E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ক্যাডার ফাইন ফরিদপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন সাধারণ সম্পাদক!

২০১৭ মার্চ ১৮ ১৭:৩২:৩৫
ক্যাডার ফাইন ফরিদপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন সাধারণ সম্পাদক!

বিশেষ প্রতিনিধি, ফরিদপুর থেকে ফিরে : আজকের দিন পেরোলেই ফরিদপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন। পোস্টার ব্যানারে ছেয়ে গেছে ফরিদপুর শহর। তার ছোঁয়া পড়েছে জেলার উপজেলা সদর গুলোতেও। ১৯ মার্চের ওই সম্মেলনকে ঘিরে রঙিন পোস্টার ব্যানারে সেজে উঠেছে সম্মেলন স্থল শহরের অম্বিকা ময়দান। জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের এই সম্মেলনকে ঘিরে বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছেন ফাহাদ বিন ওয়াজেদ ফাইন নামের এক দুর্ধর্ষ ক্যাডার। ওই ক্যাডারের বাবা মো. ওয়াজেদ বেপারী ও মাতা হামিদা বেগম, তারা দুইজনই ফরিদপুরে জামায়াতের 'রোকন' পদধারী এবং জামায়াতের রাজনীতিতে দারুণ সক্রিয়। জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের এই সম্মেলনকে ঘিরে ফরিদপুরের মানুষের বিস্ময়, জামায়াতের রোকন দম্পতির ছেলে ফাহাদ বিন ওয়াজেদ ফাইন মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বঙ্গবন্ধুর আওয়ামীলীগের সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হয় কি করে! ফরিদপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে ফাহাদ বিন ওয়াজেদ ফাইনকে চাই, এই মর্মে পোস্টার ব্যানারে ছেয়ে গেছে ফরিদপুর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রলীগ নেতা জানান, ফাইন স্রেফ একজন ক্যাডার। ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মনিরুজ্জামান মনিরের ওপর যে নৃশংস হামলা হয়েছিল, তার নেতৃত্বে ছিলেন এই ফাইন। কিন্তু রহস্যজনক খুঁটির জোর থাকায় আইন তার একটি পশমও ছিঁড়তে পারেনি। উল্টো মনিরকে শায়েস্তা করতে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় চাঁদাবাজির দুইটি মিথ্যা মামলা। ফাইন আওয়ামীলীগ কিংবা তার কোনও সহযোগী সংগঠনেরই সদস্য নন। অথচ তিনি একবার ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের শীর্ষ পদ দখলে নিতে যারপর নাই চেষ্টা করেছিলেন। এবার সেই ফাইন ফরিদপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ দখলে নিতে মরিয়া। সাধারণ সম্পাদক পদ দাবির রঙিন পোস্টার ব্যানারে ফাইনের ছবির ওপরে রয়েছে এলজিআরডি মন্ত্রী খোন্দকার মোশারফ হোসেন ও তার ভাই ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খোন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবরের যুগল ছবি। ওই ছাত্রলীগ নেতা আরও যোগ করেন, যেহেতু মন্ত্রী ও উপজেলা চেয়ারম্যান পোস্টার ব্যানারে তাদের ছবি ব্যবহারে আপত্তি করেননি, সেহেতু ধরে নেওয়া যায়, তারা দুই ভাইই ক্যাডার ফাহাদ বিন ওয়াজেদ ফাইনকে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেই দেখতে চান। এ নিয়ে ফরিদপুরের স্বেচ্ছাসেবক লীগের ত্যাগী নেতা কর্মীদের ভেতরে চাপা ক্ষোভ রয়েছে। কিন্তু ধারাবাহিক চাপাতি হামলার ভয়ে কেউ টু শব্দটি করেন না।

ফরিদপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক কর্মী, নাম পরিচয় প্রকাশ না করবার শর্তে আরও জানান, ফাহাদ বিন ওয়াজেদ ফাইনের নেতৃত্বে একদল দুর্ধর্ষ ক্যাডার শুধু জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মনিরুজ্জামান মনিরের শরীরে চাপাতির ২৭ টি কোপ দেয়নি, ওরা নৃশংস কায়দায় আরও কুপিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সাব সেক্টর কমান্ডার নূর মোহাম্মদ ক্যাপ্টেন বাবুল,জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী বেলাল, ফরিদপুর পলিটেকনিক ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন বাপ্পি ও সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী অপুকেও। ওরা পলিটেকনিক ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সামসুদ দোহাকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মনিরুজ্জামান মনিরের ছোট ভাই কামরুল ইসলামকে রিভলবারের বাট দিয়ে পিটিয়ে আহত করেছিল। স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী আরও বলেন, দুর্ধর্ষ এই ফাইন চক্রই ২০০৪ সালে ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাশগুপ্তকে নৃশংসভাবে খুন করেছিল। ২০১৫ সালের ২৫ জুন রাতে ফরিদপুর শহরতলীর বদরপুরে মাদক ব্যবসার দ্বন্দ্বে অজ্ঞাত পরিচয় ৪ জনকে পিটিয়ে হত্যা করে ফাইন বাহিনী। পরে পুলিশ জানায়, গণপিটুনিতে অজ্ঞাত পরিচয় ৪ ডাকাত মারা গেছে। ওই স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী আরও যোগ করেন, ক্যাডার ফাইন চক্রের সকল অপকর্মের খতিয়ান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তার কোনও প্রতিকার তো হয়ই নি, উল্টো বেড়েছে ওদের দাপট।

মোবাইল ফোনে কথা রেকর্ড করা যাবে না এবং নাম পরিচয় প্রকাশ করা হবে না, এই মর্মে এক আওয়ামীলীগ নেতা বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ওপর আমাদের ভরসা ষোলোআনা। ফরিদপুর জেলা আওয়ামীলীগের গত সম্মেলনে ভাই বাহিনী নিজেদের মতো করে নতুন কমিটি গঠনের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনার দূরদর্শিতায় সেই চেষ্টা সফল হয়নি। এবারও ফরিদপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনে ভাই বাহিনীর কোনও ষড়যন্ত্র সফল হবে না।

(পিএস/এএস/মার্চ ১৮, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test