E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

 শিল্প স্রোত (এ সপ্তাহের কবিতা)

২০১৫ অক্টোবর ১২ ১৩:০১:৩০
 শিল্প স্রোত (এ সপ্তাহের কবিতা)






 

আলমগীর রেজা চৌধুরী
পথরেখা

পথরেখা মুছে গেছে
ষোল ফিট প্রশস্ত কংক্রিট রাস্তা চলে গেছে গঞ্জের দিকে,
সরু রাস্তার পাশের লাজুক লজ্জাবতী
ঢাকা পরে গেছে অনেক লতাগুল্ম বর্ধনশীল তরু প্রজাতি।
না! কোনও চিহ্ন নেই
গহীন বনভূমির নিঃস্তব্ধতায় উদাসীন দুপুর
একদা প্রবল বর্ষণে উত্তর ধেয়ে আসা জল
লালমাটির খাড়ি বেয়ে ভিজিয়ে দিয়েছে
বিস্তীর্ণ সার সার তমাল তরুÑ সেগুন আর গজারীর শরীর।
আর ক্যানিয়নে জালি পেতে যে কিশোর শত শত দিনরাত্রি
ডানকানা, আর বেতরঙ্গীর পিছনেই জমা রেখেছে
কষ্টকর ফেনায়িত সময়ের ফলক।

সাক্ষি আছে, অশীতিপর হামিদা বেওয়া
উপত্যকায় বসে থাকে জলপাত্র হাতে
ক্লান্ত পথিকের জলতৃষ্ণা নিবারণের দরদী মানবী।
সাক্ষি আছে, ঝাঁক ঝাঁক হরিয়াল আর টিয়ের দঙ্গল
না ওরা এখন কেউ নেই।
বৃক্ষ কর্তন করে বনভূমি জুড়ে গড়ে ওঠেছে সামরিক ব্যারাক
প্রতিদিন তারস্বর চিৎকার করে কনভয় ছুটে যায়
দিনভর চানমারি’র শব্দে পাখিদের দল পালায় দূরে
প্রাকৃতিক এইসব সন্তানেরা সন্ত্রস্ত পথভারে হেঁটে যায়।

কংক্রিটে প্রতিদিন সহস্র ফৌজি পা লেফট-রাইট লেফট-রাইট
শুধু আমার পদরেখা মুছে গেছে।


শেখর বরণ
হারানো দিন মনে পড়ে হায়

মৃত্তিকাকে খুঁজতে খুঁজতে
তার গভীর মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে
কখন যে সময় পার হয়ে যায় বোঝা বড় দায়।
শৈশবে যার সাথে ডাংগুলি খেলা
যার সাথে গোল্লাছুট, কানামাছি
যার সাথে ভোর রাতে খেজুর রসের ফিরনি
যার সাথে রেডিওতে অনুরোধের আসর বারবার
যার সাথে বিদেশিনীর ছবি দেখে প্রেম প্রেম খেলা
যার সাথে হুবহু মিলে যাওয়া শাপলার মুখ
যার সাথে সারাক্ষণ কাছে থাকা হিং টিং ছট
তাঁকে আজ মনে পড়ে, মনে পড়ে হারিয়ে যাওয়া দিন
মনে পড়ে সঙ্গী বিহীন ক্লান্ত জীবনে এসে
স্মৃতিময় সেদিনের সেই সব প্রিয় মুখ।


বদরুল হায়দার
ময়না

ময়না আমার গ্রাম হয়ে ওঠে তার সাথে দেখা হওয়ার পর।

নাম শুনে মনে হয়েছিলো প্রাণ পাখিটির ডাক নাম। ঝাকঝাক
জোনাকির আলো এসে আমাকে স্বজন করে নেয়।
চাঁদের কোপালে টিপ দিয়ে ছায়া সুবিমল ঢেউলাগা তালে
যার আলাদা স্বভাব।

দিনের সবুজ পাঠে হৃদপিণ্ডে খোলা মাঠের বাতাসে
প্রেমের পরশে আনে দ্বিগুণ প্রভাব।

ময়নাকে অনেক বায়না দিয়ে নিজের ভেতর আয়নায়
বহুবার ভালোবাসতে চেয়েছি । শত উৎকন্ঠায় সৌন্দর্যের
বাহারি শয্যায় সে ময়না বিছিয়ে রেখেছে হাজারো কল্পনা।

ময়নাকে মনে পড়ে বারবার। হারাবার ভয় নেই জেনে
টেনে চলি প্রতিদিন বেদনার কারাগার।

ময়না জানে না জীবনের সারকথা। অপারগতার বেদনা আনন্দে
ধরে রাখে মায়াময় অসংখ্য পারাপার।

সমরজিৎ সিংহ
মহাপ্রস্থানের পথে

মহাপ্রস্থানের পথে এসে, দেখলাম,
কুকুর ছিলো না ধারে কাছে ।
এ পথে গিয়েছিলেন যুধিষ্ঠির । আমি
তাকে অনুসরণের কথা
ভাবিনি কখনও । আমার দ্রৌপদী নেই,
নকুল ও সহদেব নেই ।
কুরুক্ষেত্র থেকে বহুদূরে থাকি আমি,
মহাপ্রস্থনের পথে এসে খুঁজেছি কুকুর ।

