E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গলাচিপায় টুংটুাং শব্দে মুখর কামারপট্টি

২০১৭ আগস্ট ২৮ ১৫:৪২:০০
গলাচিপায় টুংটুাং শব্দে মুখর কামারপট্টি

সঞ্জিব দাস, গলাচিপা, (পটুয়াখালী) : পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার উৎসব মুখর ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে কামারপট্টি। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পশু জবাইয়ের সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে কামারপট্টির কারিগররা। বিভিন্ন হাট বাজারের কামাররা দেশী প্রযুক্তির দা, কুরাল, বটি, খুন্তা ও কাটারী বানাতে বেশ উৎসব মুখর হয়ে পড়েছে।

হাট-বাজার সহ বিভিন্ন জায়গায় ইতোমধ্যেই গ্রামের লোকজন কামারীদের কাছে প্রয়োজনীয় ধারালো দেশি তৈরি চাকু, বটি, কাটারি ও ছুরি তৈরির আগাম অর্ডার দেয়া শুরু করেছে। কামারপট্টিগুলোতে টুংটুাং শব্দে এখন মুখরিত। ঘুমাতে পারছেনা আশেপাশের মানুষ গুলো। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে এখন দম ফেরার ফুসরত নেই কামারপট্টিতে দিনরাত সমান তালে লোহার টুংটাং শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে উপজেলার প্রতিটি কামারপট্টি।

উপজেলার বিভিন্ন কামার পট্টিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কামার শিল্পীরা দা, বটি, চাকু, চাপাতি সহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি তৈরি করতে এখন ব্যাস্ত সময় পার করছেন। কাজের চাপ থাকলেও মজুরি নিতে সন্তুষ্ট নন তারা।

কামাররা বলেন, মেশিনের সাহায্যে বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রপতি তৈরি হচ্ছে। ফলে আমাদের তৈরি যন্ত্রপাতির প্রতি মানুষ আকর্ষণ হারাচ্ছে। হয়তো একসময় এই পেশা আর থাকবে না। তবে কোরবানির ঈদের সময় আমরা একটু আর্শাবাদি হই। আমাদের বাপ-দাদার পেশা বলে শত কষ্টের মধ্যেও ধরে রেখেছি। সারা বছর তেমন কোন কাজ না থাকলেও কোরবানির সময় আমাদের কাজের চাহিদা বেড়ে যায়।

এক কামার ব্যবসায়ী বলেন, আমরা সারা বছর অলস সময় পাড় করলেও কোরবানির ঈদ আসলেই অধিক শ্রম দিয়ে বেশি আয়ের সপ্ন দেখি। কিন্তু কয়লা ও লোহার দাম বেশি হওয়ায় আমাদের সেই সপ্ন ভেঙ্গে যেতে বসেছে। ছুরি, বটি সহ লোহার বিভিন্ন রকমের যন্ত্রপাতি তৈরিতে আমাদের ব্যায় বেশি হলেও উপযুক্ত মূল্যে কিনছেন না ক্রেতারা।

মিঠুন কামার ব্যবসায়ী জানান, আমার বাবা এলাকার নাম করা কামার ছিল। বাপের কাছ থেকে এই কাজ শিখে আমি ও আমার ব্যাবসা করছি। প্রতি কোরবানির ঈদ আসলেই কিছু লাভের আশায় আমরা ব্যবসায় একটু জোর দেই। আমাদের এই সব যন্ত্রপাতি বানানোর জন্য আমরা বাহির থেকে লোহা ও কয়লা কিনে আনি। কিন্তু আমরা দিন-রাত এতো পরিশ্রম করেও খুব একটা লাভের মুখ দেখিনা। লোহা ও কয়লার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তৈরি সামগ্রীর দাম ও বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু তৈরি যন্ত্রপাতি বেশি দামে কিনতে রাজি হয় না ক্রেতারা। তাছাড়া কিছু চায়না ছুরি, চাকু, মার্কেটে এসেছে। এতে করে আমাদের মার্কেট আরো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অন্য কোন কাজও করতে পারি না, না খেয়ে হলেও এই পেশায় থাকতে হবে।

কামাররা অভিযোগ করে বলেন, বছরের এই সময় চাপাতি, ছুরি, বটি চাহিদা বেশি থাকে। লোহা, কয়লার দাম বৃদ্ধি এবং পরিশ্রমও করতে হয় বেশি। সেই তুলনায় মজুরি অনেক কম। সারা দিন আগুনের পাশে বসে থাকতে হয়। ফলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয় আমাদের। যে কারনে এখন অনেক কর্মকার এগুলো বানাতে উৎসাহ হারাচ্ছেন।

মনোরঞ্জন কর্মকার জানান, আমার দাদার মূল পেশা ছিল এটা। তারা গত হওয়ার পর ওই সূত্র ধরে বাবা জীবনের ও শেষ মুহূর্তে এই পেশা ধরে রেখেছে। সারা দিন চাকু, বটি তৈরি করে যা আয় হয় তা দিয়েই পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে আছি। কেন না এই পেশা ছেড়ে অন্য কোন ভালো পেশায় যাব এই রকম আর্থিক সঙ্গতি আমার নেই তবে সরকারি ভাবে এবং এনজিওর মাধ্যমে আমাদের আত্রাইয়ের কামারদেরকে সুদ মুক্ত এন দিলে পাইকারি মূল্যে উপকরন কিনতে পারলে অবশ্যই এই দেশীয় কামার শিল্প আগের মতো ঘুরে দাড়াতে পারবে।

(এসডি/এসপি/আগস্ট ২৮, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test