E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আজ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৪তম প্রয়াণ দিবস

২০১৫ আগস্ট ০৬ ১১:০২:৩১
আজ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৪তম প্রয়াণ দিবস

স্টাফ রিপোর্টার :আজ বাইশে শ্রাবণ। কবিগুরুর ৭৪তম মহাপ্রয়াণ দিবস। বাঙালির প্রাণের এ কবি নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেও অসামান্য রচনা ও কাজের মধ্যে আজো বেঁচে আছেন তিনি প্রেরণাদাতা হয়ে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বহুমুখী সৃজনশীলতা বাংলা সাহিত্য ও শিল্পের প্রায় সব কটি শাখা স্পর্শ করেছে, সমৃদ্ধ করেছে।

তার লেখা গান বাঙালির হৃদয়ে প্রতিধ্বনিত হয় আজো। আনন্দে, বেদনায় এমনকি দ্রোহে এখনও রবীন্দ্রনাথ বাঙালির প্রেরণার উত্স। রবীন্দ্রনাথ আমাদের মন-মানসিকতা গঠনের, চেতনার উন্মেষের প্রধান অবলম্বন। তিনি কবিগুরু ও বিশ্বকবি অভিধায় নন্দিত। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ও বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বাংলা সাহিত্য ও সঙ্গীতে রবীন্দ্রনাথ এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা করেন। রবীন্দ্রনাথের লেখা বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বের দরবারে সম্মানের আসনে পৌঁছে দিয়েছে।

শুধু বাঙালির নয় বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের মানুষের কাছেই তিনি মানবমুক্তির বারতা নিয়ে উদ্ভাসিত। গত বছর ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫০তম জন্মবার্ষিকী। এই সার্ধশততম জন্মবার্ষিকীকে স্মরণ করে রাখতে বাংলাদেশ ও ভারত যৌথভাবে বছরব্যাপী তার জন্মদিন পালনে নানা ধরনের আয়োজন করেছিল। দুই দেশের মানুষ সম্পর্কে সেতুবন্ধ রচনায় রবীন্দ্রনাথ দেখিয়ে দিয়েছেন নতুনতর মহিমায়।

রবীন্দ্রনাথের দার্শনিক চেতনা ছিল— শুধু নিজের শান্তি বা নিজের আত্মার মুক্তির জন্য ধর্ম নয়। মানুষের কল্যাণের জন্য যে সাধনা তাই ছিল তার ধর্ম। তার দর্শন ছিল মানুষের মুক্তির দর্শন। মানবতাবাদী এই কবি বিশ্বাস করতেন বিশ্বমানবতায়। জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সেই দর্শনের অন্বেষণ করেছেন। তার কবিতা, গান, সাহিত্যের অন্যান্য শাখার লেখনী মানুষকে আজো সেই অন্বেষণের পথে, তার অন্বিষ্ট উপলব্ধির পথে আকর্ষণ করে।

রবীন্দ্রনাথের জন্ম হয়েছিল কলকাতার এক পিরালী ব্রাহ্মণ পরিবারে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (৭ই মে, ১৮৬১—৭ই আগস্ট, ১৯৪১) (২৫শে বৈশাখ, ১২৬৮— ২২শে শ্রাবণ, ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) বাংলার দিকপাল কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, গল্পকার, প্রাবন্ধিক ও দার্শনিক। মাত্র আট বছর বয়সে তিনি প্রথম কবিতা লেখেন। ১৮৮৭ সালে ‘ভানুসিংহ’ ছদ্মনামে তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়।

গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য ১৯১৩ সালে সাহিত্যে প্রথম বাঙালি এবং এশীয় হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। নোবেল ফাউন্ডেশন তার এই কাব্যগ্রন্থটিকে বর্ণনা করেছিল একটি ‘গভীরভাবে সংবেদনশীল, উজ্জ্বল ও সুন্দর কাব্যগ্রন্থ’ রূপে। তার লেখা ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি...’ গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত।

বাংলা ভাষার আধুনিকীকরণে তিনি প্রচলিত রূপকল্পের কঠোরতাকে বর্জন করে সহজ, সরল বর্ণনায় লেখা শুরু করেন। নানান রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত বিষয়কে কেন্দ্র করে তিনি রচনা করেন উপন্যাস, ছোটগল্প, সঙ্গীত, নৃত্যনাট্য, পত্রসাহিত্য ও প্রবন্ধসমূহ। তার হাতেই বাংলা ভাষায় প্রথম সার্থক ছোটগল্পের সৃষ্টি হয়েছে। বাংলা উপন্যাসকে তিনি আধুনিক ও সার্থক উপন্যাসে তুলে এনেছেন। তার লেখা ঘরে বাইরে, গোরা প্রভৃতি উপন্যাস; রক্তকরবী, অচলায়তন, বিসর্জন প্রভৃতি নাটক যে কোনো সময়ের মানুষের কাছে সাম্প্র্রতিক ঘটনা হয়ে উপস্থাপিত হয়। শুধু সৃজনশীল সাহিত্য রচনায় নয়, অর্থনীতি, সমাজ, রাষ্ট্র নিয়ে তার ভাবনাও তাকে অত্যন্ত উঁচু স্থানে নিয়ে গিয়েছে।

কবিগুরুর প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে সারাদেশে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। ২২ শ্রাবণ উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করছে। এ উপলক্ষে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে। বিভিন্ন চ্যানেলের আয়োজনে উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠানের মধ্যে থাকছে নাটক, টকশো, কবিতা আবৃত্তি, সঙ্গীতানুষ্ঠান, প্রামাণ্য অনুষ্ঠান ইত্যাদি।

এছাড়া রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী সংস্থা কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে সন্ধ্যা ৬টায় রবীন্দ্র প্রয়াণ দিবস স্মরণে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা একাডেমি আজ বৃহস্পতিবার বিকেল চারটায় একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে একক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। যুদ্ধ ও বিশ্বশান্তি প্রসঙ্গে রবীন্দ্রভাবনা শীর্ষক একক বক্তৃতা প্রদান করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. বেগম আকতার কামাল। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। স্বাগত বক্তব্য দেবেন একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে রয়েছে আবৃত্তি ও রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশনা। এ ছাড়া শিল্পকলা একাডেমিও আজ বিকালে সঙ্গীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

(ওএস/এসসি/আগষ্ট০৬,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test