E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সোনার তরী


সপ্তাহের ছড়া

২০১৫ সেপ্টেম্বর ২১ ০০:৫৭:২২
সপ্তাহের ছড়া






 

আবিদ আনোয়ার
মশার মেয়ে পুনপুনি

মশার মেয়ে পুনপুনিটার যেই গজালো পাখা
ওড়ার বড়ো শখ হলো তার যায় না ধরে রাখা।
বায়না ধরে মায়ের কাছে: একটু আসি উড়ে?
মা বললো: আচ্ছা সোনা, যাসনে বেশি দূরে।

উড়াল শেষে ড্রেনের মেয়ে ফিরলো যখন ড্রেনে
মায়ের মুখে খুশির ঝলক, বললো বুকে টেনে:
ওরে আমার পুনপুনি রে, ওরে আমার পুনি!
এই তো হলো প্রথম উড়া, উড়লি ক্যামন শুনি?

বললো পুনি: অই যে দূরে মানুষজাতির ঘর―
এক-উড়ালে জানলা দিয়ে ঢুকেছি ফরফর।
কেউ দাঁড়িয়ে, কেউবা শুয়ে, কেউবা ছিলো বসা
যার কাছে যাই চেঁচিয়ে ওঠে: মশা-মশা-মশা...
তোমার মেয়ের উড়াল দেখে সবাই দিলো তালি,
‘দূর যা মশা’ বলে কেবল মুখেই দিলো গালি।

আসলাম সানী
দাও

দাও আলো-দাও প্রাণ
দাও বৃক্ষ-পাখির গান,

দাও সবুজ-দাও ছায়া
দাও শীতল-দাও মায়া,

দাও স্বপ্ন-দাও ঘুম
দাও জোসনা-চন্দ্রচুম,

দাও জল-মেঘ-বায়ু
দাও সুস্থ দেহ-আয়ু

দাও নদী-ঝর্ণা-সুর
ঢেউয়ের ছন্দ সুমধুর,

দাও আলো-দাও জ্যোতি
দাও মাটি ফলবতী।


আলম তালুকদার
মা-ছেলে

এই পাড়া না সেই পাড়া
ছুটছে সারাদিন তারা
কি আনন্দ মাতায় তারা
মায়ের মন
তো আত্মা ছাড়া
ভাত হয়েছে কড়কড়া
তাই
তো মায়ের মনমরা।
আয় রে তোরা ফিরে আয়
খাওয়া দাওয়ার সময় যায়।

মৌ মধুবন্তী
মৃত্যুর পর

এই প্রেম ভুত মেখে ভাত খায় অনাহুত
জীবন কে ডাকি, আয় কাছে আয়!
আমারই জীবন আমার কাছে কন্যা দায় গ্রস্ত
সব ভূল উচ্চাংগ সঙ্গীতের মত মুখস্ত
ঐ তো ওখানে যারা বিষদাঁত দেখায়
তাদেরই মুখের গন্ধে দম ফুরায়
এতো টা গন্ধ নিয়ে মুখে কি করে সমাজে দাগ কাটে
অবাক বিস্ময়ে আকাশের কাছে প্রশ্ন রাখে
কে তুমি আকাশ? কেন এতো নিল নিয়ে খেলা?
কখনো কি ভাবতে বসেছ আমার মত অবেলা?
তোমার রঙের একটু আঁচড় দিও বন্ধু আকাশ
বিষের নীল রঙ ফেলে তোমাতে হই প্রকাশ
এই যেমন নদীর কোন জল রঙ নিয়ে নেই
মাথা ব্যথা আমারই চেতনার মাঝে কাঁদে
অসংখ্য ব্যর্থতা তবু আমি হারাই
না হারানীর খোলা মাঠে দু’পায়ে বেধেছি শপথ ,
রক্ত যেমনি কাটে একদিন নদী সমুদ্রে যাবে
গভীর সঙ্গমে একেলা এই পথ হাটি
একাকী মনে যতদূর চোখ যায়,
ধু ধু বালুচর আমি এ কার ঘরে নিত্য বাঁধি ঘর
সেই সাহস বুকে আছে কালের সাক্ষি হয়ে
একা একা বেঁচে আছি, তোমাদের হব মৃত্যুর পরে।



