E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রামায়ণ অবলম্বনে প্রবাসী লেখক বিশ্বজিত বসুর নাটক 'অকাল বোধন' : পর্ব- ৮

২০১৭ ডিসেম্বর ১৬ ২৩:১৪:২০
রামায়ণ অবলম্বনে প্রবাসী লেখক বিশ্বজিত বসুর নাটক 'অকাল বোধন' : পর্ব- ৮

অষ্টম দৃশ্য:
(প্রথম অংক)
(মঞ্চ সজ্জা চলতে থাকে আর পিছনে চলতে থাকে পুথি পাঠ)
সকালে উঠিয়া চলে পুজা আয়োজন
চন্ডীপাঠ দিয়ে শুরু অকাল বোধন।
নানা ফুল নানা ফল বিবিধ রতন
দিন রাত চলে সেথা দুর্গার ভজন।
সন্ধ্যা রাতে চলে সেথা নাচ আর গান
সুরে সুরে করে তারা দুর্গার জয়গান।

(মঞ্চে দুর্গা দন্ডায়মান। সামনে পুজা চলছে। এক পাশে বসে রাম চন্ডি পাঠ করছে। রামের পাশে লক্ষণ আর বিভিষণ। অন্য পাশে বীর হনুমান দলবল নিয়ে)
ওঁম্ নমোহ নারায়নং নম্স্কৃত্য নরঞ্চৈব নরোত্তমম্
দেবীং সরস্বতীং চৈব ততো জয়মুদিরয়েৎ
ওঁম্ নমোঃ চন্ডীকায়ৈ নমোঃ নমোহঃ।।

যা চন্ডী মধু কৈটভাদিদলনী, যা মহিষোন্মূলিণী
যা ধূম্রেখন চন্ড-মুন্ড-মখনি, যা রক্ত-বীজাশনী
যা শক্তি শুম্ভ-নিশুম্ভ-দৈত্যদলনী, যা চ সিদ্ধিঃদাত্রী পরা
সা দেবী নবকোটি-মূর্ত্তি-সহিতা, মাং পাতু বিশ্বেশ্বরী।।

সিংহার্তাশশীশেখরা, মারাকাটা বিক্ষা চর্তুভিভুজায়া
শঙ্খংচক্র ধনুশ্বরাংশ্চ তদাতীনেত্রয় শ্রীভিশোভিতা।।

আং মুক্তাংগাদাহারকঙ্কনা জনকাকাঞ্চীকাননূপুরা
দুর্গাদুর্গতিহারীনি ভবতুর্ণরত্নউল্লুশমুন্ডুলা।

(চন্ডীপাঠ শেষে সবাই পূজার ঘটে ফুল দিয়ে প্রণাম শেষ করে। রামচন্দ্র উঠে দাড়িয়ে )
রাম: তোমরা সব উৎসব করো। আগামীকাল সকালে আবার পুজা হবে।
(মঞ্চে আলো নিভে যায়। সকলে মঞ্চ থেকে নেমে যায়। আবার মঞ্চে আলো জ্বলে, শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। নেপথ্যে চন্ডীপাঠ চলতে থাকে। মঞ্চে অভিনীত হয় মহিষাসুর বধ।)

জয়ন্তি মঙ্গলাকালী ভদ্রাকালী কপালিনী
দুর্গা শীবা ক্ষমাধাত্রী স্বহা স্বধা নমস্তোতে
মধুকৈটভবিধ্বংশী বিধাত্রী বরদে নমোহ।।
দুর্গা দুঃখহরা তাঁরা দুর্গতিনাশিনী
দুর্গমে শরণ্যা বিন্ধ্যগিরি- নিবাসিনী।
মহিষাসুর: আমি মহিষাসুর ব্রহ্মার বলে বলীয়ান। কোন পুরুষ আমাকে বধ করতে পারল না! আর নারী। হা হা হা হা।
দুর্গা: ওরে দুরাচার । আমি নারী নয় আমি মহামায়া। এই দেখ আমার হাতেই তোর মৃত্যু হবে।
(মঞ্চে যুদ্ধ শুরু হয়। নেপথ্যে চলতে থাকে দুর্গার স্তব এবং যুদ্ধের দামামা )
দুরারাধ্যা ধ্যানস্যাধ্যা শক্তি সনাতনী
পরাৎপরা পরমা প্রকৃতি-পুরাতনি।
নীলকন্ঠ প্রিয়া নারায়নী নিরাকারা
সারাৎকারা মুলশক্তি সচ্ছিদা সাকারা।
মহিষমর্দ্দিনী মহামায়া মহোদরী।
শিবনিতম্বিনী শ্যামা শর্ব্বানী শঙ্করী।
(দুর্গা মহিষাসুরের বুকে ত্রিশূল বসিয়ে দেয় । চারপাশ থকে দুর্গার জয়ধ্বনী শোনা যায়।)
সকলে নেপথ্যে : দুর্গা মা কি জয়। দুর্গা মা কি জয়।
(মঞ্চে আলো নিভে যায়।)

