E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সংকট উত্তরণে সংলাপের বিকল্প নেই

২০১৫ ফেব্রুয়ারি ১৪ ২২:৪৯:৪৭
সংকট উত্তরণে সংলাপের বিকল্প নেই

নিউজ ডেস্ক : দেশের যে অবস্থা বিরাজ করছে তা কোনো ভাবেই কাম্য নয়। সরকার দলীয় লোকজন নাশকতার দায় বিরোধী দলের উপর চাপাচ্ছে আর সেই সুযোগে ক্ষমতার অপ্রয়োগে বিরোধীদলকে দমনের চেষ্টা চলছে। ২ দলের সমঝোতা ছাড়া এই পরিস্থিতির উত্তরণ সম্ভব নয়। আর সমঝোতার জন্য সংলাপই একমাত্র পথ।

শনিবার ঢাকার বিয়াম অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় বিবিসি সংলাপের ১০৪তম পর্ব। এতে প্যানেল আলোচক হিসেবে এ মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব:) গোলাম কাদের।

এসময় প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল মতিন খসরু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর বীর উত্তম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তাসনিম সিদ্দিকী।

অনুষ্ঠানে নাদিম হোসেন খান নামে এক দর্শক প্রশ্ন করেন, ‘চলমান নাগরিক সংকট নিরসনে নাগরিক সমাজের ব্যানারে যে সংলাপের প্রস্তাব করা হয়েছে, তা পুরোপুরি নাকচ করে দেয়া কি রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত হবে?’

এমন প্রশ্নের জবাবে প্যানেল আলোচক বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শাহজাহান ওমর বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রথম শর্ত হলো কোন বিষয়ে মতবিরোধ হলে বিরোধী পক্ষকে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আস্থায় ফিরিয়ে আনা। আজকে আমাদের দেশের বিষয় নিয়ে বিদেশিরা উদ্বেগ প্রকাশ করছে। কারণ আমাদের লজ্জা নেই।

তিনি বলেন, নাগরিক সমাজ সম্প্রতি সংলাপ প্রসঙ্গে যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন সে দাবি তো বিএনপির। বিএনপি এক বছর ধরেই সরকারকে আলাপ-আলোচনার আহবান জানিয়ে আসছে।

সম্প্রতি হরতাল অবরোধে সহিংসতা সম্পর্কে তিনি বলেন, বিএনপি হরতাল-অবরোধ দিলেও সহিংসতা করে না, বোমা মারে না। যারা মারে তাদের গ্রেফতার করে বিচার করুন।

অপর প্যানেল আলোচক আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল মতিন খসরু বলেন, প্রতিটি জিনিসের একটি প্রেক্ষাপট থাকে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে যারা সহিংসতা চালাচ্ছিল তারাই এখন করছে।

আন্দোলন করছে বিএনপি এবং আর পেট্রল বোমা মারবে আওয়ামী লীগ এটা নির্বোধ শিশু ও বিশ্বাস করবে না। তারা নির্বাচনে না গিয়ে তাদের মৌলিক দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। সুশীল সমাজের যারা উদ্যোগ নিয়েছে তারা মুনাফেকি করছে। বোকো হারামের মতো যারা সন্ত্রাসী হামলা চালাচ্ছে তাদের সাথে কেউ সংলাপে বসে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মেজর জেনারেল (অব.) গোলাম কাদের বলেন, আজকের এ পরিস্থিতি ভয়াবহ পরিস্থিতি। এর উত্তরণের পথ বের করতে সংলাপে বসতে হবে। জেন্ডার সমতা, গণস্বাস্থ্য, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন দিক দিয়ে আমরা সম্ভবনাময় অবস্থানে আছি। এর জন্য রাজনৈতিক স্থিরতায় আসতে হবে।

তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, সমস্যা থাকলেও তার সমাধানও রয়েছে। এক্ষেত্রে সমঝোতার ভিত্তিতে সমাধানের পথ বের করতে হবে।

সংলাপ যারা চাচ্ছেন তাদের প্রতি পূর্ণ আস্থা ও সমর্থন রয়েছে উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, চাপ আরো বাড়াতে হবে, গণমানুষের বক্তব্য আনতে হবে।

সপ্তাহে ২ দিন ক্লাস আমাদের, আর বাকি ৫ দিন ছুটি-এই অবস্থা আর কতদিন চলবে? তাহিয়া নামে ফেরদৌস নামে এক শিক্ষার্থীর এমন প্রশ্নের জবাবে শাহজাহান ওমর বলেন, আমরা গাড়ি-ঘোড়ায় চড়তে না করেছি, পায়ে হাটতে তো না করিনি। আর যারা সহিংসতা করছে তাদেরকে বলেন।

