E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রামায়ণ অবলম্বনে প্রবাসী লেখক বিশ্বজিত বসুর নাটক 'অকাল বোধন' : পর্ব- ৪

২০১৭ নভেম্বর ১০ ১৭:১২:৪২
রামায়ণ অবলম্বনে প্রবাসী লেখক বিশ্বজিত বসুর নাটক 'অকাল বোধন' : পর্ব- ৪

পূর্ব প্রকাশের পর চতুর্থ দৃশ্য

(প্রথম অংক)

(রাম এবং সীতা কুটিরের বারান্দায় বসে। লক্ষণ ভিতরে কোন কাজ ব্যস্ত।)

সীতা: কি সুন্দর এই তপোবন। দশ বছর বনে বনে ঘুরে এই পঞ্চবটিতে। কিন্তু এই পঞ্চবটি সকলের থেকে আলাদা। মনোরম ছায়াবৃক্ষ, সুশীতল বাতাস , স্বচ্ছ গোদাবরীর জল। সত্যই অপূর্ব।

রাম: দেখ দেখ সীতা কি সুন্দর একটি হরিণ ছানা সামনে দিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে।

সীতা : সত্যই তো কি সুন্দর হরিণ, সোনার হরিণ। এই হরিণ ছানাটা ধরে এনে দাও না, ওকে খুব আদর করতে ইচ্ছা করছে।

রাম: ভাই লক্ষণ, লক্ষণ।
(লক্ষণ বের হয়ে আসে কুটিরের ভিতর থেকে)

লক্ষণ: আজ্ঞে দাদা

রাম: দেখতো হরিণটাকে একটু পরখ করে। এমন স্বর্ণ বর্ণের হরিণ তো আগে কখনও দেখিনি।

লক্ষণ: শুনেছি এই বনে রাক্ষসেরা মায়াবী রূপ ধরে আসে। মায়ায় আবিষ্ট হয়ে মানুষ তাকে ধরতে যায়। তারপর গভীর বনে নিয়ে রাক্ষস রূপ ধারণ করে খেয়ে ফেলে।

রাম: বুঝেছি। আমি যায় হরিণটাকে ধরে নিয়ে আসি। যদি রাক্ষস হয় তবে বনবাসী মানুষ সেটা থেকে মুক্ত হবে। আর যদি হরিণ হয় সীতার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হবে।

(রাম হরিণের পিছনে পিছনে বেরিয়ে যায়।লক্ষণও উল্টো দিয়ে মঞ্চ থেকে নেমে যায়, সীতা গুণ গুণ করে গান গাইতে গাইতে মঞ্চ থেকে নেমে যায়)

(গান)

হুহু হু হু হুহু হু হু
আমি ফোঁটা বনফুল এ কানন মাঝে
বসন্ত বাতাসে মন নাহি বসে কাজে।
হুহু হু হু হুহু হু হু
বসন্ত বাতাসে মন নাহি বসে কাজে
হুহু হু হু হুহু হু হু...

(মারিচ হরিণ বেশে মঞ্চে উঠে আসে এবং রামের গলা নকল করে আর্তচিৎকার করে)

মারিচ: বাঁচাও লক্ষণ বাঁচাও, হরিণরূপী রাক্ষস আমাকে মেরে ফেলল । ভাই লক্ষণ আমাকে বাঁচাও।
(ভিতর থেকে সীতার ভয়ার্ত কণ্ঠস্বর শোনা যায়)

সীতা: লক্ষণ, লক্ষণ। রামকে রাক্ষস আক্রমণ করেছে। তোমাকে ডাকছে। শীঘ্র যাও লক্ষণ।

লক্ষণ: তুমি চিন্তা করছ কেন। তাঁকে মারার শক্তি রাক্ষসদের নেই। কিছুই হবে না। তুমি গান করছিল তাই কর। আর এ গলাটাও দাদার গলা না।

(আবারও রামের গলার স্বর নকল করে মারিচের আর্ত চিৎকার।)

মারিচ: সীতা আমি মরে গেলাম সীতা। লক্ষণকে পাঠাও সীতা।

সীতা: যাও লক্ষণ যাও । তোমার দাদাকে বাঁচাও।

লক্ষণ : ধুর চিন্তা করো নাতো। কিছু হবে না। আট দশ বছর সংসার করেও দাদার গলা চিনতে পারলে না।