(দ্বিতীয় অংক)
(মঞ্চে দুর্গা। পুজার আয়োজন চলছে, নেপথ্যে চলতে থাকে পুথিপাঠ)
রাম: ষষ্ঠি, সপ্তমী, মহাঅষ্টমী শেষ হলো। কিন্তু ঈশ্বরীতো দেখা দিলেন না, বন্ধূ বিভিষণ। আমার প্রতি কি দুর্গার দয়া হবে না। সীতা উদ্ধারের আরকি কোন উপায় নেই।
বিভিষণ: উপায় হয়ত আছে। নীল পদ্ম দেবীর দুর্গার পছন্দের ফুল। দেবীর তুষ্টিতে একশত আটটি নীল পদ্ম দান করুন। তাহলে হয়তো তিনি আপনার দেখা দিবেন।
রাম: কোথায় সেই নীল পদ্ম পাওয়া যাবে। নীল পদ্মতো দেবেরও দুর্লভ। মানুষ হয়ে সেটা কোথায় পাব। হায় বিধাতা, আমার ভাগ্য বিধান সব কিছুই দুঃসাধ্য।
হনুমান: এত দুশ্চিন্তা করবেন না প্রভু । আপনার দাস আছে এখানে। স্বর্গ-মর্ত-পাতাল যদি কোথাও নীল পদ্ম থেকে থাকে তাহলে আমি মুহুর্তের মধ্যে নিয়ে আসতে পারবো।
বিভিষণ: অবনীর দেবীদহে নীল পদ্ম আছে। কিন্তু সেপথতো কমপক্ষে দশ বছরের।
হনুমান: আপনি পুজার আয়োজন করতে থাকুন । পুজা শুরুর আগেই আমি নিল পদ্ম নিয়ে হাজির হবো।
(রামকে প্রণাম করে হনুমান মঞ্চ থেকে বেরিয়ে যায়। রাম দুর্গার স্তব পাঠ করতে থাকে। পশে লক্ষণ, বিভিষণ।)
বিরূপাক্ষী শতাক্ষী সারদা শাকম্ভরী
ভ্রামরী ভবানী ভীমা ধুমা ক্ষেমঙ্করী।
কালী কালহরা কালা কালে কর পার
কুল কুন্ডলিনী কর কাতরে নিস্তার।
লম্বোদরী বাঘাম্বরা কলুষ নাশিনী
কৃতান্তদলনী কাল-উরুবিলাসিনী।।
হনুমান: জয় রাম চন্দ্রের জয় (হনুমান নীল পদ্ম নিয়ে মঞ্চে উপস্থিত হয়) এই নিন প্রভু এখানে একশত আটটি নীল পদ্ম আছে।
রাম: চিরসুখী হও বীর হনুমান ।
(নীল পদ্মের ডালাটা হতে নিয়ে, চন্ডীপাঠের সাথে সাথে দূর্গাকে নীল পদ্ম দান করতে থাকে। মন্ত্র চলা কালীন সময়ে দুর্গা হাত দিয়ে একটি পদ্ম সরিয়ে ফেলে)
যা দেবী সর্বভুতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা
নমঃস্তস্যই নমঃস্তস্যই নমঃস্তস্যই নমঃ নমোহ ।।
যা দেবী সর্বভুতেষু চন্ডি রূপেণ সংস্থিতা
নমঃস্তস্যই নমঃস্তস্যই নমঃস্তস্যই নমঃ নমোহ ।।
যা দেবী সর্বভুতেষু বিদ্যা রূপেণ সংস্থিতা
নমঃস্তস্যই নমঃস্তস্যই নমঃস্তস্যই নমঃ নমোহ ।।
যা দেবী সর্বভুতেষু লক্ষী রূপেণ সংস্থিতা
নমঃস্তস্যই নমঃস্তস্যই নমঃস্তস্যই নমঃ নমোহ ।।
রাম: একি! একটি পদ্ম কম বলে মনে হচ্ছে! হনুমান হনুমান, তুমি কতগুলো পদ্ম এনেছো। এখানে একটি পদ্ম কম আছে।
হনুমান: না প্রভু আমি অবশ্যই গুনে গুনে একশত আটটি পদ্ম এনেছি।
রাম: একটি পদ্ম পাওয়া যাচ্ছে না। যাও বাছা আরেকটি পদ্ম নিয়ে আস।
হনুমান: সেটাতো সম্ভব নয় । সেখানে মাত্র একশত আটটি পদ্মই ছিল। সেখানেতো আর পদ্ম নেই।
