E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রসিক নির্বাচন : কারচুপি হলে মানবে না জাপা

২০১৭ ডিসেম্বর ১৯ ২২:২৩:৫০
রসিক নির্বাচন : কারচুপি হলে মানবে না জাপা

স্টাফ রিপোর্টার: এক দিন পর রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে জয়ী করতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী এখন রংপুরে। কেন্দ্র পাহারা, এলাকায় জোরালো অবস্থান, ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসাসহ লাঙল প্রতীকে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার পক্ষে ভোট টানতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে জাতীয় পার্টি।

দলের নীতিনির্ধারণী সূত্র জানায়, রংপুর সিটি নির্বাচনে কোনো কারচুপি কিংবা অনিয়ম হলে তা মানবে না জাতীয় পার্টি। কারচুপি করে দলীয় প্রার্থীকে হারানো হলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখাবে দলটি। প্রয়োজনে তারা রংপুর থেকেই আন্দোলনের ডাক দিতে পারে, এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এজন্য পার্টির চেয়ারম্যানের ওপর নেতাকর্মীদের চাপও রয়েছে। ইতোমধ্যে তারা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে আল্টিমেটাম দিয়েছেন যে, এই নির্বাচনে কোনো প্রকার অনিয়ম সহ্য করা হবে না। যদি কারচুপি কিংবা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে জয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়, তাহলে যেন রংপুর থেকেই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়। প্রয়োজনে আগামী নির্বাচনে সরকারি দলের সঙ্গে কোনো প্রকার সম্পর্ক না রাখার সিদ্ধান্ত নিতেও বলা হয়েছে।

রংপুর নির্বাচন নিয়ে নেতাকর্মীদের প্রচণ্ড চাপে রয়েছেন দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদসহ দলটির শীর্ষনেতারা। দলীয় প্রার্থীকে জেতাতে নির্বাচনের ব্যাপক প্রস্তুতির পাশাপাশি কারচুপি-অনিয়মের প্রতিবাদের প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছে নেতাকর্মীরা। এই নির্বাচনের ওপর নির্ভর করছে জাতীয় পার্টি-আওয়ামী লীগের ভবিষ্যত সম্পর্ক, এমনটাই জানিয়েছেন দলটির একাধিক নেতা।

রংপুর থেকে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি জানান, আশা করছি, ২১ ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। নির্বাচন কমিশন সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেবে। যদি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়, তাহলে আমাদের প্রার্থী বিপুল ভোটে জিতবে।

নির্বাচনে সন্ত্রাস, কারচুপি ও অনিয়ম হলে নেতাকর্মীরা ফল মানবে না বলেও জানান রুহুল আমিন হাওলাদার।

তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার বিজয় সুনিশ্চিত। কারচুপি হলে আমাদের বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হবে। আর সেটা নেতাকর্মীরা কখনো মানবে না। সরকারি দলের জন্যও ভালো ফল বয়ে আনবে না। ভবিষ্যতে এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কেউ নির্বাচন করতে চাইবে না। তাই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের উচিত রংপুরে শতভাগ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়া। আশা করি, ইসি সেই ব্যবস্থা নেবে।

২১ ডিসেম্বর রংপুর সিটি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছে জাতীয় পার্টি। মঙ্গলবার রংপুরে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার পক্ষে সর্বশেষ প্রচার ও গণসংযোগকালে দলের কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদেরসহ শীর্ষ নেতারা নির্বাচনে অনিয়ম-কারচুপি হলে তা মেনে নেওয়া হবে বলে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন। এমনকি ২১ ডিসেম্বর থেকে প্রয়োজনে সরকারবিরোধী আন্দোলনের হুমকিও দেন নেতারা। নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে দলীয় প্রার্থীর শতভাগ জয়ের আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।

নির্বাচনে কারচুপি হলে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ, এমনকি আন্দোলন কর্মসূচির জন্য নেতাকর্মীদের প্রচণ্ড চাপ রয়েছে স্বীকার করে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর দক্ষিণ সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি বলেন, রংপুর নির্বাচনে কোনো প্রকার সন্ত্রাস, ভোট-ডাকাতি নেতাকর্মীরা মেনে নেবে না বলে আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন। তারা বলেছেন, ‍রংপুরে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। সেই জনপ্রিয়তার স্রোতে অন্যরা হারিয়ে যাবেন। তাই কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র-অনিয়মে আমাদের সুনিশ্চিত বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হলে তা মানব না। প্রতিবাদের ঝড় তুলতে হবে, প্রয়োজনে আন্দোলন। সেই আন্দোলন কর্মসূচিতে নেতাদেরও আমাদের সঙ্গে থাকতে হবে। রংপুর নিয়ে নেতাকর্মীদের এই ধরনের মনোভাবে কথা জানিয়েছেন এমপি বাবলা।

