E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নওগাঁয় চালের বাজার অস্থির

২০১৭ সেপ্টেম্বর ১৯ ১৯:০৩:৩০
নওগাঁয় চালের বাজার অস্থির

নওগাঁ প্রতিনিধি : উত্তরের খাদ্য উদ্বৃত্ত জেলা নওগাঁয় চালের বাজারে অস্তিরতা বিরাজ করছে। গত এক মাসের ব্যবধানে প্রকার ভেদে এখানে প্রতি কেজিতে চালের দাম বেড়েছে ১২ থেকে ২০ টাকা। বিদেশ থেকে চাল আমদানী করেও চালের বাজার নিয়ন্ত্রনে আসছে না। উল্টো দফায দফায চালের দাম বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এদিকে মূল্য বৃদ্ধির জন্য খুচরা ব্যবসায়ী ও প্রান্তিক ক্রেতারা চালকল মালিক ও পাইকারী ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটকে দায়ী করছে। আবার চালকল মালিক আর পাইকারী ব্যবসায়ীরা দায়ী করছেন ভারতের সিন্ডিকেটকে। এতে করে চালের বাজার আগামীতে আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে সরকারের পক্ষ খোলা বাজারে চাল বিক্রি শুরু করায় দুই এক দিনের মধ্যে চালের বাজার স্থিতিশীল হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন স্থানীয় জেলা প্রশাসন।

জানা গেছে, প্রতি বছর চাহিদা ছাড়াও প্রায় ২০ লাখ মেঃটন চাল বেশী উদপাদন হয় নওগাঁয়। এসব চাল প্রক্রিয়াজাত করে বাজারে সরবরাহ দেয়ার জন্য জেলায় গড়ে উঠেছে ছোট-বড় মিলে প্রায় ১২শ’ চালকল। এর মধ্যে অটো রাইচ মিল রয়েছে ৫১টি। গত হাওরের বন্যার ধাক্কা ও বোরো আবাদে জেলায় ভাল ফসল না হওয়ায় ধানের অভাবে ইতোমধ্যে অর্ধেকেরও বেশী চালকল বন্ধ হয়ে গেছে। সোমবার থেকে জেলা সদরে ১৪জন ডিলারের মাধ্যমে ৩০ টাকা কেজি দরে খোলা বাজারে চাল বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে চালের মান খুব একটা ভাল না হওয়ায় ক্রেতার সংখ্যা কম।

এদিকে নওগাঁ অঞ্চলে চালের বাজার নিয়ন্ত্রনে রাখতে সোমবার বিকেলে শহরতলীর বেলকোন অটো রাইস মিলের গুদামে অভিযান চালায় জেলা টাস্ক ফোর্স।

নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে এ অভিযান চালানো হয়। টাস্কফোর্সের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বেলকোন গুদামে বিপুল পরিমান ধান ও চাল মজুত রয়েছে। যা বাজারে ছাড়লে চালের বাজার সহজেই নিয়ন্ত্রনে আসবে। তবে যে চাল বা ধান মজুত রয়েছে, তা তার কাগজপত্র অনুযায়ী বেশী নয়। তার পরেও তাকে গুদামের ধান-চাল বাজারে ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এসময় উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) লিমন রায়, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুস সালাম, বাজার কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।

কৃষি প্রধান জেলা হওয়ার সত্ত্বেও চালের দাম দিন দিন বেড়েই চলেছে। খাদ্যে উদ্বৃত্ত জেলা হয়েও ঈদের আগে থেকেই গত তিন দফায় পাইকারি ও খুচরা বাজারে সব ধরনের চালের দাম কেজি প্রতি ১২-থেকে ২০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।

