E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আনিসুর রহমান আলিফ’র গল্প

২০১৫ ডিসেম্বর ১০ ১৭:০৬:০৩
আনিসুর রহমান আলিফ’র গল্প







 

পায়রা

রিমঝিম তরঙ্গে বৃষ্টি পড়ছে। বারান্দায় একটা মোড়া পেতে বসে আছে মিতু। উঠানের ঐ কোণে কদম গাছের নিচে মিতুর পায়রার ঘর। পায়রাগুলো তাদের ঘরের বারান্দায় এসে ঘাড় কাত করে আকাশের দিকে তাকিয়ে কী যেন দেখছে। পায়রাগুলোর দিকে তাকিয়ে মিতু একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। বছর পেরিয়ে গেছে মিতু এ বাড়ির বউ হয়ে এসেছে। স্পষ্ট মনে আছে, পায়রার ঘরটি শফিক-ই তাকে গড়ে দিয়েছিলো। শফিক বলেছিলো,
-বিদেশে কাজ করি। দুই বছরের আগে দেশে ফিরতে পারবো না। তুমি একলা থাকবা তাই সময় কাটানোর জন্য পায়রার ঘরটা বানায়ে দিলাম।
শফিক চলে গেছে। রেখে গেছে পায়রাগুলো। ছয়টি পায়রা এখন ষোলোটিতে দাঁড়িয়েছে।

পায়রাগুলোর দিকে তাকিয়ে একটা বিষয় মিতু বেশ বুঝতে পেরেছে। এই পৃথিবীতে যাদের বসবাস তারা পরোক্ষ ভাবে আসলে কেউ স্বাধীন নয়। পিঁপড়া থেকে মানুষ, এখানে সকলেই পরাধীন। ঐ যে পাখিরা মুক্ত আকাশে ডানা মেলে উড়ে বেড়ায়, তারা কি স্বাধীন? তারা কি বর্ষার এই বৈরী আবহাওয়ার কাছে পরাধীন নয়? পায়রার ঘর থেকে এবার দৃষ্টিটাকে আকাশের দিকে নিবদ্ধ করলো মিতু। আবহাওয়াটা সত্যিই ভীষণ বৈরী। অন্যান্য পাখিদের মতো মিতুর পায়রাগুলোও বেশ কিছুদিন হলো ঘরে বন্দি হয়ে আছে। মনের সুখে ডানা মেলে মুক্ত আকাশে যে একটু উড়ে বেড়াবে তার আর কোনো উপায় নেই। বৃষ্টি একটানা নেমেই চলেছে। এবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে সেই জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে। এখন ভাদ্র মাস। গত চার মাসে বাড়ির পেছনে থাকা ফসলি মাঠটি সম্পূর্ণরূপে বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। চির-চেনা ফসলে আবৃত সেই মাঠটিকে এখন অচেনা-অজানা কোনো বিস্তীর্ণ সাগরের মতোই মনে হয়। এবারের বর্ষার মতি-গতি অনেকটা ক্রিকেটের টেস্ট ম্যাচ খেলার মতো। একাধারে নামছে তো নামছেই। অথচ এই সময় সমস্ত আকাশ জুড়ে শরৎ বাবুর তুলো মেঘ উড়ে যাবার কথা। তুলো মেঘের বাঁকে-বাঁকে কতো-শতো চেনা-অচেনা ছবি ফুটে উঠবার কথা। বাতায়নের শুভ্র কোমল ফুলগুলো হালকা বাতাসে দোল খাবার কথা। কিন্তু তা না হয়ে বর্ষণ বাবু শরৎ বাবুকে ফাঁদে ফেলে সমস্ত আকাশটাকে নিজেই দখল করে রেখেছেন।