রাম: তাহলে কি হবে উপায়। হে মা অন্নপূর্ণা, হে মা শঙ্করী, হে মা অপরাজিতা আমাকে উপায় বলে দাও। হা পেয়েছি। সবাই আমাকে নীল কমলাক্ষী বলে। আমার দুই চোখ নাকি প্রস্ফুটিত নীলোৎপল। আমি আমার এক চক্ষু দেব দেবীর চরণে। লক্ষণ ভাই আমার, দেখ দুর্গার কৃপা নাহলে সীতা উদ্ধার সম্ভব নয়। সীতার সম্মান রক্ষা করতে না পারলে এজন্ম বৃথা। আমাকে সবাই কমললোচন বলে। সংকল্প পুরণে আমার এক চক্ষু দেব মায়ের চরণে।
(রাম তূণ থেকে বান তুলে নেয়। বান দিয়ে চোখ তুলতে যায়।)
রাম: মা দেখ তোমার সামনে আমি আমার কমলাক্ষি তুলে দিচ্ছি। আমাকে কৃপা করো মা। আমাকে কৃপা করো।
দুর্গা: হাত ধরে ফেলে। কি কর কি কর তুমি রাম চন্দ্র ।
রাম: আমাকে এমন দুঃখ কেন দিচ্ছ মা। জননীর কী এমন কাজ শোভা পায়। বিষম দায় ঠেকেছি জানকী উদ্ধারে। আমকে রাবণ সংহারের অনুমতি দাও মা।
দুর্গাঃ রামচন্দ্র। তুমি নিজের শক্তি জান না। তুমি এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের পতি। তুমি আদি ভগবান। তোমার লোমকূপে বিশ্বের অবস্থান। তুমি স্বয়ং নারায়ণ। তুমি মায়ায় মানুষ রূপে মর্তে এসেছো রাক্ষস বিনাশ করতে। জানকি সীতা তোমারই প্রকৃতি রূপ। স্বয়ং লক্ষী।
রাম: লক্ষীকে এত বড় অপমান সহ্য করতে হচ্ছে।
দুর্গা: বৈকুণ্ঠ নগরে তোমার এক দ্বার রক্ষক ছিল। ব্রহ্মা তাকে অভিশাপ দিয়ে পৃথীবিতে পাঠিয়েছিল। সেই শাপেই সে রাবণ রুপে এই পৃথীবিতে এসেছে। এবং তোমেকে শত্রু রূপে পেয়েছে। তাকে বিনাশ করতেই মর্তে অবতার রূপে তোমার আগমন। তোমার হাতেই তার পাপমুক্তি।
সকলে: জয় দুর্গা মায়ের জয়। জয় রাম চন্দ্রের জয়।
দুর্গা: তুমি আমাকেও ধন্য করেছ। আমাকে তুমি অকালে পৃথিবীতে প্রকাশ করলে এখন থেকে লোকে আমাকে জানবে। আজ থেকে আমি রাবণকে ছাড়লাম। এখন তুমি যাও তাকে বিনাশ করো। বিভিষণ জানে কিবাবে তার মৃত্যূ হবে।
সকলে: জয় দুর্গা মায়ের জয়। জয় রাম চন্দ্রের জয়।
বিভিষণ: মা দুর্গার কৃপায় একটা কথা মনে পড়ে গেল। রাবণের মৃত্যুতো এমনিতে হবে না। ব্রহ্মার বলে সে বলিয়ান। দশ মাথা, হাত, পা কেটে আলাদা করে ফেললেও রাবণের মৃত্যু হবে না। ওগুলো আবার জোড়া লাগবে।
রাম: তাহলে!
বিভিষণ: তার মৃত্যু শুধু মাত্র শিবের দেয়া ব্রহ্মাস্ত্র দিয়েই হবে। সেই ব্রহ্মাস্ত্র দিয়ে তাকে নাভীমুলে আঘাত করতে হবে। অন্য কোথাও আঘাত করলে তার মৃত্যু হবে না।
রাম: সে অস্ত্র কোথায়?
বিভিষণ: একমাত্র মন্দোদরী জানে সে অস্ত্র কোথায়।
রাম: তাহলে উপায়।
হনুমান: চিন্তা করবেন না দেব । আমি যে করেই হোক সে ব্রহ্মাস্ত্র নিয়ে আসব।
রাম: তাহলে তাড়াতাড়ি যাও হনুমান। অনেক কষ্ট করেছ। ব্রহ্মাস্ত্র না হলে যে সব কষ্ট বৃথা।
হনুমান: আমাকে আশির্বাদ করুন।
রাম: হনুমানের জয় হোক। আমি তোমাকে আশির্বাদ করছি, ধরণীর মানুষ আমার পুজা দেয়ার আগে তোমার পুজা করবে।
হনুমান: রাম চন্দ্রের জয়।
(লাফ দিয়ে বের হয়ে যায়। মঞ্চে আলো নিভে যায়)
---- চলবে

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test