মঙ্গলবার জেলার পাইকারী ও খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রতিকেজি নাজিরশাইল বর্তমানে ৫৮-৬০ টাকা, বিআর-২৮ ৫৩-৫৫ টাকা, জিরাশাইল ৫৮-৬০ টাকা, পারিজা ৪৬-৪৮ টাকা, স্বর্ণা ৪২-৪৪ টাকা, এলসির চাল ৪৫-৪৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত এক মাসে ৫০ কেজি ওজনের বস্তা প্রতি ২৬০-৪১০ টাকা দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার চাল আমদানিকে উৎসাহিত করার জন্য ২৮ শতাংশ শুল্ক থেকে কমিয়ে ২ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। এছাড়া বাকিতে ঋণপত্র খোলার সুযোগ দেয়া হলেও সরকারিভাবে আমদানির প্রভাব এখানকার চালের বাজারে পড়ছে না। এসব পদক্ষেপ সত্ত্বেও গত এক মাসের ব্যবধানে নওগাঁয় চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে নাভিশ্বাস উঠেছে মধ্যবিত্ত ও নি¤œ আয়ের খেটে খাওয়া মানুষদের।

চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিগত বোরো মৌসুমে বন্যা এবং রোগ বালাইয়ের কারণে সারাদেশে প্রতিবিঘা জমিতে ধানের উৎপাদন কম হয়েছে। সর্বসাকুল্যে বোরো মৌসুমে প্রায় ৫০-৬০ লাখ মেট্রিকটন ধানের উৎপাদন কম হয়েছে। আবার হাওরের ধান না পাওয়ায় এই ধাক্কা এসে লেগেছে চালের বাজারে। আবার পরবর্তিতে কৃষকরা বুক ভার আশা নিয়ে আমনের আবাদ শুরু করলে পর পর দু’দফার বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ফলে দেশে ধানের সংকট সৃষ্টি হয়। এতে বেশির ভাগই চালকল এখন বন্ধ হয়ে পড়েছে ধানের অভাবে।

নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্র চাউল ব্যবসায়ী সমিতি সাধারন সম্পাদক উত্তম সরকার বলেন, হাওর অঞ্চলে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আগেই দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। এখন কৃষকের ঘরে ও হাটে বাজারে ধান নাই। ধান ব্যবসায়ীরা হাটে গিয়ে ধান পাচ্ছেন না। যে এলসির চাল আমদানি করা হয়েছে তা মানসম্পন্ন না। দামও বেশি। ফলে দফায় দফায় চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া বড় বড় চাল কল মালিক ও এক শ্রেনীর মজুতদাররা আগেই অনেক ধান কিনে মজুত রেখেছে। সেই ধান ছাটাই করে চাল বাজারে ছাড়লেও তারা দাম বর্তমান মূল্যেই নিচ্ছে। বড় ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারনেই বর্তমানে চালের বাজার উর্দ্ধগতি।


তবে নওগাঁ জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, ‘সরকার আমদানিকে উৎসাহিত করার জন্য ২৮ শতাংশ শুল্ক থেকে কমিয়ে ২ শতাংশে নিয়ে আসছে। কিন্তু দুংখজনক হলেও সত্য সরকার দেশে শুল্ক প্রত্যাহার করলেও প্রতিবেশি দেশ ভারত চালের দাম বৃদ্ধি করেছে। চালের আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চালের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সমস্যা থেকে উত্তোরনের জন্য একটা উপায়ে ভারতকে চালের দাম কমাতে হবে। নচেৎ এ থেকে প্রতিকার পাওয়া সম্ভব নয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘আগামীতে যদি বোরো মৌসুমে শতভাগ ফসল উৎপাদন হয় তাহলে বাজার স্থিতিশীল হবে। অন্যথায় বাজার নিন্ত্রয়ন হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীন। মূল্য সমস্যা হচ্ছে, ভারত দফায় দফায় চালের দাম বৃদ্ধি করছে। মোট কথা চালের বাজার এখন ভারতের হাতে। তারাই এটি নিয়ন্ত্রণ করছে। ভারত যেভাবে চালের দাম রাখছে, আমাদের এখানে সেভাবেই চালের বাজার উঠছে।’

এদিকে নওগাঁ জেলা প্রশাসক ড. মোঃ আমিনুর রহমান বলেন, নওগাঁ উদ্বৃত্ত খাদ্য উৎপাদন জেলা । বন্যার কারণে এ জেলায় প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে বাজার স্থিতিশীল রাখতে বাজার কর্মকর্তাকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই সরকার চালের বাজার নিয়ন্ত্রনে খোলা বাজারে চাল বিক্রি শুরু করেছে। ফলে চালের বাজার এমন থাকবেনা বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

(বিএম/এএস/সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test