দলের নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে, রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে জাতীয় পার্টি। এই নির্বাচনের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ। তাই রংপুরে সুষ্ঠু নির্বাচন, একই সঙ্গে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করে আনাই এখন দলটির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ ও নেতাকর্মীদের প্রধান লক্ষ্য-উদ্দেশ্য।

সুষ্ঠু নির্বাচন হলে মেয়র পদে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাই জিতবেন। যোগ্য প্রার্থী হিসেবে মোস্তফার পক্ষে এই নির্বাচনে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ভোটারদের মাঝে লাঙলের প্রার্থী সাড়া ফেলেছে। বরং মেয়র পদে দলীয় প্রার্থীকে জয়ী করতে স্থানীয় কোন্দল নিরসন করে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার পক্ষে দলের কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গাসহ সবাইকে মাঠে নামিয়েছেন এইচ এম এরশাদ। তিনি নিজেই রংপুরে অবস্থান করে নির্বাচন তদারকি করছেন। পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাসহ শীর্ষ নেতাসহ সারা দেশ থেকে জাতীয় পার্টির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অবস্থান করছেন রংপুরে।

দলীয় প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার জয় নিশ্চিত করতে মঙ্গলবার পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ রংপুরে তার বাসা পল্লী নিবাসে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন। এ সময় দলের মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, ‍কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের, মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গা এমপি, জিয়াউদ্দিন বাবলু এমপি, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, সফিকুল ইসলাম সেন্টু, উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শামীম হায়দার চৌধুরী, অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূইয়া, শওকত চৌধুরী এমপি, ইয়াহিয়া চৌধুরী এমপি, নুরুল ইসলাম নুরু, জহিরুল ইসলাম জহির, গোলাম মোহাম্মদ রাজু, মুনিম চৌধুরী বাবু এমপি, আমির হোসেন ভুইয়া এমপি, ইসহাক ভূইয়া, সুজন দে, আসরাফুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে নির্বাচনী আচরণবিধি মেনেই ২১ ডিসেম্বর সুন্দরভাবে সিটি নির্বাচন সম্পন্ন করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন এইচ এম এরশাদ। যেকোনো পরিস্থিতিতে কেন্দ্র না ছাড়ার নির্দেশনাও দেওয়া হয় নেতাকর্মীদের। বিজয় সুনিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে রংপুরে অবস্থানের কথাও বলা হয়েছে।

শেষ মুহূর্তে গণসংযোগে নেতারা :
নির্বাচনী প্রচারের শেষ ‍দিনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার পক্ষে রংপুরের অলিগলি চষে বেড়িয়েছেন নেতাকর্মীরা। সকাল থেকে জাহাজ কোম্পানির মোড়ে জি এম কাদেরের নেতৃত্বে ভোটারদের মাঝে লিফলেট বিতরণ করা হয়। এ সময় দলের ভাইস চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম জহির, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক ভূইয়া, কেন্দ্রীয় সদস্য সুজন দে, শ্রমিক পার্টির সভাপতি আসরাফুজ্জামান, শেখ শান্ত, ইউনুস মৃধা, জাতীয় কৃষক পার্টির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন মামুন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপির পক্ষে কেন্দ্রীয় নেতা সুজন দের নেতৃত্বে ঢাকা মহানগর শ্যামপুর-কদমতলীর নেতাকর্মীরা গণসংযোগ করেন শহরের মডার্ন মোড়ে। এ সময় ঢাকা দক্ষিণের নেতা মাইনুদ্দিন বাবু, আলমগীর হোসেন, মো. মামুনসহ স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি, রাজশাহী মহানগর জাপার সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দিন বাচ্চু নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন কোর্ট চত্বর এলাকায়।

রংপুর শহর বাসস্ট্যান্ডে লাঙলের পক্ষে প্রচারে অংশ নেয় জাতীয় যুব সংহতি। সেখানে ভোটারদের কাছে দলীয় প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে ভোট দেওয়ার আহবান জানিয়ে লিফলেট বিতরণে অংশ নেন যুব সংহতির সভাপতি আলমগীর সিকদার লোটন, সাধারণ সম্পাদক ফকরুল আহসান শাহাজাদা, যুব নেতা মিয়া আলমগীর, জিয়াউর রহমান বিপুল প্রমুখ।

রংপুর রেলস্টেশন এলাকায় দলের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেয় জাতীয় ছাত্র সমাজ। এখানে সংগঠনের সভাপতি সৈয়দ ইফতেখার আহসান, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিরুসহ কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতারা অংশ নেন।

রংপুর ৭ ওয়ার্ডে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন এরশাদের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূইয়া। এ সময় তার সঙ্গে জাপা নেতা জিল্লুর রহমানসহ স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয় শ্রমিক পার্টির সভাপতি এ কে এম আসরাফুজ্জামান খাঁন এবং শেখ মো. শান্তর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল শহরে বিভিন্ন ব্যাংকে লাঙলের পক্ষে প্রচার চালান।

(ওএস/পিএস/ডিসেম্বর ১৯, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test