E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শফিক রেহমানের তথ্যে ফেঁসে যাচ্ছেন পাঁচ বিএনপি নেতা

২০১৬ এপ্রিল ২১ ১০:০১:২৬
শফিক রেহমানের তথ্যে ফেঁসে যাচ্ছেন পাঁচ বিএনপি নেতা

নিউজ ডেস্ক :প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তার তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে যুক্তরাষ্ট্রে অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্রে এবার ফেঁসে যাচ্ছেন বিএনপির পাঁচ শীর্ষ নেতা। গোয়েন্দা পুলিশের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে বিএনপি ঘনিষ্ঠ সাংবাদিক শফিক রেহমান অনেক গোপন তথ্য ফাঁস করে দিয়েছেন।

তিনি স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ হাজার ডলার পাঠিয়েছিলেন। তবে টাকাটা এনে দিয়েছিলেন দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। জয়কে হত্যার যে ষড়যন্ত্র হয়েছিল তার মূল উদ্দেশ্য ছিল বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বেকায়দায় ফেলা। যুক্তরাষ্ট্রে এ বিষয়ে বৈঠক করার পর সরাসরি লন্ডনে চলে যান শফিক রেহমান। সেখানে তারেক রহমানের সঙ্গে তার একাধিক বৈঠকও হয়েছে। তবে এ বিষয়ে তারেক রহমানের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেছেন তিনি। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে এসব তথ্য মিলেছে।

তদন্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত একজন কর্মকর্তা বলেন, শফিক রেহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এই দুই জন ছাড়াও বিএনপির যে পাঁচ শীর্ষ নেতা এ ষড়যন্ত্রে সম্পৃক্ত রয়েছেন তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যাবে। তাছাড়া ওই ৩০ হাজার ডলারের ব্যাপারে জানা যাবে মাহমুদুর রহমানের কাছ থেকে। আর এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে সিজার ও মধ্যস্থতাকারী মিল্টন চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় গোয়েন্দা পুলিশ। গোয়েন্দা পুলিশের একজন উপ-কমিশনার ও একজন অতিরিক্ত উপ-কমিশনারসহ তিনজনকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদকারী একজন তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, শফিক রেহমান তাদের কাছে স্বীকার করেছেন, ২০১৩ সালে কয়েকটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হয়। তখন সবার ধারণা ছিল আওয়ামী লীগ আর টিকতে পারছে না। বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। এই পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনাকে আরো বেকায়দায় ফেলতে জয়কে অপহরণ ও হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়। এই ষড়যন্ত্রে যারা অংশ নেবেন তাদের রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়ার বিষয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে জাসাস নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনকে জাতিসংঘে আবাসিক প্রতিনিধি করা হবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এলে মন্ত্রিসভায় কারা থাকবে, মন্ত্রিসভাটি কেমন হবে সে ব্যাপারেও ছক করা হয়। তখন সেই খবরগুলো পত্রিকায় ছাপাও হয়েছিল।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, রিজভী আহমেদ সিজারের বাবা প্রবাসী বিএনপি নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনের নিউইয়র্কের বাসায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে শফিক রেহমান উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকটি হয় ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে। মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনের সঙ্গে এ নিয়ে প্রথম বৈঠক হয়েছিল ঢাকায় ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর অথবা অক্টোবরে। আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানও ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। শফিক রেহমান জানিয়েছেন, মাহমুদুর রহমান কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে নিউইয়র্ক থেকে তথ্য পেতেন। এ ব্যাপারে সহযোগিতা করেছেন মিল্টন চৌধুরী নামে আরও এক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। আর মাহমুদুর রহমানের কাছ থেকে ৩০ হাজার ডলার পেয়ে সেটা যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর কথাও স্বীকার করেছেন শফিক রেহমান। এর মধ্যে কিছু টাকা সংশ্লিষ্টদের না দিয়ে সিজার মেরে দিয়ে স্বীকার করেছে বলেও জানান তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রে সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে তথ্য ও অভ্যন্তরীণ আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত দলিল সংগ্রহের জন্য ঘুষ লেনদেনের ঘটনায় এফবিআইয়ের সাবেক স্পেশাল এজেন্ট রবার্ট লাস্টিক, তার বন্ধু জোহান্স থ্যালার এবং থ্যালারের পরিচিত রিজভী আহমেদ সিজারকে অভিযুক্ত করা হয়। পরে সিজার এবং থ্যালারের যথাক্রমে ৪২ মাস ও ৩০ মাসের সাজা হয়। তাদের আরও দুই বছর নজরদারিতে রাখারও নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত। লাস্টিক অন্য ঘটনায় গ্রেফতার হয়ে জেলহাজতে আছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে কারাগারে থাকা ব্যক্তিদের এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চান। গোয়েন্দা পুলিশে উপ-কমিশনার মাশরুকুর রহমান খালেদের নেতৃত্বে এই টিমে রয়েছেন অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রাজীব আল মাসুদ ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারী কমিশনার হাসান আরাফাত। এ ব্যাপারে মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার অনুমতির জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। অনুমতি পাওয়ার পরই তারিখ নির্ধারণ হবে।

একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছ থেকে বাংলাদেশ সরকারের কাছে এ ব্যাপারে কাগজপত্র এসেছে। সেই সব নথি পর্যালোচনা করেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তাছাড়া ২০১১ সালের ওই ষড়যন্ত্রের ঘটনার পর বাংলাদেশ সরকার কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থাকে পৃথকভাবে তদন্ত করার দায়িত্ব দেয়। সেই তদন্তেও বিএনপির পাঁচ নেতার বিষয়টি উঠে এসেছে। তবে গোয়েন্দারা এখনই তাদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন একজন শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটি) অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তাদেরই আইনের আওতায় আনা হবে। জয়কে হত্যা করলে কারা লাভবান হতো সেদিকে খেয়াল রেখেই তদন্ত করা হচ্ছে।


(ওএস/এস/এপ্রিল২১,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test