E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘অপপ্রচারে বিএনপিকে দুর্বল করা যাবে না’ 

২০১৮ এপ্রিল ০৩ ১৭:১৭:৪৬
‘অপপ্রচারে বিএনপিকে দুর্বল করা যাবে না’ 

স্টাফ রিপোর্টার : জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে নিতে সরকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘অপপ্রচার করে বিএনপির নেতৃত্ব দুর্বল করা যাবে না। আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি।’

মঙ্গলবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘বাংলা ইনসাইডার নামে একটি অনলাইন পত্রিকা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং প্রধানমন্ত্রীকে মিসগাইড করেছে। ’

বিএনপি আট নেতার অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগ দুদক তদন্ত করার ঘোষণা দেয়ায় দলটির পক্ষ থেকে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

অভিযুক্ত নেতারা হলেন, দলের স্থায়ী কমিটির চার সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও মির্জা আব্বাস।

অন্য চারজন হলেন দুই ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু ও এম মোর্শেদ খান, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল এবং স্থগিত ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়াল।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে একটি মিথ্যা মামলায় কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। হাইকোর্টে জামিন হওয়ার পরও আজকে নানা অযুহাতে বেগম খালেদা জিয়ার কারাবাসকে দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে। আমাদের অ্যাক্টিং চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিদেশে। আমাদের মহাসচিব অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে। এমনি সময়ে এ ধরনের একটি বানোয়াট গল্প-কাহিনি দুদক কর্তৃক প্রকাশিত এবং মিডিয়ায় প্রচারিত হওয়ায় আমরা আপনাদের এখানে কষ্ট দিতে ডেকেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বানোয়াট মনগড়া এই ধরনের খবরে দুদকের অনুসন্ধানের ঘোষণার এই প্রয়াসকে তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি। এই প্রয়াসের চেষ্টাকে আমরা মনে করি আমাদের যে সিনিয়র নেতৃবৃন্দ রয়েছে তাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে এবং বিএনপিকে নানাভাবে ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এই মিথ্যা রিপোর্টটি দুদক মিডিয়ার মাধ্যমে প্রকাশ করছে।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, এর আগে আমরা আপনাদের এখানে কষ্ট দিয়েছিলাম। যখন পত্র-পত্রিকায় আমাদের নেত্রী সম্পর্কে বানোয়াট কিছু কথা বের হয়েছিল যে দুবাইতে বেগম খালেদা জিয়ার নামে শপিংমল আছে, বিভিন্ন জায়গায় টাকা আছে, এমনকি আমার নামেও উঠেছিল সিঙ্গাপুরের একটি ফাইভস্টার হোটেলের আমি নাকি শেয়ারহোল্ডার। সেদিন আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছিলাম এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, মনগড়া। বেগম খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে আমাদের সবার ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এই সরকারের একটা নীল নকশার অংশ হিসেবে অপপ্রচার। এটা প্রমাণিত হয়েছে। আমি নিজে এটার চ্যালেঞ্জ করেছিলাম, আমি যদি সিঙ্গাপুরের কোনো ফাইভস্টার হোটেলের শেয়ারহোল্ডার হয়ে থাকি, ফাইভস্টার হোটেলের শেয়ার হোল্ডারদের লিস্ট ইন্টারনেটের মাধ্যমে বের করা যায়। সেটা জাতিকে জানানো হোক।’

তিনি বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে কথাটা হয়েছিল সেটা আপনাদের মনে আছে, বাংলা ইনসাইডার নামে একটি অনলাইন পত্রিকা এই ধরনের একটা বানোয়াট খবর প্রকাশ করেছিল। সেই খবরকে সূত্র ধরে সংসদে জনৈক সংসদ সদস্য এবং প্রধানমন্ত্রী এটার ব্যাপারে কোনো খোঁজ-খবর না নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি পার্লামেন্টে আমাদের নেত্রী সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন। এবং আমাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। আমরা যখন এর প্রতিবাদ জানালাম, প্রধানমন্ত্রীর কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল উকিল নোটিশের মাধ্যমে কিন্তু তিনি তার কোনো জবাব দেন নাই। কারণ এগুলো সবই মিথ্যা।’

