E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

চাঁদপুরে দুধে ফরমালিন ও পানি মেশানোর অভিযোগ

২০১৪ জুন ২৮ ১৮:৩৬:১০
চাঁদপুরে দুধে ফরমালিন ও পানি মেশানোর অভিযোগ

চাঁদপুর প্রতিনিধি : চাঁদপুরে প্রতিষ্ঠিত মিষ্টি দোকানীরা মণ প্রতি ৭ কেজি ছানা বুঝে নিয়েই গোয়ালকে দুধের দাম দিয়ে থাকে। দুধে ভেজাল থাকলে ছানা পরিমাণ মতো হবে না। কম হলে টাকা কেটে রাখা হয়। ভালো দুধের জন্য মিষ্টির দোকানগুলো এ নিয়ম চালু করে ব্যবসা করছে।

কিন্তু সাধারণ ক্রেতা যাদের পরিবারের প্রয়োজনে রোজ হিসেবে ১/দেড় লিটার বা তার অধিক পরিমাণ দুধ হাটে-বাজারে, পাড়া-মহল্লা থেকে কিনছে। খাঁটি দুধ প্রমাণ করার সুযোগ কোথায়। যারা একটু চতুর দুধে হাতের চার আঙ্গুল চুবিয়ে ভালো-মন্দ অনুমান ভিত্তিক যাচাই করে নেন। এভাবেই চলছে চাঁদপুরে চরাঞ্চল থেকে আনা তরল দুধের ক্রয়-বিক্রয়। বাজার দর থেকে বেশি দাম দিয়ে দুধ কেনা হলেও সে দুধেও কম-বেশি ভেজাল থাকবেই। বেশি পরিমাণ পানি মিশিয়ে যারা দুধ বিক্রি করছে তাদের প্রতারণার শিকার হচ্ছে অনেকে। ভেজাল দুধে বেশি প্রতারিত হয় রমজান মাস আসলেই রোজাদাররা। হতদরিদ্র, মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর মুসলমান সদস্যরা রোজা থাকার জন্য চেষ্টা করে সেহরী খাবারে এক পোয়া, আধা পোয়া বা এক কেজি তরল দুধ বাজার থেকে কিনতে। সহজ সরল সে মানুষগুলোকে ঠকাচ্ছে এক শ্রেণীর গোয়ালে এবং তাদের প্রতিনিধি ভাসমান দুধ বিক্রেতা। তারা দুধের ভার নিয়ে দরিদ্র পরিবারগুলোর যেখানে আস্তানা বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় ঢুকে ভালো দুধ বলে মহল্লাবাসীকে পানি দুধ ধরিয়ে দিচ্ছে। সেহরির সময় একটু দুধ-ভাত খাবে। তখন দেখে দুধের গন্ধবাস নেই। পানি পানি। নিরূপায় হয়ে তারা তখন পানি দুধ দিয়ে কোনোভাবে ভাত খেয়ে নিচ্ছেন। অনেক দুধে ফরমালিন দিয়ে আনা হয়। দুধ বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত তা নষ্ট হয় না। রমজান মাসে দরিদ্র ও কম আয়ের মুসলমান যারা অনেক কষ্ট করেও রোজা ভাংছে না। তারা পানি ও ভেজাল দুধে সবচে’ বেশি প্রতারিত হচ্ছেন। রোজার মাসে হোটেল রেস্তোরাঁ অধিকাংশই দিনের বেলা বন্ধ রাখা হয়। এ সময় দুধের চাহিদা মিষ্টির দোকানগুলোতে কমে যায়। রোজার জন্য আধা-এক কেজি পরিমাণ দুধ কেনার ক্রেতা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এ সুযোগ কাজে লাগায় এক শ্রেণীর প্রতারক, ঠক, লোভী দুধ বিক্রেতা। সাধারণ মানুষ চায় ভালো দুধের নিশ্চয়তা। কেজিতে ৫/১০ টাকা বাড়িয়ে হলেও খাঁটি বিশুদ্ধ তরল দুধ চায় সবাই। তাদের প্রতারণা ও ভেজাল রুখবে কে? এক/দু দিন অভিযান প্রশাসন পরিচালনা করে দায়িত্ব শেষ। দুধের ব্যাপারী তাদের অপকর্ম ও অপতৎরতার কাজ করেই যাচ্ছে।
