E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ইন্দ্রজিৎ কুমার সাহা’র গল্প

২০১৯ ফেব্রুয়ারি ২৩ ১৬:২০:৪৬
ইন্দ্রজিৎ কুমার সাহা’র গল্প








 

প্রথম দেখা

২০০৫ সালের ঘটনা, শীত বেশ জাকিয়ে বসেছে।আমি ঢাকার কবি নজরুল কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।মফস্বল শহর কালিয়াকৈরে বড় হয়েছি তাছাড়া ইন্টার মিডিয়েট লেভেল খেলাধূলা করেই পার করে দিয়েছি, প্রেম ভালবাসা বিষয়- টা মাথায় ঢোকার আগেই শেষ!কিন্তু ঢাকার চিত্র ভিন্ন এখানে অনেকেই চুটিয়ে প্রেম করছে! জীবনের কুড়িটি বসন্ত পার হয়ে গেলেও আমার জীবনে এখনও অধরা সেই প্রথম দেখা! বা প্রেম!শুনেছি প্রথম দেখা বিষয়টা নাকি বেশ অদ্ভুৎ! এদিকে আমি একটি প্রেম বা সৃুন্দর মুখের দর্শণ পাবার আশায় উন্মুখ হয়ে আছি!যাই হোক শীতের ছুটিতে সেবার বাড়ীতে এলাম ,কনকনে শীত, বাড়ীতে এসেই গেলাম অমল দা দের বাড়ী ,উদ্দেশ্য মিষ্টি বৌদী -দের সাথে দুষ্টামি করা! কিন্তু যেই ঘরে ঢুকব তখনই চোখ আটকে গেল এক জোড়া মুক্তার মত সচ্ছ আখি যুগলে! আমি নিজের দৃষ্টি কিছুক্ষনের জন্য আর সরাতে পারলাম না এক দৃষ্টে চেয়ে রইলাম চোখ দুটির দিকে! সেও চেয়ে ছিল অপলক দৃষ্টিতে!বউদীর ধাক্কায় সম্বিৎ পিরে পেলাম! কি গো কি হয়েছে! এমনে কি..দেখ? আস ঘড়ে আস! য়ুহু এখন না, আমি যাই। যদিও চলে এসেছিলাম তবুও মন পরে ছিল ঐ চোখ দুটির উপর।পরদিন পুকুর থেকে øান সেরে ফিরছিলাম .---- বাড়ীর নিচে খোলা জায়গায় সে ছিল. আমাকে দেখে টিপ্পনী কেটে বলল শুধু øান করলেই হবে এদিকে একটু দেখতে হবে! আমি ঠিক আছে বলে দ্রুত সরে পরলাম সত্যি বলতে কি বেশ একটু লজ্জাই পেয়েছিলাম!বিকালে বেশ জাকিয়েই শীত পড়েছিল, সোয়েটার জিন্স পরে বাড়ী থেকে বেরিয়েছি, রাস্তায় তার সাথে দেখা. সাথে ছোট্ট ভাতিজা! এই হঠাৎ প্রাপ্তিতে মনে একটা হিমেল হাওয়া খেলে গেল!কোথায় যাচ্ছেন ? পশ্ন কর্তার মুখ চোখ মুক্তার মত জল জল!----------------

এইতো এদিকেই একটু হেটে আসি আপনি যাবেন আমার সাথে?
হু যাব কোথায় যাবেন?

এই সেরেছে কোথায় যাব সেটাই তো কথা, এদিকে বেরানোর মত তেমন কোন জায়গা নেই।
কি হল চুপ কেন? টাকা খরচের ভয় বুঝি------

হুম, মেয়েদের এই হল এক গোপন অস্ত্র ছেলেদের কে টাকা বিষয়ক একটা খোচাই মোক্ষম হাতিয়ার!
আরে না চলুন যাই অনেক ভেবে টেবে তাকে নিয়ে গেলাম আমাদের বাড়ীর পাশ দিয়ে বয়ে চলা মৃত মহূয়া নদীর ওপারে। শীতের দিনে ওপারে মটরশূটি বাদাম সহ আরও বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করা হয় ,মটর শূটির উপরে বিকেলের দিকে সচ্ছ শিশির কনা অনেক ভাল লাগে ।

বাড়ী থেকে খানিকটা আড়ালে তাকে নিয়ে হাটতে থাকলাম! অনেক কথা হল তার সাথে রোমান্স,ভাললাগা,মন্দলাগা,রাজনীতি আরও কত কি---------

