E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

 শাফিকুর রাহী’র কবিতা

২০১৫ নভেম্বর ০৫ ১১:৪৭:২৪
 শাফিকুর রাহী’র কবিতা






 

ভালোবাসার রোদেলা বিকেল

তুমি আমার ধোঁয়াওঠা গরম ভাতের ওম ছড়ানো
শীতার্ত এক রোদেলা সকাল, তোমার মাঝে জিয়ন মরণ
আকাক্সক্ষারই স্বপ্নবীজ বপন করে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আকাশে পানে।
তুমি আসবে বলে পৌষের হিম ঠাণ্ডা রাতে কতো আয়োজন,
গিউজ ধানের মুড়ি আর বিন্নিধানের খই,
মাগুর মাছের ভুনা, লাউয়ের ডগায় শিং মাছের ঝোল।
তুমি আসবে বলে হিম-শীতল মধ্যরাতে বাঁশঝাড়ে
জোনাকিরা আলোর ডানা ছড়িয়ে রেখেছে।

তুমি আসবে বলে নানা কিসিমের মাছের মান্দায় কৃষকের স্বপ্ন ভাসে
কনকনে শীতের শিশিসে ভাসে ভালোবাসার রোদেলা বিকেল।
এ নিদারুণ দুঃসহ কালবেলায়ও তোমার ধ্যানে রাত্রিজাগরণ
আর অজানা অদেখা আলোর অন্বেষণে অকারণ তপস্যায়
সময় গড়িয়ে যায়, আমি বড়ো নিরুপায় আজো তোমার কথা ভাবি।

এ মনোযাতনার কাল হয়তো একদিন শেষ হবে
আনন্দ ঝলমলে বসন্ত বাতাসে জীবনের সমস্ত দুঃখ ভুলে
সুখপাখিরা গেয়ে উঠবে কুহুকুহু সুরে, সেই শুভ সম্ভাবনার প্রতীক্ষায়!
তুমি আসবে বলে আমি সারারাত সিথানে মোমবাতি জ্বেলে রাখি
বাঘের মাসির হাড় কাঁপানো হিমঠা-ায় ঘুম আসে না চোখে আমার তোমার জন্য;
আর কতোকাল একলা একা নিরানন্দে কাটবে আমার সুখবসন্ত!
তুমি কি আর ভুলেও কখন সাড়া দেবে না মানবিক আকুলতায়?

বাকরুদ্ধ নগরবাউল

কার তালাশে কে হেটে যায় অমন গভীর নিশি রাতে;
কে হারালো রক্তের বাঁধন আপন স্বজন আত্মঘাতে!
শান্তি সুখের ফুলেল বাগান গড়ার স্বপ্নে দিনরাত্রি,
দূর পাহাড়ে আকাশ পথে আঁধার ভাঙা অভিযাত্রি!
অনিশ্চিত অন্ধকারে গন্তব্যহীন নিরুদ্দেশে;
কষ্টেরই নিদারুণ দাহে রক্তাক্ত এক কফিন বেশে!
কার মনেরই বীণায় বাজে শোকের সানাই বলতে পারো;
অজ্ঞাতবাস পরবাসে এ জীবনের বাজলো বারো!

সুখ হারিয়ে অসুখ কুড়ায় কোন অর্বাচীন এ তল্লাটে;
সারাক্ষণই আকাক্সক্ষারই আগুন জ্বলে মনের মাঠে!
প্রাণের বাঁধন জন্মভিটে কে হারালো কপাল দোষে;
বাকরুদ্ধ নগরবাউল অবাক তাকায় তীব্র রোশে!
বিষাদেরই বিষবাষ্পে দূর অজানায় পরবাসে।
দুঃসহ দুর্গতিরকালে জ্বললো একা সর্বনাশে!
কোন উদাসী ছন্নছাড়া ভয়ঙ্করী অন্ধকারে;
কাটলো সারাজীবন জনম সন্তাপেরই পারাবারে।

অধরা এক সুখের নেশায়; অজানাকে জানার আশায়,
বিঁধলো বুকে বিষের কাঁটা; রক্ত গঙ্গায় আমায় ভাসায়!
নির্ঘুম রাত কাটে না আর মুক্তজ্ঞানচর্চায় একা;
কোন বিষাদের অনল বুকে রাত্রি জেগে পদ্য লেখা!
এই যে পতন অবক্ষয়ে কে দাঁড়ালো অধম পাশে;
প্রাণের প্রিয় পরম আপন এ দুর্ভাগার দুঃখ নাশে
সকল বাধার আঁধার কেটে ধাবিত মন সম্মুখ পানে;
কালনিশিতে হাজার তারের বীণাবাজে তোমার গানে।

সামনে ফাগুন মাস

হাড়কাঁপানো শীতার্ত এক মধ্যরাতে আমি
কার অনুরাগ অনুতাপে অকারণে ঘামি!
রেললাইনের বস্তিঘেঁষা অট্টালিকার পাশে
সারাটি রাত ঠাঁই দাঁড়িয়ে দারুণ মাঘের মাসে
কোন রূপসীর প্রেমাগুনে জ্বলছি আমি একা
তারই আশায় প্রাণের ভাষায় গান কবিতা লেখা।

মাঘের শীতে বাঘে কাঁপে আমি কাঁপি নাতো
এ অভাগার মনোজ্বালায় তুমিই কেবল মাতো!
শীতের শেষে ফুটলো গোলাপ সামনে ফাগুন মাস
এ কোন মনোজ্বালায় সখি বাড়ে দীর্ঘশ্বাস!
তুমি আমার শীতসকালে বাজো মনের তারে
স্বপ্নে আমি তোমার খোঁজে মেঘনা নদীর পাড়ে...

