E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মহাজোটে ফেরার চিন্তা আ.লীগের

২০১৮ আগস্ট ২৫ ১০:৪৪:০২
মহাজোটে ফেরার চিন্তা আ.লীগের

স্টাফ রিপোর্টার: ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির বাতিল হওয়া নির্বাচন আর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের মতোই বৃহত্তর নির্বাচনী জোট করেই আগামী নির্বাচনে যাওয়ার চিন্তা আছে আওয়ামী লীগে। তবে বিএনপি ভোটে এলেই কেবল এই জোটটি হবে।

এর আগের বৃহত্তর জোটটি ‘মহাজোট’ নামে পরিচিতি পেয়েছিল। এবারও একই নাম হবে আর এতে আগের মতোই জাতীয় পার্টি থাকবে। থাকতে পারে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের আরও বেশ কিছু দল।

তবে ২০১৪ সালের মতোই বিএনপি ভোট বর্জন করলে ১৪ দলই হবে ক্ষমতাসীন দলের জোট। কারণ, তখন ভোটে জেতা কোনো চ্যালেঞ্জ হবে না বলেই মনে করছেন নেতারা।

আওয়ামী লীগের সম্পাদকদমণ্ডলীর একাধিক সদস্য বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। একজন বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে এলে আমরা জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোটগতভাবেই অংশ নেব। আর বিএনপি না এলে জাতীয় পার্টি আলাদা নির্বাচন করবে।’

অবশ্য আওয়ামী লীগের ধারণা বিএনপি এবার ভোটে আসবেই, আর এ কারণেই নির্বাচনী জোট করার বিষয়টি নিয়েও তলে তলে আলোচনা এগিয়ে গেছে, এখন কেবল ঘোষণা বাকি।

২০০৬ সালে কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে মেনে না নেয়ার ঘোষণা দিয়ে আন্দোলনের মুখে যখন বিএনপির রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার শপথ নেয়, তখন ভোট হওয়ার কথা ছিল ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি। কিন্তু ইয়াজউদ্দিনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্টতার অভিযোগ তুলে আন্দোলন চালিয়ে যায় আওয়ামী লীগ আর বিরোধী প্রধান প্রায় সব কটি দল মিলে গঠন হয় মহাজোট।

মহাজোটের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণার মধ্যেও বিএনপি-জামায়াত জোট যখন একতরফা নির্বাচন করতে যাচ্ছিল তখন ১১ জানুয়ারি জারি হয় জরুরি অবস্থা, প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকে রাজনীতি। আর ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে মহাজোট থেকে একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারা আর অলি আহমেদের এলডিপির সঙ্গে আওয়ামী লীগ সমঝোতা আর করেনি। কিন্তু জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলের সঙ্গে জোটও তখন মহাজোট হিসেবেই থেকে যায়।

২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি আলাদা হয়ে গেলে মহাজোট ভেঙে যায়। ভোট বর্জনের ঘোষণাও দেন এরশাদ। কিন্তু তার স্ত্রী রওশন এরশাদের নেতৃত্বে একটি অংশ ভোটে যায় এবং অনিচ্ছা সত্ত্বেও এরশাদ রংপুর সদর আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

এরই মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময় ঘোষিত হয়েছে। সুনির্দিষ্ট তারিখ না এলেও নির্বাচন কমিশন জানিয়েছেন ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারিতে হবে নির্বাচন আর তফসিল হবে অক্টোবরে।

নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট আবার ভোট বর্জনের হুমকির পাশাপাশি প্রতিদ্বন্দ্বিতার চিন্তাও নিয়ে রেখেছে বলে জানাচ্ছেন নেতারা। তারা সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গঠনের চেষ্টা করছে।

আওয়ামী লীগের ধারণা, রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিলের ঝুঁকি নিয়ে বিএনপি টানা দ্বিতীয়বার ভোট বর্জন করবে না। এ কারণে তাদের মোকাবেলায় নিজেদের শক্তিবৃদ্ধির জন্য জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলোচনা সেরে রেখেছে তারা। পাশাপাশি কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের আবদুল কাদের সিদ্দিকী, সাবেক বিএনপি নেতা নাজমুল হুদার তৃণমূল বিএনপিসহ বেশ কিছু বাম দলের সঙ্গে জোট করার বিষয়ে আলোচনা চলছে। আরও কিছু দলকে আলোচনার প্রস্তাবও দেয়া হবে।

আওয়ামী লীগ নেতারা জানাচ্ছেন, বিএনপি যেমন ডানপন্থী ও প্রতিক্রিয়াশীল সব দলকে একত্রিত করেছে, তেমনি তারাও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি এবং প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলোকে এক করতে চান।

এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সমালোচক বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাম জোটভুক্ত বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন, গণসংহতি আন্দোলন ও বাসদকেও (মার্ক্সবাদী) এক ছাতার নিচে আনার চেষ্টা করবে তারা।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কেউ যদি আমাদের সঙ্গে আসতে চায় তাহলে আমরা আমাদের পরিসরে আলোচনা করব। আমাদের জোটের শরিকদের সাথে কথা বলে সেটা আমরা বিবেচনা করব।’

ঢাকাটাইমসকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, নৈরাজ্য বিরোধী মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল দলের সঙ্গেই আমরা জোট করতে পারি।’

‘আমরা রাজনীতি করি দেশের মানুষের জন্য, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়। তবে আমরা ক্ষমতায় আসতে পেরেছি বলেই দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের শাস্তি হয়েছে। দেশ থেকে হত্যা, সন্ত্রাস, দুর্নীতি দূর করতে পেরেছি ‘

‘অন্যদিকে বিএনপি যদি ক্ষমতায় থাকত তাহলে দেশের আজকের পরিস্থিতি কী হতো, সেটা ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের তাদের ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ের চিত্র দেখলেই বোঝা যাবে। তাই বলতে পারি মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সব শক্তির সঙ্গেই আমাদের আদর্শিক জোট হতে পারে।’

দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে আমরা নির্বাচনের কৌশলগত কারণে মহাজোট করেছিলাম। এখন আগামী নির্বাচনে সেই মহাজোট হবে কি না, সেটা সময়েই বলে দেবে।’

‘নির্বাচনের প্রয়োজন হলে আমরা আবারও মহাজোট করব। তবে যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, এমন কারো সঙ্গে আমরা অতীতেও নির্বাচনী জোট করি নাই, আর ভবিষ্যতেও করবো না।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘জোট সম্প্রসারণের চিন্তাভাবনা আমাদের রয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা করতে পারি নাই। আলোচনা করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব। নির্বাচন এখনও দেরি আছে, নির্বাচনী পরিবেশ দেখেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

(ওএস/পিএস/আগস্ট ২৫, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test