বর্ষার পানিতে মাঠ তলিয়ে যাবার ফলে পায়রাগুলো সেখানে আর নামতে পারে না। মাঝে মাঝে বৃষ্টি যখন একটু কমে তখন বড়-জোড় তারা কদম গাছের ডালে গিয়ে বসে থাকে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি তাদের সুন্দর পালকগুলোকে ভিজিয়ে দেয়। ভেজা পালক নিয়েই তারা কোথা থেকে যেন কুটো টেনে আনে। নিজের শরীরের উত্তাপ দিয়ে সেই ভেজা কুটোগুলোকে শুকিয়ে তাতে ডিম পারে। পরম ¯েœহে ডিমে তা দেয়। বর্ষার সময় বেশিরভাগ ডিমগুলোই অবশ্য নষ্ট হয়ে যায়। তাতে কী। তারা আবার কুটো টেনে নেয়, আবার ডিমে পারে, আবার তা দেয়। এই তো জীবন, নয় কী?
বৃষ্টি একটু কমেছে দেখে একটা বাটিতে কতোগুলো ধান নিয়ে মিতু পায়রাগুলোকে ডাকে,
-আয় আয়, খেয়ে যা।
পায়রাগুলো বেশ পোষ মেনেছে। বছরের অন্যান্য সময় আয় আয় বলে ডাকলেই তারা মিতুর কাছে চলে আসে। হাতের উপর উঠে তীক্ষ্ণ ঠোঁট দিয়ে আঘাত করে ধান খায়। কিন্তু এখন আর তারা সহজে ঘর ছেড়ে নামতে চায় না। নেহাত ক্ষুধার জ্বালাই তাদেরকে নিচে নামিয়ে আনে। ভাদ্র মাসের এই অতিবৃষ্টি আজ মিতু আর ঐ পায়রাদের ভালোবাসার মাঝে প্রকাণ্ড এক দেয়াল তুলে দিয়েছে। মিতু আবার ডাকে,
-আয় আয়।
মিতুর ডাকে পায়রাগুলো বারান্দায় বের হয়ে আসে। উঁকি-ঝুঁকি মেরে বাইরের অবস্থাটা বোঝার চেষ্টা করে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে তখনও। বৃষ্টির উৎপাত উপেক্ষা করেই দুটো পায়রা পাই-পাই শব্দে পাখা ঝাপটে উঠানে নামলো। মিতু তার মুঠো ভরা হাতটি উঠানে ছড়িয়ে দিতেই পায়রা দু’টো ধান খেতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। ক্ষাণিক খাওয়া হলে, পুরুষ পায়রাটা মেয়ে পায়রাটিকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে। গুরুম-গুরুম শব্দ করে বোঝাতে চেষ্টা করে সে পুরুষ।

ইদানীং শফিকের মুখখানা মিতুর খুব মনে পড়ে। মোবাইল ফোনের বরাতে প্রায় প্রতিদিনই কথা হয়। তবুও দূর সে তো সব সময়ই দূর। শফিক বলেছে আসছে ঈদে বাড়ি ফিরবে। ঈদ আসতে এখনও আট মাস বাকি। মাঝে মাঝে মিতুর বড় অস্থির লাগে। মা বলেছে,
-মিতু শোন, তোকে একটা কথা বলি। শফিক বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত যখন-তখন ঘরের বাইরে বের হবি না। মনে রাখবি, এ জগতে যে পাপী তার পেছনে কেউ লাগতে আসে না। যা কিছু সুন্দর আর ভালো তাকে কুৎসিত আর কালো করতেই সকলে এখানে ব্যস্ত। সাবধানে থাকবি, খুব সাবধানে।
মিতু বোঝে, সে এখন আর সেই মিতুটি নেই। সে এখন ঘরের বউ। ইচ্ছে করলেই আগের মতো এ বেলা ও বেলা কাশবনের মধ্যে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া যায় না। বাড়িতে শাশুড়ি ছাড়া সে সম্পূর্ণ একা। একা থাকা যে কতো কষ্টের তা মিতুর চেয়ে বেশি আর কে বুঝবে? যে সকল বউদের স্বামী বিদেশে থাকে তাদের জন্য চারিদিকে কতো-শতো উৎপাত যে অপেক্ষা করে থাকে তার খবর কয় জন বোঝে। এই সেদিনই তো নাজমাদের পুকুর থেকে গোসল সেরে বাড়ি ফেরার সময় চপল ভাইয়ের সাথে দেখা। ঘোলাটে চোখে মিতুর দিকে তাকিয়ে চপল বললো,
-ভাবি কেমন আছেন। শফিক বিদেশে গেছে বলে কখনও মন খারাপ করবেন না। আমি আছি না। কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে বলবেন। একটুও লজ্জা করবেন না হে হে হে।
মিতু কোনো কথা না বলে দ্রুত পায়ে আমগাছটার নিচ দিয়ে প্রায় দৌড়ে বাড়ি ফিরেছিলো। চপল লোকটাকে মিতুর একেবারেই ভালো লাগে না। মুখের উপর একটা কথা যে বলবে তারও উপায় নেই। চপল শফিকের বন্ধু। বন্ধু কখনও এমন হয়? লোকটির পা থেকে মাথা পর্যন্ত শয়তানি। শুধু পকুর পাড়েই নয়, প্রতিরাতে উচ্চস্বরে গান গাইতে গাইতে বাড়ির সামনে দিয়ে ঘোরাফেরা করে। বৃদ্ধ শাশুড়ি আর কতোটুকুই বা তাকে আগলে রাখতে পারে ? মাঝে মাঝে শাশুড়ি ঝাঁজালো কণ্ঠে চেঁচিয়ে ওঠে,
-কে, কেরে বাড়ির সামনে।
শাশুড়ির কথায় গান থেমে যায়। তবে তা বেশিক্ষণের জন্য নয়। ক্ষাণিক বাদে লোকটা আবার গান ধরে।