আসলে রোমান্টিক আলাপ গুলি মনে নেই তবে ইচ্ছা করলে বানিয়ে বানিয়ে বা কল্পনা প্রসূত কিছু লেখা যায়। কথার এক পর্যায়ে সে আমার হাত ধরে একটা মটরশূটি ফুল দিয়ে প্রপোজ করে বলল আই লাভ ইউ! কথাটা আমার বিশ্বাস হতে চাচ্ছিলনা তদপুরি বিশ্বাস করে অবারিত আনন্দে ভেসে গেলাম! মটরশূটি ফুলের উপর সদ্যভেজা শিশির কনাগুলি বড়ই মনোহর ঠেকেছিল সেদিন! এর পর থেকেই চলতে থাকল আমাদের পূর্ণদৈঘ্য প্রেম কাহানী যদিও সে আমার থেকে বেশ খানিকটা দূরে অবস্থান করত তদপরি মনের যোগাযোগ ছিল সার্বক্ষনিক।

আমি থাকতাম কবি নজরুল কলেজের হলে ,রুম মেটদের মধ্যে একজন নাম সুমন পেশা ছাত্র রাজনীতি ব্যাটা মোবাইলে এত বেশী কথা বলত কি বলব আমরা সবাই ওর কথার যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ!তবে কিছু বলতে পারতামনা নেতা মানুষ এক পর্যায়ে আমারও ইচ্ছা হল মোবাইলে কথা বলি ঐ সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ এই আর কি? তার সাথে প্রতি রাতে চুটিয়ে গপ্প করতাম সবই তরুন তরুনিদের রোমান্টিক কথাবার্তা মাঝে মাঝে রোমান্টিজম ননভেজ পর্যায়ে চলে গেলে অনেকেই আমার বেডে এসে ঘাপটি পারত কথা শোনার জন্য।যারা এই বয়স পার করে এসেছেন তাদের কাছে সবই বেকার বাকাওয়াজ মনে হবে তবে সেই সময়ে ঐ বাকাওয়াজ গুলিই আমার মনের খোরাক যোগাত!এমনও দেখেছি এক মেয়ের গলার আওয়াজ শোনার জন্য এক হুজুর গোছের ধার্মিক ছাত্র রাতের পর রাত কল করে বসে থাকত কিন্তু সমস্যা হল ওপাশের পাত্রী টি বরই বেরসিক ফোন রিসিভ করে বসে রইত কিন্তু আওয়াজ দিতনা ঠিক ধরি মাছ না ছুই পানি আরকি!।আমি মূলত তার সাথে বেশ অনেক সময় ধরেই কথা বলতাম তবে বিরক্তি ছিলনা। দিন যায় মাস যায় তার সাথে দেখা নেই কোন উপলক্ষ ছারা তো আর সে আসেনা..

সেবার আমাদের বাড়িতে দীর্র্ঘদিন পর দূর্গাপূজা অনুষ্ঠত হবে আমি ঢাকা থেকে বাড়ী এসে যে মুখটি দেখার প্রতিক্ষায় ছিলাম সেই কাঙ্কিত মুখের দেখা পেয়ে গেলাম, আমাদের পারিবারিক অবস্থা তখন খুবই সঙ্গিন আমি তখনও পড়া লেখা শেষ করিনি বাবার সামান্য আয়ে সংসার কোন ভাবে চলছে এমতাবস্থায় তাকে যে কিছু গিফট করব সেটাও হলনা অবশ্যি আমাদের পারিবারিক সংগতির কথা তার অজানা নয়।

সেবারের পূজা বেশ ঘটা করে তার সানিধ্যে কাটিয়ে দিলাম ।আনন্দের সময় গুলি খুব দ্রুত কেটে গেল। সে চলে গেল বিদাই নিয়ে পেছনে রইল তার কিছু ছোয়া।বেশ কিছুদিন তার সাথে মোবাইল আলাপের মাধ্যমে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটালাম!এদিকে কিছুদিন যাবৎ তার ঐ এক আবদার ডেটিং করতে হবে সবাই ডেটিং করে আমি কেন আসিনা!সে থাকত নাগরপুর সেখানে মহিলা কলেজে পড়াশোনা করত।তো অনেক ভেবে চিন্তে এক সকালে রওনা হলাম ডেটিং করার উদ্দেশ্যে---

তার কথামত বাজারের ধারে বড় এক তাল গাছের নিচে অপেক্ষা করার পালা..অবশ্যি পথে টাঙ্গাইল নেমে এক বšধুর সাথে কফি পান করে চাঙ্গা হয়ে নিলাম এর পর কিছু লাল গোলাপ নিয়ে রওনা দিলাম ধলেশ্বরী পার হয়ে নাগর পুরের উদ্দেশ্যে..

