E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘দেশের পরিস্থিতি খুবই জটিল’

২০১৫ জানুয়ারি ২৩ ১৩:৪৪:৪৮
‘দেশের পরিস্থিতি খুবই জটিল’

স্টাফ রিপোর্টার : নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক এবং বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, দেশে কী হতে যাচ্ছে তা সরাসরি বলা খুব মুশকিল। কারণ দেশের পরিস্থিতি খুবই জটিল। দেশের ক্ষমতাসীন এবং আন্দোলরত উভয় পক্ষই অনড় অবস্থানে।

রেডিও তেহরানের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মান্না এসব কথা বলেন।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বর্তমান সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য জাতীয়ভাবে সংলাপে বসা উচিত। তবে সেরকম কোনো লক্ষণ এই মুহূর্তেও দেখা যাচ্ছে না। আর জাতীয় সংলাপ না হলে এবং এ অবস্থা চলতে থাকলে রাষ্ট্র অস্তিত্ব সংকটে পড়বে।

মান্না বলেন, বর্তমানে সন্ত্রাস নিয়ে নানা কথা হচ্ছে। সরকার সন্ত্রাস দমন নিয়ে খুব বেশি কথা বলছে। তবে একপক্ষ সন্ত্রাস করে আর কেউ করে না বিষয়টি এরকম না। তবে সন্ত্রাস মোকাবেলা করাটা আমাদের জাতীয় ইস্যু।

তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে সহসা গ্রেফতার করা হবে এমনটি আমি ভাবছি না। আর যদি সেটা করা হয় তাহলে তা হবে ধ্বংসাত্মক একটা পদক্ষেপ। তবে এমনটি হবে বলে আমি মনে করছি না।

সাম্প্রতিক সহিংসতা পরস্পরকে দায়ী করে দেয়া বক্তব্য প্রসঙ্গে মান্না বলেন, রিয়াজ রহমানের ওপর হামলার ব্যাপারটি আমার কাছে বিস্মককর। উনি একজন সৎজন। খুব সক্রিয় রাজনীতিবিদও নন তিনি। তারপরও তার ওপর হামলার বিষয়টি আমি মেনে নিতে পারি না। আর এটা বিএনপি করেছে বা তাদের ভেতরের কেউ করেছে এই বক্তব্যও আমি কোনোভাবে মানতে পারি না। আবার সামগ্রিক ঘটনায় সরকার অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবে বলে আমি মনে করি। সেক্ষেত্রে এই হামলার কাজটি সরকারপক্ষ করেছে সেটাও কি করে মেনে নেয়া যায়। কারণ এতখানি মূর্খতা এবং নির্বুদ্ধিতার পরিচয় কেন দেবে সরকার?

তিনি বলেন, বর্তমানে সন্ত্রাস নিয়ে নানা কথা হচ্ছে। সরকার সন্ত্রাস দমন নিয়ে খুব বেশি কথা বলছে। তবে একপক্ষ সন্ত্রাস করে আর কেউ করে না বিষয়টি এরকম না। সন্ত্রাস মোকাবেলা করাটা আমাদের জাতীয় ইস্যু।

মান্না বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের মধ্যে যে পিপার স্প্রে করা হলো। অথচ আদালত পিপার স্প্রের করার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তারপর পুলিশ সেই কাজটি কিভাবে করে! স্বাভাবিকভাবে যে পুলিশ কর্মকর্তার নির্দেশে এটি করা হয়েছে এবং যেসব পুলিশ এটি করেছে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি হওয়ার কথা ছিল। অথচ তাদের কারো বিরুদ্ধে কোনো শাস্তি হয়নি। আর সেকারণে আমার মত হচ্ছে- এসব করে কারো কোনো লাভ হবে না। সহিংসতা- সহিংসতার জন্ম দেবে। আর আইন বন্ধ করে দিলে এরকম ঘটনাই ঘটতে থাকবে। এই অবস্থা থেকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে। আর সেজন্য আমি মনে করি সংলাপের দরকার। আর সেটা জাতির সব মানুষকে যুক্ত করে করতে হবে। তানাহলে হবে না। আর আমি যে আশার কথা বললাম সেটাকে ইংরেজিতে এবাবে বলা যাবে hope against hope. দেখা যাচ্ছে না, তারপরও দেখতে হবে আমাদেরকে। বিকল্প কিছু নেই।