(সীতা রেগে যায়)

সীতা: ও বুঝেছি। এজন্যই বলে সৎ ভাই। আপন ভাই হলে তুমি নিশ্চয় এভাবে নির্লিপ্ত থাকতে পারতে না।

লক্ষণ: এসব কি বলছ তুমি বৌঠান ।

সীতা: ঠিক বলছি, রামকে বনবাসে পাঠিয়ে এক ভাই রাজ্য দখল করেছে। আরেক ভাই আমাকে পাওয়ার অভিলাষ করছে। মনে রেখ আমি এই গোদাবরীর জলে আত্মহুতি দেব কিন্তু তোমার অভিলাষ পূর্ণ হতে দেব না।

লক্ষণ: এদেখি আরেক বিপদ। ঠিক আছে আমি যাচ্ছি। তবে তুমি সাবধান। যতক্ষণ না ফিরে আসি। (গন্ডি কেটে দিয়ে ) এই দাগের বাইরে কিছুতেই যাবে না।

( লক্ষণ বেরিয়ে যায়, সীতা চিন্তার সাথে পায়চারী করতে থাকে গন্ডীর মধ্যে।)

(দ্বিতীয় অংক)

(সাধুবেশে রাবণের প্রবেশ ।)

রাবণ: তুমি কে গো সুন্দরী । একা একা পায়চারি করছ। এখানে কত বিপদ। সারাদিন রাক্ষস ক্ষোকসের আনাগোনা। তোমার সাথে কি আর কেউ আছে।

সীতা : আমার সাথে আছেন আমার স্বামী। রাজা দশরথ পুত্র রাম চন্দ্র আর আমার দেবর লক্ষণ। তা আপনি কে ঠাকুর।

রাবণ: আমি একজন সন্যাসী, এটাই আমার পরিচয়। দেশ দেশান্তরে ঘুরে বেড়ায়। গৃহস্থের দয়ায় চলে যায় আমার দিন।

সীতা: আপনাকে খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে।

রাবণ: অভুক্ত অবস্থায় সকাল থেকে বনের মধ্যে দিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছি। তাই একটু ক্লান্ত ।

সীতা: আপনি অপেক্ষা করুন, একটু বিশ্রাম নিন। আমার স্বামী গৃহে ফিরে আসুক আপনার সংগে পরিচয় হবে। তারপর কিছু ফল গ্রহণ করবেন।

রাবণ: আজ আর বিশ্রামের সময় নেই। সন্ধ্যার আগে আমাকে আখড়ায় পৌঁছতে হবে। ভগবান তোমার মঙ্গল করুন।

সীতা : না না তা কি করে হয়। আপনি আমার অতিথি। অতিথি মাত্র নারায়ণ। অতিথি আপ্যায়ন হয়নি শুনলে রামচন্দ্র রাগ করবেন। আপনি বসুন। কিছু ফলাহার করে যাবেন।

রাবণ: এ ফল তুমি কোথায় পাও।

সীতা: আমার দেবর লক্ষণ এগুলো সংগ্রহ করে এই পঞ্চবটি হতে।

রাবন: তাহলে তাই দাও। তোমার মনোবাসনা পূর্ণ হোক।

(সীতা কুটিরের ভিতর থেকে কিছু ফল এনে গন্ডির বাইরে আসে আর সংগে সংগে রাবণ হাত ধরে ফেলে)

সীতা: ছাড়ো আমাকে ছেড়ে দাও। লক্ষণ, রাম, এদিকে এসো। রাবণ আমাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। লক্ষণ, রাম, লক্ষণ, রাম।

রাবন: হা হা হা। আমার রাজ্যে ঢুকে আমার বোনকে অপমান। হা হা হা ।

সীতা : আমাকে ছেড়ে দাও। তুমি আমার স্বামীকে চেনো না। আমাকে না ছেড়ে দিলে তোমার বংশ ধ্বংস হয়ে যাবে।

রাবণ: আমি রাবণ, দশানন। আমার ভয়ে কাঁপে স্বর্গের দেবতাগণ। আর রাম, হা হা হা।

(সীতাকে নিয়ে মঞ্চ ছেড়ে নেমে যায়।)

চতুর্থ দৃশ্য শেষ। -চলবে



পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test