E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নারায়ণগঞ্জে  জেএমবির ৩ সক্রিয় সদস্য গ্রেফতার

২০১৭ আগস্ট ২২ ১৮:২১:৫০
নারায়ণগঞ্জে  জেএমবির ৩ সক্রিয় সদস্য গ্রেফতার

মোহাম্মদ নেয়ামত উল্লাহ, নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জের বন্দর ও রূপগঞ্জ উপজেলা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের তিন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১১। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে অস্ত্র, গুলি ও জঙ্গিবাদি বই লিফলেট। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত ওই অভিযান শেষে দুপুরে র‌্যাব-১১ সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
গ্রেফতারকৃতরা হলো, ঢাকা কেরানীগঞ্জ এলাকার আবদুর রহমান ওরফে সুফিয়ান ওরফে রুবেল (২৭), চাঁদপুর শাহরাস্তি উপজেলার মোহাম্মদ ইমাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু উমামা আল বাহিরী (২৬) ও ময়মনসিংহ সদর উপজেলার সৈয়দ রায়হান আহমদ ওরফে নাসির (৩০)।

র‌্যাব-১১ ইনচার্জ লে. কর্নেল কামরুল হাসান জানান, সোমবার ২১ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টা হতে ২২ আগস্ট মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ওই অভিযান চলে। অভিযানের শুরুতে বন্দরের লাঙ্গলবন্দ এলাকায় জঙ্গিরা সমবেত হয়েছে খবরে সেখানে প্রথম অভিযান চালানো হয়। ওই সময়ে র‌্যাব সদস্যরা আবদুর রহমান ও ইমাম হোসেনকে গ্রেফতার করে। পরে তাদের দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী রূপগঞ্জের তারাব এলাকা থেকে নাসিরকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। তিনজনের কাছ থেকে ৩ রাউন্ড গুলিভর্তি একটি বিদেশী পিস্তল, একটি চাপাতি, একটি চাকু ও বেশ কিছু জঙ্গিবাদী বই লিফলেট উদ্ধার করা হয়েছে।

র‌্যাব আরো জানান, গ্রেফতারকৃতরা জঙ্গি বিভিন্ন মহাসড়ক ও নারায়ণগঞ্জে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করেছিল। এ ব্যাপারে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

উল্লেখ্য যে, গ্রেফতারকৃত আবদুর রহমান ওরফে রুবেল ওরফে সুফিয়ান (৩২) এবং মোহাম্মদ ইমাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে রফিক ওরফে আবু উমামা আল বাহিরী (২৭) এর বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে দুইটি করে মামলা রয়েছে।

যেভাবে জঙ্গিসংগঠনে জড়ায় রহমান নাফিস ও রাশেদ
নারায়ণগঞ্জের বন্দর ও রূপগঞ্জ উপজেলা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের তিন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১১। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে অস্ত্র গুলি ও জঙ্গিবাদি বই লিফলেট। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত ওই অভিযান শেষে দুপুরে র‌্যাব-১১ সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। গ্রেফতারের পরে র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের জঙ্গীবাদে জড়ানোর কারণ জানিয়েছে ওই তিন জেএমবি সদস্য। র‌্যাবের কাছে দেয়া তথ্যে তারা জানিয়েছে কীভাবে তারা এ সংগঠনে জড়িয়ে পড়ল।