সরজমিনে চাঁদপুর শহর এলাকার দুধবাজার ঘুরে দেখা যায় এখন প্রতি লিটার বা কেজি দুধ ৫০ থেকে ৬০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এ দামে কিনেও ভালো দুধের দেখা মিলছে না। অনুসন্ধানে জানা যায়, চাঁদপুর শহরসহ আশপাশের এলাকার চাহিদা অনুযায়ী প্রতিদিন নৌপথে ট্রলারযোগে এক থেকে দেড়শ’ মণ দুধ ড্রাম ভর্তি হয়ে আসছে। এসব দুধ মেঘনা নদী বেষ্টিত চরাঞ্চলসহ পার্শ্ববর্তী শরীয়তপুর জেলা থেকে আনা হয়। ওই পরিমাণ দুধের মধ্যে এক থেকে সোয়াশ’ মণ দুধ চলে আসে শহরের বড় স্টেশন রিক্সা স্ট্যান্ডে। হরিঘোষ ব্যাপারিদের দুধ টিনের পাত্রে মাপজোগ করে। আবু হানিফা, দাদন, হাকিসহ অনেকে সে দুধ নিয়ে যায় যার যার মিষ্টির দোকানে। তারা আবার পাড়া-মহল্লার বাসা-বাড়িতে গিয়ে পরিবারের রোজকার দুধ দিয়ে আসছে। প্রায় ৫০ মণ দুধ আসে শহরের পুরাণবাজারে। দুধবাজার নামে এখানে আলাদা স্থান রয়েছে। বহু বছর ধরে তরল দুধ এখানে বিক্রির হাট বসে। তরল দুধের পাইকারি প্রধান বাজারই হচ্ছে এ পুরাণবাজার। চাঁদপুরের নামি-দামি মিষ্টি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে দুধের ব্যাপারিরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী দুধ সেখানে পৌঁছে দেয়ার কারণে এখন সে দুধ পুরাণবাজারে উঠানো হয় না। সরাসরি ট্্রলার নিয়ে মূল শহরের দিকে চলে যায়। পুরাণবাজারের দুধ বাজার পরিচালনা করে মহিউদ্দিন, কাশেম ও হযরত আলী। তাদের অধীন অনেক ব্যাপারী রয়েছে। ব্যাপারীরা আবার দাদন নিয়ে তাদের দুধ হাত বদল করে দিচ্ছে একশ্রেণীর লোকদের কাছে। তারা দুধের ব্যবসায়ী। একটি সূত্র জানায়, বিভিন্ন কারসাজিতে চলে চাঁদপুরে তরল দুধের ব্যবসা। গরুর গোয়াল ঘর থেকে শুরু করে নদীতে পানির উপর দিয়ে আসার পথে উপরে আসলে হাত বদলের ভেজাল। ব্যাপারির মতো ঘোষ কিংবা অন্য কেউ সে দুধ বাড়ি বাড়ি, দোকানে দোকানে নিয়ে যাচ্ছে। গবাদি পশু থেকে বিশুদ্ধ খাঁটি প্রাকৃতিকভাবেই সৃষ্টিকর্তা দিয়েছে। সে দুধে পানি, দুধের আকৃতি পাউডার, পুষ্টিকর খাবারে ফরমালিন বিষ অনেক সময় বেশি খাঁটি দুধ দেখাতে গিয়ে ব্যাপারির দুধে চক্কুনি মাছও পাওয়া যায়। এমন ঘটনারও মুখরোচক আলোচনা শোনা যায়। পবিত্র মাসের পবিত্রতা রক্ষায় মানুষকে রোজা রাখার জন্য ভালো দুধ সরবরাহ করবে গোয়ালরা এমন প্রত্যাশা প্রত্যেক রোজাদার এবং সকল মানুষের। প্রশাসন দেখবে দুধের পরিমাণ কতো বেশি পানি আর মিশানো ফরমালিন বিষ। না অন্য আরো ভেজাল উপাদান। এখন দেখার বিষয় রমজানের শুরু থেকে রোজাদার তরল দুধের ভেজাল মুক্ত হয় কিনা?
(এমজে/এএস/জুন ২৮, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test