E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিল্পস্রোত

সপ্তাহের কবিতা

২০১৫ সেপ্টেম্বর ২০ ২৩:৪৬:০৫
সপ্তাহের কবিতা






 

নাসির আহমেদ

ক্লান্তি

ক্লান্তি যদি ডানা ভেঙে অশ্রুপাতে
বয়ে যায় মাটির শয্যায়। আমি বলি নদী
তুমি তাকে আহত পাখির সঙ্গে
তুলনা করতে পারো। এই দুই ধারণাকে
যদি কেউ ভুল ভাবে, তাও ভুল নয়।
নক্ষত্রেরও ক্লান্তি আছে, তারও আছে ক্ষয়
ক্লান্তি তুমি এবার ঘুমাও।

এই রাত্রি তারাভরা নিঃসঙ্গ আকাশ
তুমি মৌন ক্লান্তির শয্যায়। আমি বলি মৃত্যু এর নাম।
ভৌতিক রহস্য নিয়ে অপূর্ব জ্যোৎস্নায়
ক্লান্তি হেঁটে যায়; তুমি দেখো শুধু নির্জনতা।

ওই যে ওপারে শান্ত দিঘিতে ভাসছে
মোমের পুতুলপ্রায় একজোড়া শুভ্র রাজহাঁস
তুমি বলো এও ক্লান্তি- নৈঃশব্দের জলে ভেসে যায়।
আমি দেখি হাঁস নয়, মৃত্যুর প্রতিমা যেন ওই জলাশয়।

তুমি শোনো চৈত্ররাতে ঝুরঝুর ছন্দে
পাতা ঝরে দখিনা বাতাসে জ্যোৎস্নার ভেতরে
আমি দেখি ক্লান্তি ঝরে হু হু বসন্তের পিপাসায়;
নিস্তব্ধ রাত্রির দৃশ্য দেখার পৃথক মাত্রা শুধু।

নাভেদ আফ্রিদী

চোখ দু'টি খুলে ফেলে দিয়ে


চোখ দু'টি খুলে ফেলে দিয়ে, একজন বলেছিলো---
' দেখো, আমি অন্ধ হয়ে গেছি। কিছু দেখতে পাচ্ছিনা। '
( রক্ত ঝরছিলো---)

বললাম, সবকিছুই দেখতে পাচ্ছি।
বিস্ময়ের ভেতর আমার ঘরদোর---

যাও, নিজেকে আড়াল রাখো, তোমার গন্তব্যের গভীরে---
অথবা, তোমাকে দেখে, লোকজন অন্ধ হয়ে যাবে।

হেসে উঠলো সে। বলেছিলো, ' তুমি কবি '


তোফায়েল তফাজ্জল

বোধ

বোধের ছাকনিটা যতো বুননে নিখুঁত,
গভীরতামুখী – ততো বেশি
প্রতিবিম্ব পড়ে নিজ কর্মে।
দূরবীন দিয়েও দূষিত বস্তুর দেখা
দিনের আকাশে পূর্নিমা দেখার ভূতে পাওয়া চোখ
কিংবা নেশার নিষিদ্ধ নগরে, ভন্ডের আস্তানায়
মতিতুল্য উপদেশ লাভ।

সবার কাছেই এর ছাপ
খরা লেগে যাওয়া মনে নিরাপদ সেচ।

যে এর যথার্থ তলানির ভূমিকায়
তার গতিবিধি জুড়ে অলক্ষিত থাকবে চিংড়ি লাফ,
না নজরে পড়বে চীনাজোঁক ছিটকে যাওয়া আচরণ;
নির্ভুল সিদ্ধান্ত, টন টন অশ্ম থেকেও অনড়।

যে বা যারা এতে হয় দৈন্য
পাতলা খান নামে তারা হীনপরিচয়ে –
উড়ন্ত ধূলিরা দ্রুত এগিয়ে এলেই
পা ঠাওর পায়, তলে মাটি কতোটুকু!

রব ওঠে, ধিক ধিক – বোটকা গন্ধে নাকে অসন্তোষ।

তাই, এর বেড় বেড়ে বাড়ুক বিস্তার
আর তলদেশ তলমুখী, যতো খুশি।

চন্দনকৃষ্ণ পাল

স্পর্শ ও পলক


উত্তুঙ্গ চুড়ায় নাচে চোখের পলক ।

নিভৃতে থাকা ভালো
থাকা ভালো আলোর বাহিরে
আদিতে খোলা দ্বার
মধ্যমায় গাঢ় আবরণ
আগামী শস্য পুর্ণ হলে
স্পর্শ সুখ অনিন্দ্য সুন্দর ।

করতলে পৃথিবীর রূপ আর
দৃষ্টি সীমায় গ্রহরাজী
চূড়ায় পলক ফেলা স্বাভাবিক তবে ।


রুমা পণ্ডিত

চুম্বক

প্রতিটি কক্ষ পথে চুম্বকীয় টান
মাঝে টানের উৎস , জীবন
মায়া তরঙ্গের অবিরাম স্রোতে
ভেসে বেড়ায় অসংখ্য খুঁটিনাটি
নির্দিষ্ট সময় অন্তর বাছাই পর্ব,
বাতিলরা স্মৃতি বা বিস্মৃতিরর ভিড়ে
থেমে যায়।
বাকিরা ছন্দবদ্ধ পায়ে শৃঙ্খলাবদ্ধ,
গীতবিতান থেকে ব্যাংকের পাশবই
অকেজো সেৌখিন কলম থেকে
হারিয়ে যাওয়া চাবির বিষন্ন তালা
জং ধরা সময়ের সাক্ষী হয়ে
থেমে থাকা ঘড়ি,
নতুন বাড়ির দলিল থেকে ঘুমন্ত ডায়রি
মূল্যবান বৈদ্যুতিক থেকে
কোনা ভাঙা ফ্রেম বন্দী
হলদেটে আপনজন
হাজারো ভিড়!

