E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বিবেকবার্তায় কিকুকো সুজুকি

২০১৪ আগস্ট ২৪ ২০:২৬:৩০
বিবেকবার্তায় কিকুকো সুজুকি

প্রবীর বিকাশ সরকার : ২০০৭ সাল, আজ থেকে ৭ বছর আগের কথা। তখন বাঙালিদের সভাসমিতি, আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গম গম রম রম করত টোকিওর বিভিন্ন শহরের মিলনায়তনগুলো। এখন সে উদ্যোগে ভাটার টান। সেই টানে হারিয়ে গেছি অনেকেই আমরা। এখন আর কোথাও যেতে মন চায় না। এখন অনুষ্ঠান হয় না তা নয়, কিন্তু সৃজনশীলতা নেই, নতুন কিছু করার তাগিদ নেই, প্রাণবন্ত উৎফুল্লতা নেই সম্ভবত আমাদের বয়স, অর্থনৈতিক মন্দা, স্বদেশে ফিরে যাওয়ার প্রবণতা ইত্যাদি এর কারণ বলে মনে হয়।

এই ছবিটি লেখক ও সাংবাদিক পিআর প্ল্যাসিড তার প্রতিষ্ঠান বিবেকবার্তা থেকে আয়োজনকৃত একটি অনুষ্ঠানের। টোকিওর তাবাতা কুমিনকাইকান মিলনায়তনে তোলা। বাংলাদেশ-বাংলাসাহিত্য নিয়ে ছিল বোধ’য় অনুষ্ঠানটি।

সেদিন উপস্থিত ছিলেন বাংলা সাহিত্যের একনিষ্ঠ পাঠক এবং অনুবাদক মিসেস কিকুকো সুজুকি। আমিই তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম আসার জন্য তিনি কথা রেখেছিলেন। তাঁর সঙ্গে আমার বহু আগে থেকেই পরিচয় এবং বন্ধুত্ব। তাঁর ইতাবাশির বাসায় গিয়েছি একাধিকবার দেখেছি প্রচুর বাংলা গ্রন্থের সংগ্রহ। বাংলা সাহিত্যের দিকপাল সবাইকে তিনি পাঠ করেছেন যখন টোকিও বিদেশি ভাষা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারিক ছিলেন দীর্ঘ বছর। তাঁর বাসায় আরও দেখেছিলাম বিভিন্ন বাঙালি শিল্পীর রেকর্ড---বিশেষ করে দেবব্রত বিশ্বাস তাঁর খুব প্রিয় শিল্পী। বাংলা অনর্গল বলতে না পারলেও যা বলেন ভেবেচিন্তে বলেন। উচ্চারণও সুন্দর।

তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে লোককাহিনী, গাথার জাপানিতে অনুবাদ এবং জাপানি ভাষায় বাংলাদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক বার্ষিক ম্যাগাজিন ‘সোকা’ (উজানযাত্রী) প্রকাশ। প্রায় ১২ বছর নিজের খরচে প্রকাশ করেছিলেন। সম্ভবত এই ধরনের ম্যাগাজিন অন্য কোনো দেশের বাংলাদেশপ্রেমী কেউ করেছেন বলে জানা নেই।

বাংলাদেশে একাধিকবার গিয়েছেন। একবার গিয়েছিলেন চট্টগ্রাম পর্যন্ত একা। আমি স্থানীয় বন্ধু কবি, চিত্রশিল্পী এবং মঞ্চনট সাফায়াত খানকে অনুরোধ করেছিলাম গাইড করার জন্য সাফা কথা রেখেছিল। সুজুকিসানও দারুণ আনন্দিত হয়েছিলেন, ঘুরে ঘুরে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ, ছবি ও তথ্যাদি সংগ্রহ করেছিলেন। পরে লিখেওছিলেন খ্রিস্টান সম্প্রদায়কে নিয়ে তাঁর ম্যাগাজিনে যতখানি মনে পড়ে।

বছর দুয়েক আগে তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিল, খোঁজখবর করতে গিয়েছিলাম। হেমন্তের মাঝামাঝি ঝিরঝিরে হিমেল বিষণ্ন বাতাসে তাঁর সাদাকালো চুল উড়ছিল, চোখে মুখে বয়সের ছাপ। বার্ধক্যে জুবুথুবু হয়ে পড়েছেন তবু বাংলা সাহিত্য নিয়ে কাজ করার অদম্য আগ্রহ আমাকে বিস্মিত করেছিল! কবি মুকুন্দরামকে নিয়ে কাজ করছেন। সেই সংবাদসহ একটি প্রতিবেদন দৈনিক যুগান্তরের সাহিত্য সাময়িকীতে লিখেছিলাম। এখন কেমন আছেন জানি না।

এভাবে চলে যাচ্ছেন বাঙালিপ্রিয় জাপানিরা, চলে গেছেন সর্বজনশ্রদ্ধেয় অধ্যাপক আজুমা, অধ্যাপক নারা। আঙুলেগোনা আর কয়েকজন আছেন, তবে নতুন মুখ আসছেন না তেমন করে। মনে হচ্ছে একটা সাময়িক শূন্যতা সৃষ্টি হবে।

(ছবি: বামে সুজুকিসান, ছড়াকার বদরুল বোরহান, লেখক এবং পিআর প্ল্যাসিড)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test