রব্বানী চৌধুরীর গুচ্ছ ছড়া

আগররতলা মামলা থেকেই সূর্য দিল উঁকি
দেশকে নিয়ে ভাবতে থাকেন ছেলে বুড়ো খুকি ।
জেলের তালা ভাঙতে হবে সবাই করে পণ
ভয়ে ভয়ে কাঁপতে থাকে আইয়ুব খানের মন।
আইয়ুব গেল ইয়াহইয়া গেল সূর্যমুখী ফোটে
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর নির্বাচিত ভোটে ।
নির্বাচিত হলেন তবু পিন্ডি মারে চাল
টিক্কা খানের ট্যাঙ্কে কাঁদে একাত্তরের সাল।
দেশ জুড়ে হয় গণহত্যা রক্তে ভাসে ঘাস
চিলশকুনি খেয়েছিল বাঙালিদের লাশ!
বাঙালিরা অস্ত্র ধরে স্বাধীনতা পেলাম
মুক্তিযুদ্ধে শহিদ যারা তাঁদের করি সেলাম।

সোনার বাংলা শ্মশান কেন ?
মুজিব যখন ডাকল
বাংলাদেশের বাঙালিরা
চুপ হয়ে কী থাকল ?
থাকল না । সোনার বাংলায়
পাক হানাদার রাখল না।
দেশটা স্বাধীন নয়মাসে
এই আমাদের জয় হাসে।

এই গাছে ফল ধরে
এই গাছে ফুল
এই গাছ কাটে যারা
করে তারা ভুল।
গাছ কাটে মূর্খ
জ্ঞানে লাগে হুড়কো
এই গাছ আমাদের
জীবনের মূল ।

কাজী হাসান ফিরোজ
বাংলা মা

বাংলা মায়ের জাংলা ভরা
ঝিঙ্গা পটল করলা,
সকাল বিকাল আঁচল ভরে
নেয় তুলে এক সরলা।

জঙ্গলে তার নানান পাখি
নানা সুরে গীত শুনায়
বৌ কথা কও পিয়া পিয়া
বাংলা সুরে মন মাতায় ।

হিজল তলায় বিজল রাণী
আর আসেনা ফুল নিতে,
রাখাল ছেলে মাল্লা মাঝি
আর মাতেনা সুর গীতে ।

পল্লী মাকে টানছে শহর
ছিঁড়ছে তার আঁচল খানা
কলের লাঙ্গল বাজায় সিটি
কাঁদছে আজ বাঁশের বীণা ।

সোহেল মল্লিক
খোকনসোনা

খেলতে খেলতে
খোকনসোনা
চলে গেলো ছাদে
শুনতে পেলো
একটা বিড়াল
মিহি সুরে কাঁদে।
মায়া হলো, কাছে নিলো টেনে
খেতে দিলো এটা–ওটা এনে
যেই ডেকেছে ‘ খোকন ‘ বলে মা
উঠলো নড়ে খোকনসোনার গা
বুঝলো তখন
স্বপ্ন তাকে
ফেলে ছিলো ফাঁদে।


সুরাজ চৌধুরী
উড়িয়ে দিলাম কবিতা

সহজ করে উড়িয়ে দিলাম কবিতা
যা ঘুড্ডি যা চলে যা আকাশে
পাক খেয়ে নে দুএকটি বার নোটন নোটন
ইচ্ছে যদি হয়রে কোনো ঘুর্ণমান
ঝপাঙ ঝপাঙ শব্দ তোলে বাতাসে।
ওই যে দুরে রামধনু তোর অপেক্ষায়
যা উড়ে তুই রঙ কিছু গায় মেখে নে
সহজ করে দিলামরে তোর বোলখানা
মন্দ মধুর নে ছবি নে এঁকে নে
যা কবিতা যা উড়ে তোর আকাশখানা ঢেকে নে।
মেঘ দেখে নিস্ সাদা কালো
ইচ্ছে হলে ভিজতে পারিস্ ভিজলে ভালো
সন্ধে হলে তারার সাথে মিলতে গিয়ে
চাঁদের কোলে দোলার যদি সাধ জাগে
নে মুখে নে থোকা থোকা তারার আলো।
সহজ করে আজকে দিলাম উড়িয়ে তোকে
যা ঘুড্ডি যারে এবার যাবার মতো
ফিরতে হবে বন্ধু আছে দেখিসরে
চলার সহজ ইচ্ছে মতোন দোল দিয়েছি
যা উড়ে তুই যা ঘুড্ডি লোকে লোকে।

তাহমিনা কোরাইশী
শরৎ

ছুঁয়ে দিল শরৎ হাওয়া মিঠের মিঠেল দোলাতে
শিউলি শালুক জুঁই চামেলি সুবাস দিযে ভোলাতে
দুই গাঁয়েতে মেঘের গর সাদা সাদা ছাউনিতে
ভরা ভাদর জল থই থই নৌকা জোরে বাউনিতে।