সেদিন চপল ভাইয়ের বউ মুনা ভাবি এসেছিলো বেড়াতে। মুনা ভাবির মুখখানি বেশ সুশ্রী। কোলে রাজপুত্রের মতো ছেলে। ছেলেটা খুব চঞ্চল। সারাক্ষণই এটা সেটা নাড়াচাড়া করছে। সকালের চা-নাস্তা শেষে মেঝেতে অবশিষ্ট যে মুড়িগুলো পড়েছিলো তার কয়েকটি তুলে মুখে নিতেই মুনা ভাবি ছেলেকে রাগ করে বললো,
-নোংরা ছেলে। যা পায় তাই মুখে দেয়। ফেলে দাও, ফেলে দাও।
-আহা রাগ করছেন কেন? ও কী আর বুঝতে পারে ?
-ছেলের বয়স কতো হলো?
-এগারো মাস।
-কী যেন নাম ওর?
-মঞ্জিল।
-হ্যাঁ মনে পড়েছে, মঞ্জিল। কতোদিন এ বাড়িতে আসেন না। নাম কী করে মনে থাকবে। আমরা এতো কাছাকাছি বসবাস করি অথচ আসা-যাওয়া নেই। আমার তো এখন এমন অবস্থা যে কথা বলার মতো একজন মানুষ খুঁজে পাই না। আপনার ছেলের নামটা কিন্তু খুব সুন্দর। নাম কে রেখেছে?
-ওর বাবা।
মঞ্জিলের বাবা মানে চপলের কথা শুনেই মিতুর মনটা খারাপ হয়ে গেলো। লোকটার ঘরে অমন সুন্দরী বউ আছে, অমন ফুটফুটে একটা সন্তান আছে, অথচ সে কী না! একবার ভাবলো কথাটা মুনা ভাবিকে বলবে। কিন্তু পরক্ষণেই আবার কী মনে করে যেন কিছু বললো না।

ইদানীং চপলের সাহসটা আগের চেয়ে বেড়েছে। রাতের বেলা বাড়ির সামনে এসে শুধু গান ধরার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। মিতুর ঘরের জানালায় ঠুক ঠুক শব্দে টোকা দেয়। ফিসফিস করে বলে,
-ও ভাবি ঘুমাইছো না কি? তোমার জন্য একটা জিনিস আনছি। নিবা?
মিতু বালিশে মাথা রেখে দুই হাতে কান চেপে শুয়ে থাকে। চপলের ফিসফিসিয়ে কথা বলাটা অশরীরী কোনো পশুর মতো মনে হয়। মনে হয়, মুখ ভর্তি ফেনা নিয়ে কোনো অসুস্থ কুকুর ওত পেতে আছে।
নাহ্ আর সহ্য করা যায় না। কথাগুলো এবার সে বলবে শফিককে। পরক্ষণেই আবার মনে হয়। তাতে আর কী হবে? শফিককে কথাগুলো বললে নিশ্চয় শফিক চপলকে ফোন করে শাসাবে। বৃদ্ধ শাশুড়িকে নিয়ে বাড়িতে সে একলা থাকে। রাগের বশে চপল যদি তাদের উপর হামলা করে বসে তখন কী হবে? মিতু কী করবে বুঝতে পারে না। গ্রামের মুরুব্বীদের কাছে নালিশ দেবে? এ এমন এক সমাজ যেখানে নারীদের কথার খুব বেশি মূল্য দেওয়া হয় না। নারী মানেই নাপাক, নারী মানেই ছলনাময়ী। নারীর পায়ের ছাপে কেবল নয়, নূপুরের তাল যতদূর যায় তার দোষও ততদূর যায়। নালিশ নিয়ে গেলে এ পক্ষ ও পক্ষ তাকে জেরা করবে। কী হয়েছে, কী বলেছে? এমন হাজারও প্রশ্নে তাকে জর্জরিত করা হবে। শেষে দেখা যাবে, সে নিজেই দোষী হয়ে গেছে। নারী হয়ে জন্ম নিলে সব কিছু সহ্য করতে হয়। মিতুর মনে প্রশ্ন জাগে, নারী কি মানুষ? কষ্টে বুকটা ফেটে যেতে চায়।

মিতুর অবস্থা এই ভাদ্র মাসের অতিবৃষ্টিতে বন্দি থাকা ঐ পায়রাগুলোর মতোই। বাপের বাড়ি গিয়ে ক’দিন যে বেড়িয়ে আসবে তারও উপায় নেই। বৃদ্ধ শাশুড়িকে একলা ফেলে নাইয়র যাওয়া চলে না। সে চলে গেলে কে তার দেখাশোনা করবে ? মনকে বোঝায় মিতু। নারীর জীবনই এমন।