তালের ডিঙায় স্রোত ভেঙে যাই উজানে পাল ধরে
পৌষ ও মাঘের ঠা-াজ্বরে যাচ্ছি আমি লড়ে।
জলপ্রপাতে গাঙশালিকের সুখআনন্দ বানে
মনাকাশে বাজলো বাঁশি- সুরেরই সাম্পানে।
তুমি ছাড়া শীতরাত্রি মোটেও ভাবা যায়-
শীতকাতুরে ও কোয়েলি তুমি কোথায় হায়!

পৌষ-মাঘেরই দারুণ হিমে কে লুটে নেয় আরাম;
তোমার পরম ওমের পরশ কপাল দোষে হারাম!
সর্বকর্মে অযোগ্য এক বকলমের বুকে
হৃদয়ছেঁড়া কালাগ্নিতে জ্বলে অসীম দুখে।
তুমি আমায় অকারণে ভাবছো কেবল পর
সন্তাপেরই দাহে জ্বলে আমার বুকের চর!

এই যে অনাথ পথের কবির মর্মব্যথা শোনো
কোনদিনও বুঝবে নাতো জানবে না হায় মনো!

১২ মাঘ ১৪২০

উদ্বাস্তুর কষ্টকথন

কে হারালো পরম প্রিয় প্রাণের সকল আপন স্বজন বলতে পারো;
বুকের চুলোয় স্বপ্নগুলো আঙার হলো এ জীবনের বাজলো বারো!
কোন উদাসী দূর বিদেশে আঁধার ভাঙে কষ্ট কুড়ায় অকারণে;
একটি জীবন খুন হয়ে যায় সন্তাপেরই কালাগ্নিতে নীল দহনে;
এক জনমে এতো কঠিন কষ্ট করুণ মনোজ্বালা আর সহে না।
প্রেম-বিরহের এই আকালে আকাশ কাঁদে মনের মাঝে মন রহে না!
কোনটা আসল কোনটা নকল যায় না বোঝা দিনরাত্রি মানব ত্রাসে,
মনুষ্যহীন এ জগতে কার তালাশে শোকপাথারে কে যে ভাসে!
কালের পরে কাল কেটে যায় আজো আমায় তাড়া করে আঁধার রাত্রি;
সুখ-দুঃখ কান্না-হাসি ভুলে যে আজ একলা একা অভিযাত্রি!

ভয়ঙ্কর এ পতন কালে নিজকে নিজে প্রশ্নবানে বিদ্ধ করে
কোন সে ব্যর্থ প্রেমিক বলো জ্বলেপুড়ে নিভৃতে একাই মরে!
বসতভিটে ঠিকানাহীন কোন সে আদম আওলাদ বলো অন্ধকারে
অর্থবিহীন জীবন জনম কাটলো যে তার ভয়ঙ্করী কারাগারে!
সব জীবনের মানে হয়তো একইরকম হয় না কখন তাও জানি,
কোন সে অলীক অপরাধে সারাটাকাল টানতে হলো দুখের ঘানি!
আপনহারার মনোজ্বালায়- তপ্তদাহে সাগর নদী বৃক্ষ-পাখি
অমাবশ্যার ঘোর আঁধারে গান ভুলে যায় ডুকরে কাঁদে থাকি থাকি!
বেকারত্বের অভিশাপ আর ঠিকানাহীন উদ্বাস্তুর আহাজারি
বুকভাঙা এই রোদনধ্বনি- আকাশ ফেটে ঝরতে থাকে রক্তবারি-

জন্মান্ধ এক নায়ের নাবিক ঠাঁয় দাঁড়িয়ে অজানা সমুদ্র পাড়ে
নীল বিষাদের আগুন জ্বলে ভালোবাসার শনের ডেরায় মনের তারে!
পিতার হালের দড়িছেঁড়া অবাধ্য এক রাখাল খোঁজে পুষ্পমণি
নির্ঘুম রাত কালনিশীথে বুকের মাঠে ডুকরে ওঠে রোদনধ্বনি
হয়নি দেখা পাওয়া আজো সেই অপরূপ অধরা সে রূপের রাণী
দিন রাত্রি চৈত্রি খরায় গ্রীষ্ম-বর্ষায় হৃদয়-চোখে ঝরে পানি।
তপ্ত মনের বীণায় আমার আকাক্সক্ষারই আগুন জ্বলে বারোমাসই
কান্না-হাসি সব ভুলে আজ আকাশপানে অবাক তাকায় ক্রীতদাসই।
এ জগতে শোক-দুঃখেরই যাতাকলে যৎসামান্য ঘরগেরস্তি,
অজ্ঞাত এই পরবাসে আগন্তুকের ভাল্লাগে না গিঞ্জিবস্তি!