কালো হোক, সাদা হোক একটি কুকুর,
যে অন্তত যাবে না আমার সঙ্গে ।

আরিফ মঈনুদ্দীন
শপথের শুদ্ধ উচ্চারণ


প্রবল ইচ্ছা শক্তির দাপটে ভাঙছি জীবনের সিঁড়ি
যতবার পেছনে ডেকো না কেন
ফিরে দেখার সময় নেই।
সময় নেই জরাজীর্ণ কাঁধে নিয়ে
অযথা কালক্ষেপণ

শুধু পেছনের অভিজ্ঞতা পুঁজি করে
আমার যে সঞ্চয়ের হাত
তাতে মুষ্টিবদ্ধ প্রতিজ্ঞার বীজ,
বপনের আনন্দযাত্রায়
নতুনের ডাকে
সারিবদ্ধ অনুসারীরা বিপ্লবী আখ্যান পাঠে ব্যাকুল
এবার বদলে যাবে সব
ভেঙে যাবে অন্ধকারের দেয়াল
দিগন্তের জানালা কপাট খুলে
হুহু করে ঢুকে যাবে দখিনা বাতাস

একতাবদ্ধ একাগ্রতার শপথ লক্ষে এগিয়ে যাব
এই আজ শপথের শুদ্ধ উচ্চারণ।

কাজী হাসান ফিরোজ
মরীচিকা

উড়ন্ত পাখির ছায়ার পিছনে ছুটেছি
সচিহ্নে সাগরে অবমুক্ত করেছি মত্স্য পোনা
স্বর্ণ মন্দিরে স্বর্ণ পাখির স্বপ্নে কাটিয়েছি নির্ঘুম
নিজের ছায়াই ছিলো নিজের বড় প্রতিপক্ষ।

দেবাঞ্জনা বলেছিলো আমাকে সাগর লিখে দেবে
আমি বললাম সাগরেতো হাঙ্গর থাকে
"ও'' বললো সাগরে রুপালি ইলিশ , মুক্তাও থাকে
বালির ফাঁকে ফাঁকে লুকিয়ে থাকে স্বর্ণ কণিকা
আমি বললাম লিখে দাও
"ও '' মোনালিসার হাসি মুখে দাঁড়িয়ে রইলো দূর মরীচিকায়।

আলেয়াকে আলো ভেবে ভেবেই ছুটেছি নিরন্তর
মুখোশের আড়ালে হাজারো বন্ধুর একটি মুখও চিনি নাই।


অরবিন্দ চক্রবর্তী
পিজারোর মন সোজা রস-তলে

সর্বনাশের মাঙ্গলিক শেষ করবার পর উসকানিপ-তি
হয়ে ভাবছিলাম, চোখ গড়া”চ্ছে কোথায় ?
এও বুঝলাম, ব-বর্গীয়দের শহরে এত বড় উপকার
করিনি কারো- কোনোদিন।

রক্তের পারিশ্রমিক না পেয়ে অক্সিশ্বাস করছি বিড়বিড়।
ইস্, দূরপাল্লার শহর থেকে আপনি যদি কেউ
ধাক্কা করে উঠিয়ে দিতো পাতালে!
যেতাম আর কই? সোজা রসাতলে, অনুপস্থিতির
উপত্যকায়। ঝুল আকাশে দাঁড়ায়া একজন মিলা
খাইতাম বিন্দুর দিকে ধুকপুক চেয়ে থাকা কৈলাস
যুবতীর ব্রয়লার ঘুম।

মিন্টু হক
দিনরাতের অনুগল্প

দিগন্ত সংকোচরেখায়
আঁধার আঙিনা ভেঙে
ফুটে ওঠে প্রভাতকুসুম
আলোর ফোয়ারা ভাসে।

দুপুর গড়ায়
শূন্যের সিঁড়ি বেয়ে বিকেল আসে
দিনান্তে আলো তার
আঁধারের নৈবেদ্য বুকে ভরে নেয়।

রাত হলো সূর্যের বিছানা
আর সূর্য আঁধারের জানালা।


আলেয়াকে আলো ভেবে ভেবেই ছুটেছি নিরন্তর
মুখোশের আড়ালে হাজারো বন্ধুর একটি মুখও চিনি নাই।


যুবক অনার্য
বৈধকরণ অধ্যাদেশ


তিনি আমাকে বললেন : আমরা মাদকের প্রসিদ্ধি চাই
আমি বললাম : পোস্টারিং করে দাও
মাদক এক নিষিদ্ধ কারুকাজ
তিনি : আগ্নেয়াস্ত্রের চাই রমরমা
আমি : পোস্টারিং করে দাও
ধ্বংস হোক এইসব মারনাস্ত্র
তিনি : ভালোবাসি যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা
আমি : পোস্টারিং করে দাও
এসো যুদ্ধ নয়শান্তির শপথ নিয়ে এসো
তিনি : যৌবন পাচার করে লুফে নেবো ডলারের অথৈ আড়ৎ
আমি : পোস্টারিং করে দাও
নারী আমার মা নারী আমার বোন
সেইভ ওম্যান সেইভ ন্যাশন
তিনি : পৃথিবীর তাবৎ ক্ষমতা লুটোপুটি খেলবে
আমাদের করতলে আমরা এরকম চাই
আমি : পোস্টারিং করে দাও
মানুষ মানুষের ভাই একজন মানুষের মাত্র
সাড়ে তিন হাত মাটির প্রয়োজন