ইদানীং মিতু কোথাও যায় না। সমস্ত দিনে একবারে জন্য নাজমাদের পুকুরে? তাও না। নিজেকে ব্যস্ত রাখতে সে সারাদিন কাজ করে। গোছানো ঘর সে আবার গোছায়, বার বার গোছায়। শাশুড়ির মাথায় তেল দিয়ে পাকা চুলগুলোকে চিরুনি দিয়ে আঁচড়ে দেয়। শাশুড়ির মুখে সে সেকালের গল্প শোনে।

শফিক নিয়ম করে প্রতিমাসে টাকা পাঠায়। হাত খরচ ছাড়া টাকাগুলো ব্যাংকেই তোলা থাকে। খরচের টাকার মধ্যে থেকেও মিতু কিছু টাকা জমিয়েছে। নবু চাচাকে বলে ঢেউটিন কিনে বাড়ির সামনে বেড়া দিয়েছে। এখন আর রাস্তা থেকে বাড়ির ভেতরের কিছু দেখা যায় না। বেড়া দেওয়ার কথা শুনে শফিক বলেছে,
-বেড়া দিতে হবে কেন ? মিতু কথা ঘুরিয়ে বলেছে,
-তুমি বিদেশে থাকো। আমরা দু’জন মাত্র প্রাণী। আমাদের বুঝি ভয় করে না।
-ভয়, কীসের ভয়? আমি চপলকে বলে দেব। ও মাঝে মাঝে তোমাদের খোঁজ খবর নেবে।
শফিকের মুখে এমন কথা শুনে মিতুর বুকের ভেতরটা ধক করে ওঠে। হর-বর করে বলে,
-না-না, চপল ভাইকে তুমি কিছু বলতে যেও না। যুবক মানুষ বাড়ির মধ্যে ঢুকলে লোকে মন্দ বলবে। তুমি শুধু একটু তাড়াতাড়ি ফিরে এসো।
-ওরে আমার বুদ্ধিমতি বউরে। বলে ক্ষাণিক নীরব থেকে ভেজা গলায় শফিক বলে,
-বউ, কতোদিন তোমার চাঁদ মুখটা দেখি না। দুনিয়ায় যদি কর্ম করতে না হতো তবে কী আর এই বিদেশে থাকতাম। তোমার আঁচল পেতে কাছে কাছেই থাকতাম।
কথাটা শুনে মিতুর চোখে জল এসে যায়। দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে সামলে নিতে চেষ্টা করে সে। স্বামীর অমন কথায় ক’জন নারী নিজেকে ঠিক রাখতে পারে ?
-কী হলো কথা বলছো না কেন?
-কী বলবো ?
-কিছু বলো।
-তুমি তাড়াতাড়ি ফিরে এসো।
-এইতো আর কয়টা মাত্র দিন। দেখতে দেখতেই কেটে যাবে।
ঘড়ির কাঁটা আর অপেক্ষার পল কখনও এক গতিতে চলে না। সময়ের গতির শ্রেণি এখানে অসংখ্য অগণিত। মিতুর মধ্যে আজ চলছে যে সময় তার গতির পরিমাপ কে করবে ?

বাড়ির সামনে বেড়া দেওয়ার ফলে চপলের দৌরাত্ম্য যে কিছুটা কমেছে তা কিন্তু নয়। রাতের আধাঁরে টিনের বেড়ার সাথে থাকা আমগাছ বেয়ে অথবা বাড়ির পেছন দিক দিয়ে অবলীলায় সে ভেতরে চলে আসে। জানালায় ঠুক ঠুক শব্দ করে। ফিসফিসিয়ে ডাকে,
-ভাবি, ও ভাবি। জানালাটা একটু খোলো। কতোদিন তোমারে দেখি না।
মিতু কথা বলে না। ভয়ে তার সমস্ত শরীর পাথরের মতো শক্ত হয়ে যায়। ভেতর থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে চপল কিছু সময়ের জন্য চলে যায় ঠিকই কিন্তু আবার ফিরে আসে, বার বার আসে। বিরক্ত করার এই ব্যাপারটা যে কতটা খারাপ পর্যায়ে গিয়ে পড়েছে তা আর বলে বোঝাবার নয়। সমস্ত রাত ধরে মিতুর গা কাঁপতে থাকে। কেবলি মনে হয় পশুটা বুঝি ফিরে আসবে।