এরপরও আছে
জীবিনের টানে পরাজিত অসংখ্য
লৌহ ধর্মী স্বপ্নরা।


শফিক হাসান

বহ্নুৎসব


যতটা পোড়ে আগুনে
প্রেমে পোড়ে ঢের বেশি
জনমভর
চলতে থাকে প্রেমের বহ্নুৎসব।
পুড়ে যেতে যেতে
অঙ্গার হতে হতে
অনুভূত হলো একদিন-
সোনা-য় রূপান্তরিত হওয়াই
সার কথা নয়
ছাইয়েরও রয়েছে
সমান মূল্য!



অস্ট্রিক মাসুদ

প্রথম আঁচড়ে বঙধনু রঙ


হলুদ খামের পত্রবাহক- সে আমার মা
বাবার নিষ্পাপ চিঠি ঋতুভর গুঁজে রাখে
কলমের প্রথম আঁচড়ে রঙধনু হয়ে-

বৃক্ষের অমন সবুজ, চারপাশে মোহন আঁধার
অন্ধকারে সাদা মেঘ, বেপরোয়া রোদ
এ সকল বয়ে গেছে; যে কোন আমি
সকল আমাদের মতোই তো ফুরিয়ে যাই-
ফুরোবে পিতার আঁচড়, রঙধনু রঙ

নতুন চিঠির ভিড়ে পুরোনো খামের চিঠি
অধিক পুরোনো হলে; প্রতিটি নতুন চিঠি
পুরোনো চিঠির কাছে ভাষা খোঁজে।



পাভেল আল ইমরান

মানুষের মাংস

মাংস কিনি, প্রতিদিন মাংস কিনি হাটে
থরথরে সাজানো গোছানো, তাকে তাকে
দেরহাম দিয়ে মাংস কিনি, তরতাজা
মানুষের মাংস। কোঁচরে রেজগি বাজে
পেটে ভদকার ধোঁয়া, বাংলা চোটি বই
এপিটাইজার জিবে রুচির ঝুলন্ত
বাবুই বাসার শিল্প। বগলের গন্ধে
পারফিউমের থাবা , ক্লান্তি নির্বাসনে

একটা ঘোরের অস্থি, নিরুত্তাপ নীতি
কিছু নাস্তিকতা, সব বৈধতা নিষিদ্ধ
কটির ব্যাথাটা উবে কর্পূরের তেল
রেজগির ওজন এতটা কমে গেলো !
কসাইয়ের ওয়ান টাইম মাংসের
প্যাক, হাতে তুলে নেই হাড়ের গোঙ্গানি

মিতা চক্রবর্তী
স্বপ্নযাত্রা


কঠিন মৃত্তিকায়
স্বপ্নচিহ্ন এঁকে দিলে তুমি,
ধুসর মরুর বুকে বৃস্টি অবিরাম।
আমি বীজ বুনি,ফসল ফলাই,
গচ্ছিত রাখি তোমার ভাণ্ডারে।

মধ্যবয়সী প্রেমে মাতাল যুবক,
মহাশুন্য জীবন করেছ পূর্ণ।
কোন কল্পলোকে সঙ্গী করো?
আমি ভেসে ভেসে যাই স্বপ্নের ডানায়----
বুভুক্ষ হৃদয়ে রচি প্রেম।
আঁধারের সুরে ভাসে বিরহ রাগিনী।

আমি কান পেতে রই.....
কল্পিত সুখের অমৃতধারা
ছুঁয়ে যায় শরীর ও মন।
গহীন রাতে জেগে ওঠো ধ্রুবতারা।

সহস্র আলোক বর্ষ দূরে-----
গন্তব্যে আমারঅবিরাম ছুটে চলা
থমকে গেছে কোন কালে,
নির্দিষ্ট ছায়াপথ ছেড়ে
আমি বিহ্বল গ্রহান্তরের টানে
ঘুরছি বন্ধ্যা সময়ের ঘুর্ণিপাকে।

কুণ্ডলিত হতে হতে ক্লান্ত যখন
তুমি এসে দাঁড়ালে রাত্রি শেষে,
ভোরের বাতাসে বাজে মঙ্গল ধ্বনি।
এবার তোমার আকাশে পাখা মেলে
পৌঁছাতে চাই স্বপ্নলোকে।


সুজিত ঘোষ

কতোটা দূরে ক্লোবাজাম


কিছু রোদ এনে দাও পাতাবাহার রকমফের প্রজাপতিরা
জমছে না রোদ ছায়ার আঁকিবুঁকি-পাতায় পাতায় ঝরে না
চকচকে মুখ;তুমি নেই বলে প্রস্তরখণ্ডে লেখা নাম ঝাপসা
কাকতাড়ুয়া পাখি বসতে দেয় না সবুজের দেহ প্রান্তরে।

আমার জানালার ফুঁকো লতিয়ে চিত্রকলার দারুণ প্রদর্শনী
বিতাড়িত পাখির শীষ অন্তর আত্মার ঢেউ জল ছবি হয়ে
সেঁটে থাকে চারচালার আদীম প্রাচীর জুড়ে;

ছবির ঝাউবনে আজ তোমার লুকোচুরি বেদনাদীর্ণ ক্ষত
সেখানে তোমার আনাগোনা ঘুমোতে দেয় না সারা রাত....

আমি জেগে আছি কতোটা দূরে তুমি ক্লোবাজাম?


সাহিত্য সম্পাদক :সমর চক্রবর্তী

পাঠকের মতামত:

০১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test