E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শায়মা হকের কিশোর কবিতাগুচ্ছ

২০১৪ অক্টোবর ১৩ ১১:৫২:০৪
শায়মা হকের কিশোর কবিতাগুচ্ছ

| শায়মা হক |

বাংলাদেশের ঋতু

বাংলাদেশে ছয়টি ঋতু ছয়টি রকম রঙে
নানান সূরে গান গেয়ে যায় খেলে নানান ঢঙে
গ্রীস্মকালে তালের পাখায় জুড়োয় আদুল গা
নানান রকম ফলের স্বাদে প্রাণই ভরে না।
বর্ষাকালে ইলশেগুড়ি ইলিশ মাছের ঝোল
ঝর ঝর ঝর বাদল ধারায় ভরে নদীর কোল।
শরৎকালে কাশের ফুলে শুভ্র মেঘের ছাঁয়া
হেমন্ত তার হিমের রাতে বুনলো সেথায় মায়া।
শীতের দিনে দারুন জাড়ে ঠকঠকিয়ে কাঁপি
বসন্ত তার সুবাস নিয়ে আনলো ফুলের ঝাঁপি।

(বাংলাদেশের ঋতু - ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত,শীত আর বসন্ত এই ৬ টি প্রাণকাড়া ঋতুর সমন্বিত রুপ আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। বৈশাখ ও জৈষ্ঠ্য এই দুই মাস মিলে গ্রীষ্মকাল।মাটি ফেটে চৌচির, প্রচন্ড খররৌদ্র এ ঋতুর বৈশিষ্ঠ্য।ঘনকালো অন্ধকারে ছেয়ে আসে আকাশ, বিদ্যুতের চমক,সারাদিন ওঝরধারায় বৃষ্টি সেটাই বর্ষাকালই। আকাশে সাদা মেঘের ভেলা আর শুভ্র কাঁশফুলের ছোঁয়া নিয়ে আসে শরৎ। গোলায় নতুন ধান,নতুন বউয়ের মুখে মিষ্টি-মধুর হাসি,ঘরে ঘরে পীঠা পায়েসের আয়োজনই বলে দেয় হেমন্তের বারতা। কুয়াশায় আচ্ছন্নতা ও হাড় কনকনে শীত নিয়েই আসে শীতকাল।পত্র-পল্লবে নতুন সতেজতা, গাছের ডালে রক্তবর্ণ কৃঞ্চচুড়া আর দুর থেকে কুকিলের কুহু-কুহু প্রাণজুড়ানো গানে ভেসে আসে বসন্ত।)

নানান পেশায় বাংলাদেশ


কৃষকভায়া ধান বুনে যায় রোদ বৃষ্টি ঝড়ে
সে ধান ওঠে, চাল হয়ে যে আসে মোদের ঘরে
ডাল সব্জী আলু পটল রোপন করেন চাষী
কৃষকভায়া, চাষীভায়া তোমায় ভালোবাসি।
রুই কাতলা ইলিশ বোয়াল ঢলা মলা পুটি
জাল টেনে নেয় উঠায় যে মাছ নেইতো তাদের ছুটি
জেলে ভায়া ধরে যে মাছ একটু বিরাম নাই
তাই মাছে ভাতে দুধে আমরা বাংলাদেশী ভাই।
তাঁত বুনে যায় খটর খটর তাঁতী ভাই এর তাঁত
এই কাঁপড় বুনেই জোটে কাপড়, জোটে পেটের ভাত
তাঁতের কাপড় পরি মোরা আমরা বাংলাদেশী
স্বদেশ মোদের গর্ব, বর্জন করো বিদেশী।
কামারভায়া লোহা পিটে, কুমোর বানায় হাড়ি
মৃৎশিল্প গর্ব মোদের, গর্ব মসলিন শাড়ি।
জামদানী বা নক্সীকাঁথা বিখ্যাত সব দেশে
নানান পেশার নানান মানুষ সারা বাংলাদেশে
সব পেশারই মূল্য আছে সকল পেশাই সেরা
বাংলাদেশের মানুষ মোরা মমতা দিয়ে ঘেরা।


