E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শরীয়তপুর জেলা আওয়ামীলীগের প্রস্তাবিত পূর্নাঙ্গ কমিটিতে বিতর্কিতদের ভীড়ে ত্যাগী-পরীক্ষিতরা উপেক্ষিত

২০১৭ আগস্ট ২৩ ১৯:২৬:৪২
শরীয়তপুর জেলা আওয়ামীলীগের প্রস্তাবিত পূর্নাঙ্গ কমিটিতে বিতর্কিতদের ভীড়ে ত্যাগী-পরীক্ষিতরা উপেক্ষিত

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : বিতর্কিত-হাইব্রীডদের নিয়ে গঠিত শরীয়তপুর জেলা আওয়ামীলীগের প্রস্তাবিত পূর্নাঙ্গ কমিটির অনুমোদ না দিতে দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লিখিত অভিযোগ করে আবেদন করেছেন জেলার তিনজন সাংসদ সহ ৩০ সিনিয়র নেতা। আর এ বিষয়ে অভিযোগ প্রদানকারিরা জানান, দীর্ঘ দিনের ত্যাগী, পরীক্ষিত, দুর্দিনে দলের জন্য কাজ করা লোকদের বাদ দিয়ে দল থেকে বহিস্কৃত, বিভিন্ন  হত্যা মামলার আসামী, দুর্দিনে দলের সাথে ঘাতকতাকারী, প্রবাসী দ্বৈত নাগরিক এমনকি কোন দিনও আওয়ামী রাজনীতির সাথে জরিত ছিলেন না এমন  লোকদের নিয়ে কমিটি করায় তারা এ আপত্তি জানান।

শরীয়তপুর জেলা আওয়ামীলীগ সূত্রে জানা গেছ, ২০০৩ সালে শরীয়তপুর জেলা আওয়ামীলীগের কমিটি গঠনের দীর্ঘ ১৩ বছর পর ২০১৬ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত হয় জেলা আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। সেদিন দলের তৎকালিন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশ্রাফুল ইসলাম একই গ্রামের দুই ব্যক্তির নাম সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ঘোষনা করেন। এর প্রায় দেড় বছর পর গত ১২ জুলাই ৭৫ সদস্যের পূর্নাঙ্গ কমিটি দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার হাতে জমা দেন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ছাবেদুর রহমান খোকা শিকদার ও সাধারণ সম্পাদক অনল কুমার দে। দলের তিনজন সংসদ সদস্য, বিভিন্ন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভা কমিটির নেতৃবৃন্দ ও পৌর মেয়রসহ অধিকাংশদের আড়ালে রেখে, কারো সাথে তেমন সমন্বয় না করে, মুষ্টিমেয় কিছু নেতার সাথে শলা পরামর্শ করে একটি পকেট কমিটি গঠন করে সভানেত্রীর কাছে জমা দেয়ার খবর জানতে পেরে ফুঁসে উঠেন জেলার তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও। তারা তাৎক্ষনিকভাবে এর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ১৩ জুলাই দলীয় সভানেত্রী বরাবরে কমিটি অনুমোদন না দেয়ার দাবিতে ৩০ নেতার স্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগপত্র দায়ের করেন।

এতে স্বাক্ষর করেন, শরীয়তপুর-২আসন থেকে ৭ বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য সাবেক ডেপুটি স্পীকার কর্নেল (অব:) শওকত আলী, শরীয়তপুর-৩ আসনের সাংসদ জাতীয় নেতা মরহুম আব্দুর রাজ্জাকের জ্যেষ্ঠ পূত্র নাহিম রাজ্জাক, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য ইকবাল হোসেন অপু, সাবেক সংসদ সদস্য মাষ্টার মজিবুর রহমান, সংরক্ষিত আসনের সাংসদ এ্যাডভোকেট নাভানা আক্তার, শরীয়তপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাশেম তপাদার, জাজিরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোবারক আলী শিকদার, ডামুড্যা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর মাঝি, শরীয়তপুর পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম কোতোয়াল, গোসাইরহাট উপজেলা আ‘লীগের সভাপতি শাহজাহান শিকদার, ডামুড্যা উপজেলা আ‘লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বাবলু শিকদার, জেলা আ‘লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন তালুকদারসহ অনেক প্রবীন ও তরুণ নেতা। তারা জানিয়েছেন, বিকর্তিত লোকদের নিয়ে গঠিত কমিটি যদি কেন্দ্র থেকে অনুমোদন দেয়া হয় তাহলে দলের দীর্ঘ দিনের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতারা ঘরে বসে যাবে। আর এর প্রভাব পরবে আগামী একাদশতম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। তারা এই কমিটি অনুমোদন না দিতে কেন্দ্রীয় সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদককে জোর অনুরোধ জানিয়েছেন।

