E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রক্তচোষার বাজেট বাড়াবে দ্রব্যমূল্য : বিএনপি

২০১৮ জুন ০৮ ১৩:২৪:৫২
রক্তচোষার বাজেট বাড়াবে দ্রব্যমূল্য : বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার : আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘রক্তচোষার’, ‘লুটের’ বাজেট আখ্যা দিয়েছে বিএনপি। দলের মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভী ‘বিশাল’ বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাকে ‘জনগণের পকেট কাটা’র পরিকল্পনা বলেছেন। তার দাবি, এই বাজেট পাস হলে বেড়ে যাবে জিনিসপত্রের দাম।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব করার পরদিন শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে এই বক্তব্য তুলে ধরেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব।

প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘নির্বাচনের আগে দলীয় নেতাকর্মীদের পকেট ভারী করার সুযোগ সৃষ্টি, জনগণের সঙ্গে ধাপ্পাবাজি’ উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি এই সম্পূর্ণরুপে প্রত্যাখান করছে।’

বাজেট পেশের দুই দিন আগেই রিজভী সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, বাজেট হবে গণবিরোধী। আবার বাজেট পেশের দিন সকালে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, এই বাজেট ‘লুটপাটের’, ‘ভুয়া’।

রিজভী তার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেট জনকল্যাণমূলক না হওয়ায় জনগণ হতাশ হয়েছে। তারা যেহেতু জনগণের সরকার নয়, আর এই সংসদ সদস্যরা যেহেতু জনগণের ভোটে নির্বাচিত নন, তাই তাদের কাছ থেকে জনকল্যাণমুখী বাজেট আশা করা যায় না।’

এই বাজেট পাস হলে সব জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে বলেও মনে করেন রিজভী। বলেন, ‘বাড়িঘরের ট্যাক্স বাড়বে, বাসাভাড়া বাড়বে, ফলে সামগ্রিকভাবে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা বিপাকে পড়বে।’

‘কারণ মূল্য সংযোজন করের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে। ভ্যাটের ব্যাপ্তি বৃদ্ধি পেলে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তরাই কষ্ট পাবে বেশি।’

বিএনপি নেতার দাবি, ‘চলতি আয়-ব্যয়ে বিশাল ঘাটতি থাকবে। কারণ আমদানি ব্যয় বাড়ছে, রপ্তানি আয় কমছে। রপ্তানি আয়ের তুলনায় আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মূলস্ফীতি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে।’

রিজভীর দাবি, ‘বাজেটে গরিবকে আরও গরিব করবে আর ধনীদেরকে আরও ধনী করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এমনিতে দারিদ্র্য কমার হার কমে যাচ্ছে। এ বাজেটে দারিদ্র্য কমার হার আরও কমে যাবে। কারণ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না, অর্থনীতির নতুন খাত তৈরি হচ্ছে না।’

বাজেটে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির কোনো সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা নেই বলেও মনে করেন রিজভী। তার দাবি, দেশে দেশে কর্মক্ষম বেকারের সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার কোটি। আর বাজেটে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা তেমনভাবে না রাখায় বেকার সমস্যা আরও বেড়ে যাবে।

প্রস্তাবিত বাজেট মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে না দাবি করে রিজভী বলেন, ‘মূলতঃ নির্বাচনকে সামনে রেখে সর্বশেষ লুটপাটের জন্যই এ বিশাল বাজেট পেশ করা হয়েছে। ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বাজেট বড় করা হয়েছে। বাজেটের আকার বড় করে জনগণের সঙ্গে ধাপ্পাবাজি করা হয়েছে।’

প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন অসম্ভব দাবি করে রিজভী বলেন, ‘এটা মানুষকে বোকা বানানোর বাজেট, এটা প্রতারণার বাজেট।’

গত অর্থবছরেও চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট দেওয়া হয়েছিল জানিয়ে বিএনপি নেতা বলেন, ‘কী দেখলাম, লুটপাট আর হরিলুট। সারা দেশের রাস্তা ঘাটের দিকে তাকান। দেশের ৮৫ হাজার কিলোমিটার সড়ক বর্তমানে বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে।’