তাল তলায় দারিয়ে অপেক্ষা করছি তো করছি মহারানীর ফেরার নাম নাই..

কি করি ভেবে পাচ্ছিনা এদিকে এলাকায় একজন অপরিচিত মানুষ দেখে অনেকেই অতি আগ্রহে আমার দিকে তাকিয়ে রইল তবে সাহস করে কেউ কিছু বলে উঠতে পারলনা পরিস্থিতি বুঝে আমি জুতা কালি করতে দিয়ে দ্বারিয়ে থাকলাম!বেশ কিছু সময় পরে তিনি এলেন তবে আমাকে না দেখে এদিক সেদিক তাকাতাকি করতে থাকল .. আমি ইচ্ছে করেই একটু আড়ালে রইলাম তবে বেশিক্ষন নহে তার আকুল চাহনিতে সারা আমাকে দিতেই হল..

খুব দ্রুতই একটা রিকসা নিয়ে আমরা চলে এলাম তাল তলা থেকে কিন্তু যাব কোথায় এটাই প্রোবলেম তার কথানুযায়ী অনেক জায়গাতেই যাওয়ার উপায় নেই! অনেকভেবে চিন্তে একটি বড় দিঘীর পাড়ে গিয়ে বসলাম আমরা..

আনেক খুনসুটি দুষ্টামি হল আমি অবশ্য বেশ খানিকটা নার্ভাস প্রথম কোন মেয়ের সাথে এতটা ঘনিষ্ঠ অবস্থায় আছি তবে সে বেশ সাবলিল আমার প্রতি! সে আমাকে পরপর বেশ সুন্দর কয়েকটি গিফট দিল অবশ্যি আমার লাল গোলাপগুলি পেয়ে সে আনন্দে উদ্বেলিত হল..চুমোয় চুমোয় ফুল গুলিকে সিক্ত করে দিল!আমার অবশ্যি বেশ একটু হিংসাই হচ্ছিল ! মনে মনে ভাবলাম টাকা খরচা করি আমি আর হামি পায় বেটা ফুল! ওর দু একটাতো আমারও পাওনা নাকি! অবশ্যি আমার একটু অন্য রকম অনুভূতি হয়েছিল ।সে আমাকে একটি সুন্দর ওয়ালেট,এলার্ম দেয়ারঘড়ি, কফি পানের মগ ..আরও কিচু বোধহয় দিয়েছিল মনে পড়ছেনা! গিফট করেছিল ...

তার ভাষায়, যতবার মার্কেটে যাই তোমার জন্য কিছুনা কিছু কিনতে হবেই..!

আমার অবশ্য ওসবের বালাই নাই!

হাতে হাত চোখে চোখ মনে বড় সাধ রাখি ঠোটে ঠোট কিন্তু ..অগত্যা সে চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিতে হল..

আমি কেন জানি ওর বুকের দিকে তাকিয়ে ছিলাম বেশ ফর্সা সুডৌল বুক ওর!

অবশ্যি সে আমাকে আলতো থাপ্পর দিয়ে বলেঝিল কি দেখ এমনে!সবই তো তোমার!

আমি অনেক বেশী লজ্জা পেয়েছিলাম ওর কথায় তাই বুঝি সাহস করে ওদিকে তাকাবার স্পর্ধা করিনি!
আস্তে আস্তে লোকের আনাগোনা বারতে থাকে তাই আর এখানে বসা গেলনা.. এবার নির্জন একটা

জায়গার খোজে বেরিয়ে পড়লাম...

দিগন্তজোড়া ধানক্ষেত আকাবাকা মেঠো কাচা রাস্তা ধরে রিকসা ছুটতে থাকল আমার খুব ইচ্ছা হচ্ছির ওকে জড়িয়ে ধরে রিকসায় চলি কিন্তু সে আমাকে ওভাবে বসার পারমিশান দিলনা কি আর করা বিরস ভাবে চলতে থাকল আমাদের রিকসা ভ্রমন!বেশ কিছুক্ষন রিকসা চালানোর পর রিকসাওয়ালা বলল মামা

কই যাইবেন?