শরীয়তপুরের প্রবীন কয়েকজন আওয়ামীলীগ নেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, জেলা আাওয়ামীলীগের সভাপতি ছাবেদুর রহমান খোকা শিকদার বিভিন্ন উপায়ে প্রভাবিত হয়ে বিতর্কিত এই সব লোকদের কমিটির গুরুত্বপূর্ন পদে নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা করছেন। তারা জানান, খোকা শিকদার বিগত ৩ যুগ ধরে শরীয়তপুরের আওয়ামীলীগ-যুবলীগ রাজনীতির সাথে জরিত ছিলেন বটে, কিন্তু কখনোই তিনি দলের দূর্দিনে কোন ভূমিকা রাখেননি। ঢাকায় থেকে আয়েশী হালতে চলাচল করতেই অভ্যস্ত খোকা শিকদার। স্বল্প শিক্ষিত খোকা শিকদারকে কেউ কোন দিন দেখেননি আনোদলন, সংগ্রাম, হরতাল, পিকেটিং এ শরীয়তপুরের রাস্তায় নেমে একদিন কোন স্লোগান দিতে। তিনি দলের পেছনে কোনদিন ১০টি পয়সা খরচ করেছেন বলেও কেউ স্বাক্ষী দিতে পারবেন না। নিজে কোন মামলা মোকদ্দার আসামী হওয়াতো দুরের কথা, বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করতে গিয়ে জেল-জুলুম-হুলিয়া মাথায় নিয়ে মামলা-হামলা-কারাবাসকারি কোন কর্মীকে ডেকে নিয়ে এক কাপ চা‘ও কোন দিন পান করাননি এই খোকা শিকদার। দলের দুঃসময়ের প্রবীন নেতারা মনে করছেন, বিনা শ্রমে এত পুরুস্কার পাওয়া খোকা শিকদারের এখন আত্মীয়, হাইব্রীড আর বিতর্কিত-বহিস্কৃতদের বাইরে ত্যাগী লোকদের দলে রাখাতো তার জন্য নীতি বিরোধী।

প্রস্তাবিত কমিটির বিতর্কিত সদস্যরা হলেন :

১ : আবুল কালাম সামসুদ্দিন
আবুল কালাম সামসুদ্দিন দীর্ঘ দিন ডামুড্যা উপজেলার সিধলকুড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ১৯৯৩ সালের পর থেকে টানা ১৪ বছর ডামুড্যা উপজেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এর পর ২০১৫ সালে ডামুড্যা উপজেলা আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা হিসেবে দল পরিবর্তন করেন। বর্তমানে তাকে জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি হিসেবে স্থান দেয়া হয়েছে।

২ : হাবিবুর রহমান শিকদার
হাবিবুর রহমান শিকদার একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ইতিপূর্বে তিনি ভেদরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সখিপুর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বশেষ তিনি ২০০৩-২০১৪ সাল পর্যন্ত শরীয়তপুর জেলা কমিটির সদস্য ছিলেন। ২০১৪ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভেদেরগঞ্জ উপজেলায় দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে দলের বিরুদ্ধে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দিতা করার অপরাধে ২০১৪ সালের ০৯ ফেব্রুয়ারী তাকে দলের সকল পদ থেকে বহিস্কার করা হয়। বর্তমান কমিটিতে তাকে দলীয় গঠনতান্ত্রিক রীতি ভঙ্গ করে জেলা কমিটির সহ-সভাপতি পদে অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে।