মেগা প্রকল্পের নামে ‘বাঘা দুর্নীতি’ চলছে অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘গতবার এত বিগ বাজেট দেয়ার পরও বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে। আর দেশের উত্তরাঞ্চলের হতদরিদ্রের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

‘এবারেও অবকাঠামো খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে শুধু লুটপাটের জন্য। প্রস্তাবিত বাজেটেও মেগা দুর্নীতির জন্য সকল পথ খোলা রাখা হয়েছে।’

প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি পূরণে সরকার ব্যাংক, সঞ্চয়পত্র আর বিদেশি ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা করছে। তবে রিজভী মনে করছেন, এই ঘাটতি পূরণ করা অসম্ভব।

প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে দুই লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ হয়েছে। রিজভী বলেন, ‘যা জনগণের রক্ত চুষে আদায় করতে হবে। তাই এক কথায় বলা যায় প্রস্তাবিত বাজেট জনগণের রক্ত চোষার লুটের বাজেট।’

করপোরেট কর কমানোরও সমালোচনা করেন রিজভী। বলেন, ‘বাজেটে ব্যাংক লুটপাটকারীদের আরও সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। ব্যাংকের করপোরেট কর কমিয়ে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোরও কর কমিয়ে দেয়া হয়েছে।’

‘ব্যাংক মালিকরা যা চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী তাই করেছেন। ব্যাংক মালিকদের আরও বেশি লুটপাটের সুযোগ করে দেয়ার বাজেট এটি।’

আবার পোশাক খাতে করপোরেট খাতে কর বাড়িয়ে দেয়ারও সমালোচনা করেন রিজভী। তার মতে এতে পোশাক খাতের ‘দুরাবস্থা’ আরও বেড়ে যাবে।

একদিকে রিজভী বাজেটকে বিশাল বলেছেন, অন্যদিকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক খাতের মতো জনকল্যাণমূলক খাতে বরাদ্দ একেবারেই অপ্রতুল বলে মনে করছেন তিনি। তার মনে এ কারণে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে কোনো উন্নয়ন হবে না।

রিজভীর মতে, ‘দেশে সুশাসন না থাকায় বর্তমানে দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ নেই। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বন্ধ রয়েছে। শেয়ার মার্কেট থেকে বিদেশিরা বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছে।’

অর্থমন্ত্রী চলতি অর্থবছর থেকে সার্বজনীন পেনশন চালুর প্রস্তাব করেছেন। গত অর্থবছরের বাজেটে তিনি এই বিষয়টি নিয়ে দেয়া কথা রেখেছেন। এই বিষয়টি নিয়ে রিজভী বলেন, ‘এর আগেও সার্বজনীন পেনশনের কথা বলা হলেও বাস্তবায়ন হয়নি, এবারেও তাই।’

ফেসবুক, ইউটিউব, গুগলের ওপর কর আরোপের প্রস্তাবেরও সমালোচনা করেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘তথ্য প্রযুক্তির প্রশস্ত মহাসড়কে মানবজাতির বিচরণ। অথচ এই অবৈধ সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেছে। কিন্তু বাজেটে ইন্টারনেট, ফেসবুক, ইউটিউব, গুগল ব্যবহারের ওপর করারোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।’

প্রস্তাবিত বাজেটে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭.৮ পূরণ হবে না বলেও দাবি করেন রিজভী। বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ৭.৮ প্রবৃদ্ধি অসম্ভব।

‘কারণ দেশে সুশাসন নেই, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ নেই। কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই, রেমিটেন্স দিন দিন নিম্নগামী হচ্ছে। সুতরাং প্রবৃদ্ধির এই মাত্রা অর্জন করা কখনোই সম্ভব নয়। সুতরাং প্রস্তাবিত ৭.৮ প্রবৃদ্ধি ডাহা মিথ্যাচার।’

(ওএস/এসপি/জুন ০৮, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test