(আমাদের দেশের নানান পেশা- স্নেহ মমতায় ঘেরা আমাদের এই বাংলাদেশে রয়েছে নানান পেশার মানুষ। আমাদের যেমন রয়েছে ঋতু বৈচিত্র, তেমনি রয়েছে ধর্ম, বর্ণ, ও গোত্র বৈচিত্র। কেউ কৃষক, কেউ জেলে, কেউ শ্রমিক তবুও আমরা সবাই বাংলাদেশি। নানান পেশার মানুষেরাই নানাভাবে একে অন্যকে সাহায্য করে একটি সুখী সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলার ব্রত নিয়েছি আমরা।)


নানা রকম পুতুল ও আমার বাংলাদেশের পুতুল

আমার আছে মাটির পুতুল, পটুয়া রঙ দিয়ে
এঁকেছে তার রঙিন শাড়ি, অনেক যতন নিয়ে,
একেছে চোখ, এঁকেছে নাক, এঁকেছে তার চুল
কুমোর বাড়ির পুতুল সে যে, নেই তো কোনো ভুল!

আরও আছে কনে পুতুল কাপড় দিয়ে বাঁধা
চুলগুলো তার সুতোর গোছা, রঙ্গিন ফুলে গাঁথা।
মায়ের ছেড়া শাড়ির পাড়ে হয়েছে তার শাড়ি
বাবার জুতোর বাক্স দিয়ে বানিয়েছি বাড়ি।

আমার আছে বারবী পুতুল মেমসাহেবের মত
কত্ত রকম চুলের বাহার, সাজ সমাহার যত।
বেডরুম সেট, কিচেন সেট সব সেখানে আছে
আরও কিছু রকম পুতুল আছে আমার কাছে।

পাপেট পুতুল, স্টাফি ডল, ব্যাটারী ডল ছোটে
পাতার পুতুল দেখেছিলাম নিউ মার্কেট রোডে ।
পাটের আঁশে তৈরী পুতুল, কাগজ দিয়েও হয়
হ্যালোইনের কুমড়ো পুতুল দেখলে লাগে ভয়।

জাপানি এক পুতুল আছে ছোট্ট ছোট্ট চোখ
কিমোনো তার পোষাক নাকি বলে সকল লোক।
ডরুমা ডল সেও জাপানি গোল্লা গাল্লা গা
হাত বুক সব গোলের মাঝে নেই কোনো তার পা।

কুস্তিগীর এক চিনা পুতুল আছে আমার ঘরে
চাবি দিলে কুংফু লড়ে লম্ফ দিয়ে পড়ে।
এক চিনাম্যান চ্যাং চুং চ্যাং গায় সারাক্ষন গান
একটুকু সে ক্লান্তিবিহীন শক্ত কঠিন প্রাণ।

দেশ বিদেশী কত্ত পুতুল আছে আমার কাছে
সবার চেয়ে ভালো পুতুল সব পুতুলের মাঝে।
মামার বাড়ির গ্রামের মেলায় পেয়েছিলেম তারে
সব পুতুলের সেরা, টেপা পুতুল বলে যারে।

(বাংলাদেশের পুতুল - কন্যা শিশুদের সবচাইতে প্রিয় খেলা “পুতুলখেলা” এতে কোনো সন্দেহ নেই। বাংলাদেশে রয়েছে নানা রকম পুতুল। জগৎবিখ্যাত বারবী, ডরুমা বা পাপেটপুতুলের মাঝে ঐতিহ্যে আমাদের দেশীয় পুতুলগুলির মূল্যও কম নয়। বাংলাদেশের নানারকম পুতুলগুলোর মাঝে রয়েছে মাটির পুতুল,কাপড়ের পুতুল, পাতার পুতুল, পাটের আঁশের পুতুল,টেপা পুতুল ইত্যাদি।)

বঙ্গবন্ধু

বাংলাদেশে বাস করি বাংলা মোদের কৃষ্টি
জানো তুমি তোমার এ দেশ কে করলো সৃষ্টি?
বাংলাদেশের জনক তিনি বাংলাদেশের প্রাণ
জীবনবাজি করেছিলেন রাখতে দেশের মান।

