E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নূর হোসেনকে ‘মূর্খ-দরিদ্র টাইপের লোক’ আখ্যা জাপার সভায়

২০১৮ নভেম্বর ১০ ১৭:৩৬:৫৩
নূর হোসেনকে ‘মূর্খ-দরিদ্র টাইপের লোক’ আখ্যা জাপার সভায়

স্টাফ রিপোর্টার : হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে শহীদ হওয়া নূর হোসেনকে দেশের ‘গণতন্ত্রের প্রতীক’ মনে করা হলেও এরশাদের দল জাতীয় পার্টির (জাপা) সভায় সেই শহীদের ব্যাপারে বলা হলো, ‘তথাকথিত নূর হোসেন একজন অল্প শিক্ষিত, মুর্খ ও দরিদ্র টাইপের লোক। তাকে বলির পাঠা করা হয়েছিলো।’ আর যেই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে প্রাণ হারিয়েছিলেন নূর হোসেন, সেই এরশাদকে বলা হলো ‘গণতন্ত্রের মানসপুত্র’।

শনিবার (১০ নভেম্বর) রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে ‘গণতন্ত্র দিবস’ পালনে এক সভার আয়োজন করা হয়। সেখানেই নূর হোসেন ও এরশাদকে এভাবে উত্থাপন করেন জাতীয় পার্টির নেতারা। ১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবসকে ‘গণতন্ত্র দিবস’ পালন করে আসছে জাপা।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায় বলেন, ‘তথাকথিত নূর হোসেন একজন অল্পশিক্ষিত, মূর্খ ও দরিদ্র টাইপের লোক। আর্টিস্ট দিয়ে তার বুকে-পিঠে শ্লোগান লিখে, সাজিয়ে-গুছিয়ে নিয়ে আসা হয়। আমাদের পূজোর সময় পাঁঠাকে গোসল করিয়ে, তেল-সিঁদুর মেখে, ঠাকুরের সামনে এনে বলি দেয়, ঠিক তেমনি। প্রাণ যায় পাঁঠার, পূণ্য হয় আমার। তেমনি নূর হোসেনকে বলির পাঁঠা করা হয়েছিলো। আর ফল ভোগ করে অন্যরা। নূর হোসেন গণতন্ত্রের জন্য আত্মহুতি দেননি। তাকে পেছন থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিলো।’

জাতীয় পার্টির আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ বলেন, ‘প্রতিদিনই অগণতান্ত্রিকভাবে র‌্যাব, পুলিশ, অন্যরা মাদক প্রতিরোধের নামে, সন্ত্রাস দমনের নামে মানুষ মারছে। তাতে গণতন্ত্রের কিছু হচ্ছে না। অথচ এক নূর হোসেনে গণতন্ত্র চলে গেলো! এরশাদ স্বৈরাচার হয়ে গেলেন! তিনি গণতন্ত্রকে হত্যা করেননি। তিনি গণতন্ত্রের মানসপুত্র।’

পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর পর এদেশের মানুষকে যদি কেউ ভালোবেসে থাকেন, তবে তিনি এরশাদ। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর পর যদি কেউ এদেশের উন্নতি করে থাকেন, তবে তিনি এরশাদ। তাই নূর হোসেন দিবস হিসেবে নয়, আগামী বছর থেকে ১০ নভেম্বর জাতীয় পার্টি সারাদেশে পালন করবে ‘গণতন্ত্র দিবস’ হিসেবে। কারণ ১৯৮৪ সালের এই দিনে এরশাদ ঘোষণা করেছিলেন, দেশে আর কোনোদিন সামরিক আইন বা শাসন আসবে না।’

জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘নূর হোসেন একটি এজেন্ডার নাম। কে আনলো তাকে? আজ ২৮ বছরেও কেনো তার হত্যার তদন্ত শেষ হলো না? কোথায় সেই মামলা? কেনো তা শেষ হয় না? কারা সেই মামলার আসামি? কেনো তারা বিচারের বাইরে? কিছু দিনের মধ্যেই একদল মানুষ নূর হোসেনের হত্যকারী হিসেবে ঘৃণিত হবে, অন্যদিকে এরশাদ গণতন্ত্রের ধারক-বাহক হিসেবে পরিগণিত হবেন। তাই নূর হোসেন নূর হোসেন খেলা বন্ধ করুন।’

জাপার মহাসচিব বলেন, ‘গণতন্ত্রের সংজ্ঞা হলো মানুষ নিজের ভোট নিজে দেবে। ব্যালটের মাধ্যমে ক্ষমতার বদল হবে। এবার খুঁজে দেখুন, কারা নির্বাচনে আসে না। কারা নির্বাচনকে ভয় পায়। এবারও আসবে কিনা সেটাও ঠিক নেই। নূর হোসেনকে তারাই খুন করেছেন, যারা ৯০ এর পর ক্ষমতায় আছেন। যারা নির্বাচনকে ভয় পান। এরশাদ খুন করেননি। তিনি একজন কবি-সাহিত্যিক মানুষ।’

পার্টির কো- চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের) বলেন, ‘গণতন্ত্রের নামে এই দিনে (১০ নভেম্বর) মানুষ অকারণে আমাদের নেতা ও দল সম্পর্কে কলঙ্ক লেপণ করে। অপবাদ দেয়। এরশাদকে স্বৈরাচার বলাও একটা মিথ্যা কালো কৌতুক। কারণ গণতন্ত্র অ্যাবসোলুট কিছু নয়। এটাও ‘ভালো’র মতো কিছু। কারও কাছে বেশি ভালো, কারও কাছে কম।

বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন-সংগ্রামে এক অবিস্মরণীয় দিন ১০ নভেম্বর, অবিস্মরণীয় নাম নূর হোসেন। ১৯৮৭ সালের এই দিনে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদ হন নূর হোসেন। সেদিন হাজারো প্রতিবাদী যুবকের সঙ্গে জীবন্ত পোস্টার হয়ে রাজপথে নেমে এসেছিলেন যুবলীগ কর্মী নূর হোসেন। তার বুকে-পিঠে উত্কীর্ণ ছিল ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক’ শীর্ষক জ্বলন্ত স্লোগান। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অকুতোভয় সেই যুবকের অগ্নিঝরা স্লোগান সহ্য হয়নি তত্কালীন স্বৈরশাসকের। স্বৈরাচারের লেলিয়ে দেওয়া বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালিয়ে তার বুক ঝাঁঝরা করে দেয়। নূর হোসেনের সেই আত্মত্যাগেই ওই সময় স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকামী মানুষের আন্দোলন বেগবান হয়। সেই লড়াই-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটে।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ১০, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

০৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test