কী করি হায়! এ অবেলায় মধ্যহাটে অধরা কোন সুখের নেশায়-
পরম প্রেমীর পরশ পেতে নির্ঘুম রাত কাটলো আমার সৃজন পেশায়।

দিন কাটেতো রাত কাটে না

তোমার শরীর নদীর মতো আকা-বাঁকা সর্পিল এক শিল্পকলা
সেই মাণিক্যে বিষ ও মধু উভয়েরই জাদুর টানে; কাকে টানে?
কোন সে অচিন পথের পথিক অপেক্ষাতে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে তোমায় জপে;
জনম জনম যায় রসাতল অকারণে অন্ধকারে কপাল ঠুকে!
কোন সরোবর-বৃন্দাবনে জোসনা ঝরা রাতে নাকি শীত-কুয়াশায়
নৈসর্গিক দ্বীপকুঞ্জে কুয়াকাটার নীল পাথারে ঢেউয়ের বানে
নাকি কোনো সুখ আনন্দে ভাসো তুমি আমায় ভেবে প্রাণকোকিলা!

কোন অধরা সুখের নেশায় শীত-বসন্ত যায় কেটে যায় দারুণ কষ্টে
তোমায় ভেবে পথের বাঁকে একলা একা ধ্যানমগ্ন এ সন্ন্যাসী
বর্ষা কিংবা পৌষবিকেলে সুরেরই সাম্পানে আমি তোমায় খুঁজি
এ অনাথের শূন্য আকাশ খাঁ খা করে ও-রঙিলা কোথায় তুমি;
তোমার ঠোঁটও চোখের বাঁকে এ কোন আগুন আফিমআরাম খেলা করে!
তোমার রূপের সপ্তকলায় মুগ্ধ নাবিক বেহুশ বেভুল তপস্যাতে
তৃষ্ণাকাতর মনের বীণায় - কামকামিনীর বক্ষযুগল নৃত্য করে
যার নাভিমূল চিত্রকলায় অফুরন্ত আনন্দ ঢেউ কাছে টানে।

অস্বাভাবিক স্বপ্নগুলো সত্যি হলে তোমায় পাবো এই আকাক্সক্ষায়
কালনিশিতেও তোমায় ভেবে সকাল দুপুর মনের তারে শান দিয়ে যাই,
তোমায় ছাড়া প্রাণের মাঝে প্রাণ থাকে না, দিন কাটেতো রাত কাটে না।
আকাশ পাতাল দুর্ভাবনায় গন্তব্যহীন নিরুদ্দেশের অভিযাত্রী
তোমার নামে নীল বেদনার পত্র লিখে পাঠিয়ে দিলেম কালিন্দীর ওই
উর্মিমালায়, দমকা ঝড়ের ঢেউয়ের তালে, পাবে কিনা তাও জানি না!

কতোজনম ঠাঁয় দাঁড়িয়ে

তুমি আমার প্রথম জবান, তুমি আমার প্রেম,
তোমার প্রেমের পাঠশালাতে কবিতা লিখলেম।
তোমার অরূপ সুরভিত আকাশ বাতাস মাঠে
ছন্নছাড়া এ অর্বাচীন ধ্যানমগ্ন পাঠে।
ভালোবাসার জোসনা জ্যোতি রূপের সাম্পান ভাসে
মন ভোলানো এ কোন সুন্দর ফুলবাগানে হাসে!

নীল পাথারে উর্মিমালায় নৌকো সারিসারি
তোমার মহৎ শিল্পকলায় সুর তোলে সেতারই
কতো মহা মুনি ঋষি গাউস কুতুব অলি
তোমার মহান সৃজনকলায় ফুটলো ফুলের কলি!
কোন নামেতে ডাকবো তোমায় কোন বাঁশরীর সুরে
ধ্যানে জ্ঞানে সারাক্ষণই বাজো অন্তপুরে।

এ অধম আদমের শোকে পাথর ফেটে কান্না-
মনোজ্বালায় জ্বলছে আকাশ আর পারি না আর না
তুমি আমার অনন্ত সুখ তুমি পরম পিয়া,
তোমায় খুঁজে মরি আমি অকূল দরিয়া।
নীল আকাশের তারায় তারায় ভাসে তোমার ছবি
সেই রূপেরই জাদুমন্ত্রে হলেম অনাথ কবি!

কতোজনম ঠাঁয় দাঁড়িয়ে তোমার পথ চাইয়া,
এ পাপিকে করবে কবুল; ও রঙিলা নাইয়া!
পথের মাঝে পথহারালাম তোমারই গান গাইয়া,
শোক-দুখেরই জীবন তরী চলছি সখি বাইয়া।
তুমি আমার পরম আপন তুমি আমার ভাষা
এ অধমকে নিয়ে সখি খেলছ এ কোন পাশা?


পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test