নদীর ধারে কাশফলেতে ভোলায় কেবল হাসিতে
জলের ধ্বনি উপাচ পড়ে রাখালের ওই বাঁশিতে
জেলের জালে মাছের পোনা মেতেছে এক খেলাতে
ডুব সাঁতারে পানকৌড়ি ভাসছে শরৎ ভেলাতে।

নাহার ফরিদ খান
শরৎ শোভা

শরৎ শোভার এই অবনী কেমন ঝল মল
আকাশটাতো নীলাম্বরী ছুটছে মেঘের দল
মরৎ আসে দারুন প্রবা দারুন উজ্জ্বরতায়
শিউলিমালা ভরা থাকে প্রেমের কথকথায়
প্রভাত হলেই ছুটে যেতাম শিউলি কুড়াতে
প্রতীক্ষায় থাকতো দুচোখ সেই আঙ্গিনাতে
নীল আকাশে দেখ কেমন পেজা তুলার ভীড়
মন খারাপের মতো হঠাৎ বৃষ্টি ঝির ঝির
সোনা রোদে আকাশ মর ভরে যায় প্রকৃতি
রঙিন হয়ে ওঠে মন যেন নব প্রেম পিরিতি
নদীর ধারে কাশবন দুলেছে কেমন টলমল
আনন্দে তাই আকাম বুকে বইছে নদীজল
শিউলিঝরা শরৎ এলো মন ভরে যায আবেগে
কাশফুলের শুভ্রশোভা মন ভোলানো এ দেশে।

রোকেয়া ইউসুফ
অবশেষে

নয়টি মাসের যুদ্ধশেষে
আসলো স্বাধীনতা
ঘুচলো জুলুম ,জবরদখল
পরের অধীনতা
যুদ্ধ করে বীর বাঙালি
জীবন রেখে বাজি
কতক হলো শহীদ তাঁরা
কতক হলো গাজী
চোখের জলে রক্তসাগর
পাড়ি দিয়ে এসে
লক্ষ আশার স্বপ্ন পূরণ
হলো অবশেসে।

শারমীন সুলতানা রীনা
দুষ্ট খুকু

তিড়িং বিড়িং ফড়িং লাফায়
বনবাদার নিশ্চুপ
ঘাসের বুকে বৃষ্টি নামে
ঝুপ ঝুপা ঝুপ ঝুপ্।
ডোবায় ডাকে ব্যাঙের দল
ঘ্যংগর ঘ্যংগর ঘ্যং
দেখতে এসে দুষ্ট খুকুর
ভেঙ্গেই গেলো ঠেং।
ব্যথায় কোকায় তবু খুকু
ডোবায় মারে ঢিল
ভেংচি কেটে ব্যাঙের ছানা
করছে যে খিলবিল।


জুলফিকার আলী
শরৎ

শিউলী আর জুঁই ফুলে
শরৎ আনল ডেকে,
শুভ্রতায় সাজায় ধরণী,শরৎ
ঋতুদল জানল ডেকে।
ধানের শীষে রোদ হাসে
শরৎ যখন আসে,
শরতে ভরে যায় দেশ-
হয় ফুলবন কাশে।
দীঘির পানি মেতে ওঠে
'পদ্ম,ফুলের খেলায়,
মন ভেসে যায় শরতে
শুভ্র মেঘের ভেলায়।
শরতে,দূর্গা মায়ের আশীষ
আসে সবার ঘরে,
ঋতুরাণী শরৎ তাইতো,মন
পাগল সবার করে।



মিল্টন পাটোয়ারী
সকাল বেলা ভোরের খেলা

সকাল বেলার ট্রেন চলেছে - আসছে ঘরের দারে,
আলোয় আলোয় চারিদিকে হচ্ছে দারুন বারে,
মসজিদের ঐ আজান খানি শুনতে দারুন লাগে,
আলোয় আলোয় এই যে ভুবন যাচ্ছে আধার টুটে।
সকাল বেলা ভোরের খেলা,
মুগ্ধ চোখে সকল রকম দেখছি সবুজ - পাতা,
দেখো দেখো কত রঙ্গে আসছে সূর্যি মামা,
সকাল সকাল জাগলে কেবল যাবে এসব দেখা।

সোনার তরী -সম্পাদক: বদরুল হায়দার

পাঠকের মতামত:

০১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test