E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শম্ভুগঞ্জে যুবককে পিটিয়ে ও গরম ইস্ত্রির ছ্যাকা দিয়ে হত্যার অভিযোগ

২০১৭ আগস্ট ২৭ ১৯:০৪:৪২
শম্ভুগঞ্জে যুবককে পিটিয়ে ও গরম ইস্ত্রির ছ্যাকা দিয়ে হত্যার অভিযোগ

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জে সাইকেল চুরির অভিযোগে মোঃ শাওন (১৮) নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করেছে এলাকাবাসী। গত শুক্রবার শাওনকে চুরির অভিযোগে পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোর্পদ করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঐদিন বিকালে তার মৃত্যু হয়। তবে পরিবারের অভিযোগ হাসপাতালের নেওয়ার আগেই পিটুনিতে শাওনের মৃত্যু হয়। শনিবার রাতে শাওনের দাফনের পর এই ঘটনা জানাজানি হলে এলাকায় তোলাপাড় শুরু হয়।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শাওনের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌর শহরের নতুন বাজার মহল্লায়। সে ঐ মহল্লার আব্দুল মান্নানের ছেলে। চার ভাই দুই বোনের মধ্যে শাওন সবার ছোট। শাওনের পরিবারের সদস্যরা বলেন, গত বৃহস্পতিবার কয়েকজন লোক শাওনকে গৌরীপুর থেকে শম্ভুগঞ্জ নিয়ে যায়। এরপর তাঁরা খবর পান শম্ভুগঞ্জের ব্যাবসায়ী ফিরোজ আহমেদের বাসা থেকে শাওন চুরি করেছে। এজন্য এলাকাবাসী তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে।

শাওনের বড় বোন নাজমা আক্তার জানান, শুক্রবার দুপুরে শাওন তাঁকে ফোন করে বলে ২০ হাজার টাকা পাঠাও নইলে ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। এই সময় আমার ভাই টাকার জন্য কান্নাকাটি করছিলো। পরে রাতে আমরা ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পাই।

এ বিষয়ে ফিরোজ আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, শুক্রবার ভোরে মসজিদ থেকে ফজরের নামাজ পরে বাড়ি যাওয়ার সময় আমার বাড়ির একটি ঘরের দরজা খোলা দেখতে পাই। পরে খোঁজ নিয়ে দেখি একটি সাইকেল নেই। এই ঘটনা জানাজানি হলে স্থানীয় কয়েকজন আমাকে জানায়, বাড়ি থেকে কিছু দূরে সড়কের উপর সাইকেলটি পরে আছে। আমি সাইকেলটি নিয়ে বাড়িতে নিয়ে যাই। এর বেশি আমি কিছু জানি না।

তবে শম্ভুগঞ্জের স্থানীয়রা জানান, শাওন গৌরীপুর ও শম্ভুগঞ্জে প্রায়ই চুরি করতো। তার বিরুদ্ধে এলাকায় অনেক চুরির অভিযোগ রয়েছে। তাই এবার তাকে হাতে-নাতে ধরার পর স্থানীয় জনতা উত্তেজিত হয়ে তাকে পিটুনি দিয়েছে।

শাওনের বড় ভাই আলমগীর হোসেন বলেন, শাওন চুরির পেশা অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার ফিরোজের লোক শাওনকে গৌরীপুর থেকে শম্ভুগঞ্জ নিয়ে যায়। এরপর মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে ফিরোজের লোকজন শাওনকে নির্মম ভাবে পেটালে হাসপাতালে নেওয়ার পূর্বেই তার মৃত্যু হয়। তবে শাওন মোবাইল কিংবা সাইকেল চুরি করেনি। চুরি করেছে ফিরোজের ভাতিজা।

রোবাবার বিকালে শাওনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় স্বজনদের আহাজারি। শাওনের মা সুফিয়া খাতুন ছেলের শোকে পাগল প্রায়। স্বামীর শোকে প্রলাপ বকছেন শাওনের স্ত্রী জোৎস্না আক্তার। কান্নাজড়িত কন্ঠে শাওনের মা বলেন, পেটানোর সময় আমার শাওন না জানি কত চিৎকার করছে। বাঁচার জন্য না জানি ওদের কাছে কত আকুতি-মিনতি করছে। কিন্তু ওরা তো আমার নির্দোষ ছেলেকে মেরে ফেললো। শাওনের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের ক্ষত ও ইস্ত্রির ছ্যাকা ছিলো। যারা আমার শাওনকে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে আমি তাঁদের ফাঁসি চাই।

ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ কামরুল ইসলাম বলেন, সাইকেল চুরির অভিযোগে স্থানীয়রা শাওনকে পিটুনি দেয়। তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় চুরির মামলা রয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা অজ্ঞাতনামে ১০ থেকে ১২জনকে আসামি করে রবিবার দুপুরে মামলা করেছেন। পুলিশ মামলার তদন্ত করছে।

(এসআইএম/এএস/আগস্ট ২৭, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test