মিতু সিন্ধান্ত নিয়েছে সে লড়বে। অবশ্যই লড়বে। এভাবে আর কতোদিন সে নিজেকে নিরাপদ রাখতে পারবে? মিতু দায়ে শান্ দেয়। বালিশের নিচে দা নিয়ে ঘুমায়। জানালার কাছে ফিসফিসিয়ে আওয়াজ হলেই ক্ষিপ্ত কন্ঠে উন্মাদের মতো বলে ওঠে,
-বেজম্মার বাচ্চা। বাঁচতে চাইলে এক্ষুণি চলে যা নইলে এক কোপে তোর গলা নামায়ে ফেলবো।
মিতুর চিৎকারে শাশুড়ি জেগে ওঠে।
-কী হইছে বউ, কী হইছে ?
কাঁপতে কাঁপতে মিতু শাশুড়িকে জড়িয়ে ধরে। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে জানালার দিকে তাকিয়ে থাকে।
-কী হইছে বউ, কথা কউ না কেন্ ?
-কিছু না আম্মা, দুঃস্বপ্ন দেখছি।
সমস্ত রাতে চোখে আর ঘুম নামে না। দুঃস্বপ্ন নামের এমন রাতগুলো মিতুকে নিঃশেষ করে দিতে চায়। থামিয়ে দিতে চায় জীবনের চাকা। মিতু আজ বেঁচে আছে কেবল শফিকের জন্য। মিতু জানে শফিক তাকে কতোটা ভালেবাসে। তাকে চোখ ভরে দেখবার জন্য, বুক জুড়ে কাছে পাবার জন্য স্বামী তার নিশ্চয় অধীর হয়ে আছে। এই পশুর ভয়ে সে কি তার স্বামীকে বঞ্চিত করতে পারে? তাকে বেঁচে থাকতে হবে। বেঁচে থাকতে হবে শফিকের একটি সুখী স্বপ্নের জন্য।

কালচক্রে এখন কার্তিক মাস। বাড়ির পেছনের সেই মাঠটি আবার তার স্বরূপ ফিরে পেতে শুরু করেছে। সাগর সমান পানি কোথায় গিয়ে যেন শুকিয়ে গেছে। চারিদিকে থকথকে নরম কাদা সৌর কিরণে দু’দিনেই শক্ত মাটির আকার ধারণ করছে। কৃষকরা তাই এখন কলাই, মুশুর আর সরিষা বুনতে ব্যস্ত। পায়রাগুলো আবার তার চিরাচরিত আকাশ ফিরে পেয়েছে। কেবল মিতু এখনও বন্দি। তার জীবনের বর্ষা কবে কাটবে তা সে জানে না। ওদিকে শফিক বলে দিয়েছে আসছে ঈদে সে বাড়ি ফিরতে পারবে না। মালিক ছুটি মঞ্জুর করে নি। দুশ্চিন্তা মিতুর সুন্দর চোখের নিচে এক পরত কাজল এঁকে দিয়েছে। রক্তাভ সেই টকটকে মুখখানা এখন সত্যিই ধূসর, ছাই-বর্ণ। শাশুড়ির শরীরটাও দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। ইদানীং শফিকের সাথে কেন যেন কথা বলতে ভালো লাগে না। প্রতিদিন ঐ একই ধরনের কথা বলতে মিতুর কষ্ট হয়। এভাবে আর কতো দিন নিজেকে জমিয়ে রাখতে পারবে সে।
ক’দিন থেকে মিতুর শাশুড়ি বেশ অসুস্থ। বিছানা ছেড়ে উঠতে পারে না। প্রয়োজনীয় কথা ছাড়া তেমন কোনো কথাও বলে না। মিতুর এখন এমন দশা যে কারো সাথে মন খুলে যে একটু কথা বলবে তারও উপায় নেই। সম্বল কেবল ঐ পায়রাগুলো। দিনের বেশির ভাগ সময়েই মিতু উঠানে পিঁড়ি পেতে বসে থাকে। হাতের মধ্যে থাকা ধানগুলো খাওয়ার লোভে পায়রাগুলো দল বেঁধে নামে। কাঁধের উপর, কখনও মাথার উপর এসে বসে। পাখা ঝাপটে কিসের যেন স্বান্তনা দিতে চায়।

মাঝে মাঝে পায়রাগুলো দল বেঁধে উড়ে খোলা মাঠে গিয়ে নামে। মাঠের খাবার খেতে তারা মত্ত হয়ে পড়ে। খুব সহজে বাড়ি ফিরতে চায় না। চিন্তিত চোখে মিতু পায়রা খুঁজতে বের হয়। দূর থেকে মিতুকে আসতে দেখে পায়রাগুলো কী বোঝে কে জানে। ঠিক-ঠিক উড়ে এসে কদম গাছের উপর বসে। মিতু শাসন করার ছলে বলে,
-মাঠের খাবার পেয়ে আমার কথা ভুলে গেছিস না ? ভুলবিই তো। মানুষই মনে রাখে না তোদের আর দোষ কী?
মিতুর অমন কথায় তারা কী বোঝে জানি না মাটির পাত্র থেকে পানি খেয়ে ঘরে গিয়ে বসে।