খালেদা জিয়ার গ্রেফতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “মন্ত্রীরা কতরকম কথা বলে, তাদেরকে আমি কোনোভাবে গুরুত্ব দিতে চাই না। বেশ কিছুদিন আগে আমি একটা সভায় বলেছিলাম এরকম একটা পরিস্থিতি হতে পারে। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সরকার যদি বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের মতো পদক্ষেপ নেন তাহলে ধরে নিতে হবে সেটি তাদের চূড়ান্ত অবস্থান। এরকমও হতে পারে। বিশ্বের কোনো কোনো দেশে একদল ক্ষমতায় গিয়ে আরেক দলকে নিশ্চিহ্ন করে দেবার চেষ্টা করেছে। তবে এমনটি করতে গিয়ে কোনো কোনো দেশে কিছুটা সফল হয়েছে আবার অনেক জায়গায় ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে ওই ধরনের একটি লড়াই ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। যে কারণে বেগম খালেদা জিয়াকে সহসা গ্রেফতার করা হবে এমনটি আমি ভাবছি না। আর যদি সেটা করা হয় তাহলে তা ধ্বংসাত্মক একটা পদক্ষেপ। তবে এমনটি হবে বলে আমি মনে করছি না।”

বিএনপিকে নির্মূল করতে না পারলে আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। এ প্রসঙ্গে সাবেক এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের বক্তব্যের কোনো অর্থ নেই। এসব বক্তব্য স্পষ্ট মূর্খতা। আওয়ামী লীগের ফাদার ফিগার, বাংলাদেশের জাতির জনক এভাবে আমরা বলে থাকি সেই বঙ্গবন্ধুকে তার পরিবারসহ হত্যা করা হয়েছে। তাই বলে কি আওয়ামী লীগ নির্মূল হয়ে গেছে। তখন এরকম বলা হয়েছিল আওয়ামী লীগ আর দাঁড়াতে পারবে না। কিন্তু তাই কি হয়েছে। এভাবে কথা বললে হবে না। যারা ইতিহাস পড়েন না বা জানেন না তারাই এধরণের কথা বলেন। তারা পেছনে ফিরে দেখার চেষ্টা করেন না। আর মন্ত্রীর এ ধরনের কথা আলোচনার যোগ্য বলে আমি মনে করি না। একটা দল রাজনৈতিক বিভ্রান্তি বা ভুলের কারণে নিঃশেষ হতে পারে কিন্তু মেরে কোনো দলকে নিঃশেষ করা যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি না।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চলমান আন্দোলনের কী প্রভাব পড়েছে বা পড়তে পারে-এ প্রসঙ্গে মান্না বলেন, “দেখুন অন্যান্য প্রভাবের কথা আমি বলতে পারবো না কিন্তু মিডিয়ার খবরে যেটা দেখলাম যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট, ইউরোপিয় ইউনিয়ন বিবৃতি দিয়েছেন। তারা চাচ্ছে যে সবাইকে স্বাধীনভাবে নিজেদের মতো করে চলতে দেয়া হোক, কথা বলতে দেয়া হোক। একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশে সবকিছু হোক।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রভাব পড়ছে এই অর্থে যে তারা একটা অর্ডার নিয়ে তা সরবরাহ করতে পারছে না। ফলে বলা চলে অর্থনৈতিক বিকাশের জন্য রাজনৈতিক অস্থিরতা খুবই ক্ষতির কারণ।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক বলেন, সামগ্রিক প্রভাব বলতে স্পষ্টভাবে কেউ তেমন কিছু বলছে না। তারা মুখে যেরকম বলছে কার্যত সেরকম হচ্ছে না। সবাই চাইবে বাংলাদেশে একটা শান্তি ও সুষ্ঠু পরিস্থিতি থাকুক। তারা তাদের নিজেদের স্বার্থে এমনটি চাইবে। প্রতিবেশীরাও এমনটি চাইবে। বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিকসহ নানাবিধ যে সম্পর্ক রয়েছে তাদের সবাই এমনটি চাইবে। ফলে বিষয়টি অবশ্যই প্রভাব ফেলবে।

(ওএস/এএস/জানুয়ারি ২৩, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test