আবদুর রহমান ওরফে রুবেল ওরফে সুফিয়ান :
র‌্যাব জানায়, আবদুর রহমান ওরফে রুবেল ওরফে সুফিয়ান (৩২) ২০০১ সালে লালবাগের একটি স্কুল হইতে ৮ম শ্রেনী পাশ করে। এরপর ২০১০ সাল পর্যন্ত সে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় কলকারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকুরীসহ ক্ষুদ্র ব্যবসা করে আসছিল। ২০১০ সালের পর ঢাকা শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরীরর পাশাপাশি বিভিন্ন মাদরাসা ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে খন্ডকালীন ও নৈশকালীন কোর্সে ভর্তি হয়ে আরবী ভাষার কলা কৌশল রপ্ত করে। ২০১৩ সালে জেএমবির শুরা সদস্য ও শীর্ষ স্থানীয় নেতা ইমরান আহমেদ এর মালিকানাধীন জীম টেক্স নামক পোষাক কারখানায় চাকুরী শুরু করে। এরপর ইমরান আহমেদের অনুপ্রেরণা এবং পৃষ্ঠপোষকতায় চাকুরী হতে ছুটি নিয়ে ২০১৪ সাল হতে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ঢাকার রামপুরা এবং বনশ্রী এলাকায় বিভিন্ন ধর্মীয় শিক্ষকের কাছে আরবী শিক্ষা গ্রহণ করে। সর্বশেষ ২০১৭ সালে যাত্রাবাড়ির একটি মাদ্রাসা থেকে আরবীশিক্ষা শেষ করে। সে বেশ কিছুদিন যাবৎ বিভিন্ন বাসায় আরবী পড়ানোর কাজ করছিল বলে জানিয়েছে। সে ২০০২ সালে তানজিম আল ইসলাম নামক মৌলবাদী সংগঠনের মাধ্যমে জিহাদের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং ২০০৪ সালে তার পিতার ঘনিষ্ঠ বন্ধু জনৈক দাউদ এর মাধ্যমে হানাফি মতাদর্শ থেকে সালাফি মতাদর্শে মতান্তরিত হয়। ২০০৬ সালে জনৈক এক ‘স্যার’ এর মাধ্যমে সে জেএমবিতে যোগদান করে দাওয়াতী কাজ করতে থাকে। আবদুর রহমান ওরফে রুবেল ওরফে সুফিয়ান জসিম উদ্দিন রাহমানির জঙ্গী সংক্রান্ত কর্মকান্ডের একান্ত সহকারী হিসেবে প্রায় ৪ বছর কাজ করেছিল এবং জসিম উদ্দিন রাহমানি গ্রেফতার হওয়ার পর সে মাওলানা আব্দুল হাকিম এর সহকারী হিসেবে প্রায় এক বছর কাজ করেছে। মূলত মাওলানা আব্দুল হাকিম গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে ইমরান আহমেদ এর ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ করে আসছিল। আবদুর রহমান ওরফে রুবেল ওরফে সুফিয়ান ২০০৬ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রায় ১১ বছর মূল জেএমবির সদস্য হয়ে কাজ করে জেএমবির সদস্য সংগ্রহ করেছে। পরবর্তীতে সে ২০১৬ সালে তার গুরু কথিত ‘স্যার’ এর মাধ্যমে জেএমবির (সারোয়ার-তামীম) গ্রুপে যোগদান করে দাওয়াতী শাখা থেকে সামরিক শাখায় আত্মপ্রকাশ করে। সে ইতিপূর্বে র‌্যাব-১১ কর্তৃক গ্রেফতারকৃত শুরা সদস্য ইমরান আহমেদ এর জন্য অস্ত্র সংগ্রহ করার কাজ হাতে নিয়েছিল।