একদিন পায়রাগুলো তেমনি ভাবে মাঠে গিয়ে খেতে নেমেছে। বাড়ি ফিরছে না দেখে মিতু খুঁজতে বের হলো। দূরে মাঠের মধ্যে থাকা তাল গাছটির সামনে তারা দল বেঁধে নেমেছে। মিতু এগিয়ে যায়। দূর থেকে কালো ছায়ার মতো তালগাছটির নিচে একজন লোককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। আরো ক্ষাণিক এগিয়ে যেতে মিতু লোকটিকে চিনতে পারলো, চপল। মিতু ডানে বামে তাকিয়ে দেখলো, মাঠের মধ্যে ক্ষাণিক দূরে দূরে কৃষকরা কাজ করছে। কৃষকদের দেখে মিতুর মনে ক্ষাণিক সাহস হলো। সে আরো একটু সামনে এগিয়ে গেলো। চপল তার ছেলেকে কোলে নিয়ে তাল গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে আছে। মিতু মাটির একটি দলা তুলে পায়রাদের দিকে ছুঁড়ে দিতেই পায়রাগুলো একবার তার দিকে দেখে বাড়ির পথে উড়ে গেল। দুই তিনটা পায়রা তখনও মাঠের জমিতে খাবার খেতে ব্যস্ত। মিতু লক্ষ করলো চপল কোন ফাঁকে মঞ্জিলকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়েছে। ছেলেটি বেশ হাঁটতে শিখেছে। গুটি গুটি পায়ে বাবার চারপাশে হেঁটে বেড়াচ্ছে। মিতু চোখ তুলে চপলের দিকে তাকাতেই তার বুকের মধ্যে ধক করে উঠলো। চপলের চোখে সাক্ষাত শয়তানের দৃষ্টি। মিতুর হরিণী মন চকিতে সজাগ হয়ে উঠলো। আর এক মুহূর্তও দেরি না করে সে বাড়ির পথ ধরলো। লাট খাওয়া ঘুড়ির মতো টালমাটাল হয়ে চপল পেছন থেকে ডাকলো,
-ও ভাবি। চলে যাও না কী?
মিতু কোনো কথা না বলে হাঁটার গতি বাড়ালো। পেছন থেকে চপল বলে চললো,
-পায়রাগুলোর জন্য এতো মহব্বত? এই দুপুর বেলা মধ্য মাঠে চলে আসছো। আহারে আমার জন্য কেউ একটু মহব্বত করলো না।
বুনো শুকরের মতো গোঁৎ গোঁৎ শব্দ করে শুকনো একখ- মাটির দলা তুলে একটি পায়রার দিকে ছুঁড়ে মারতে পায়রাগুলো মিতুর চলার পথ অনুসরণ করলো।


ক’দিন হলো মিতুর পায়রাগুলো কুটো টানতে শুরু করেছে। ছেলে পায়রাগুলো মুখে করে কোথা থেকে যেন কুটো নিয়ে আসে আর মেয়ে পায়রাটি পরম স্নেহে বাসা তৈরি করে। পায়রাদের দিনকাল দেখতে মিতুর ভারি লাগে। এই সময়ে মানে কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসেই পায়রাগুলো সবচেয়ে বেশি বাচ্চা দেয়। মিতু দেখেছে প্রতিটি ঘরেই তারা ডিম পেড়েছে। পালা করে ডিমে তা’ও দিচ্ছে। যখন বাচ্চা ফোটার সময় হয়ে আসে তখন মেয়ে পায়রাটি ডিম ছেড়ে আর বের হয় না। বাচ্চা না ফোটা পর্যন্ত একটানা তা দিয়েই চলে। তখন তার সঙ্গী ছেলে পায়রাটা বাচ্চাদেরকে খাওয়ানোর মতো করে মেয়ে পায়রাটিকে খাইয়ে দেয়। ওদের অমন প্রেম দেখে মিতুর চোখে জল এসে যায়।

মিতু হিসেব করে দেখেছে মোট পাঁচ জোড়া বাচ্চা উঠেছে। বাচ্চাগুলোর খুব খিদে। সারাক্ষণই তারা খেতে চায়। বাচ্চাদের খাবার সংগ্রহ করতে তাদের মা-বাবা সারাদিন মাঠে-মাঠে ঘুরে বেড়ায়। মাঠে এখন অনেক খাবার। নবান্নের ধান উঠতে শুরু করেছে। কৃষকেরা ধান কাটার সময় উচ্ছিষ্ট হিসাবে যা ফেলে যায় পায়রাগুলো গভীর যত্নে সেই ধানগুলো মুখে তুলে নিয়ে আসে। নিজেরা খায়, বাচ্চাদের খাওয়ায়। নতুন ধান খেয়ে বাচ্চাগুলোর শরীরে খুব দ্রুত পালক গজাতে শুরু করেছে। কোনটি সাদা, কোনোটি কালো। কোনটি আবার সাদা কালো মেশানো।