তিনি বলেন, যখন ২ বড় দলের মধ্যে মতবিরোধ একটি তৃতীয় পক্ষ এর সুযোগ নেয়। এখানেও তাই হচ্ছে। সংলাপে আসলে সমস্যার সমাধান হবে আর এ তৃতীয় পক্ষ সুযোগ পাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আব্দুল মতিন খসরু বলেন, এটা কিন্তু এত হালকা বিষয় নয়। ১৫ লক্ষ পরীক্ষার্থীর জীবনের দিকে তাকালেন না বেগম জিয়া। তাদের বক্তব্য তোরা যে যা বলিস ভাই, আমার সোনার হরিণ চাই। শুধু পুলিশ বা বিজিবি নয়, দেশবাসী, বিএনপির সহযোগিতা লাগবে এ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে।

তাসনিম দিদ্দিকী বলেন, আমাদের দুটো রাজনৈতিক দলই কিন্তু ব্যর্থ হচ্ছে। তারা সবার চাওয়া বুঝতে পারছে না। রাজনীতি একটি জনবিচ্ছিন্ন জায়গায় চলে যাচ্ছে। এটা কখনও কাম্য নয়।

মেজর জেনারেল (অব:) গোলাম কাদের বলেন, আমার মনে হয় পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাবে এবং তারপর হয়তো কোন একটা সমাধান আসবে। আমাদের দুটো রাজনৈতিক দল ছাড়াও ১৬ কোটি জনগণ আছে। তবে মাহফুজ আনামের (সম্পাদক, ডেইলি স্টার) বক্তব্য অনুযায়ী হুটু বা তুরসির মতো কোন জাতিগত সমস্যার দিকে বাংলাদেশ যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।

‘গৃহকর্মী হিসেবে বাংলাদেশের নারীদের সৌদি আরবের পাঠানোর আগে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে?’ শামীম হোসেন নামে এক দর্শকের প্রশ্নের জবাবে তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, সৌদি আরব এমন একটি রাষ্ট্র যেখানে পার্শ্ববর্তী অনেক দেশ শ্রমিক পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে কারণ নিরাপত্তার দিক দিয়ে এটি ঝুঁকিপূর্ণ। এ বাজারে আমরা প্রবেশ করতে পেরেছি, এটা ইতিবাচক। তবে সেখানে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সে ক্ষেত্রে শেলটার হোম এবং প্রতিমাসে যোগাযোগের একটি এক্সেস করতে হবে। আর সরকারকে এখানে পরিষ্কার করে বলে দেয়া উচিত যে এ বাজারটা নারীদের জন্য পুরুষদের জন্য নয়।

মেজর জেনারেল (অব:) গোলাম কাদের বলেন, আমাদের দেশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, দূতাবাসগুলোকে সক্রিয় হতে হবে এবং তাদেরকে সৌদি আরবের কোন স্থানে পাঠানো হচ্ছে সে ব্যাপারে যথাযথ তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে।

শাহজাহান ওমর বলেন, আমাদের দেশের কি এখন দুর্দশা হয়েছে যে সৌদি আরবের মতো বর্বরদের দেশে আমাদের নারীদের সেখানে পাঠাতে হবে। এটি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। আমাদের সরকারে যেই থাকুন না কেন, দেশের মধ্যেই তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করতে হবে।

আব্দুল মতিন খসরু বলেন, মানুষকে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। মোবাইল ফোনে যোগাযোগের সুযোগটা রাখতে হবে যাতে সমস্যা তৈরি হলে বাংলাদেশী দূতাবাস বা পরিবারের সদস্যদের জানানো সম্ভব হয়।

‘চলতি রাজনৈতিক অচলাবস্থায় সংঘটিত সহিংসতার খবর গণমাধ্যমে দেখানোর ব্যাপারে সরকারের অনেকেই আপত্তি তুলেছেন। গণমাধ্যমের কি উচিত এসব সহিসংতার চিত্র উপস্থাপন বন্ধ করে দেয়া’? তাহজীবা হোসেন নামে অপর এক দর্শকের প্রশ্নোত্তরে আব্দুল মতিন খসরু বলেন, হরতাল-অবরোধ তো বিএনপি বা খালেদা জিয়া করছে না। মিডিয়াকে একটা প্রেস রিলিজ দিয়ে দেয়, আর তারা এ খবর দিয়ে দেয়। সহিংসতার খবর বন্ধ করে দেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

শাহজাহান ওমর বলেন, মিডিয়ার মাধ্যমেই তো হরতালের খবর দিতে হবে। ইমার্জেন্সি হলে হরতালের ডাক দিলে সেটা তো অনলাইনেই দিতে হবে, না দিয়ে তো হাওয়ায় দেয়া যাবে না।

তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, আসল সমস্যার সমাধান করতে হবে। মিডিয়াকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।

মেজর (অব.) গোলাম কাদের বলেন, মিডিয়া বন্ধ করে কিছু হবে না। এই যুগে তথ্যের অবাধ গতিবিধির সময় মিডিয়াকে বন্ধ করে কিছু হবে না। বাকস্বাধীনতা দিতে হবে।

(ওএস/এটিআর/ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test