জানিনা মন যেদিক চায় নিয়া চল..

ওমা সেকি কথা শুধু রিকসাতেই যাব কোথাও বসবনা..ওর চোখে মুখে একটা রাগমিশ্রিত ভালবাসার ছাপ!
হু তুমি আমাকে আসতে বললে আমি এলাম,এখানে কিছু কি আমি চিনি?তুমি একটা জায়গা ঠিক করে

রাখবানা আগে থেকেই..

ঠিক আছে এখানেই নাম.. মামা রিকসা থামান আমরা এখানেই নামব.....

এখানে কোথায় বসবে?

কেন ..ঔতো ঔখানে হাত দিয়ে ইশারা করে একটা খোলা জায়গা দেখিয়ে দিল
রিকসা ভারা মিটিয়ে ওকে নিয়ে চললাম অজানার উদ্দেশ্যে..মনে মনে ভাবছি কিছু চিনিনা নাগরপুর শহর থেকে বেশ কিছুটা ভেতরে গ্রাম্য অঞ্চলে চলে এসেছি আমরা ..

আকাবাকা আইল ধরে বেশকিছু সময় হাটার পরে বসবার মত জায়গা মিলল!অবশেষে!
দুজনে সবকিছু ভুলে গিয়ে সলিট প্রেমে মেতেউঠলাম !কোন দিকেই আমাদের তখন দেখার সময় নেই...
দুজনের অনেক দিনের জমানো কথাগুলি যেন আর ফোরানোর নয় কথার পিঠে কথার উৎপত্তি দেখে মনে মনে ভাবলাম এবার আমার উপন্যাসিক হওয়া আর ঠেকায় কে!

আচ্ছা সেবার দূর্গাপুজার কথা তোমার মনে আছে?মু! (আমি ছোটকরে ওকে মু বলেই ডাকতাম)
মনে নেই আবার সেবার তুমি আমাকে রঙ আর সিদুর দিয়ে ভূত বানিয়ে ছিলে!

তুমিও তো আমাকে বাদর বলেছিলে!

বেশ করেছি তোমাকে বাদর বলেছি! তুমি যা তোমাকে তো সেটাই বলতে হবে নাকি!
দেখ তুমি কিন্তু বর্ণবাদবিরোধী আইন ভঙ্গ করছ এর জন্য তোমার জেল জড়িমানা হতে পারে!
হু! জেল জড়িমানা ,আমার সোনাই কে আমি যা খুশি সেই নামে ডাকব বাদর ত্যাদর ইত্যাদি ইত্যাদি.. এই বলে সে আমাকে বুকের কাছে টেনে নিয়ে অতি প্রাকৃত প্রেমে ডুবে গেল!

আমার বেশ গরম অনুভুত হতে লাগল!আমি তাকে বললাম বাদর তো চিনলাম কিন্তু ত্যাদরতো চিনতে পারলামনা! সেটা কি জন্তু আছে!

--দারাও দেখাচ্ছি এই বলে সে আমাকে খুব শক্ত করে কামরিয়ে বলল যাহা এইরুপ আদরের সহিত কামরায় উহাকেই ত্যাদর বলা হয় !-----------

সেদিন আমারও খুব ইচ্ছে হয়েছিল উহাকে আদরের সহিত কামরানোর কিন্তু কোন এক অজানা কারনে সেদিন বিরত ছিলাম এই কর্ম থেকে!

এভাবেই অনেক খুনসুটি আর মজা করে সময় কেটে যাচ্ছিল হঠাৎ চকের মাঝ খানে অবস্থিত এক বাড়ীর কয়েকজন মহিলারা বলে উঠল দেখ দেখ ঠিক জেন রাধা কৃষ্ণ-----

আমি খুবই লজ্জা পেলাম সেও লাজুক হেসে বলেছিল----- কি বলেছিল ঠিক মনে করতে পারছিনা!
এভাবেই বেশকিছুটা সময় কাটিয়ে চলে এলাম..পেছনে পরে রইল অনেক স্মৃতি ময় ঘটনা! সেদিন সারাটা দিন সপ্নেরমত কেটেছিল..

টাঙ্গাইলের বাসে চেপে সোজা চলে এলাম পিসিদের বাড়ী সেখানে পিসততু ভাই- এর একেরপর এক প্রশ্ন, প্রশ্নবানে জর্জরিত হয়ে আমার আতœারাম খাচাছারা হওয়ার উপক্রম!

