E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরায় পাঁচ সংখ্যালঘু নারীকে পিটিয়ে জখম, আটক ২

২০১৭ আগস্ট ৩১ ২২:১৩:৩৩
সাতক্ষীরায় পাঁচ সংখ্যালঘু নারীকে পিটিয়ে জখম, আটক ২

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : চিংড়ি ঘেরে বিচরন করার সময় দু’ টি হাঁস ধরে নিয়ে যাওয়ার প্রতিবাদ করায় জেএমবি’র পৃষ্টপোষক পৌর কাউন্সিলর শহীদুল ইসলামের সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা সংখ্যালঘু পরিবারের পাঁচ নারীকে পিটিয়ে জখম করেছে। এ নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে কালিমন্দিরে ঢুকিয়ে পেট্রোল দিয়ে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারার হুমকি দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে সাতক্ষীরা শহরের কুকরালির টাবরারডাঙি দক্ষিণপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। আবারো হামলায় ভয়ে নির্যাতিত ওইসব নারীরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারেনি। খবর পেয়ে পুলিশ দু’ হামলাকারিকে আটক করলেও আবারো হামলার ভয় দেখিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় নির্যাতিতদের ডেকে নিয়ে অভিযোগ নেই বলে লিখিত দিয়ে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনতে বাধ্য করা হয়েছে।

আহতরা হলেন, টাবরাডাঙি গ্রামের প্রফুল্ল সরকারের স্ত্রী কাঞ্চন সরকার(৫৫), কৃষ্ণ পদ সরকারের স্ত্রী জবা দাসী সরকার (৬০), আনন্দ সরকারের স্ত্রী কনিকা সরকার(৩৫), ভোলানাথ সরকারের স্ত্রী শম্পা রানী সরকার (৩৭), শিরোমনি সরকারের স্ত্রী সীতা রাণী সরকার (৩৫)।

টাবরাডাঙি দক্ষিণপাড়া সার্বজনীন পূজা মণ্ডপের পার্শ্ববর্তী সীতা রানী সরকার জানান, মঙ্গলবার তারা রাধা অষ্টমীর উপবাস ছিলেন। মঙ্গলবার দুপুরে তার ছয়টি হাঁস ৬নং ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর শহীদুল ইসলামের পার্শ্ববর্তী চিংড়ি ঘেরে বিচরন করার সময় মাছ নষ্ট করার অভিযোগে দু’ টি হাঁস চুরি করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে কুখরালীর আমতলা এলাকার আব্দুর রউফের ছেলে আবুল খায়ের , ফারুক হোসেনের ছেলে অমিত হাসানসহ কয়েকজন। তিনি বিষয়টি জানতে পেরে প্রতিবাদ করায় ওই চক্রটি তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে।

বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে মীমাংসা হয়ে গেলেও রাত ৮টার দিকে খায়ের, অমিত হাসান, শাহানুর, মঈনুর, আমিনুর, হাসিব, ইউসুফসহ কয়েকজন তাদের পাড়ায় এসে আবারো গালিগালাজ শুরু করে। এর বিরোধিতা করে স্থানীয় অহেদ আলীর ছেলে ওসমান ও হাফিজুর রহমান। তাদের কথা না শোনায় প্রতিবাদ করলে জবা দাসী সরকারকে মারপিট করা হয়। এরপর স্থানীয় সাতটি হিন্দু পরিবারের পুরুষ শুন্য বাড়ির নারী ও শিশুরা বেরিয়ে এলে তাদেরকে কালিমন্দিরের মধ্যে ঢুকিয়ে প্রেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। স্কুলে যাওয়ার পথে টুম্পাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকিও দেয় তারা। উভয়পক্ষের কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে হামলাকারিরা কাঞ্চন, জবা, কনিকা, শম্পা ও সীতা রানী সরকারকে পিটিয়ে জখম করে। থানায় ও হাসপাতালে নিয়ে যেতে বাধা দিলে তাদেরকে স্থানীয় প্রকাশ সরকারের কাছে চিকিৎসা দেওয়া হয়। খবর পেয়ে ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা আবুল খায়ের ও অমিত হাসানকে আটক করে সদর থানায় সোপর্দ করে। থানায় অভিযোগ দিলে আবারো হামলা করা হবে বলে তারা থানায় অভিযোগ দিতে সাহস পাননি।

