E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নাজনীন খলিলের ছয়টি কবিতা

২০১৪ অক্টোবর ২২ ১১:৪৪:১২
নাজনীন খলিলের ছয়টি কবিতা

| নাজনীন খলিল |

গুপ্তধানুকী অথবা মাংসবিক্রেতা

সারারাত মুঠোর ভেতরে জোনাকির আলো নিয়ে বসে থাকি
ভোর হলেই তারা সব মৃতদেহ ;
হাওয়ায় উড়ছে দীপাধারের শব।

মানুষ টের পায় ঠিক।
আর মৃত্যুর গন্ধ যত বেশি কাছাকাছি হয় ;
তীব্র ধাবিত হয় জীবনের দিকে

এবং নিজের অজান্তেই মৃত্যুবাসরের জন্য তৈরি করে এক
অনিন্দ্য ফুলের বাগান।

এখনো জীবন্ত ফেনার চিহ্ন লেগে আছে মৃতঘোড়াদের নালে,
পিঠে এখনো বাঁধা আরোহীর স্যাডল ।
পালিয়ে গেল যেসব ঘোড়সওয়ার
তাদের প্রাণহীন অশ্বগুলোকে পরিত্যক্ত ফেলে
তারা জানতনা প্রতিটি ঘোড়সওয়ারকেই হতে হয় দক্ষ তীরন্দাজ?
তারা কেন অস্ত্রহীন গিয়েছে
সেই জঙ্গলের পথে
যেখানে ওৎঁ পেতে আছে গুপ্তধানুকী এবং মাংসবিক্রেতারা?

উজানের দূরত্ব

সব খেলায় একজন রেফারি থাকবে এমন কোন কথা নেই ;
অথবা রেফারির হুইসেল ।
জলক্রীড়ায়তো নয়ই।
যেমন—নৌকাবাইচ।

কখনো নামিনি জলে ;
ভয় ছিল খুব।

আর এখন—
ট্রফি শুধু জলশাসনের দক্ষবিজেতার ;
জেনেও
উড়িয়ে দিয়েছি সাদা পাল
আর এক অলৌকিক বৈঠায় রেখেছি হাত।
জানিনা জল কেটে কতদূর যেতে পারি—

এইযে আচমকা হুট করে নদীতে নেমে যাওয়া
এওতো এক ব্যাখ্যাতীত প্রবলঘোরের খেলা

জিতি
অথবা
ডুবি
এভাবেই ভেসে যাবো যতদূর—

একবার ভাটিতে না গেলে, জানা হবেনা
মাঝনদীর ঢেউয়ের সাথে উজানের দুরত্ব কতটুকু।

খেলা হার অথবা জিতের

কেউ কেউ পারে জলসূত্রি মেঘের ডানায় চড়ে রামধনুপ্রজাপতি হয়ে যেতে।
কেউ কেউ
ডিসটেম্পারড দেয়ালের ফ্রেমবন্ধী ছবি।

ড্রপসীন পড়ে গেছে ;
নাচঘর থেকে ফিরে যাচ্ছে নুপুরের সাথে যুদ্ধুক্লান্তপায়ের নর্তকীরা।
এওতো যুদ্ধজয়—ক্ষয়কাশ রোগীর মতো ধুকতে ধুকতে বিশুদ্ধনিঃশ্বাসে ফিরে আসা।
এওতো যুদ্ধজয়—বেয়াড়া বন্যার স্রোতেও পাড়ের লতাগুল্মে জড়িয়ে থাকা।

সংক্ষিপ্ত ট্রেইলারে লোভনীয় দৃশ্যক্রম।
ঠান্ডা ছবিঘরে সাজানো নায়কনায়িকা এবং চতুর কাহিনীবিন্যাস ;
কাটছাট ইতিহাস—সেলুলয়েডফিতের বাইরে।

প্রবল আবেগস্রোতে পেরিয়েছি দীর্ঘকুয়াশাভেজা হিমকালোমাঠ,
অন্যপাশে আলো আছে ভেবে।
আলো নয়
আগুনও নয়
মরীচিকা ছিল।
অনুচ্চারেই বাঙময় হয়ে রইল সব অনুযোগঅভিমান
তবু
বিহগদূতির ঠোঁটে দিয়েছি তুলে ভাষাঅভিজ্ঞান।

রণক্ষেত্র থেকে দূরে,
ভিন্নপথের খোঁজে ,
ব্যাস্ত হাতের মুঠোয় কেনযে আচম্বিতে ঊঠে আসে আগ্নেয়াস্ত্র

সংঘাত কেনযে এত অনিবার্য হয়ে ওঠে!