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের প্রশ্ন, যে এটা যদি গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট হয়ে থাকে, তাহলে দুদকের কাছে গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট প্রথম যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আপনাদের আমি দেখালাম বাংলা ইনসাইডারে তারাও একই সূত্র ব্যবহার করেছে। আমাদের প্রথম প্রশ্ন বাংলা ইনসাইডার তাহলে কারা? কে বাংলা ইনসাইডারের মালিক, কারা এইটা পরিচালনা করছে। বাংলা ইনসাইডারের কাছে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার কোনো দায়বদ্ধতা আছে কি-না। তাদের কাছে রিপোর্টটি প্রথম দিতে হবে। তারপরে দুদকের কাছে। আর কোনো মিডিয়ায় গেলো না। বাংলা ইনসাইডারের কাছে কেন এই গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য গেল। এই গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট আবার দুদক তদন্ত শুরু করেছে। দুদকের কাউন্ডার পার্ট কি বাংলা ইনসাইডার কি-না। বাংলা ইনসাইডার মিথ্যা রিপোর্ট করে প্রধানমন্ত্রীকেও জড়িত করেছিল।’

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘মিথ্যা বানোয়াট তথ্য দিয়ে বাংলা ইনসাইডার দুদককে মিসগাইড করেছে। প্রধানমন্ত্রীকে মিস গাইড করেছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা যখন উকিল নোটিশের মাধ্যমে ব্যাখ্যা চাইলাম তার উত্তর কিন্তু তিনি দিতে পারলেন না। নিশ্চয় সেটা মিথ্যা ছিল। আজকেও বাংলা ইনসাইডারের একটি রিপোর্টের ভিত্তিতে দুদক এই ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে। দুদক একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান, দুদককে আজকে সরকার ব্যবহার করছে। একটি অনলাইন পত্রিকাও যদি এইভাবে ব্যবহার করে তাদের রিপোর্ট গ্রহণ করে যদি ফলাও করে প্রকাশ করে তা দুঃখজনক। দুদককে এমনিতেই সরকার ধ্বংস করে দিচ্ছে। তারপর কিছু মিডিয়া দুদকের ঘাড়ে সওয়ার হয়ে মিথ্যা অপপ্রচার করছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলা ইনসাইডারে যে নামগুলো এসেছিল দুদকে হ্যান্ডআউট থেকেও সেই নামগুলো পাওয়া গেছে। দুদকও একই কথা বলেছে গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট এবং ইনসাইডারও কিন্তু তাই বলেছিল। এখানে আমাদের অটজনের মধ্যে উপস্থিত চারজন আছেন। আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস মামলার কারণে কোর্টে আছেন, এ কারণে আসতে পারেন নাই। মোরশেদ খান সাহেব অসুস্থ থাকায় আসতে পারেন নাই। চারজন এখানে আছি। আমাদের সম্বন্ধে যে কথাগুলো বলা হয়েছে, আমরা নিজেরাই এর জবাব দিতে চাই।’

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘দশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে শাস্তি দেয়ার পরে এখানে আমরা যে আন্দোলন করব। আমাদের যে বিভিন্ন পরিকল্পনা আছে তারা মনে করেছিল ভাঙচুর ইত্যাদি করব। সরকারের পক্ষ থেকে তারা ভাঙচুর করার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছিল, ফাঁদে ফেলানোর জন্য, আমরা ফাঁদে পড়ি নাই। তাই সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক তিরস্কার করেন আমরা নাকি আন্দোলন করতে পারি না। আমাদের সঙ্গে নাকি জনগণ নেই। জনগণ যদি না থাকবে আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি চাই, তাহলে তারা দেয় না কেন? নিশ্চয়ই ভয় পায়। এটা তাদের একটা নীল নকশা, ইনশআল্লাহ তাদের এই নীল নকশা বাস্তবায়িত হবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা জানেন বাংলাদেশের অনেক ব্যাংক লুট হয়ে গেছে। রিজার্ভ লুট হয়েছে। কানাডায় বেগম পল্লী হচ্ছে, মালয়েশিয়র সেকেন্ড হোম হচ্ছে। কিছুদিন আগে এই সরকার স্বৈরাচার উপাধিতে ভূষিত হয়েছে। এই সব বিষয়গুলো থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে নেয়ার জন্য মিথ্যা প্রচার এবং অবান্তর বদনাম আমাদের ওপর দেয়া হচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই, প্রতিবাদ জানাই এবং তাদের আমরা আহ্বান জানাব এই ধরনের অপপ্রচার থেকে আপনারা বিরত থাকুন। অপপ্রচার করেও বিএনপিকে আপনারা দুর্বল করতে পারবেন না। আমাদের নেতৃত্বকে দুর্বল করতে পারবেন না। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব আমাদের আটজনের নামে বানোয়াট কথা আর আমরা ঘরে বসে যাব, আপনারা এটা আশা করবেন না।’

সংবাদ সম্মেলনে অভিযুক্ত অন্য নেতাদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মহামুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু উপস্থিত ছিলেন।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ০৩, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test