E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বিএনপির ভোটের প্রস্তুতি

২০১৮ আগস্ট ২৪ ১৫:২১:০২
বিএনপির ভোটের প্রস্তুতি

স্টাফ রিপোর্টার: দৃশ্যমান না হলেও ভেতরে ভেতরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। সেই সঙ্গে দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে আন্দোলনেরও ছক কষছে দলটি।

সম্প্রতি তৃণমূলের নেতাদের দেয়া মতামতকে প্রাধান্য দিয়েই পরিকল্পনা সাজাচ্ছে ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন বর্জন করা দলটি।

নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি পূরণ না হওয়ায় দশম সংসদ নির্বাচনে যায়নি বিএনপি। কেবল বর্জন নয়, এই ভোট ঠেকাতে ২০১৩ সাল থেকেই সহিংস আন্দোলন হয়েছে দেশে।

চলতি বছরের ডিসেম্বর বা আগামী জানুয়ারিতে একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখেও দাবি আদায়ে আন্দোলনের কথা বলে যাচ্ছেন নেতারা। কিন্তু আগেরবার যেমন দীর্ঘ সময় ধরে আন্দোলন হয়েছে, এবার তার কোনো নমুনাই দেখা যাচ্ছে না।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঈদ কাটাতে নিজ এলাকায় গিয়ে বলেছে, তারা কৌশলী ভূমিকা নিয়েছেন। আর আন্দোলন মানেই জ্বালাও পোড়াও নয়। এর আগেও ফখরুল বলেছেন, আন্দোলন মানেই হরতাল, অবরোধ নয়। অর্থাৎ বিএনপি আর গতবারের মতো কর্মসূচিতে যাচ্ছে না।

এর মধ্যেই তফসিলের সময় হয়ে গেল, নির্বাচন কমিশন জানাচ্ছে অক্টোবরের কোনো এক মাসেই ভোটের দিন তারিখ জানিয়ে দেবে। এর মধ্যেও সুনির্দিষ্ট কিছু বলছে না বিএনপি।

বিএনপির নেতারা জানান, ২০১৩ সালের আন্দোলনের সময় দাবি না মানলে ভোট বর্জন-এমন সরাসরি সিদ্ধান্ত নিয়েই এগিয়েছেন তারা। তবে এবার দাবি পূরণ না হলেও ভোটে অংশ নেয়ার চিন্তা করতেই হচ্ছে।

এর প্রধান কারণ, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইন। এই আইন অনুযায়ী পরপর দুইবার ভোট বর্জনকারী দলের নিবন্ধন বাতিল হতে পারে। আর দুই দফা আন্দোলনে নেমে ব্যর্থতা নিয়ে ঘরে ফেরা বিএনপিতেই চাপ দিয়ে কতটা সফল হওয়া যাবে সেই দুশ্চিন্তাও আছে।

এ জন্যই আন্দোলনের প্রস্তুতির পাশাপাশি দলের সাবেক ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা এবং নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও কাজ করছে বিএনপি।

এ ক্ষেত্রে তথ্য-উপাত্ত ও নেতাকর্মীদের মতামত এবং স্থানীয় জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর ভিত্তিতে একটি সারসংক্ষেপও তৈরি করা হবে।

বিএনপি নেতারা জানান, দলের ইশতেহার প্রণয়ন, প্রার্থী বাছাই এবং জোট এবং জাতীয় ঐক্যের শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে আলোচনায় সুবিধার জন্যই এই কাজ করা হবে।

তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত সমঝোতার পথ খোলা রাখাকে অগ্রাধিকার দেয়ার চিন্তাও করছে ক্ষমতা কাঠামোর বাইরে থাকা আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। নির্বাচন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বিএনপি সবসময় প্রস্তুত। আলাদা করে প্রস্তুতির প্রয়োজন পড়ে না।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘প্রথমত একটি নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে এবং এর মূল দায়িত্ব সরকারের পক্ষ থেকেই আসতে হবে। কিন্তু আন্দোলনকে এড়িয়ে চলার সুযোগ নেই। প্রতিটি আন্দোলনেরই একটি লক্ষ্য আছে। এখন সরকার সেই আন্দোলনের প্রতিক্রিয়া আমলে নেবে কি নেবে না, সেটা তার বিষয়। তবে আমাদের নির্বাচন, আন্দোলন সব দিকের প্রস্তুতি থাকবে।’

