E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরায় অপমান সইতে না পেরে স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা

২০১৭ আগস্ট ২৬ ১৯:১০:০২
সাতক্ষীরায় অপমান সইতে না পেরে স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা


সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগে প্রাইভেট শিকক্ষের সঙ্গে ঘরের মধ্যে আটক রাখার পর শালিসে গালিগালাজ করে  ওই শিক্ষকের কাছে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা দাবি করার অপমান সহ্য করতে না পেরে নবম শ্রেণীর এক স্কুল ছাত্রী গলায় ওড়না জড়িয়ে গাছের ডালে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে। শনিবার ভোরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বল্লী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

মৃত স্কুল ছাত্রীর নাম রিমা খাতুন (১৫)। সে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বল্লী গ্রামের সাইকেল মিস্ত্রী জাকির আলী খাঁ’র মেয়ে ও বল্লী বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী।

বল্লী গ্রামের সাইকেল মিস্ত্রী জাকির আলী খাঁ’র স্ত্রী ফজিলা খাতুন জানান, তার মেয়ে রিমা খাতুন বল্লী মুজিবুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী। একমাত্র ছেলে রনি হাসান খুলনা সরকারি পলিটেকনিকের শেষ বর্ষের ছাত্র। সে ছাতিয়ানতলা গ্রামের আব্দুল বারীর ছেলে রেজাউল ইসলামের কাছে প্রাইভেট পড়তো। নাতনির আর্শিবাদ উপলক্ষে এক মাস আগে রিমাকে নিয়ে স্বামীসহ তিনি তালা উপজেলার বালিয়াদহ গ্রামে জামাতা মোঃ নাসিরউদ্দিনের বাড়িতে যান। সন্ধ্যার আগে রিমাকে বাড়িতে পাঠানো হয়। ঘরে রিমা একই থাকতো। ওইদিন গভীর রাতে তার চাচা শ্বশুর আনছার আলী খাঁ’র ছেলে আমতলা খানজাহান আলী দাখিল মাদ্রাসার নবম শ্রেণীর ছাত্র মহব্বত আলী (১৭) কৌশলে ঘরে ঢুকে রিমাকে ধর্ষনের চেষ্টা চালায়। একপর্যায়ে রিমার চিৎকারে মহব্বত পালিয়ে যায়। বিষয়টি তিনি চাচা শ্বশুর ও চাচী শ্বাশুড়িকে অবহহিত করেন। এতে চাচা শ্বশুর ও মহব্বত ক্ষুব্ধ ছিল।

ফজিলা খাতুন জানান, শুক্রবার সকালে তিনি স্বামীর সঙ্গে বড় জামাই মোঃ নাসির উদ্দিনের বাড়িতে যান। সন্ধ্যার পর প্রাইভেট শিক্ষক রেজাউল ইসলাম পড়ানোর জন্য তাদের বাড়িতে আসেন। পড়ানোর একপর্যায়ে আনছার খাঁ ও তার ছেলে মহব্বত ওই ঘরের দরজায় ছিকল তুলে দিয়ে মোবাইলে বিভিন্ন লোকজন জড়ো করে। একপর্যায়ে দু’জনের মধ্যে অনৈতকি সম্পর্কের অভিযোগ তুলে তাদেরকে মোবাইল ফোনে বাড়ি ফিরতে বলেন বল্লী ইউপি’র বর্তমান চেয়ারম্যান বজলুর রহমানের ভাইপো মুদি দোকানদার বেলাল হোসেন ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মিজানুর রহমান।। একইসাথে রেজাউলের বাবা ও মাকে আসার জন্য মোবাইলে খবর দেয় তারা। খবর পেয়ে তারা রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাড়ি ফেরেন।

রেজাউলের বাবা ছাতিয়ানতলা গ্রামের আব্দুল বারী, বড় ভাই হাফিজুল ইসলাম ও ঝাউডাঙা ইউপির সাবেক সদস্য শফিকুল ইসলামসহ কয়েকজন চলে আসেন তাদের বাড়িতে। এরপর চাচা শ্বশুর হযরত আলীর বাড়ির উঠানে শালিসি বৈঠক বসে।

তিনি আরো জানান, শালিসি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন গ্রামের আনছার আলী খাঁ, মিজানুর রহমান, বেলাল হোসেন, আব্দুল মজিদের ছেলে হাফিজুর রহমান, ছাতিয়ানতলা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম, আব্দুল বারী, তার ছেলে হাফিজুর রহমানসহ উভয়পক্ষের ১৪ জন।