সৈয়দ রায়হানুল আহসান ওরফে নাফিস :
সৈয়দ রায়হানুল আহসান ওরফে নাফিস ২০০০ সালে গাজীপুরের একটি স্কুল হতে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে এসএসসি এবং ২০১৬ সালে ঢাকার একটি সরকারী কলেজ হতে ডিগ্রী পাশ করে। সে ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়ে সন্ধ্যাকালীন মাষ্টার্স এ অধ্যায়নরত। সৈয়দ রায়হানুল আহসান ওরফে নাফিস
২০০৫ সালে তার নিজ জেলা ময়মনসিংহে জেএমবিতে যোগদান করে কাজ করতে থাকে। পরবর্তীতে ২০০৬ সালে ময়মনসিংহ জেলার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের কারনে সে আত্মগোপনে চলে যায় এবং ঢাকার নিউমার্কেট এলাকায় ছদ¥বেশে আশ্রয় নেয়। সেখানে একটি কম্পিউটার কম্পোজের দোকানে কাজ করা অবস্থায় অপর জেএমবি সদস্য গ্রেফতারকৃত আব্দুর রহমান ওরফে রুবেল ওরফে সুফিয়ান এর সাথে তার পরিচয় হয়। এরপর আব্দুর রহমানের মাধ্যমে সে জসিম উদ্দিন রাহমানির নিকট যাতায়াত শুরু করে। পরবর্তীতে ২০০৭ সালে জনৈক ‘স্যার’ এর মাধ্যমে পুনরায় জেএমবিতে সক্রিয় হয় এবং দাওয়াতী কাজ শুরু করে। কম্পিউটারের উপর দক্ষতার কারনে জেএমবির শীর্ষ পর্যায়ের অনেক সদস্যদের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পায়। ২০০৭-২০১৫ সাল পর্যন্ত সে মূল জেএমবির হয়ে ঢাকা অঞ্চলের দাওয়াতী ও সাংগঠনিক কাজ পরিচালনা করত। এর মধ্যে ২০০৭-২০১০ সাল পর্যন্ত তৎকালীন জেএমবির আমীর মাওলানা সাইদুর রহমান এর নেতৃত্বে কাজ করেছে। ২০১৫ সালের শেষ দিকে সে কথিত ‘স্যার’ এর মাধ্যমে জেএমবির (সারোয়ার-তামীম) গ্রুপে যোগদান করে এবং চাকুরীর অন্তরালে জঙ্গী সংগঠনটির সাংগঠনিক কাজ করতে থাকে।
সে নিজ ঠিকানা গোপন করে বাগেরহাট জেলার ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০০৮ সাল থেকে অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকুরী করে আসছে। সে দীর্ঘদিন যাবৎ এই চাকুরীর পাশাপাশি মূল জেএমবির ও পরবর্তীতে জেএমবি (সারোয়ার-তামীম) গ্রুপের দাওয়াতী, আইটি এবং গবেষনা শাখার একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে কাজ করে আসছিল।

মোহাম্মদ ইমাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে রফিক ওরফে আবু উমামা আল বাহিরী :
মোহাম্মদ ইমাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে রফিক ওরফে আবু উমামা আল বাহিরী (২৭) ২০০৬ সালে হাজীগঞ্জ পাইলট হাই স্কুল হইতে এসএসসি, ২০০৮ সালে তেজগাঁও কলেজ ঢাকা হইতে এইচএসসি এবং ২০১৫ সালে ঢাকার একটি সনামধন্য বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক পাশ করে একটি আইটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে থাকে। ২০১৩ সালে জনৈক মোঃ তাওহীদুল ইসলাম ওরফে আবু সাদ এর সাথে তার পরিচয় হয় এবং যার মাধ্যমে সে হুজির পক্ষে কিছুদিন দাওয়াতী কাজ করে। পরবর্তীতে জনৈক সাজিদ ওরফে লাল ভাই এর সাথে পরিচয়ের সূত্রে জেএমবির সারোয়ার-তামীম গ্রুপে যোগদান করে। রাশেদ ওরফে আবু উমামা ইতিপূর্বে র‌্যাব-১১ কর্তৃক গ্রেফতারকৃত জেএমবির (সারোয়ার-তামীম গ্রুপের) শরীয়াহ বোর্ডের প্রধান শায়েখ মামুনের সাথে ডেমরার মাদ্রাসায় নিয়মিত সাক্ষাত করত এবং সেখান থেকে হাতে লেখা জঙ্গীবাদী নোট নিয়ে কম্পিউটার কম্পোজ করে দিত বলে স্বীকার করেছে। এছাড়া সে ইতিপূর্বে গ্রেফতারকৃত শুরা সদস্য ইমরান আহমেদের বাসায় প্রায়ই অবস্থান ও গোপন বৈঠক করত এবং জঙ্গী হামলা সংক্রান্ত বিভিন্ন কলা-কৌশল ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে অন্য সদস্যদের মাঝে প্রচারের কাজ করত। রাশেদ এর ছাত্র হওয়ার কারনে সংগঠনে তার অনেক গুরুত্ব ছিল। তার বেশ কিছু সহযোগী গ্রেফতার হওয়ার পর গত জুন মাসের প্রথম দিকে সে আত্মগোপনে চলে যায় বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।

(এমএনইউ/এএস/আগস্ট ২২, ২০১৭)


পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test