E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত'র কবিতা

২০১৫ আগস্ট ২২ ০০:২৬:২৯
ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত'র কবিতা





 

হিম জোছনায়

হিম জোছনায় প্রেম জমছে অল্প অল্প কোমল বরফ,
অরণ্যের চাঁদ সেগুনের মৃতদেহ ছুঁয়ে বসে আছে,
নদী বলছে ভরা বর্ষা দেখ,
দেখ রূপ লাবণী আমার,
প্রাচীন গ্রন্থের কাছে নতজানু বসে আছি,
আরও কত হাজার বছর বল রূপকথা মেখে নেব শরীরে!

জানি এ শরীর জীর্ণ বসনখানি,
এক লহমায় যে কোন দিন ছুঁড়ে দিতে পারি,
সৃষ্টি সিন্ধুর কোন অতলে তলিয়ে যাবে দেহ-
কোন রিজুভিনেশনে,
কত শতাব্দীর বীজ চারাগাছ মহীরুহ প্রসারিত করেছে অরণ্য।

অরণ্য দেবতা আমার,
প্রকৃতির অহরহ বলিদান তোমার বেদিমূলে,
রক্তে ভেজা মাটিতে জন্মায় নতুন বৃক্ষেরা,
এক থেকে বহু হয়ে যায় রক্তবীজ,
আবার জন্মাব আমি,
মৃত্যু যদি আসে সয়ে যাবে সব যন্ত্রণা,
হাজার বছর পরেও থেকে যাব কোথাও কোনভাবে,
অপেক্ষায়।




লেদার জ্যাকেটের সন্ধ্যে

লেদার জ্যাকেট খোলা ফাসনার হাওয়াতে মেলছে ডানা
আইসক্রিমের মত সাদা জমছে উপত্যকায়
সত্যি যদি পাহাড় থেকে উড়ে যেতাম গ্লাইডারে
বরফ সাদা নদীর মাঝে তিরতিরে জল
এদিক ওদিক যাচ্ছে দেখা ঘরবাড়ি সব
পাহাড়ি গ্রাম দূরে দূরে।

লেদার জ্যাকেট লেদার জ্যাকেট
অনেকটা পথ ঝোড়ো হাওয়ায় যাচ্ছি আমি-
আমায় তুমি জড়িয়ে ধর
তোমার সঙ্গে প্রেম বলেছি
অনেক দিনের সোহাগ সোহাগ ভালবাসা তোমার আমার।

বড়ই হাওয়া,
এমন হাওয়ায় উড়তে থাকে ভাবনাগুলো-
লেদার জ্যাকেট উড়তে থাকে,
উড়তে থাকে বিষয়বস্তু বোধবুদ্ধি জীবনধারণ-
একটা একটা জ্বলছে আলো পাহাড় চুড়োয়
নীল সন্ধ্যে নীল সন্ধ্যে সাদা বরফ।

এখন সময় লেদার জ্যাকেট
আমায় তুমি জড়িয়ে ধর অনেক অনেক ভালবাসায়।




মানুষ দেখতে চাই

কাল একটা নির্বিবাদী ভোর দেখতে চাই,
দেখতে চাই খবরের কাগজ যেখানে খুন ইত্যাদির খবর,
ভূমিকম্প আর বন্যার ছবি থাকবে না।

অপরাধ থাকবে না
প্রতিবাদও না।

কাল একটা গাছ দেখতে চাই
পুরো ফুলে ঢেকে গেছে,
কাল একটা বাগান দেখতে চাই,
তাজা সবুজে ঢেকে গেছে সব গাছ।

কাল একটা মানুষ দেখতে চাই।



সেই তুমি


খুঁজছি কেন, যদিও জানি নেই তুমি।
হারিয়ে গেছ সেই তুমি,
কোনকালে ছিলে নাকি,
হাওয়ার দাপট পাতাগুলো পাক খাচ্ছে ঘূর্ণি হাওয়ায়,
ছুটে পেরচ্ছি আকাশবাণী ফোর্ট উইলিয়াম।

একা একা হাঁটছি ভেজা পাখির মত।
বৃষ্টি ভেজা কাকের মত ভিজছি আমি।
হয়ত তুমি সব জেনেও নিষ্ঠুরতায় গরম গরম
চাউমিন আর চিলি চিকেন এখন কোথাও রেস্তোরাঁতে।

একা একা গান্ধীজী একলা চলো স্বল্পবাস।
মূর্তিগুলো এই রকমই,
পন্ডিতজী জহরলাল বিরক্ত মুখ,
কোটের থেকে পড়ছে ঝরে জলের ধারা,
টুপিতে বসে একলা কাকের ডানা ঝাড়া।

তুমি নেই তাই একা একা হেঁটে এলাম এতটা পথ,
আমিও এক বৃষ্টি ভেজা কাকের মত
একটু থেমে উড়ে যাব বাকি রাস্তা।




যদি সময় থাকে হাতে


এস কাছে, যদি সময় থাকে হাতে।
ঝোড়ো হাওয়ার মত তছনছ করে চলে যেও না,
উড়িয়ে দিয়ো না আকাশের কালোতে বিদ্যুতে
জমে ওঠা কল্পনার হাল্কা ফেনার অগুনতি বুদবুদ।

এত তাড়াতাড়ি ভেঙ্গো না ঘোর।

অন্তত ততটাই থাকো যার পর চলে গেলে
দুঃখ পাওয়া যায়।




হাইওয়ে


হ্রদের তীরে অসংখ্য মানুষ জমায়েত রোদ্দুর পোয়াবে বলে,
বৃষ্টি ভিজবে বলে।
ধীরে ধীরে ঘোর কাটল।
বাস্তবের একটাই কাজ,
দামামা বাজায়,
সফেন মদিরার গ্লাসের বুদ্বুদ ফেটে যায়।

মেহগনি, জাম, জারুল, শাল, সেগুনের বনে সন্ধ্যা নামে,
পথ ছোটে উঁচু নিচু-
এঁকে বেঁকে ছুটে চলে
আধঘণ্টা বাদে হাইওয়ে বড়জোড়া হয়ে।

শক্তিগড়ের কাছে রাস্তার উল্লাস,
উচ্চতায় ওঠে যেন ছোঁবেই আকাশ,
নীচে ট্রেনের লাইন,
ব্ল্যাক ডায়মন্ড এক্সপ্রেস চলে যায়।

চারপাশে দ্রুততার মাঝে যাত্রা বিরতি ঘটল কার এমন ভাবে!
উলটে গেছে অল্টো গাড়ি,
ছিটকে পড়েছে ডিভাইডারে,
টপসি টার্ভি,
তখনও ভেতরে আটকে মানুষ।

...

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test