আন্দোলনের ‘রোডম্যাপ’

ভোটে আসার সিদ্ধান্ত হলে সেটি ঘোষণার আগে দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনের একটি ছকও কষতে হচ্ছে বিএনপিকে।

৭৮ সাংগঠনিক জেলার নেতাদের মতামত পর্যালোচনা করতে দুইদিন বৈঠক করেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। ওই বৈঠকে সাংগঠনিক জেলার ১৬০ নেতার বক্তব্য পর্যালোচনা করা হয়। যেখানে প্রায় সব নেতার বক্তব্যেই ‘খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে যাব না এবং আন্দোলনের বিকল্প নেই’- এমন মত উঠে এসেছে। এই মতামতকে সামনে রেখেই আগামী দিনের কর্ম পরিকল্পনা ঠিক করছে বিএনপি।

যে খসড়াটি প্রস্তুত করা হয়েছে সেটা চূড়ান্ত হবে ঈদের পর দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায়। তবে এর আগে লন্ডনে থাকা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে পাঠানো প্রস্তাবনায় তিনি মতামত দেবেন। নিজেদের পর্যালোচনা নিয়ে কারাবন্দি দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গেও কথা বলার চেষ্টা করবেন নেতারা।

দলের নেতারা জানিয়েছেন, দাবি আদায়ের জন্য অক্টোবর মাসকে সামনে ধরে চলতে চান তারা। আর সেপ্টেম্বরে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে মাঠে একাধিক কর্মসূচি দিয়ে নেতা-কর্মীদেরকে রাজপথে নামিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত বিশ্বাস করি, দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিয়েই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। তবে আমরা চাইলেই তো হবে না। দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি কোন দিকে যায়। তবে সব ধরনের প্রস্তুতি নেবে বিএনপি।’

মাঠে না নামলে মনোনয়নের বিবেচনায় নয়

কর্মসূচি ঘোষণা করার পর যারা মাঠে থাকবে না তাদের আগামী নির্বাচনে মনোনয়নের জন্য বিবেচনা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা।

আগামী এক মাস সাংগঠনিকভাবে দলকে আরও শক্তিশালী করার কাজ চলবে। ঢাকা মহানগরকে আলাদা গুরুত্ব দিয়ে এই সময়ের মধ্যে সারা দেশের ইউনিয়ন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেও সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে একটি বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের প্রক্রিয়াকে আনুষ্ঠানিকতার দিকে নিয়ে যেতে চান বিএনপির নীতি নির্ধারকরা।

জাতীয় ঐক্যের আশা

সরকারের বিরুদ্ধে ছোট ছোট বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের জোট যুক্তফ্রন্টসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক ঐক্যে আগ্রহী বিএনপি। এসব দলের কোনো শক্তি না থাকলেও তাদের নেতাদের বেশ পরিচিতি আছে। আর এটি কাজে লাগাতে চাইছে বিএনপি। এর মধ্যে আছেন প্রবীণ রাজনীতিক কামাল হোসেন, বিএনপিরই সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা আবদুল কাদের সিদ্দিকী ও মাহমুদুর রহমান মান্না, এরশাদ শাসনামলে ১৯৮৮ সাল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বর্জনের মুখে ১৯৮৮ সালে নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা আ স ম আবদুর রব।

এদের মধ্যে মান্না এই ঐক্যে আগ্রহী হলেও তারা অবাস্তব সংখ্যক আসন চেয়েছেন বিএনপির কাছে। ১৫০টি আসনে ছাড়ের দাবি করেছেন তারা। আবার বিএনপির দেড় যুগের জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে আপত্তি আছে কামাল হোসেনের। এসব প্রশ্নে আটকে আছে জাতীয় ঐক্য। আর এই ঐক্য আদৌ সম্ভব কি না, এ নিয়ে আলোচনাও আছে।

বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আলাপ আলোচনা চলছে। আশা করি দ্রুত একটা সমাধানে আসতে পারব। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো যে যার প্রয়োজনেই ঐক্যে আসবে। সেটা যদি সময়সাপেক্ষেও হয়।’

(ওএস/পিএস/আগস্ট ২৪, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test