সেদিন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমেছে কিন্তু পায়রাগুলো তখনও বাড়ি ফিরছে না দেখে মিতু মাঠের দিকে একটু এগিয়ে গেলো। ক্ষাণিক যেতেই দেখা গেলো, মধ্য মাঠের দিক থেকে পায়রাগুলো উড়ে আসছে। সবগুলো ঘরে ফিরেছে কিনা দেখতে যেয়ে মিতু বেশ হতাশ হলো। দু’টো পায়রা তখনও আসে নি। এদিকে মাগরিবের আজান শুরু হয়ে গেছে। ক্ষাণিক রাগের সাথে দুশ্চিন্তা শুরু হলো। পায়রাদের চোখ দিনের বেলা তীক্ষè হলেও রাতে তারা কিছুই দেখতে পায় না। এদিকে বাচ্চা দু’টো মা-বাবা কে না পেয়ে চিঁ চিঁ করে ডাকছে। আরও ঘণ্টা খানেক সময় পেরিয়ে গেলে উপায় না দেখে মিতু পায়রার ঘরের দরজা বন্ধ করে দিলো।

সকাল হয়েছে। মিতু পায়রাগুলোকে ছেড়ে দিয়ে উঠানে ধান ছড়িয়ে দিলো। সবগুলো পায়রাই ধান খেতে নেমেছে শুধু দু’টো ছাড়া। বাচ্চাগুলো ওদিকে চিঁ চিঁ শব্দে একটানা ডেকেই চলেছে। কী করবে মিতু ? ঘর থেকে কিছু চাল এনে বাচ্চাগুলোর ঠোঁট ফাঁকা করে খাইয়ে দিলো।

