E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

হেফাজতের দুই নেতার দল বদল

২০১৪ এপ্রিল ২০ ১৩:২৭:৩৬
হেফাজতের দুই নেতার দল বদল

স্টাফ রিপোর্টার : সরকারের সঙ্গে সমঝোতার রেশ ধরে আকস্মিক দল বদল করেছেন ঢাকা মহানগর হেফাজতে ইসলামের দুই নেতা। এতে ব্যাপক তোলপাড় চলছে ধর্মভিত্তিক বড় দু’টি দলে। বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে ইসলামপন্থি দলগুলোর ভেতরে। দেখা দিয়েছে প্রকাশ্য বিভক্তি। যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে ১৩ দফা ইস্যুতে হঠাৎ গর্জে ওঠা  হেফাজতে ইসলামের ওপর। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

সূত্র জানায়, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতার রেশ ধরে ১৯ দলীয় জোটের শরিক ইসলামী ঐক্যজোট ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসে বিভক্তি দেখা দেয়। শুরু হয় টানাপড়েন। শুক্রবার এ দু’টি দলের শীর্ষস্থানীয় মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী ও জুনায়েদ আল হাবিব জমিয়তে উলামায়ে ইসলামে যোগ দেন। এদের সঙ্গে ওই দলের জেলা পর্যায়ের শতাধিক নেতাও ছিলেন বলে দলটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। এতে হেফাজতে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত ইসলামী ঐক্যজোট ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভেতর তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। উভয় দল এই খবরের তাৎক্ষণিক জোরালো প্রতিবাদও জানায়।

সূত্র মতে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয়ভাবে প্রার্থী না দেয়ার সিদ্ধান্ত থাকলেও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ৩ নেতা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আপস করে ৯টি আসনে প্রার্থী মনোনয়ন দেন।

তারা হলেন- আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান বুলবুলি, শায়খুল হাদিসপুত্র মাওলানা মাহমুদ, বহিষ্কৃত মহাসচিব হুমায়ুন কবীর। এরপরই মূলত অস্থিরতা তৈরি হয় দলটিতে। এর রেশ ধরে হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর এবং অন্যতম নীতি-নির্ধারক মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, যুগ্ম মহাসচিব তাফাজ্জুল হক আজিজ, মাওলানা জুবায়ের আহমদ আনসারী, মাওলানা খোরশেদ আলম কাসেমীসহ অর্ধশতাধিক নেতা জমিয়তে উলামায়ে ইসলামে যোগ দেন।

এ ঘটনায় গতকাল শনিবার জরুরি বৈঠক করে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। বৈঠক থেকে বলা হয়, শায়খুল হাদীস আজিজুল হক এর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত খেলাফত মজলিস শুরু থেকে এ পর্যন্ত নিরলসভাবে আন্দোলন-সংগ্রাম করে যাচ্ছে। এ সংগঠন এখনও শায়খের আদর্শ লালন করে যথাযথ কর্মসূচি ও কর্মপন্থা অবলম্বন করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তাই বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের গুজবে কান দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদেরকে সকল বাতিল এবং তাগুতের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ চালিয়ে যেতে হবে। যুগে যুগে ইসলামী আন্দোলন ও সংগঠন নানামুখী সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছে। আল্লাহ্‌র দ্বীনের সৈনিকেরা নিজেদের জীবনের বিনিময়ে ইসলামের সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তাই কোনো ধরনের বিভ্রান্তিতে কান না দিয়ে যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্ব আদায় করতে হবে। এবং আল্লাহ্‌র দ্বীন বিজয় হওয়া পর্যন্ত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

সভায় সংগঠনের নায়েবে আমীর মাওলানা যুবাইর আহমদ আনসারী, মাওলানা খুরশিদ আলম কাসেমী, মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ উপস্থিত ছিলেন। ওদিকে ইসলামী ঐক্যজোটের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগর সদস্য সচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিবও যোগ দিয়েছেন জমিয়তে ইসলামে। নিজ দলে ক্রমাগত উপেক্ষার শিকার হয়েই তিনি দল ত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা যায়। যদিও তিনি তা অস্বীকার করেছেন।

এ ব্যাপারে জমিয়তের প্রচার সম্পাদক ওয়ালীউল্লাহ আরমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী এবং ইসলামী ঐক্যজোটের ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীবের নেতৃত্বে উভয় সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের শতাধিক নেতা জমিয়তে উলামায়ে ইসলামে যোগ দিয়েছেন। রাজধানীর মিরপুরস্থ কার্যালয়ে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তারা উপমহাদেশের প্রাচীনতম ও ঐতিহ্যবাহী সংগঠন জমিয়তের কার্যক্রম ও আদর্শের প্রতি পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করে সংগঠনের ফরম কেটে প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণ করেন।

যোগদান অনুষ্ঠানে জমিয়তের নির্বাহী সভাপতি মোস্তফা আজাদ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে ইসলামী ঐক্যজোটের সহকারী মহাসচিব ও প্রচার সম্পাদক মাওলানা আহলুল্লাহ ওয়াসেল, সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন ও দপ্তর সম্পাদক মাওলানা রিয়াজতুল্লাহ গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব কোনদিনই ইসলামী ঐক্যজোটের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন না এবং বর্তমানে তিনি জোটের নির্বাহী কমিটির কোনো পদেও নেই। মুফতি আমিনী’র জীবদ্দশাতেই সাংগঠনিক কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয়তার পাশাপাশি দলের শৃঙ্খলা-বিরোধী কাজে লিপ্ত থাকার কারণে ইসলামী মোর্চা (খেলাফতে ইসলামী) এর মহাসচিব থেকে এবং ইসলামী ঐক্যজোটের যুগ্ম মহাসচিবের পদ থেকে তাকে অব্যহতি দেয়া হয়। তারপর থেকে ইসলামী ঐক্যজোটের কোন কার্যক্রমের সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত নন। এমনকি জীবনের শেষ বেলায় মুফতি আমিনী দীর্ঘ ২১ মাস গৃহবন্দী থাকা অবস্থায়ও তিনি তার (মুফতি আমিনীর) ধারে কাছেও আসেননি। সুতরাং এ নিয়ে বিভ্রান্ত হওয়ার অবকাশ নেই।


(ওএস/এটি/এপ্রিল ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test