৩ : ফজলুল হক ঢালী
ফজলুল হক ঢালী একাধারে গোসাইরহাট উপজেলা আওয়ামলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৪ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে গোসাইরহাট উপজেলায় দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে দলের বিরুদ্ধে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দিতা করার অপরাধে ২০১৪ সালের ০৯ ফেব্রুয়ারী তাকে দলের সকল পদ থেকে বহিস্কার করা হয়। বর্তমান কমিটিতে তাকেও গঠনতন্ত্র পরিপন্থী উপায়ে জেলা কমিটির সহ-সভাপতি পদে অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে।

৪ : ইদ্রিস ফরাজী
ইদ্রিস ফরাজী ইতালী প্রবাসী। তার বাড়ি শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার সেনেরচরে। তিনি কোন দিন আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জরিত ছিলেননা। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামীলীগ প্রার্থীর বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হেমাতে উল্লাহ আওরঙ্গের জন্য ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। কথিত রয়েছে ২০০২ সালের পর থেকে তারেক রহমানের ঘনিষ্ট বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুন (খাম্বা মামুন)এর সাথে তার ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল। বাংলাদেশ থেকে আওয়ামীলীগের কিছু প্রভাবশালী নেতার হস্তক্ষেপে ২০১১ সালে ইতালী আওয়ামীলীগের কনিষ্টতম (৭১ নং) সদস্য হন। এরপর ২০১৬ সালে একই সূত্রে ইতালী আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১০ সালের পূর্বে বাংলাদেশে তিনি বা তার পরিবারের কেউ আওয়ামী রাজনীতির সাথে জরিত ছিলেন না। অভিযোগ রয়েছে বিপুল পরিমানের অর্থের বিনিময়ে তাকে বর্তমান জেলা কমিটিতে সহ-সভাপতি করা হয়েছে ।

৫ : সামসুল হক খান
সামসুল হক খান বীর মুক্তিযোদ্ধা। জাজিরা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার। ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিরোধী প্রার্থী হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গকে বিজয়ী করতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখেন। স্বাধীনতার পরে অতিবিপ্লবী সর্বহারা পার্টির সাথে জরিত থকার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। ১৯৭৪ সালে জাজিরা লাউখোলা হাটে দুই আওয়ামীলীগ কর্মীকে দিন দুপুরে গুলি করে সর্বহারা পার্টির স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। সেই হত্যাকারিদের সাথে তিনিও থাকতে পারেন বলে জানা গেছে। ১৯৭৫ সালের পরে বিএনপির রাজনীতির সমর্থক ছিলেন জনাব খান। যখন যে দল ক্ষমতায় যায় তখন তাদের সাথে তাল মিলাতে সারা জীবন অভ্যস্ত তিনি। এক সময়ে সুমী প্রিন্টিং প্রেসের কর্মচারি ছিলেন। সেখান থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনিও একটি প্রেসের মালিক হন। রমনার সাবেক কমিশনার বিএনপি নেতা চৌধুরী আলম ও মির্জা খোকনের সাথে তার এক সময়ে ঘনিষ্ট যোগাযোগ ছিল। জাজিরা উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য পদ থেকে সরাসরি তাকে বর্তমান কমিটিতে অনেক বড় পদন্নোতি প্রদান করে সহ-সভাপতি করা হয়েছে।

৬ : এম এ সাত্তার খান
এম এ সাত্তার খান বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার। এক সময়ে জেলা জেলা যুবলীগের সভাপতি ও আওয়ামীলীগের সদস্য ছিলেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে কঠিন অবস্থানে থেকে বিরোধী প্রার্থী হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গকে সাংসদ নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখায় দল থেকে বহিস্কার হন। তিনি স্বাধীনতার পর থেকেই চট্টগ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস এবং ব্যবসা করেন। তাকে এই কমিটিতে সহ-সভাপতি নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