---বলনা ভাই কেমন দেখতে কি কি করলি সারাদিন !ইত্যাদি ইত্যাদি..

ঠিক আছে কালকে তোকে নিয়ে যাব, স্বচক্ষে দেখিয়া নাহয় জীবন ধন্য করিস!

সত্যি কালকে আবার যাইবি..

আরে হ পাগলা যামু, এবার চল যাই কফি খেয়ে আসি, সারাদিন রোমান্স করে কেমন যেন ঝিম ঝিম লাগছে!

আরে রাহ তোমার কফি লও পান খায়ে আসি..মজা তো পানে তাইন্যা!

এখানে বিশেষ দ্রষ্টব্য ভাইটি আমার ছিল একজন বিশিষ্ট পান খুর সারা দিনে কমপক্ষে ২৫-৩০টি পান লাগে তার!আমি উহাকে মজা করে বড় দেহবিশিষ্ট ছাগল বলে সম্বোধন করি!সারাদিন মুখে পান লেগেই আছে সাথে আবার চুন বিভিন্ন প্রকারের জর্দ্দা সুপারি,সজ ..সত্যিই আজব!

রাতে বিছানায় গিয়ে নির্ঘুম কাটছে কখন সূর্যদেব দর্শনদিবে আর আমি নাগরপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হব!সারারাত ভাইয়ের সাথে খুনসুটি করে কাটিয়ে দিলাম! সকালে ফ্রেশ হয়ে বড় ছাগলটাকে নিয়ে ছুটলাম নাগরপুরের উদ্দ্যেশ্যে পৌছাতে পৌছাতে বেলা প্রায় বারটা এদিকে আমার অবস্থাও যে তেরটা বেজে গেছে সেটা বুঝতে পারলাম উহার মুখদর্শন করিবা মাত্রই!বেশ একরাশ রাগ ঝেড়ে তবে খান্ত হল তার মন! বেশ কিছুক্ষন তার সাথে কথা বলতে যাব এমন সময়-------------

কি সমস্যা তোমার এখন এত কথা বলতেছ কেন? আমাকে সারাদিন বসিয়ে রেখে এখন এসেছে তিনি প্রেমালাপ করতে ভাগ ব্যাটা তোর সাথে কোন কথা নাই !

যেই বলা সেই কাজ রওনা দিলেন তিনি বাড়ীর দিকে ------অনেক অনুনয় বিনুনয় করে একটু শান্ত করি তাকে,চল ঐদিকটায় গিয়ে বসি আমার ভাইটার সাথে একটু পরিচিত হও, পান খাবে ভাল করে একটা পান বানিয়ে আনি! তাহলে চিপস নিয়ে আসি নানা ঠান্ডা নিয়ে আসি!
কিচ্ছু লাগবেনা----–আচ্ছা ঠিক আছে নিয়া আস যা খুশি নিয়া আস!

আমি কথা মত সব কিছু নিয়ে হাজির! এটা পড়ে কি ভাবছেন আমি শান্তশিষ্ট টাইপের প্রেমিক আরে নারে বাবা বিপদে পরলে যা হয় আরকি! একে একে সব কিছু খেল সে, অবশ্যি এর ফাকে ফাকে আমাকে আদরও করছিল তবে ভাই আবার সম্পর্কে ভাসুর হবে এই ভেবে এযাত্রা সে কিছুটা দূরত্ব রেখে চলছিল !
কিন্তু আমার, আজকে আরও বেশি করে আদর করতে ইচ্চা করছিল ---

অবশেষে আমার হাত থেকে পান নিয়ে মুখে গুজে দিল সে, –পানে দু-তিনটি চিবুনি দিতেই তার চোখে জল, আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল শুধু তোমার কথা রাখতেই জীবনে প্রথমবার পান চিবালাম! খুশি তো এবার! তাহলে আমি যাই!
আমি এবার কিছু বলার সাহস পেলামনা শুধু কয়েকবার বললাম আর কিছুক্ষন থাকনা-------------
সে আমাকে একটু আদর করে বলল নারে সোনাই আর থাকার জো নেই বাড়ী থেকে আনেক আগে

