E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আসিয়া খাতুন’র গল্প

২০১৫ নভেম্বর ০৭ ১৪:৪৫:৩৩
আসিয়া খাতুন’র গল্প







 

জঙ্গল

আর ১৫ দিন পর রথের মেলা।

ফয়সাল এক দিন করে দিন গুণে। দিন কাটে তো রাত কাটে না। ওর দাদীকে রথের মেলা নিয়ে একটার পর একটা প্রশ্ন করে, দাদী উত্তর দেয়ার চেষ্টা করে যথাসাধ্য; বাবা-মাহীন নাতিকে সন্তানের মত মানু্ষ করছেন বৃদ্ধ জয়নব বেগম।

ফয়সালের দুই বছরের সময় বাবা বিদেশে চাকরি যাওয়ার দুই মাসের মাথায় লাশ হয়ে ফেরে।

একদিন জঙ্গলের মধ্যে ফয়সালের মায়ের লাশ পাওয়া যায়। তখন ফয়সালের বয়স ৬। সবাই বলেছিল, ওর মাকে সাপে কেটেছে। কিন্তু ফয়সাল জানে গ্রামের কয়েকজন চেনা মানুষ ওর মায়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে, তারপর জঙ্গলে নিয়ে মেরে ফেলে। ও কাউকে বলেনি সে কথা। দাদীকেও না। ফয়সাল রাতে ঘুমায় অনেক দেরি করে। ঘুমানোর আগে দাদী অনেক গল্প বলে ওকে। যখন দাদীর চোখে ঘুম জড়িয়ে আসে, তখন বলেন, অখন ঘুমা। কাইল রাইতে আবার গপ্পো শুনামু।

ফয়সাল মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলে। দাদী তখন গভীর ঘুমে। ও জেগে থাকে অন্ধকারে। ভাবে, ও পাড়ার মন্টুর মত ও ব্যায়াম করবে, বড় হবে, তারপর জঙ্গলে গিয়ে ওই লোকগুলোকে শাস্তি দেবে। প্রতি রাতে এইসব কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে যায় ফয়সাল।

রথের মেলার দিন এগিয়ে আসে। আর এক দিন, এক রাত পর মেলা হবে।
বন্ধুদের সঙ্গে রথের মেলা নিয়ে আলোচনা করবে। বড় বাড়ির পুকুর ঘাটে সবাই অপেক্ষা করছে। দুপুরের আগে ওকে পুকুর ঘাটে যেতে হবে। যাওয়ার সময় দাদীকে বলে, দাদী তুমি আমার ভাত বাড়ো। আমি গোসল কইরে আইতাছি। বলেই ছুট। পেছন থেকে দাদীর ডাক কানে যায় না ফয়সালের।

দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে ফয়সাল এখনো ফেরেনি। দাদী ভাত বেড়ে বসে আছেন। বিকেল হওয়ার আগে জয়নব বেগম নাতিকে খুঁজতে বের হলেন। পুকুর পাড়ে কেউ নেই। সন্ধ্যার একটু আগে উনি গভীর জঙ্গলে ঢুকলেন। চোখে ঠিকমতো দেখে না।

-ও ফয়সাল, ফয়সাল কয় গেলি রে...

যখন মাগরিবের আযান শুনতে পেলেন, তখন তিনি ফয়সালকে জঙ্গলে খুঁজে পান।

ফয়সালের শীতল দেহ জড়িয়ে ধরে একা একা ডেকে যাচ্ছেন জয়নব বেগম- ও ফয়সাল, ফয়সাল...

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test