৭ : নুরুল আমিন কোতোয়াল
১৯৯১ সালে শরীয়তপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ৯৩ সালে শরীয়তপুর সরকারি কলেজের ভিপি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে ডিভি লটারী বিজয়ী হয়ে আমেরিকা চলে যান। দলের দূর্দিনে দীর্ঘ সময় প্রবাসে কাটান। সেখানে পরিবার পরিজন নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস ও ব্যবসা বানিজ্য করেন। ২০০৯ সালে দল ক্ষমতায় গেলে ১০ সালের পর দেশে এসে রাজনীতিতে স্বক্রীয় হন। মাঝে মধ্যে ইউএসএ আসা যাওয়া করেন। তাকে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের পদ দেয়া হয়েছে।

৮ : এস এম আমিনুল ইসলাম রতন
আমিনুল ইসলাম রতন ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্র্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিরোধী প্রার্থী হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গের পক্ষে বিশাল ভূমিকা রাখেন। তিনি তার নিজ এলাকার তিনটি হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান আসামী। তাকে এই কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়েছে।

৯ : আব্দুর রাজ্জাক পিন্টু
আব্দুর রাজ্জাক পিন্টু ডামুড্যা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্থানীয় ধানকাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান থাকাবস্থায় ২০১৪ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ডামুড্যা উপজেলায় দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে দলের বিরুদ্ধে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দিতা করার অপরাধে ২০১৪ সালের ০৯ ফেব্রুয়ারী তাকে দলের সকল পদ থেকে বহিস্কার করা হয়। বর্তমান কমিটিতে তাকে দলীয় রীতি ভঙ্গ করে জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক পদে অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে।

১০ : জিয়াউর রহমান আহাদ
জিয়াউর রহমান আহাদ একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তিনি বে ট্যানারিজ, বে ইম্পেরিয়াম সহ বে গ্রুপের পরিচালক। ছাত্রজীবনে কোন দিনও একবার জয় বাংলা স্লোগান মুখে আনেননি, রাস্তায় কোন মিছিল করেননি। কোন দিন কোন রাজনীতির সাথে এমনকি আওয়ামী রাজনীতির সাথে জরিত ছিলেন না। জেলা সভাপতির নিকটাত্মীয় হওয়ায় তাকে বর্তমান কমিটির কোষাধক্ষ করা হয়েছে।

১১ : খবিরুজ্জামান বাচ্চু
খবিরুজ্জামান বাচ্চু পারিবারিক কিংবা ব্যক্তিগত সূত্রে কোন দিন আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জরিত ছিলেন না। এক সময় সুরেশ্বর-ঢাকা রুটে লঞ্চের খালাসী ও আনসারের চাকুরী করায় তাকে স্থানীয়ভাবে রাইফেল বাচ্চু বলা হয়। তাকে এই কমিটিতে ত্রান ও সমাজ কল্যান বিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে।

১২ : নাসির মাহমুদ
নাসির মাহমুদ শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য বি এম মোজাম্মেল হকের শ্যালক এবং তার সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত পি.এস। এর আগে কোন দিনও ছাত্রলীগ, যুবলীগ বা আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে তিনি জরিত ছিলেন না। তাকে জেলা কমিটিতে বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে।

১৩ : সঞ্জিব কুমার নাগ
সঞ্জিব কুমার নাগ একজন ক্রীড়া সংগঠক ও পৌরসভার কাউন্সিলর। তিনি ইতিপূর্বে কখনো ছাত্রলীগ, যুবলীগ বা আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জরিত ছিলেন না। তাকে যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে।

১৪ : মজিবুর রহমান খোকন
মজিবুর রহমান খোকন একজন ইউপি মেম্বার ও উপজেলা আওয়ামীলীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক। ২০০৩ সালে ভেদেরগঞ্জের নারায়নপুরে এক ব্যবসায়িকে গুলি করে হত্যা করে তার কয়েক লক্ষ টাকা লুট করে নেয়ার মামলায় প্রধান আসামী করা হয়েছিল। এক সময় সর্বহারা পার্টির হয়ে পুলিশ ফাঁড়ির অস্ত্র লুটের মামলার আসামী হিসেবে পুলিশের হাতে আটক হয়ে জেল খেটেছেন। ২০০১ সালে দলের বিপক্ষে হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গের হয়ে নির্বাচন করেন। এই কমিটিতে তাকে কার্যকরী সদস্য করা হয়েছে।