শালিসে রিমা ও রেজাউলকে গালিগালাজ করা হয়। শালিসে প্রাইভেট শিক্ষক বিবাহিত তাই বিয়ের দেওয়ার বিষয়টি বাদ দিয়ে মেয়ের বিয়ের জন্য রেজাউলের বাবা আব্দুল বারীর কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন বেলাল হোসেন ও মিজানুর রহমান। একপর্যায়ে আগামি সোমবার অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মিজানুর রহমানের কাছে ১৫ হাজার টাকা দেওয়ার শর্তে রেজাউলকে ছেড়ে দেওয়া হয় তার স্বজনদের কাছে। মেয়েকে তার চাচী হযরত আলীর স্ত্রী শাহীদা বেগমের সঙ্গে ঘুমোতে বলা হয়। রাত সাড়ে তিনটার দিকে বিছানায় না পেয়ে শাহীদা বেগম বিষয়টি তাকে (ফজিলা) অবহিত করেন। একপর্যায়ে বাড়ির উঠানের একটি আমগাছের ডালে গলায় ওড়ান পেচিয়ে ডালের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় রিমাকে দেখতা পাওয়া যায়। শনিবার সকাল পৌনে ১০ টার দিকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বজলুর রহমান ও ইউপি সদস্য সামছুর রহমান ওড়না কেটে রিমার লাশ নীচে নামান । খবর পেয়ে পুলিশ দুপুর ১২টার দিকে রিমার লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

ফজিলা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, প্রতিশোধ নিতে আনছার খাঁ ও তার ছেলে মহব্বত পরিকল্পিতভাবে রেজাউল রিমাকে পড়ানোর সময় বাইরে থেকে ঘরের ছিকল তুলে দিয়ে লোকজন ডাকে। এরপর শালিসি বৈঠকে গালিগালাম ও ১৫ হাজার টাকা জরিমানার অপমান সহ্য করতে না পেরে রিমা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। তিনি তার মেয়ের মৃত্যুর জন্য আনছার খাঁ ও মহব্বতকে দায়ী করে দৃষ্নান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খাঁ বলেন, রেজাউল বল্লী স্কুলের পাশে একটি বাড়িতে কোচিং করায়। বাবা, মা ও ভাই বাড়িতে না থাকার সুযোগে রিমা ও রেজাউল শুক্রবার রাত আটটার দিকে ঘরের মধ্যে অনৈতিক কাজ করছিল বলে জানতে পেরে ঘরের ছিকল তুলে দেওয়া হয়। তার ছেলে মহব্বতের বিরুদ্ধে আনীত অভিাযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

প্রাইভেট শিক্ষক রেজাউল ইসলামের বড় ভাই হাফিজুল ইসলাম জানান, মিজানুর রহমান নামের এক ব্যবসায়ির মোবাইল পেয়ে তিনি তার বাবা ও স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্যকে নিয়ে শুক্রবার রাত ১০ টার দিকে বল্লী গ্রামের জাকির আলী খাঁ’র বাড়িতে যান। সেখানে এক শালিসি সভায় তার ভাই রেজাউলকে দোষী সাব্যস্ত করে পুলিশে না দেওয়ার শর্তে ১৫ হাজার টাকা দাবি করেন বেলাল হোসেন ও মিজানুর রহমান। এখনি টাকা দেওয়া সম্ভব নয় বললে সোমবার পর্যন্ত সময় দেন তারা। রাত ১১টার দিকে তারা সেখান থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন।

এ ব্যাপারে শনিবার বিকেল সোয়া চারটায় জানতে চাইলে শালিসে থাকা অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মিজানুর রহমানের মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

তবে শনিবার বিকেল সোয়া চারটায় এ প্রতিবেদক মুদি ব্যবসায়ি বেলাল হোসেনের মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে বলেন, তারা শালিস করেছিলেন ঠিকই। তবে ওই টাকা হাতে পেলে রিমার বাবার কাছে দেওয়ার কথা ছিল। সামাজিকভাবে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য ঘরোয়াভাবে এক জায়গায় তারা বসেছিলেন বলে জানান তিনি।

শালিসে থাকা বল্লী গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে হাফিজুর রহমান জানান, মিজানুর রহমান ও বেলাল মেয়ে পক্ষের হয়ে বিয়ে দেওয়ার সুবিধার্থে ১৫ হাজার টাকা দাবি করেছিলেন।
বল্লী বঙ্গ

সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মারুফ আহম্মেদ জানান, উপপরিদর্শক শেখ মোঃ মীরাজ আহম্মেদ রিমার লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সদর থানার মর্গে পাঠিয়েছেন। এ ঘটনায় শনিবার সকালে একটি অপমৃত্যু মামলা(৮০) হয়েছে। তবে মৃতের ভাই রনি হাসান বাদি হয়ে মহব্বত আলীসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে থানায় একটি অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে। অভিযোগ পেলেই মামলা নেওয়া হবে।

(আরকে/এএস/আগস্ট ২৬, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test