E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সন্তানের পিতৃ পরিচয়ের দাবিতে আড়াই বছর পথে পথে প্রতিবন্ধী আছিয়া

২০১৭ সেপ্টেম্বর ২২ ১৯:০৭:৪২
সন্তানের পিতৃ পরিচয়ের দাবিতে আড়াই বছর পথে পথে প্রতিবন্ধী আছিয়া

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : দেখতে দেখতে বয়স আড়াই বছর পার হয়ে গেছে । বিচার সালিশ অনেক কিছুই তো হলো। অথচ মেয়ে মাহীর পিতৃত্বের দাবি পূরন হয়নি আজও। আর এই দাবিতে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী কুমারি মাতা আছিয়া খাতুন মেয়েকে সাথে নিয়ে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। এখন পর্যন্ত কোনো কিনারা হয়নি।

আছিয়া খাতুনের অভিযোগ ‘ আমাকে জোর পূর্বক পাশবিক নির্যাতনের পর সালিশ বিচারের নামে মাতবররা আসামির কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে । আমরা টাকা নেইনি। আমরা মামলা করেছি। ডিএনএ টেস্ট রিপোর্ট নিয়েও জাল জালিয়াতি হয়েছে। আমি আবারও ডিএনও টেস্টের জন্য রক্ত দিয়েছি। এ রিপোর্ট কি হবে তা জানিনা। আমি আমার মেয়ের পিতৃত্বের স্বীকৃতি চাই’। আছিয়া খাতুন সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার আজিজপুর গ্রামের মোমিন গাজির মেয়ে।

আছিয়া খাতুন মেয়ে ও মা মসিরনকে সাথে নিয়ে এসেছিলেন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে। বিকৃত বাচন ভঙ্গিতে জানালেন নিজের কষ্টের কথা। আবেগে আপ্লুত হয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে আছিয়া জানান ২০১৪ সালের ২৩ মে তারিখ ভর দুপুরের কথা। বলেন তার প্রতিবেশি নানী ফাতেমা খাতুন তাকে একই গ্রামের মোকছেদ আলির বাড়িতে নিয়ে যান। পরে তাকে কৌশলে একটি ঘরে মোকছেদ আলি (৪৮) ও তাকে ঢুকিয়ে দিয়ে বাইরে থেকে দরজায় শিকল লাগিয়ে দেন ফাতেমা খাতুন।

আছিয়া জানান, এ সময় মোকছেদ আলি জোর করে তার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। এর ফলে কিছুদিন পর থেকে আছিয়ার শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন দেখা দিলে ডাক্তারি রিপোর্টে জানা যায় আছিয়া অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছেন। ওর বাবা বিষয়টি অভিযোগ আকারে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বরকে জানান। পরে মেম্বর আজগর আলির নেতৃত্বে এবং প্রতিবেশী মোজাম্মেল হক, আমির আলি ও আবদুল হামিদের উপস্থিতিতে এক সালিশ বৈঠকে ধর্ষক মোকছেদ আলিকে দোষী সাব্যস্থ করে তাকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানার ৫০ হাজার টাকা সালিশদার আবদুল হামিদ গ্রহন করেন। সালিশের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একই সাথে তার গর্ভপাত করানোর জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু আছিয়া , আছিয়ার বাবা ও মা কোনো টাকা গ্রহনে অসম্মতি জানান। তারা আছিয়ার গর্ভের সন্তান নষ্ট করতেও অসম্মতি প্রকাশ করেন।

পরে আছিয়ার মামা সামজেদ হোসেন সাজু দেবহাটা থানায় একটি ধর্ষন মামলা করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ পরিদর্শক (এসআই) মেজবাহউদ্দিন মামলাটির চার্জশীট দেন। এতে ধর্ষক মোকছেদ আলি ও সহযোগিতাকারী ফাতেমা খাতুনকে অভিযুক্ত করা হয়। পুলিশ ফাতেমাকে গ্রেফতার করে। ফাতেমা খাতুন তার জবানবন্দিতে ধর্ষনের ঘটনা তুলে ধরে স্বীকারোক্তি দেন। আছিয়ার মামা মামলার বাদি সামজেদ হোসেন জানান আসামিপক্ষের আবেদন অনুযায়ী ধর্ষিতা ও শিশুটির রক্ত ডিএনএ টেস্টে পাঠানো হয়। তিনি জানান ডিএনএ টেস্টে নেগেটিভ রিপোর্ট আসায় আছিয়ার মেয়ের পিতৃত্বের দাবি ঝুলে যায়। এর ফলে দুই আসামিই খালাস হয়ে যায়। আছিয়ার মামা আরও জানান ‘আমি এই রিপোর্টে নারাজি দিয়েছি। সে অনুযায়ী দ্বিতীয় দফায় নিয়ম অনুযায়ী রক্ত দিয়েছে আছিয়া ,তার মেয়ে মাহী ও আসামি মোকছেদ আলি। এখন পর্যন্ত এই রিপোর্ট সাতক্ষীরা আদালতে পৌঁছায়নি’।

আছিয়ার অভিযোগ প্রথমে সালিশের নামে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় ডিএনএ টেস্টে জাল জালিয়াতি করা হয়েছে। পিতৃত্বের সঠিক পরিচয় নির্ধারনে এবারও এমন কোনো ঘটনা ঘটবে না তো এই প্রশ্ন রেখেছেন প্রতিবন্ধী আছিয়া খাতুন।

(আরকে/এএস/সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test