস্তা-ঘাট, বাড়ীর উঠান ভেঙ্গে যায়। ফলে তারা বাইরে চলাফেরা করতে পারছে না। এখনো অনেক পাড়ায় নৌকা এবং কলাগাছের ভেলা তাদের যাতায়াতের সম্বল। বন্যার সময় অনেককাঁচা-পাকা রাস্তাঘাট, কালভার্ট,ব্রীজ ভেঙ্গে পড়েছে। সেই সব পথ দিয়ে চলাফেরা করা কঠিন হয়ে গেছে।

বানভাসি মানুষরা এখনো পঁচা দূর্গন্ধে বসবাস শুরু করেছে। যাদের ঘরবাড়ীর চিহৃ মাত্র নেই, তারা পুনরায় অন্যের কাছে সাহায্য সহযোগীতা নিয়ে তা নতুন করে নির্মাণের চেষ্টা চালাচ্ছে। আবার অনেকের বাড়ীতে বন্যার পানির ঘূর্ণিপাকে বিশাল বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সেগুলো পূরণ করে বসবাসের উপযোগী করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

উপজেলার ছিনাই, ঘড়িয়াডাঙ্গা, বিদ্যানন্দ ও নাজিমখান ইউনিয়নের প্রায় ৩০হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পরে। এদের মধ্যে অনেকের মাথা গুজার মতো ঠাঁই টুকু নেই। তারা এখনো খোলাকাশের নিচে পলিথিনের তাঁবু টাঙ্গিয়ে দিনাতিপাত করছেন। ওই এলাকায় সকলের অবস্থা দূর্বিসহ হওয়ায় খেটে খাওয়া মানুষরা এখনো কর্মহীন রয়েছে। ফলে ওই এলাকাগুলেতে অভাব প্রকর আকার ধারন করেছে। সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ দূর্যোগপূর্ণ এলাকা রাজারহাট উপজেলার পাঙ্গা হাই স্কুল এ্যান্ড কলেজ মাঠে এসে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে পর্যাপ্ত ত্রান ও গৃহহীনদের পূণর্বাসনের নির্দেশ দিলেও এ কার্যক্রম খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। এটি সময়ের ব্যাপার বলে দাবী করেছে প্রশাসন। তবে ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

ওই এলাকাগুলোতে এখনো হারানো আর হারানোর কান্নার রোল শোনা যায়। এলাকায় বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে। দূর্গত মানুষরা দূর্গন্ধ যুক্ত নলকূপের পানি বাধ্য হয়েই পান করছে। ফলে পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। এঅবস্থা এখন রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ঘড়িয়ালডাঙ্গা, বিদ্যানন্দ ও নাজিমখান ইউনিয়নের বানভাসীদের। সেই সাথে গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যদুর্গত এলাকার গরু-ছাগল-ভেড়ার খাদ্য নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সেখানে গো-খাদ্য মিলছে না।

বন্যাকবলিত এলাকার ১৩০ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা ও ৪০কিলোমিটার পাকা রাস্তা বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে যাতায়াতে ভোগান্তির সৃষ্টি হয়। ওই সব এলাকায় ৩০টি কালভার্ট ও ৮টি ব্রীজ ভেঙ্গে যায়। এছাড়া বন্যায় সাড়ে ৩হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন নিমর্জ্জিত হয়। এর মধ্যে বীজতলা ও সবজি জমি নষ্ট হয় ১’শ হেক্টর। ওই এলাকার কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু হলেও বিধ্বস্ত প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।

বন্যাকবলিত এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ ১হাজার পরিবারকে ১০ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, আধা কেজি মুড়ি, চিনি, লবন, ১২টি মোমবাতি ও ১২টি দিয়াশলাই প্রধানমন্ত্রীর আগমনের দিন বিতরন করা হয়। এছাড়া ৭০মেট্রিক টন চাল ত্রান বানভাসীদের মাঝে বিতরন করা হয়েছে। ২লাখ ৩০ হাজার টাকার শুকনা খাবার বন্যাকবলিত মানুষের মাঝে দেয়া হয়েছে বলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস জানিয়েছে।

এছাড়া বন্যাকবলিত এলাকায় আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয়পার্টিসহ বিভিন্ন এনজিও, বিভিন্ন আত্মসামাজিক-সাংষ্কৃতিক সংগঠন ত্রান কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এরপরও খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে বন্যাদুর্গত এলাকায় বলে দাবি করেছেন বানভাসিরা। সবমিলে বন্যাকবলিত এলাকায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট থেকে বাঁচাতে প্রচুর পরিমানে পানিয় খাদ্য ও চিকিৎসাসেবা সরবরাহ নিশ্চিত জরুরী হয়ে পড়েছে।

এ ব্যাপারে রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, ত্রান বিতরনের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।



(পিএমএস/এসপি/আগস্ট ২২, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test