E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মিরাজ হত্যার এক বছর : অগ্রগতি নেই তদন্তে

২০১৪ ডিসেম্বর ১৫ ১৮:০০:৩১
মিরাজ হত্যার এক বছর : অগ্রগতি নেই তদন্তে

রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুরের রায়পুর পৌর শহরের  দেনায়েতপুর এলাকার আবুল কালামের পুত্র জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিরাজুল ইসলাম মিরাজ (২৬) গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর খুন হন। সোমবার ওই হত্যাকাণ্ডের একবছর পূর্ণ হলো। মিরাজের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে পরিবার ও ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে রায়পুরে দিনব্যাপী কোরআনখানি, মিলাদ, শোকযাত্রা ও স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেলে পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক জামশেদ কবির বাক্কি বিল্লাহর অফিসে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে নিহতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

গত এক বছরে পুলিশ হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। ছাত্রলীগ নেতাদের অভিযোগ, তদন্ত কর্মকর্তার গাফিলতির কারণে এমনটা হয়েছে। তবে পুলিশ সূত্রের দাবি, রায়পুর উপজেলার কোরোয়ায় মিরাজকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ সময় তাঁর সঙ্গে থাকা দুই মোটরসাইকেল আরোহীকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছিল। ঘটনার পর মিরাজের বাবা রায়পুর থানায় জামায়াত-শিবিরের ১১ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। পরে লক্ষ্মীপুর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীসহ ১০ জনের নামে সম্পূরক এজাহার দায়ের করেন। এতে মামলার আসামি নিয়ে ধোঁয়াশায় পড়েন তদন্ত কর্মকর্তা।

পুলিশ জানায়, রায়পুর পৌরসভার দেনায়েতপুর এলাকার সর্দার বাড়ির ছেলে মিরাজ। তিনি বিএনপি-জামায়াতের অবরোধ চলাকালে মোটরসাইকেলে যুবলীগকর্মী মাসুদ হোসেন ও সোহেলকে নিয়ে কোরোয়ার ভূঁইয়ার হাটে যান। সেখান থেকে মীরগঞ্জ সড়ক হয়ে রায়পুর আসার পথে ভাঁটের মসজিদ এলাকায় পৌঁছালে শসস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। তাদের পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে। ঘটনাস্থলে প্রচুর রক্তক্ষরণে মিরাজ মারা যান। তাঁর মাথা, কপাল, বুক ও পাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে কোপানোর চিহ্ন ছিল। পরদিন ঘটনাস্থল এলাকার জামায়াত নেতা হাফেজ ইউছুফ ও শিবির নেতা পরানসহ ১১ জনের নাম উলে¬খ ও অজ্ঞাতপরিচয় আরো ১৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়।

ঘটনার পর মামলায় জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের আসামি করা হলেও রহস্যজনক কারণে তাদের অব্যাহতি দেওয়ার জন্য বাদী ৫ ফেব্রুয়ারি লক্ষ্মীপুর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেন। এ সময় তিনি একটি সম্পূরক এজাহার দেন। এতে রায়পুরের চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী রাজু, হারুনসহ ১০ আসামির নাম উল্লেখ করেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, আদালতে নতুন করে দাখিল করা এজাহারের ঘটনার সময় মিরাজের সঙ্গে জখম হওয়া মাসুদ এবং সোহেলকেও আসামি করেন। অন্যদিকে ঘটনার পর আহত মাসুদ বাদী হয়ে লক্ষ্মীপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামায়াত-শিবিরের আট নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন।

পুলিশ জানায়, রায়পুর থানা ও আদালতে দায়ের করা পৃথক দুটি এজাহারে ২১ জনের নাম ও অজ্ঞাতপরিচয় ১৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়। ঘটনার পর বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে মামলার আসামি শিবির নেতা পরান ও মাদক ব্যবসায়ী রাজুসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে হারুনসহ দুই মাদক ব্যবসায়ী উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন।


মিরাজের বাবা মৎস্য ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, 'মামলা প্রত্যাহার করতে বিভিন্নভাবে আমাকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। পুলিশের তদন্তে মোবাইল কললিস্ট অনুযায়ী যাদের নাম এসেছে তাদেরকেই মামলায় আসামি করা হয়েছে।' হত্যার ঘটনায় প্রকৃত অপরাধীরা যেন পার পেয়ে না যায় সে জন্য তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।'

সদ্য বিলুপ্ত লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান পাটোওয়ারী বলেন, 'মিরাজ হত্যার তদন্তকারী কর্মকর্তার সঙ্গে আসামিদের সখ্য রয়েছে। তিনি লোকদেখানো তদন্ত ও অভিযান চালাচ্ছেন। বিষয়টি পুলিশ সুপারসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা বদল করে গোয়েন্দা পুলিশে হস্তান্তর করা হলে মামলাটি আলোর মুখ দেখবে।'

অভিযোগ অস্বীকার করে তদন্তকারী কর্মকর্তা ও রায়পুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ফোরকান বলেন, 'ইতিমধ্যে মামলার আট আসামি গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছি। কয়েকজনকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তবে ঘটনার পর থেকে মামলার বাদীর ভূমিকা রহস্যজনক। শিগগির আদালতে মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেওয়া হবে।'

(পিকেআর/এএস/ডিসেম্বর ১৫, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test