বেড়িয়েছি এখন না ফিরলে দিদি রাগ করবে।
আমার হ্রদয় অশান্ত করে সে চলে যেতে লাগল--- আমি অবশ্যি আরেকটু বসার জন্য রিকোয়েস্ট করেছিলাম! কিন্তু কে শোনে কার কথা! আমার হাতে একটা ২০০ টাকার ফ্লেক্যির কার্ড গুজে দিয়ে সে চলে গেল--

আমার প্রচন্ড রাগ হয়েছিল মুক্তার উপর আর হাতের ঐ রিচার্জ কার্ডটিকে মনে হচ্ছিল আমার দারিদ্রতার চরম উপহাস!বিষয়টি ্অবশ্য তখন এভাবে দেখিনি পরে উপলব্ধি করেছিলাম!
সে চলে গেল আমি দেখলাম------------ সে অনেকটা দূর যাবার পর ভাই আমাকে বলল ,“তুই কি ভাবে পেলি এই পাগলিটাকে”

কিছুক্ষন চুপ থেকে বললাম কিসমত কা খেল ভাই----
পরি টাকে সারাজীবন ধরে রাখিস ছেরে দিসনা! বলেছিল আমার সেই ভাই!

কিন্তু সারা জীবনতো কোন ছার আমি খুব বেশি দিন ধরে রাখতে পারিনি তাকে----- সেবার ফিরে আসার পর আরও বেশ কিছুদিন সম্পর্ক ছিল তার সাথে মোবাইলে কথাও হতো নিয়মিত, একদিন কি হল ওর এইচ এস সি পরিক্ষা শুরু হল আমার প্রচন্ড ইচ্ছা হল ওকে উইস করার জন্য, ওকে কিছু না বলে হঠাৎ করেই ছুটে গেলাম নাগরপুর সোজা গেলাম তার পরীক্ষাকেন্দ্রে অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হবার নয় ঘরি চলছে টিক টিক করে... পরীক্ষা শেষ হল একে একে সবাই বেড়িয়ে এল কিন্তু তার দেখা পেলামনা!

হঠাৎ করেই দেখলাম ওর জামাইবাবু আর মাকে ! আমি একটু আড়ালে চলে গেলাম যখন আড়াল থেকে বেড়িয়েছি ততক্ষনে সে চলে গেছে অনেক দূরে, তীব্র খরার পরে একফোটা বৃষ্টির জলের স্পর্শ পাওয়ার জন্য চাতক পাখি যেমন আকাশ পানে অশান্ত হয়ে চক্কর কাটে ঠিক তেমনি আমার অশান্ত মনটিও এদিকে সেদিকে চক্কর কাটতে লাগল কিন্তু কোথাও কিছু খুজে পেলনা! কিছুক্ষন চুপচাপ বসে রইলাম এরপর সোজা চলে গেলাম নাগরপুর জমিদার বাড়ীতে, প্রাচীন ভবন বেশ কিছু ভবন পরিত্যাক্ত করা হয়েছে দুটি ভবনে গড়ে উঠেছে নাগরপুর মহিলা কলেজ এই কলেজেই ইংরেজী বিষয়ের লেকচারার মুক্তার জামাইবাবু সম্পর্কে আমারও দাদা!

যাইহোক সেখানে গিয়ে দাদা বৌদীর কাছে অনেক মিথ্যা কথা বললাম উদ্দেশ্য তার সাথে একবার দেখা করা আমাকে অনেক কিছু খাইয়ে আপ্যায়ন করা হল কিন্তু আমার চোখ ঔ দরজাপাণে একবার তাকে দেখব তার প্রতি শুভকামনা করে প্রস্থান করব। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস অনেক সময় মানুষের অনেক ছোট চাওয়াও পূরণ হয়না তেমনি আমার চাওয়াটিও অপূর্ণ থেকে গেল, কোন এক অজানা কারনে সে আর আমাকে দেখা দিলনা!

অশান্ত হৃদয়ে বেরিয়ে এলাম আমি, নাগরপুর জমিদার ভবন থেকে কেমন যেন তফাৎ যাও তফাৎ যাও আওয়াজ ভেসে এল আমার কর্নযুগলে, আমি একবার ফিরে তাকালাম, সবই ধোয়াশা মনে হল! ফিরে এলাম আমি চিরতরে হারিয়ে তাকে! কিন্তু চাইলেই তো আর হারানো যায়না বার বার ফিরে আসে সে, ফিরে আসে প্রথম দেখার স্মৃতি নিয়ে! ফিরে আসে হারানোর যন্ত্রনা নিয়ে।

(ওএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test