E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

মালিপাখি’র একগুচ্ছ কবিতা

২০১৮ ফেব্রুয়ারি ১৬ ১৮:৪৯:৫৭
মালিপাখি’র একগুচ্ছ কবিতা







 

আকাশপুরের পথটি বানাই

ঠিক তুমি ঠিক কার যে কি হও, চিঠিই যে শেষ হয়না রাকার
এখনও যে রোজ খোঁজে সে একটি সাথি জোছনা আঁকার !

নাম কিগো তার বলতে পারো, লুকিয়ে রাখে আকাশ কোথায় ?
রাকার হাসির সাথে সাথেই ঢেউ কি ওড়ে শালিক পোতায় ?

ভাবছি এখন কাটবো সাঁতার, সাঁতরে যদি ভুবন পেতাম
হয়তো আবার এক নিমেষেই তিনটি বাবুই হয়েই যেতাম !

নয়তো দোয়েল, নয়তো তিতি্‌ ধরত মুঠোয় খুশির পাহাড়,
রূপকথা দিন নাচতে, নাচতে ছড়িয়ে দিতো রূপটি তাহার !

একটা কি ফুল দুলছে নেশায়, কোথাও দূরে বাজছে সানাই !
সেই সুরে মন সাজিয়ে নিয়েই আকাশ পুরের পথটি বানাই !

আঁকার ফ্যাসাদ

বাগিয়ে তুলি খাতার পাতায় যেই একেছি মোষ !
অমনি রেগে লেজ নেড়ে সে করছে কি ভোঁস ভোঁস !!

বয়েই গেছে আঁকবো না মোষ, আঁকছি এবার চিল !
চিল বললে মাছ না দিলে হয় কি আঁকার মিল ??

চিল মুছে তাই নতুন করে আঁকতে গেলুম বাঘ !
হালুম ডেকে বাঘ বললে, যা সরে পড় ভাগ !!

ভয়ের ঠ্যালায় তাইতো শেষে আঁকতে গেলুম কাক !
কাক বললে আজকে ছুটি, ঠোকরাবো তর টাক !!


আর একটা পথ জুড়ি

হরিন তুমি গান দেশলাই, হরিন তুমি মনে ;
গান ঢেলেছ বুঝেছি তাই ঢেউ ওঠে ঘাস বনে !

হরিন তুমি রামধনু হার, হরিন তুমি সোনা ।
তোমার চোখে ওড়না আমার শিখেছে ঢেউ গোনা !

ঢেউ তো মাসি, দুল পরে সে চুল খুলেছে, চুলে ;
একটি তারা হাওয়ায় ভেসে নেমেছে পথ ভুলে !

হরিন তুমি গান আঁকো যেই অমনি আলোর ঝুরি ,
ঝমঝমিয়ে বাজে বলেই আর একটা পথ জুড়ি !


আমোদে তুমুল ভাসি

ও আমার ঝুমঝুমি ভোর ও আমার আতর পাড়া !
দেখনা দোলাই বুকে আতুসি জবার চারা !!

ও আমার টুনটুনি গান ও আমার বাবুই ঘুড়ি !
নাচোনা দু - হাত তুলে আলোতে ভুবন মুড়ি !!

ও আমার বুলবুলি ঢেউ ও আমার আতসবাজি !
সাজো না আবার সুখে জোনাকি, বাউল মাঝি !!

ও আমার জলপিপি দেশ ও আমার ঝিনুক বাঁশি !
ওড়োনা বাঁধন খুলে আমোদে তুমুল ভাসি !!

তুলিতে ভুবন আঁকি

ও আমার হলুদ বিকেল ও আমার কলুদ নদী !
দুটি পা ধুইয়ে দেবে ছুটিতে বেরোই যদি ??

ও আমার তালুক হাওয়া ও আমার শালুক মাসি !
এখন ও রাজার মতো জানোনা বাজাই বাঁশি ??

ও আমার প্রানের আকাশ ও আমার গানের বাড়ি !
আঁচলে কি বেঁধেছো নদী, না; তাল - সুপারী ??

ও আমার শিউলি সকাল ও আমার রাখাল পাখি !
বোসোনা চুপটি করে তুলিতে ভুবন আঁকি !!


ঘোড়াটি চলেছে

ঘোড়াটি চলেছে পিঠে এক ঝুলি বয়সের ছাপ পড়েছে,
তবু এক নেশা সারা পথ তাকে জাপটিয়ে চেপে ধরেছে।

ঘোড়াটি প্রাচীন, প্রাচীন তুলিতে ছবি এঁকে দেয় উড়িয়ে
হাওয়ার ফেনারা ঘন হয়ে বুকে ঢুকে পড়ে হুড়মুড়িয়ে ।

ঝুর ঝুর করে স্মৃতি মেদুরতা ঝরে পড়ে নীল পাহাড়ে,
গিরগিটি গুলি মহা উৎসবে নাচ জোড়ে পাতাবাহারে ।

কুলু কুলু ছোটে কত গান পথ, শিস দেয় বুলবুলিতে ।
ঘোড়াটি প্রাচীন, তুলিটি প্রাচীন, প্রাচীনতা লেগে ঝুলিতে ।

তাইতো ছবি জুড়ি

এইতো আমার চুপ ভাষা ঢেউ, এইতো রূপের ঝুরি ;
ছড়িয়ে গেছে গভীর নেশায় তাইতো ছবি জুড়ি !

