E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

উপলব্ধি

২০১৪ অক্টোবর ১১ ১০:৫৫:৫৬
উপলব্ধি

| রেজওয়ান তানিম |

বেলা এগারোটা। তিনি এখন বাড়িতে, বসার ঘরে চলছে অস্থির পায়চারি।

সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বসেছেন, ঠোঁটে জ্বলছে সিগারেট।

লাল সাদা স্ট্রাইপ টিশার্টটা ঘামে ভেজা, কপালেও দুশ্চিন্তার মেঘ। একটু আগে বড় এক যন্ত্রণা থেকে বাচা গেছে। মুরাদ মামা ছিলেন বলে রক্ষা, সাক্ষাৎ দেবতা তিনি, যমের হাত থেকে টেনে বের করে এনেছেন। অত বড় বাড়িটা হুড়মুড় করে ভেঙে পরলে তার নীচে আটকা পরা, সেখান থেকে আবার অক্ষত বের হয়ে আসা, এতো চাট্টিখানি কথা নয়। তার উপর উন্মত্ত গেয়ো জানোয়ারগুলোর চোখে যেভাবে আগুন খেলছিল, ওদের হাতে পরলে অক্কা পাওয়া ছিল নিশ্চিত। দিন সাতেক ধরেই বোঝা যাচ্ছিল অমনটা ঘটবে, কিন্তু আজই যে ঘটবে কে জানত?

উশখুশ পায়চারির ফাঁকে টিভিটা ছাড়লেন। পাশের ঘরে বউটা ব্যাগ গোছাচ্ছে, এত দেরি করে কেন ? কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে পালাতে হবে। কোথায় যাবেন এখনো ঠিক করেন নি। আগে ঢাকা ছাড়তে হবে, এটাই হলো বিষয়। এত দেরি করছিস কেনো? খেঁকিয়ে উঠে বলে উঠলেন তিনি, জানিস না পুলিশ খুঁজছে। তাড়াতাড়ি কর, তাড়াতাড়ি কর।

ঘণ্টা দুই আগের কথা। সোহেল সাহেব তখন খুব ব্যস্ত।

কাজ সেরে মাত্রই নিজের নামে করা দশতলা ভবনের বেজমেন্ট অফিসে ঢুকলেন। একটু আগে মেলা হ্যাপা গেছে। তিন চার হাজার শ্রমিক কর্মকর্তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে অফিসে ঢোকানোর কাজটা নিজে দাড়িয়ে করতে হয়েছে। গার্মেন্টসের মালিকগুলোও কেমন বলদ, বোঝে না বন্ধ রাখলে নিজেদেরই ক্ষতি। ওদিকে ব্যাঙ্কের বদমাশগুলো অফিস বন্ধ করে আঙ্গুল চুষছে; কী আশ্চর্য! এত সুন্দর শক্ত পোক্ত একটা বিল্ডিং নাকি ধ্বসে পড়বে, বললেই হল ?

সামনের খাটটাতে গা এলিয়ে দিলেন, একটু তন্দ্রামত এলো। ঘড়িতে বেলা বারোটা। দুপুর একটার দিকে শ্রমিকদের নিয়ে লাঞ্চ আওয়ারে মিছিল শুরু করতে হবে। কত বড় সাহস শালাদের হরতাল করে। সব কটাকে বুঝিয়ে দিতে হবে হরতালের মজা। সেলিমকে বলে রাখা আছে ওর লোকদের রেডি রাখতে। হকি স্টিক, গজারি, চাপাতি কিংবা বন্দুক কোন কিছুরই কমতি রাখা চলবে না...

কাঁধে হঠাৎ হাতের স্পর্শ, চমকে উঠে সোহেলের চিৎকার, কে কে? কি ব্যাপার, ভয় পাচ্ছ কেন, সাবধানী স্বরে বললেন তার স্ত্রী। গোছানো ব্যাগটা দেখেই টেনে নিয়ে তিনি বলে উঠলেন, কেউ এসে যদি জিজ্ঞেস করে রানা ভাই কই, বলবি জানি না।

তিনি দরজার কাছে গেলেন, দরজা খুলে বেড়িয়ে যাবার সময় স্ত্রীর প্রশ্ন, তুমি কই যাও ? উত্তর না দিয়ে শুকনো মুখে পালাবার পথ খুঁজছেন। মাথার উপরে তার কত মানুষের লাশের বোঝা, সেটা উপলব্ধির ক্ষমতা তার ছিলনা। সম্ভবত সোহেল রানাদের থাকে না, কোনদিন ছিলো না, আগামীতেও থাকবে না।

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test