এইভাবে পোস্টারিং অতঃপর নিষিদ্ধ অন্ধকার আর আঁধারের পাশা খেলা


তোফায়েল তফাজ্জল

উর্বর উদ্যমে

এই সোঁদা গন্ধের মৌতাতে
সমানে সমান তাল ধরে
পৃথিবীর তাবৎ সুঘ্রাণ পিছে পড়ে থাকে ;
কৃষকের চোখে
এর সামনে সব সুবাসই কাছিম পায়ী।

এ ঘ্রাণের নেশায় ছাড়ে না পিছু কেঁচো,
যে কেঁচো মাটির নিরপেক্ষ বিশ্লেষক ;
উর্বর উদ্যমে এরা নিরবে বাড়ায় ওসবের পুষ্টিগুণ।

রোদ ও বৃষ্টিকে সঙ্গী হিসেবে পেয়েও
চাষা ভুলে যায় নি এদের অবদান,
নবান্নেও খুলে বসে স্বীকৃতির সেই স্মৃতি পাঠ।

ইদানীং কীটনাশক কেনো এতো এর ষড়যন্ত্রে ?
টাইটানিক
শাকিল সারােয়ার
গলছো না, জ্বলছো না
অখণ্ড তুষার
ভেসে ভেসে ডুবেছো অধিক
সবকিছু এখনো আমার
ছিন্ন বাঁ দিক...

মিতা চক্রবর্তী
নক্ষত্রের পথে

সময় সীমান্তে নিশিথের কোলে ভেসে থাকা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বস্বপ্নবিন্দু,
বুকে নিয়ে আলোর প্রেম
জোনাকির মত ঘিরেথাকে কাটাবন।

যদি কখনো ভুল পথে উড়ে উড়ে
ছোটে যদি গহীন অরন্যে---
সাপ-খোপ- ব্যাঙের খাদ্য হবে নিশ্চিত।

বিন্দু কখনো সিন্ধু হলে,
জীবন প্লাবিত হলে শুক্লপক্ষের রাতে-- সকালের সোনা রং রোদ্দুরে,
সদ্যস্নাতা রমনীর এলোচুলে--
লুকোচুরি খেলে স্বপ্ন-প্রেমী মন।

ভোরের নিকানো উঠোনে শিউলির গালিচা ছুঁয়ে,
বর্নিল চৌকাটে পা রাখে যদি প্রেম,
স্বপ্নের রোদ্দুরে জমে থাকা সুখ,
উষ্ণতা দেই যদি সারা বেলা---
ইচ্ছের সমুদ্রে ভাসিয়ে ভেলা,
জোনাকিরা পাড়ি দেবে তারাদের মিছিলে।
হয়তবা আালোর মোড়কে মোড়া স্বপ্নগুলো--
উড়ে উড়ে যাবে নক্ষত্রের পথে।

অয়ন্ত ইমরুল
চূর্ণ বিষয়ের রেণু চোখে মেশে

চূর্ণ বিষয়ের রেণু চোখে মেশে।
প্রথমে মা তার খুকির হাতে চুড়ি পরিয়ে দেয়
চুড়ির রিনিঝিনি শব্দ ভাল লাগে,
খুকি হাসতে হাসতে শিকলের শৈলীর ভেতর
যাপনের সুখ পায়।

বিপরীতে আরেক মা তার খোকার হাতে বেগুনী
আধুলি ধরিয়ে দিয়ে বৃত্ত আঁকা শেখাচ্ছে
খোকা বৃত্ত ভেদ করে পরিধি অবধি সরল রেখা টানছে আর হাসছে--
মা বলছেন উফ,কি করছো!
বৃত্ত ভেদ করো না।
খোকা,এই প্রথম জানলো সূর্য্যরে রশ্মি বেগুনী।

খুকী মায়ের সাথে স্কুলে যাবে,মা--
ড্রেসিং টেবিলের ঝকঝকে আয়নায় নিজেকে
সতর্কভাবে দেখে নেয়;
অভ্যস্ত আঙুলে শাড়ির আঁচল ভাঁজ করে বাকাঁধে
সেফটিপিনটা ব্লাউজের সাথে আটকিয়ে নেয়--
খুকী এই প্রথম জানলো শাড়ী পরার কৌশল।

খোকা বাবার সাথে স্কুলে যায়,
পাশে,কেউ একজন পাথরে পাথর ঘষছে
আর আগুন জ্বলে উঠছে,খোকা অবাক দেখে
আগুনের প্রসব আর জন্মঘণ্টা বাজায়।

পাঠকের মতামত:

৩০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test