ঘড়ির কাঁটার সাথে পালটে যাচ্ছে রণকৌশল।আর
অবিশ্রান্ত যুদ্ধে যুদ্ধে ক্ষয়ে যাচ্ছে আয়ু

কখনো একটু বিরামতো চাই

তবে—সাদা পতাকাকে আত্মসমর্পনের ঝান্ডা ভেবে নিলেই
বিপর্যয় ; হিসেবের গরমিল।

যুদ্ধশেষের আবছা ঘন্টাধ্বণি বাজছে কোথাও?

কে হারলো?

জিতলো কি কেউ?

নীল ফিঙ্গে

বিকেলটা যখন খুব মৃদু পায়ে হেঁটে আসছিল
জলতরঙ্গের গুনগুন আবেশের মতো ;
মনে পড়লো অস্তরাগের কথা।

যে নদীর স্রোতে দোলে মেঘমালা কালোকাজলের মতো ;
ঢেউয়ে ঢেউয়ে নাচে মেঘভারানত আকাশের ছবি ;
আমিও সে নদীর নাম রেখেছি—কাজল নদী।

দীর্ঘবিষাদমগ্ন দুপুরের পরে
অপেক্ষায় থাকে স্নিগ্ধ জল ছলছল নদীকলস্বরা।

নদী যাচ্ছে বিকেলের কাছে—
নাকি বিকেলটাই এগিয়ে আসছে !

আজ সারাদিন কেটে গেল একটা নীলফিঙ্গের খোঁজে ;
এই একটা নাম দিনভর বেজে বেজে গেল। জুড়ে রইল।

সে কোথায় থাকে?

খুঁজবো?

অপেক্ষা

একটি গোধূলি এসে ভীষণ নাড়িয়ে দিল কড়া ;
যেন আকাশের কাড়া-নাকাড়া বেজে গেল
ঝুমবৃষ্টির শিঞ্জিনীর সাথে ।

আরো কিছুটা সময় বাকী আছে শুধু
হেলিওসের ঘোড়াগুলো মাঠ পেরোলেই
আস্তাবলের পথে,
নিকষ রাতপর্দায় ঢেকে যাবে সব।
রক্তচোষা বাদুড়ের পাল
ঢুকে যাবে নিরীহ ভেড়ার খোঁয়াড়ে ।

কমলাআকাশ চিরে উড়ে যায় সাদা বলাকার ঝাঁক
উদাসীপাখার সুরে মন আনচান করে ওঠে বড়ো ;
পেয়ালায় ঢেলে নেই সোনালী অমৃত ;
তীব্রনেশালু এই রঙ্গমেলায়
আমিও নাহয় মাতালই হলাম—

সাততালা বাড়ির ছাদে
সীমাহীন বৈরাগ্যে বসে আছে
একটি কালোদাঁড়কাক ।
বাড়ী ফেরার যেন কোন তাড়া নেই ।
বাসাটা কি একা?
আর কেউ নেই?

ভোরের অপেক্ষায় আছে—রক্তশূন্য মেষগুলো

শূন্য দুপুর

ঝিম ধরা একটি দুপুর
ভরা রৌদ্রের বুকে গাঢ়শূন্যতার ছবি আঁকে ;
আমি তাকে পান করি বরফশীতল জলের মতো,
গ্লাসের নীচে জমছে বরফের কুচি।

একটি পথভোলা প্রজাপতি উড়ে এসে
বসেছে ফ্লাওয়ারভাসে
ফুলের উপরে দিচ্ছে ছড়িয়ে তার মায়ার পরাগ ;
যেই—দেয়ালে পড়লো তার ছায়া,
শূন্যদেয়াল এঁকে নিল এক অপূর্ব ছবি।

ভালবাসি ক্যানভাসের ফুল, প্রজাপতি এবং শূন্যতা।

হাতের তালুতে লেগে আছে জন্মদাগের মতো বিষাদ ;
কি করে মুছবো তাকে !
মুঠোয় আবীর মেখে রেখেছি লুকিয়ে।

দরোজার বাইরে একটি বাদামী খাম
দীর্ঘশ্বাসের মতো লম্বালম্বি পড়ে আছে ;
কি যেন জরুরী চিঠি পাঠিয়েছে কেউ।
ধুলোয় যাচ্ছে ঢেকে।

অবহেলার বারান্দায় পড়ে আছে খামবন্ধী কথা ;
ঘরের ভেতরে জমে প্রগাঢ়নিস্তব্দতা ;
বরফের কুচি।

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test