ফুলটুসি তুই মন ভোলানো ভুবন পুরের রাখী
তাইতো আমি ভুল করে সব, তোকেই শুধু আঁকি !

আঁকতে, আঁকতে আকাশে যাই, আঁকতে আঁকতে গাছে ;
দিই বুনে রোজ একশ তারা, দ্যাখ কি দারুন নাচে !

নাচতে নাচতে ভোর হয়ে যায়, নাচতে নাচতে ঘাসে,
রুকুন পুরের রূপকথা সব ঝিকমিকিয়ে হাসে ।

এইতো আমার চুপ ভাষা ঢেউ, এইতো রূপের ঝুরি ;
ছড়িয়ে গেছে গভীর নেশায় তাইত ছবি জুড়ি !

এরা ওরা

এরা ভাবে বেশি বেশি
ওরা ভাবে কম কম !
এরা চড়ে ঠেলা গাড়ী
ওরা চড়ে টম টম !!

এরা বলে চিনি, চিনি
ওরা বলে গম,গম !
এরা ভাবে ঝিরি ঝিরি
ওরা ভাবে ঝম ঝম !!

এরা কেনে লেডিকেনি
ওরা কেনে চমচম !
এরা থাকে শিলিগুড়ি
ওরা থাকে দমদম !!

প্রিয় ভাষা বুকে তুলি

ফিস ফিস ক’রে কথা বলে নদী দুটি
ঝুর ঝুর ক’রে তারাদের প্রীতি ঝরে ,
ইসকুল ভেবে ছোটো ছোটো ঘাস গুলি
দুই চরে বসে দুলে দুলে বই পড়ে ।

মস মস ক’রে হেঁটে যায় বাদাবন
টিম টিম ক’রে আলো জ্বলে দূর গাঁ-তে,
পৃথিবীতে যত ঝাউগাছ বেঁচে আছে
তোড়া বাঁধা ফুল সকলের হাতে হাতে...।

ঢেউ ঢেউ মেঘে সুতো কেটে চাঁদবুড়ি
ঝিম ঝিম রাতে ভাটিয়ালী সুর ফোটে
চুমু ঢেলে দেয় বাতাসেরা ভালোবেসে
শন শন ক’রে জবা,দোপাটির ঠোঁটে ।

ফিস ফিস ক’রে কথা বলে দুটি নদী
উড়ে উড়ে আসে কবিতার পাখি গুলি,
আমি কবি, হেঁটে রাত ভোর একা একা
খুঁটে খুঁটে রোজ প্রিয় ভাষা বুকে তুলি...।

দেবদারু গাছ

আমি বললুম কেমন আছো, দারুন বুঝি ভালো ?
অমনি পাগল দেবদারু গাছ ছড়িয়ে দিলো আলো !

সেই আলোতে সারা আকাশ, আকাশ পাড়ার গানে ;
দুলতে দুলতে কাঁসাই থেকে চাঁদকে ডেকে আনে !

চাঁদ কি তখোন চাঁদ থাকে আর ? ভালোবাসায় মোড়া ,
ছবির ডানা লাগিয়ে পিঠে পেরোয় পাহাড় ঘোড়া !

সেই ঘোড়াটি ঘোড়া তো নয় , তালপাতার এক বাঁশি !
বাজতে বাজতে ভোর এনে দেয় , আমরা ফুটে হাসি !

আমি বললুম কেমন আছো, দারুন বুঝি ভালো ?
অমনি পাগল দেবদারু গাছ ছড়িয়ে দিলো আলো !

কবি পরিচিতি :

গদাধর সরকার ( ছদ্ম নাম – মালিপাখি ), পিতা- নানুগোপাল সরকার, মাতা- লক্ষীরানী সরকার, জন্ম- ১২-১০-১৯৬৭, জন্মস্থান- কৃষ্ণনগর। শিক্ষা- মাধ্যমিক। পেশা-ভুমি ও ভুমি সংস্কার দপ্তরের কর্মচারী ।
নীল আকাশ, তিতলি, জীবনকুচি, পত্রিকায় লেখা প্রকাশ । বই – মালিপাখির ছড়া সংগ্রহ ( ডি এম লাইব্রেরী, কোলকাতা - ৬)

ঠিকানা – মালিপাখি, ( গদাধর সরকার ), মল্লিক পারা, কৃষন্ননগর, নদীয়া, ফোন- ৮৫৩৬৯৮৬০৪৩

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test