১৫ : তনাই মোল্যা
এক সময় জাজিরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সেনেরচর ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ১৯৯৬ সালে সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর-১ আসন থেকে জাতীয় নেতা আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাইক প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে দলের অনেক ক্ষতি করেছিলেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গের পক্ষে অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেন এবং নৌকার পরাজয়ে বর্ননাতীত ভূমিকা রাখেন। তাকে এই কমিটির সিনিয়র সদস্য করা হয়েছে।

১৬ : জাকির হোসেন দুলাল
জাকির হোসেন দুলাল বর্তমান জেলা পরিষদের সদস্য । গোসাইরহাট উপজেলা যুবলীগের সভাপতি থাকাবস্থায় দুইবার পার্টি থেকে তাকে বহিস্কার করা হয়। প্রথমবার জাতীয় নেতা আব্দুর রাজ্জাকের একটি জনসভা মঞ্চে হামলা করে ভাংচুর করার অপরাধে তাকে বহিস্কার করা হয়। পরবর্তিতে সাধারণ ক্ষমা করে দলে ফিরিয়ে আনা হলে পূনরায় ২০১৪ সালে গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করায় তাকে পূনরায় বহিস্কার করা হয়। জাকির হোসেন দুলাল একটি হত্যা মামলায় অভিযুক্ত। বর্তামান কমিটিতে তাকে কার্যকরী সদস্য করা হয়েছে।

১৭ : আবুল মুনসুর আজাদ শামীম
আবুল মুনসুর আজাদ শামীম ডামুড্যা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি থাকাকালিন ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় তাকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়। তাকে বর্তমান জেলা আওয়ামীলীগের কমিটিতে কার্যকরি সদস্য করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এস, এম আমিনুল ইসলাম রতন বলেন, আমি জাজিরা উপজেলা ছাত্রলীগ, জেলা ছাত্রলীগ, দুই বার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতা ছিলাম। সর্বশেষ ২০১৪ সালে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক নির্বাচিত হই। ২০০১ সালে অনেকেই হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গের নির্বাচন করেছিল। তারা আবার জেলা-উজেলায় বড় বড় পদও পেয়েছেন। আমার এলাকার তিনটি হত্যা মামলায় আমাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জরানো হয়েছিল। এর একটির সাথেও আমি জরিত ছিলামনা। কারন, আমি হত্যার রাজনীতি করিনা।

আব্দুর রাজ্জাক পিন্টু বলেন, আমাদেরকে উপজেলা নির্বাচনের সময় স্থানীয় আওয়ামীলীগ বহিস্কারের ঘোষনা দিয়েছিল ঠিকই। কিন্তু সভানেত্রী শেখ হাসিনা গত সম্মেলনের সময় আমাদের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এখন আমি ডামুড্যা উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য এবং ১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছি।

শরীয়তপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অনল কুমার দে বলেন, আমার কাছে এই কমিটি সম্পর্কে কেউ কোন আপত্তি জানাননি। তবে ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে এমনকি এই কমিটিতে কোন বিতর্কিত লোকের স্থান হয়নি। আগামী দিনে এই কমিটি গতশিীলতা পাবে।

জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ছাবেদুর রহমান খোকা শিকদার বলেন, সকল পর্যায়ের নেতাদের সাথে আলোচনা এবং সমন্বয় করেই এ কমিটি দাখিল করা হয়েছে। তার দাবি, কোন দিন আওয়ামীলীগ করেননি এমন লোকদের তিনি কমিটিতে ঠাই দেননি। তবে এই আপত্তি, পদ বঞ্চিতদের মনের জ্বালা বলে জানানেল তিনি। তিনি আরো বলেন, এই কমিটিতে কোন নেতার কত জন লোক ঠাঁই পেয়েছে তা আমি অক্ষরে অক্ষরে বলে দিতে পারবো।

(কেএনআই/এএস/আগস্ট ২৩, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test