ভোলানাথ সরকারসহ নির্যাতিত পরিবারের পুরুষ সদস্যরা জানান, থানায় অভিযোগ করলে ঝামেলা বাড়বে এমন কথা বলে স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মিটিয়ে দেওয়ার কথা বলে বুধবার সন্ধ্যায় পৌর কাউন্সিলর শহীদুল ইসলাম তাদেরকে থানায় ডেকে নিয়ে মীমাংসার কথা বলে কোন অভিযোগ নেই মর্মে পুলিশের কাছে লিখে দিতে বলেন। এরপরপরই আবুল খায়ের ও অমিত হাসান ছাড়া পায়।

আমতলা এলাকার ওসমান আলী ও হাফিজুর রহমান জানান, খায়ের, অমিতসহ যে গ্র“প হিন্দু পাড়ায় হামলা চালিয়েছে তারা সকলেই মাদকাসক্ত। তারা প্রতিবাদ করলেও না শুনে হামলা চালিয়ে পাঁচটি পরিবারের নারী সদস্যের উপর।

স্থানীয়রা জানান, ২০০৫ সালে দেশজুড়ে জেএমবি’র বোমা হামলা চালানোর অংশ হিসেবে সাতক্ষীরার পাঁচটি স্থানে বোমা পড়ে। নাসিরউদ্দিনসহ কয়েকজন এসব মামলায় জেল হাজতে রয়েছে। পৌর কাউন্সিলর শহীদুল ইসলামের বিরুদ্ধে জেএমবি’র সংগঠণ মজবুত করতে অর্থযোগান ও পৃষ্টপোষকতার অভিযোগ থাকায় তাকে তিনবার জেল খাটতে হয়েছে।

তিনি চরম হিন্দু বিদ্বেষী। তাই সংখ্যালঘু নারীদের উপর হামলার ঘটনায় তাদের বাড়ির পুরুষদের উপর চাপ সৃষ্টি করে মামলা না দিয়ে থানা থেকে দু’ হামলাকারিকে ছাড়িয়ে আনতে বাধ্য করা হয়েছে।
এদিকে খবর পেয়ে সাতক্ষীরা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার শীল, যুগ্ম সম্পাদক নিত্যনন্দ আমীন, জেলা মন্দির সমিতির সাধারণ সম্পাদক রঘুজিৎ গুহ, বাংলাদেশ পুজা উদযাপন পরিষদ সাতক্ষীরা সদর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শিবপদ গাইন, জেলা মন্দির সমিতির সদস্য অসীম দাশ সোনাসহ নেতাকর্মীরা মঙ্গলবার রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারা এ ধরনের বর্বরতার নিন্দা জানিয়ে বলেন, শহীদুল কমিশনারের সন্ত্রাসী বাহিনীর কাছে এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন জিম্মি হয়ে পড়েছে। সংখ্যালঘু বান্ধব বর্তমান সরকারের আমলে নির্যাতিত হিন্দুরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যেতে পারবে না, থানায় অভিযোগ দিতে পারবে না এমনটি ভাবা যায় না।

শহীদুল কাউন্সিলরের কথামত নির্যাতত পরিবারের সদস্যরা থানায় যেয়ে কোন অভিযোগ নেই মর্মে লিখিত দিয়ে হামলাকারিদের ছাড়িয়ে আনতে বাধ্য হয়েছে। খবর পেয়েও বৃহষ্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর অনিমা রানী সরকার ঘটনাস্থলে যাননি। মনে হচ্ছে হিন্দুরা পরবাসী হয়ে বসবাস করছে। তারা ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে হামলার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

জানতে চাইলে পৌর কাউন্সিলর শহীদুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে জেএমবি’র পৃষ্টপোষকতা করার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রতিপক্ষরা তাকে সকল সময় বিরুদ্ধোচারণ করে চলেছে। স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করে দেওয়ার জন্য উভয়পক্ষকে রাজী করিয়ে আটককৃত দু’জনকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনা হয়েছে।

এবিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মারুফ আহমেদ জানান, হামলার অভিযোগে দু’ জনকে আটকের পর বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় কোন লিখিত অভিযোগ করা হয়নি। ফলে তাদেরকে স্থানীয় লোকজনদের সুপারিশে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

(আরকে/এএস/আগস্ট ৩১, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test