উনিশো বিশ সতেরই মার্চ জন্মেছিলেন তিনি
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া বলে সে গ্রাম চিনি।
মহান সে বীর দেশপ্রেমী মহান তিনি নেতা
দেশের তরে দশের তরে ছিলো সহমর্মিতা।

কৃষক শ্রমিক মুটে মজুর বাংলাদেশে চাষা
তার মুখেতে চেয়ে সেদিন করেছিলো আশা।
রাষ্ট্রভাষার আন্দোলনে লড়েছিলেন তিনি
ছয় দফার দাবী নিয়ে এগিয়েছিলেন তিনি ।

৭ই মার্চ একাত্তরে জনসভায় ভাই
রেসকোর্সের ময়দানেতে তিল ঠায় নাই।
ডাক দিলেন সেদিন তিনি ভায়েরা আমার শোনো
শোসন শাসন রুখতে হবে সন্দেহ নেই কোনো।

সময় হলো অনাচারের জবাব এবার দেবার
যার যা আছে হাতে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ো এবার।
তার সে ডাকে বুকের মাঝে উঠলো বেজে বীণ
উঠলো জেগে বীর বাঙ্গালী মিটবে এবার ঋণ।

লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে আসলো স্বাধীনতা
ভুলিনি সেই মহান নেতা শেখ মুজিবের কথা।
বঙ্গবন্ধু ডাকি তাকেই তিনি বাংলার প্রাণ
তিনি মোদের সবার নেতা শেখ মুজিবর রহমান।

(বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জনক তিনি। ১৯৭১ সালে ৭ই মার্চ পাকিস্তানী শোসন শাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগনের প্রতি প্রতিবাদের আহ্বান জানান তিনি। তার ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন বীর বাঙ্গালীরা। নয়টি মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ত্রিশ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে আসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। জন্ম নেয় একটি নতুন রাষ্ট্র “বাংলাদেশ”। তিনি এ জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।)


ঐ পতাকার মানে

লাল সবুজে গড়া মোদের বাংলাদেশের কেতন,
কি তার মানে জানো তুমি, করো কি তার যতন?
নতুন দিনের সূচনাতে লাল সূর্য্য ওঠে,
তাহার আলোর পরশ নিয়ে কাননে ফুল ফোটে।
শস্য হাসে মাঠের পরে, ভাসে রোদের আলো,
রক্ত রাঙ্গা সূরুয তোমায় অনেক বাসি ভালো।
সবুজ আমার শরীর ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঘাসে,
শ্যামল সজীব গাছগাছালি ছড়িয়ে আছে পাশে।
নিশ্বাস নিয়ে আছি বেঁচে সবুজ তরুলতায়,
সবুজ আমার প্রাণ, আছে গাছে, ঘাসে, পাতায়।
একাত্তরে দিলো হানা বর্গী অতর্কিতে,
বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাইলো কেড়ে নিতে।
চেয়েছিলো ছিনিয়ে নিতে বাংলাদেশের রবি,
ছিন্নভিন্ন করেছিলো ঐ সবুজের ছবি।
ঝাঁপিয়ে পড়ে আনলো কেড়ে সে সব সোনার ছেলে
তিরিশ লক্ষ প্রাণ যে দিলো তুলনা না মেলে।
সেই কথাটা সেই ব্যাথাটা ঐ পতাকা জানে
তাদের রক্ত দিয়ে লেখা ঐ পতাকার মানে।
রক্তরাঙ্গা ভোরের সুরুয ঐ পতাকায় ওঠে
বাংলামায়ের সবুজ শোভায় কাননে ফুল ফোটে।

(বাংলাদেশের পতাকা- আমাদের দেশের পতাকার রঙ সবুজ আর লাল। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়েছেন যারা, যাদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশের আকাশে উঠেছে রক্তরাঙ্গা সূর্য্য, এই লাল বৃ্ত্ত সেই সূর্য্যের প্রতীক। আর সবুজ শ্যামল বাংলাদেশের শ্যামলতার প্রতীক পতাকার সবুজ রঙ।)

পাঠকের মতামত:

১৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test