বিএনপির নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার করা হচ্ছে: রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার : কারণ ছাড়াই বিশেষ অভিযানের নামে দেশব্যাপী বিএনপির নেতাকর্মীদের আবারও গণগ্রেফতার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, বিশেষ অভিযানের নামে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ ও ডিবি হানা দিয়ে ব্যাপক তাণ্ডব চালাচ্ছে। বাড়িতে নেতাকর্মীদের না পেলে তাদের পরিবারের সদস্যদের লাঞ্ছিত করা হচ্ছে।

সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, গতকাল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র নবনির্বাচিত সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলসহ নেতৃবৃন্দকে সংবর্ধনা দিয়ে নয়াপল্টনস্থ ভাসানী ভবনে মহানগর বিএনপি কার্যালয় থেকে ফেরার পথে মতিঝিল থানার ৯নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা মো. শামসুদ্দিন বকুল এবং মো. হারুন মিয়াকে মতিঝিল থানা পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।

তিনি আরো বলেন, গতকাল শিল্প নগরী টঙ্গী এলাকায় পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা মিলে অভিযানের নামে গোটা এলাকায় তাণ্ডব চালিয়ে এক ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এ সময় ২০ দলীয় জোটের ১৫ জন নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করে।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, এই তাণ্ডবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডার এমনকি মাদক ব্যবসায়ীরাও যুক্ত হওয়ায় পুরো এলাকায় ত্রাসের রাজত্ত্ব কায়েম হয় এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এইভাবে টঙ্গীতে একযোগে ১৫টি ওয়ার্ডে বিএনপিসহ বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের বাসায় তল্লাশির নামে হামলা চালানো হয়।

তিনি দাবি করেন, গত দু’দিনে জামালপুরে বিশেষ অভিযানের নামে ১৮৯ জন বিএনপিসহ বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের আটক করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। সাতক্ষীরায় পুলিশের বিশেষ অভিযানের নামে ৪১ জন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। ঝিনাইদহ ও মেহেরপুরে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে, সেখানে গত কয়েকদিনে গ্রেফতার করা হয় শতাধিক নেতাকর্মীকে।

তিনি আরো উল্লেখ করে বলেন, গত দু’দিন আগে বাগেরহাটে পুলিশি বিশেষ অভিযানে বিএনপি নেতা মোদাশ্বের আলী, কামরুল ইসলাম, গফফার, হুমায়ুন মোড়ল, ইদ্রিস তালুকদার, আলমগীর মেম্বার, আসাদ ও মোতাহারসহ বিরোধী দলীয় ৩৯ জন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। পঞ্চগড় জেলায় মেয়র তৌহিদুল ইসলাম, বিএনপি নেতা আব্দুল মজিদ, অ্যাডভোকেট হাসান প্রধান, আনোয়ার হোসেনসহ অনেক নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করা হয়েছে। তিন দিন আগে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক হেলালউদ্দিনকে গোয়েন্দা পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়। গ্রেফতার করা হয়েছে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর একরাম হোসেন বাবুকে। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নবনির্বাচিত মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর বিরুদ্ধে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, মেহেরপুরে জেলা বিএনপি’র সভাপতি মাসুদ অরুনসহ ২০০ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের এবং ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একইভাবে ঢাকা জেলা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা, চুয়াডাঙ্গা ও ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশি অভিযানের নামে ব্যাপক ধরপাকড় ও হয়রানি অব্যাহত রয়েছে।

তিনি বলেন, গত ২২ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গা জেলাধীন আলমডাঙ্গা উপজেলার কালিদাসপুর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি শওকত আলী ফরাজীকে দিনে-দুপুরে আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, আওয়ামী লীগ ঐতিহ্যগতভাবেই প্রতিহিংসাপরায়ণ একটি রাজনৈতিক দল। আমি শওকত আলী ফরাজীকে পৈশাচিক কায়দায় হত্যাকারী সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানাচ্ছি। নিহতের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি জানাচ্ছি গভীর সমবেদনা।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ২৪, ২০১৭)