E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কালকিনিতে মেয়র পদে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্ধিতা

২০১৫ ডিসেম্বর ২৩ ১৬:১৬:৪০
কালকিনিতে মেয়র পদে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্ধিতা

মাদারীপুর প্রতিনিধি : মাদারীপুর কালকিনি পৌরসভা নির্বাচন চলছে আনন্দমুখর পরিবেশে। এবার মেয়রপদে ত্রিমূখী প্রতিদ্বন্ধিতায় চলছে নির্বাচনী প্রচারণা।

খোজ নিয়ে জানা গেছে, এবার কালকিনি পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের একজন প্রার্থী মনোনয়ন পেলেও স্বতন্ত্র হিসেবে আরো ৩ জন প্রার্থী রয়েছে। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের একজন প্রার্থীসহ মোট ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করেছেন।


আওয়ামী লীগের ৪ জন প্রার্থী হলেও এরা তিন ভাগে বিভক্ত আছে। এর মধ্যে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের সমর্থীত ২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী সরদার মো. লোকমান হোসেন (মোবাইল ফোন) ও মসিউর রহমান সবুজ (নারিকেল গাছ) আছেন।


বর্তমান এমপি আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাছিমের আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হচ্ছেন মো. এনায়েত হোসেন (নৌকা)। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ড. আবদুস সোবাহান গোলাপ সমর্থীত আওয়ামী বিদ্রোহীপ্রার্থী হচ্ছেন মো. আবুল কালাম আজাদ (জগ)। তাই তিনভাগে কালকিনি পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মিরা প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।

এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মো. লুৎফর রহমান (হাত পাখা) নিয়ে কিছুটা নিশ্চুপ নির্বাচন করছেন।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, কালকিনি উপজেলা বিএনপির কোন প্রার্থী দিতে পারেনি বলে তারা আওয়ামী লীগের প্রার্থীর জন্য মাঠে কাজ করছেন এবং নৌকা মার্কায় ভোট চাইছে বলে ভোটারদের সূত্রে জানা গেছে। তাই এই নির্বাচনে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচনী ময়দান মেয়রপ্রার্থীসহ উত্তপ্ত রয়েছে কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলরা।

অপরদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ক্ষমতার অপ-ব্যবহার করে কিছু আচরণবিধি লঙ্ঘন করলেও বিদ্রোহী প্রার্থীসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নেই কোন অভিযোগ। এছাড়াও ৫/৬টি ভোট কেন্দ্র ঝুকিপুর্ণ হলেও বাকিগুলো নিয়ে কোন প্রার্থীর অভিযোগ নেই।

আরো জানা যায়, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পরিবারের সকলে বিএনপি-জামায়াতের দলীয় হলেও আওয়ামী লীগের মনোনিত মেয়রপ্রার্থী মো. এনায়েত হোসেন পৌর যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। গত পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীপ্রার্থী হয়ে নির্বাচন করায় তাকে বহিস্কার করার পর তিনি দলের কোন সদস্যপদও লাভ করতে পারেননি।


তার বিরুদ্ধে পৌরসভার কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ ও কোটি টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বলে একাধিক অভিযোগ এনে স্থানীয় উপজেলা আওয়ামী লীগ তার মনোনয়ন নিয়ে একযোগে দল থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। এসময় উপজেলা আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মো. আবুল কালাম আজাদকে মনোনয়নপত্র দাখিল করিয়ে ছিলেন। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড ঢাকায় কালকিনি উপজেলা ও পৌর আওয়ামীলীগ নেতাদের ডেকে ছিলেন।

স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ঢাকা থেকে কালকিনিতে ফিরে পৌর আওয়ামী লীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মিদের বলে ছিলেন যেহেতু কালকিনিতে বিএনপি-জামাতের কোন প্রার্থী নেই সেহেতু ৪ জনই আওয়ামী লীগ প্রার্থী বলে ঢাকা থেকে আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন।

এরপর উপজেলা আওয়ামী লীগসহ নেতাকর্মীরা বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন শুরু করলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পরাজয় ভেবে গত ১৭ ডিসেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণদের স্বাক্ষরিত পত্রে মো. আবুল কালাম আজাদ ও সরদার মো. লোকমান হোসেনকে দল থেকে বহিস্কার করেন।

এরপর শুরু হয় গণবহিস্কার। এক পর্যায়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মিরা ফের আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিতে থাকেন।


বর্তমানে দলের কিছু নেতা-কর্মি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষেই অবস্থান নিয়ে নির্বাচন করছেন। এছাড়া যারা আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন করছেন তারা তাদের দলের ভাবমুর্তি রক্ষা করার জন্য লড়ছেন বলেও বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়।


এ দিকে আনন্দমূখর পরিবেশে নির্বাচন চললেও পৌরবাসী মনে করেন ড. আবদুস সোবাহান গোলাপ সমর্থিত আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. আবুল কালাম আজাদ ও সৈয়দ আবুল হোসেন সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী সরদার মো. লোকমান হোসেনের মধ্যেই শেষ পর্যন্ত লড়াই হবে।


আরো জানা যায়, সরদার মো. লোকমান হোসেন ও আওয়ামীলীগ প্রার্থী মো. এনায়েত হোসেনের মধ্যেও লড়াই হতে পারে। তবে বংশ কেন্দ্রিকও পুরানো আওয়ামীলীগ হিসেবে লোকমান হোসেনের সাথেই লড়াই হবে বলেও মাঠে সোরগোল চলছে। তার পরও ৪ জন প্রার্থীই ব্যাপক আনন্দমূখর পরিবেশে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ৩০ ডিসেম্বর কে জিতবে আর কে হারবে তাই এখন দেখার পালা।


আওয়ামী বিদ্রোহী প্রার্থী মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, তৃনমুল আওয়ামী লীগের সমর্থীত প্রার্থী হিসেবে আমি নির্বাচন করছি। পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমারত হোসেনের ছোট ভাই এনায়েত হোসেনকে সংসদ সদস্য আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাছিম তার ক্ষমতা বলে জেলা আওয়ামীলীগ দিয়ে মনোনয়ন দিয়েছেন। সেহেতু কালকিনি পৌরসভা আওয়ামী লীগের তৃনমূল নেতা-কর্মিরা আমাকে ভোট দিয়ে বিপুল ভোটে জিতাবে বলে আমি আশাবাদী।

পৌর মেয়র স্বতন্ত্রপ্রার্থী সরদার মো. লোকমান হোসেন বলেন, আমি দলের নিকট মনোনয়ন চাইনি কারন চাইলেও পেতাম না। কালকিনিতে আওয়ামীলীগ বলতে গেলে আমরা কয়েকজন সংগঠন চাঙ্গা করেছিলাম। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আলহাজ্ব সৈয়দ আবুল হোসেন ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের হাল ধরলেই সংগঠন পরিপুর্ণভাবে রুপ লাভ করে। কালকিনি পৌরসভা নির্বাচন বংশকেন্দ্রী হয়ে থাকে যেহেতু পৌরবাসী জানে আওয়ামী লীগে কাদের অবদান বেশী। তাই আমি মনে করি তারা আমাকেই ভোট দিয়ে মেয়র বানাবে ইনশাআুল্লাহ।

আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী এনায়েত হোসেন বলেন, আমি দলের মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচন করছি। আশা করছি আমি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবো।

(এএসএ/এইচআর/ডিসেম্বর ২৩, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test