E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ক্যান্সারের কাছে পরাস্ত খোকার রাজনীতি!

২০১৪ জুলাই ২৬ ১৬:১৩:১৪
ক্যান্সারের কাছে পরাস্ত খোকার রাজনীতি!

সিলেট প্রতিনিধি : সর্বদা রাজনীতি ও ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা ঢাকা মহানগর বিএনপির বিদায়ী আহ্বায়ক ও সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা নিউইয়র্কে অলস দিন কাটাচ্ছেন।

চিকিৎসার জন্য তিনি সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তিনি কী রোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন তা নিয়ে ঘনিষ্ঠজনেরা দিচ্ছেন নানান তথ্য। তবে সাদেক হোসেন খোকা এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, তার ক্যান্সার ধরা পড়েছে। প্রথম ধাপেই রোগ নির্ণয় হওয়ায় তা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। শারীরিক অবস্থাও এখন আগের চেয়ে ভালো। আগামী ৬ আগস্ট পরবর্তী চেকআপের দিন ধার্য করেছেন চিকিৎসক। পরের দিন ৭ আগস্ট হবে কনসালটেশন। এরপর জানা যাবে তার পরবর্তী করণীয়।

৩ মাস আগে দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সস্ত্রীক যুক্তরাষ্ট্রে যান সাদেক হোসেন খোকা। প্রথমে ওঠেন নিউইয়র্কে বোনের বাড়িতে। পরে বাসা ভাড়া নেন কুইন্সের ইস্ট এলমহার্স্টে। সাদেক হোসেন খোকা যে মুহূর্তে নিউইয়র্কে আসেন তখন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কয়েক দফায় সরকার পতনের আন্দোলনের হুমকি দেন। কিন্তু খালেদা জিয়ার আন্দোলনের হুমকির চেয়ে নেতা-কর্মীদের কাছে গুরুত্ব পায় সংগঠনকে সক্রিয় করার বিষয়টি। তৃণমূল থেকেও সেরকমই দাবি ওঠে। আর প্রথমেই সামনে আসে ঢাকা মহানগর কমিটি পূনর্গঠন। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন সাদেক হোসেন খোকা। তখনই তার ঘনিষ্ঠজনেরা মিডিয়ার কাছে জোরেশোরে প্রচার করে যে তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত। কেমোথেরাপিও নিচ্ছেন। সাদেক হোসেন নাকি এসব নিয়ে কথাও বলেছেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে।

ঢাকা মহানগর কমিটি গঠনের আগে ও পরে সাদেক হোসেন খোকার অসুস্থতার খবর নিয়ে নিউইয়র্কে নানান নাটকীয়তা লক্ষ্য করা গেছে। কমিটি গঠনের আগে তার ঘনিষ্ঠজনেরা ক্যান্সার ধরা পড়া এবং কেমোথেরাপি নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালান। তারা ঢাকার মিডিয়াপাড়ায়ও খবরটি ছড়িয়ে দেয়। কিন্তু ঢাকা মহানগর কমিটি গঠনের পর যারাই এ প্রচারণা চালিয়েছেন তাদের অনেকেই এখন চুপসে গেছেন। মিডিয়ার সঙ্গে এখন তারা কথা বলতে অনাগ্রাহী। বরং জানতে চাইলে তারা সাদেক হোসেন খোকার মোবাইল নম্বরটি দিয়ে দিচ্ছেন। এমনকি গণমাধ্যমে ক্যান্সারের খবর বের হলে ঘনিষ্ঠজনদের কেউ কেউ বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কিত এক ঘনিষ্ঠজন এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, ক্যান্সারের খবরে স্বয়ং সাদেক হোসেন খোকা মর্মাহত হয়েছেন।

সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র দাবি করেছে, সাদেক হোসেন খোকার কিডনি সমস্যা ছিল। সেই রোগের চিকিৎসা করিয়েছেন তিনি সিঙ্গাপুরে। কিন্তু ডাক্তার কিডনির সমস্যা নিরাময় করতে পারেননি। সূত্রটি দাবি করেছেন, সাদেক হোসেন খোকার কিডনিতে ইনফেকশন দেখা দিয়েছিল। কিডনির সমস্যা দূর করতে তিনি নিউইয়র্কে এসেছেন এবং তিনি গত তিন মাসে কমপক্ষে দুবার ডায়ালাইসিস করিয়েছেন। এটাকে তার নিকটজনেরা ক্যান্সার এবং তিনি কেমোথেরাপি বলে চালিয়ে দিয়েছেন। অবশ্য প্রচারণার পেছনেও একটি রাজনৈকি দুরভিসন্ধি ছিল বলে সূত্রটি দাবি করছে।