দুপুর পর্যন্ত পায়রা দুটোকে ফিরতে না দেখে মনের মধ্যে একটা কষ্ট নিয়েই মিতু বাড়ির অন্যান্য কাজে মন দিলো। শাশুড়িকে দুপুরের খাবার খাওয়ালো নিজে খেল তারপর বিছানায় একটু শুয়ে থাকলো। একটু তন্দ্রা মতো হচ্ছিলো। হঠাৎ টিনের চালে দুম করে একটা শব্দে তন্দ্রাটা কেটে গেলো। কীসের শব্দ ? হয়তো পায়রা দু’টো ফিরেছে। দ্রুত সে উঠানে নেমে এলো। কিন্তু এ কী ! টিনের চালের নিচে দু’টো পায়রা জড়সড় পড়ে আছে। দৌড়ে তাদের কাছে গেলো মিতু। কোমল হাতে তাদেরকে তুলে নিলো। কিন্তু না তাদের শরীরে তখন আর প্রাণ বলে কোনো কিছু নেই। চোখে জল এসে গেলো তার। ক্ষাণিক আগেই তো পায়রা দু’টোকে কদম গাছের ডালে বসে থাকতে দেখেছে। হঠাৎ করে কী হলো? বলতে না বলতেই কদম গাছ থেকে আরো কয়েকটি পায়রা উঠানে নেমে এলো। তাদের নেমে আসার ভঙ্গি দেখেই মিতু বুঝে গেলো এটা সাধারণ কোনো অবতরণ নয়। পায়রাগুলো কেমন যেন ঢলে ঢলে পড়ে যাচ্ছিলো। কী হচ্ছে এসব ? ভাবতে পারছে না মিতু। পাঁচ সাত মিনিটের মধ্যেই আরো চার পাঁচটি পায়রা মরে গেলো। ঘরের মধ্যে পাঁচ জোড়া বাচ্চা রয়েছে। এখন তাদের কী হবে ? পায়রার ঘরের সামনে উঁকি দিয়ে মিতুর মাথা ঘুরে উঠলো। বাচ্চাসহ পায়রাগুলো মরে পড়ে আছে। মিতু প্রায় চিৎকার করে কেঁদে উঠে। ছোট্ট ঘরের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে বাচ্চাসহ মরা পায়রাগুলো বের করে আনে।
-হায় আল্লাহ্ । এ কী হলো? এ কী হলো !
মিতুর চিৎকার শুনে ঘর থেকে শাশুড়ি বলে উঠলেন,
-বউ, ও বউ। কী হইছে? মিতু কাঁদতে কাঁদতে বললো,
-সর্বনাশ হয়ে গেছে আম্মা। পায়রাগুলো সব মরে গেছে।
-কউ কী বউ ? কথাটা বলে শাশুড়ি অসুস্থ শরীর নিয়েই ঘরে থেকে বেড়িয়ে এলেন। মরে পড়ে থাকা বাচ্চাগুলো দেখে বললেন,
-আহারে বাচ্চাগুলাও মরছে না ?
-হ্যাঁ মা।
-একটাও বাইচা নাই ?
-দু’টো বাচ্চা শুধু বেঁচে আছে। ওদের মা-বাবা কালকের পর থেকে আর ফিরে আসেনি।
মিতুর বাড়িতে যখন এমন একটি ব্যাপার চলছে ঠিক তখন বাইরে হট্টগোলের শব্দ শোনা গেলো।
-কী হইলো দেখোতো বউ। এতো গোল কীসের ?
মিতু ওরনায় চোখ মুছে টিনের দরজা খুলে রাস্তায় বের হলো। লোকজন ছোটাছুটি করছে। নাজমা আপাকে ছুটে আসতে দেখে মিতু তাকে থামালো। কী হয়েছে জিজ্ঞাসা করতে সে বললো,
-চপল ভাইয়ের ছেলে মঞ্জিল না কী মরে গেছে।
-বলেন কী আপা ?
-তাইতো শুনলাম। আহারে অমন রাজপুত্রের মতো ছেলেটা !
ব্যাপার কী দেখতে মিতুও নাজমা আপার সাথে চপলদের বাড়ির দিকে চললো।
চপলদের বাড়ির ভেতর অনেক মানুষ। চপলকে দেখা গেলো বারান্দায় চিৎ হয়ে শুয়ে আছে। দুই তিনজন লোক তার মাথায় পানি ঢালছে। ওদিকে মঞ্জিলের মা মুনা ভাবি চিৎকার করে কাঁদছে। মিতু আরও একটু এগিয়ে গেলো সামনে। বারান্দার এক পাশে খেজুর পাটির উপর মঞ্জিলের নিশ্চল ছোট্ট দেহটি পড়ে আছে। মুখমণ্ডল গাঢ় নীল বর্ণ। এমন ঘটনায় কোনো বিবেকবান মানুষ স্থির থাকতে পারে না। মিতুর চোখে জল এলো। সে মুনা ভাবির কাছে এগিয়ে গেলো। অমন ফুটফুটে একটি সন্তান যখন দুনিয়া ছেড়ে চলে যায় তখন মায়ের যে কী অবস্থা হয় তা একজন নারী না হলে বোঝা শক্ত। ভীড়ের মধ্যে থেকে কে একজন বললো,
-আহারে কেমনে মরলো?
-মুনা ভাবি চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
-আমার ছেলে মরে নাই। আপনেরা অমন কথা বইলেন না। ওঁঝা ডাকেন। আমার মঞ্জিলর মনে হয় সাপে কাঁটছে। ঘণ্টা খানেক আগেও আমার মঞ্জিল উঠোনে ছুটোছুটি করে খেলা করছে। একবার ঘরে ঢুকলো আর বাইর হইলো তার পর থেকেই কী যে হইলো। ও ভাই আপনের আমার ছেলেরে বাঁচান। ও আল্লাহ্ এ কী হইলো ? ও আল্লাহ্ এ কী হইলো ? ইতোমধ্যে মওলানা সাহেব চলে এসেছেন। ভীড় ঠেলে তিনি মঞ্জিলের কাছে চলে আসলেন। নাকের কাছে হাত রেখে, গলায় হাত রেখে বোঝার চেষ্টা করলেন এখনও আছে কী না ? নাহ্ প্রাণ বসবাসের কোনো লক্ষ্মণ দেহটির মধ্যে নেই। মওলানা সাহেব হাত পা উল্টে-পাল্টে পরীক্ষা করে দেখতে চেষ্টা করলেন সাপে কাঁটার কোনো চি‎হ্ন সেখানে আছে কী না।
-কোন ঘরের মধ্যে ঢুকছিলো ? জিজ্ঞেস করলেন মওলানা সাহেব।
একজন ঘরের দিকে হাত ইশারা করে দেখালো।
মওলানা সাহেব দুই জন লোক নিয়ে ঘরে ঢুকলেন। প্রত্যেকের হাতেই বাঁশের লাঠি। সমস্ত ঘর খুঁজে সাপের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া গেলো না। ঘরের কোণে মেঝেতে একটি বাটি দেখে মওলানা সাহেব এগিয়ে গেলেন সেখানে। দেখলেন বাটিতে কিছু মুশুর পানিতে ভেজানো রয়েছে। ভালো করে খেয়াল করে দেখলেন, বাটির চারিপাশে, মেঝেতে কিছু মুশুর পড়ে আছে। মওলানা সাহেব বাটিটা নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। জিজ্ঞেস করলেন,
-বাটির মধ্যে কী? চপলের চাচি উত্তর দিলো,
-হায় আল্লাহ্। চপল বাটির মধ্যে মুশুর এর সাথে বিশ মিশাইছিলো। মঞ্জিল কী ঐ মুশুর মুখে দিছিলো ? হায় আল্লাহ্ ঐ বিশ খেয়েই কি সর্বনাশ হইলো ? মওলানা সাহেব বললেন,
-মশুরে বিশ কেন?
-চপলের ক্ষেতে না কী পায়রা বসে। পায়রা মারার জন্য বিশ দিছে।
মওলানা সাহেব মঞ্জিলের নিথর দেহটির কাছে এগিয়ে গেলেন। মুখটাকে একটু ফাঁকা করতেই দেখা গেলো কতোগুলো মুশুর এখনও তার ছোট্ট মুখের মধ্য অবশিষ্ট রয়েছে।

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test