সূত্র মতে, সাদেক হোসেন খোকা ক্যান্সার আক্রান্ত না হলেও কিডনির সমস্যায় শারীরিকভাবে অসুস্থ। এ মুহূর্তে তিনি কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয়ে জেল খাটতে রাজি নন। এ কারণেই তিনি ঢাকা মহানগর কমিটির দায়িত্ব নিতে চাননি। অথচ একসময় এই কমিটির সভাপতি হতে তিনি রাজপথে সক্রিয় ছিলেন। পরে কমিটি না হলেও সাদেক হোসেন খোকা আহ্বায়ক মনোনীত হন। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সে অবস্থান থেকে সরে আসেন তিনি। অসুস্থাজনিত কারণ দেখিয়ে তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে সরে আসেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও বেশ কয়েকবার ফোনে সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এ সময় সাদেক হোসেন খোকা তার শারীরিক অবস্থার বর্ণনা করে এই মুহূর্তে রাজনীতিতে নিজের অংশগ্রহণের অপারগতা তুলে ধরেন। এর পরপরই মীর্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক এবং হাবিব উন নবী সোহেলকে সদস্য সচিব করে ঢাকা মহানগর কমিটি গঠন করা হয়। এ প্রসঙ্গে সাদেক হোসেন খোকা এ প্রতিবেদককে বলেন, 'আমি নেত্রীকে বলেছি এই কঠিন (ক্যান্সার) রোগ নিয়ে এত ভারী দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়। পদও ধরে রাখতে চাই না। নতুন কমিটিতেও আমার অবস্থান ধরে রাখতে চাই না।' নতুন কমিটি আন্দোলনে কতটুকু সফল হতে পারবে এ প্রসঙ্গে সাদেক হোসেন খোকা বলেন, 'এটা আগামী দিনে বোঝা যাবে।'

জানা গেছে, সাদেক হোসেন খোকা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশে অবস্থান করতে রাজি নন। তবে আগামী মাসের (আগস্ট) মাঝামাঝি তিনি একবার দেশে আসবেন। আবার ফিরে গিয়ে দীর্ঘসময় আমেরিকায় থাকতে চান। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় বাড়ি কিনতেও আগ্রহী। ঘনিষ্ঠজনদের মাধ্যমে বাড়ির খোঁজও নিচ্ছেন। বর্তমানে নিউইয়র্কের ভাড়া বাড়িতেই তিনি উঠবেন। তার মেয়ের জন্য এ বাড়িটি ভাড়া নেয়া হয়েছে।

অন্য একটি সূত্র জানায়, আগামী ৭ আগস্ট নিউইয়র্কের চিকিৎসক সাদেক হোসেন খোকাকে রিলিজ করে দিতে পারেন। আপাতত তার চিকিৎসার প্রয়োজন হবে না। এ কারণেই তিনি ১৫ আগস্ট দেশে আসতে পারেন। তবে এ প্রসঙ্গে সাদেক হোসেন খোকা বলেন, তার ক্যান্সার ওষুধেই নিরাময়যোগ্য। যে কারণে তাকে কোনো প্রকার কেমো নিতে হয়নি। তিনি নিউইয়র্কের বিশ্বখ্যাত ক্যান্সার বিশেষায়িত হাসপাতাল মোমেরিয়াল স্লোয়ান কেটারিংয়ের চিকিৎসক জেমস জে. শিহ-এর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সুস্থ হলে দেশে আসার কথাও জানান সাদেক হোসেন খোকা।

এদিকে, চিকিৎসাকালীন নিউইয়র্কের ভাড়া বাসায় অলস সময় কাটাচ্ছেন সাদেক হোসেন খোকা। সারা দিন শুয়ে বসে টিভি দেখে দিন কাটছে তার। কখনো ঘনিষ্ঠজনেরা দেখা করছেন তার সঙ্গে। সাদেক হোসেন খোকার ব্যক্তিগত সহকারী সিদ্দিকুর রহমান মান্নাও নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন। মান্নাই তার দেখাশোনা করছেন। অন্যদিকে সদ্য নিউইয়র্কে আসা ঢাকার একজন সাংবাদিকও সাদেক হোসেন খোকার দেখভাল করছেন। যদিও ক্যান্সারের রোগীর কারো সঙ্গে দেখা সাক্ষাতের ব্যাপারে বাধ্যবাধকতা থাকে। সাদেক হোসেন খোকার ব্যাপারে সে রকম কিছু আছে কীনা তা জানা সম্ভব হয়নি। তবে সাদেক হোসেন খোকাই অসুস্থ শরীরে কারো সঙ্গে দেখা সাক্ষাত পছন্দ করছেন না। তিনি স্থানীয় বিএনপি, সমমনা, এমনকি কমিউনিটির কোনো অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন না। তবে সুস্থ হলে লোকজনের সঙ্গে সাক্ষাত, এমনকি কমিউনিটির অনুষ্ঠানেও যাবেন বলে এ প্রতিবেদককে জানান সাদেক হোসেন খোকা। তবে ঘনিষ্ঠজনেরাই মন্তব্য করছেন, ক্যান্সারের কাছে পরাস্ত হয়ে রাজনীতি থেকে স্বেচ্ছায় নির্বাসনে গেছেন একসময়ের রাজনীতিতে প্রভাবশালী নেতা ও ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা। (সূত্র: ইত্তেফাক)

(ওএস/এটিআর/জুলাই ২৬, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test