E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নাজনীন খলিল এর কবিতা

২০১৫ ডিসেম্বর ২৯ ১৭:২৬:৪৫
নাজনীন খলিল এর কবিতা







 

অশ্রুত সুর

তোমার আয়না অথবা জলবিম্বে নক্ষত্রের কোলাহল;

হাতের তালু থেকে এক নদী বিষাদ গড়াতে গড়াতে
মিশে গেছে সমুদ্রের নুনে।

রাত দ্বিপ্রহরের ঘন্টায় বেজে ওঠে নীলভায়োলীন
নীরবতার বাদামী খাম ছিঁড়ে
ইথারে ছড়িয়ে পড়ে
কালোগোলাপের তমসারণিত পাপড়িগুলো।
শব্দ ভাঙ্গছে
ভাঙ্গতে
ভাঙ্গতে
খুঁজে ফিরছে নতুন কোন বাক্যগ্রন্থি।

তার চেয়ে একটা ঝড় উঠুক প্রবল সামুদ্রিক
একখন্ড সমুদ্রই নাহয় ছিটকে উঠুক
ছড়িয়ে পড়ুক আকাশের পিঙ্গল অলিন্দে ।
তরঙ্গচূড়ার উত্তুঙ্গে কেঁপে ওঠে সশব্দ বর্ণমালা
উড়ুক্কু মাছের ঠোঁটে ঠোঁটে তারা সব
পৌঁছে যাবে মেঘের কানে কানে; গোপন চিঠির মতো।

চাঁদের পতাকাতলে বেজে গেল- অশ্রুত সানাই ।


লোডশেডিংয়ের রাত

হৃৎপিন্ডে মাইডাসের স্পর্শ চাইনা।
জীবন্ত হৃদয় কেন হবে শুধুমাত্র কঠিন এক স্বর্ণপিন্ড!
হৃদ্স্পন্দনের প্রতিটি শব্দ শুনতে চাই
আর
ছুঁয়ে দেখতে চাই
ছুরিকাঘাতে গড়িয়ে পড়া রক্তধারার উষ্ণতাটুকু।

জানালার দু'পাশের দৃশ্যাবলি আর একখন্ড আকাশ
সাথে নিয়ে, ছুটে যাচ্ছে দ্রুতগামী ট্রেন।
ক্রমশঃ মিলিয়ে যায় তীব্র হুইসেলের শব্দ;
পেছনে পড়ে থাকে
পরিত্যক্ত প্ল্যাটফরমের দীর্ঘশ্বাস।

আজ সারাদিন খুব ঘুম ঘুম নির্জনতা
মেঘের মতো ছায়া ফেলেছিল।
বুকের ভেতরে খুব ছড়ানো ছিল ,ভিজে হাওয়ার কুয়াশা।
নীলখাতার কোথায় কতোটা হয়ে গেছে আরো গাঢ়নীল
দেখতে চাইনি,
জানি
যতই খন্ডিত করা হোক আকাশ
নীল সেই নীলইতো ; প্রখর অথবা ম্লান।

এক ঘর অন্ধকারের গ্রাসের ভেতর
বাতাসের প্রবল হতাশ্বাস বয়ে যায়
টুং টাং বেজে ওঠে আলো নেভা ঝাড়বাতি;

আলো জ্বলবে কি জ্বলবেনা
ভাবতে
ভাবতেই মনে পড়লো
আজ আবার এক তমসাঘেরা লোডশেডিংয়ের রাত।


এতোটা বিষাদ ছিল

এতোটা বিষাদ মেখে না নিলে কোনদিনও জানা হতোনা
সব বিষন্নবিষ মুছে ফেলা যায় পাখির পালকে।

কোন মাঝরাতের ভয়াল কোলাহলে ঘুম ভেঙ্গে গেলে
রাতজাগা পাখিটাকে খুঁজি;
কান পেতে থাকি পাখসাটে।প্রিয় পাখি।

আজ আবার আকাশের মন ভার হলো খুব
তবু বৃষ্টি হলোনা;
নিমের চিকন পাতায়, ডালে
একরাশ ঝিরিঝিরি অন্ধকার নেমে আসে।
ছাদের আলসেয় একাকি বসে থাকা কাক
'খা, খা' চিৎকারে জানিয়ে দিল
তারও প্রিয় নয় অবেলার এই বিষাদআঁধার ।

এতোটা বিষাদে ডুবে না গেলে কোনদিনও জানা হতোনা
সমুদ্রস্নানে সেরে যায় হাজার অসুখ ;
দেখা হতো না- তরঙ্গচূড়ায় দুঃখগুলো কেমন সোনালি হয়ে ওঠে,
স্রোতে মেশা এমন বেলির সুবাস- চেনা হতোনা।

এতোটা বিষাদ ছিল বলেই
আবার ফিরে আসা;
প্রিয় পাখি এবং সমুদ্র...


ইউফোরিয়া

শেষরাতে যখন চন্দনবনের পাপিয়া ডেকে ওঠে, 'পিউ কাঁহা, পিউ কাঁহা ' বোলে; এক অদ্ভুত- অলৌকিক সৌরভে প্লাবিত হয়ে যায় এই ঘর।মনে হয় যেন হাজার বছর এই সুগন্ধটুকুরই অপেক্ষায় ছিলাম।সারা ঘর আঁতিপাঁতি করে খুঁজতে থাকি সেই মহার্ঘ্য ফুলদানিটি, যেখানে সাজিয়ে রাখা যায় এই বহুমূল্য পারফিউম; যা প্রবাহিত হচ্ছে শরীরের রন্দ্রে রন্দ্রে যুগপৎ আগুন এক অদ্ভুত বিভঙ্গে নেচে যায় দোলনাঘরের পরী।ঠোঁটের কাছে ধরে রাখা পানপাত্রে মোহময় অমৃত।

মন খুব ভাল আজ ;সবুজ ঘাসের বুকে নেচে যাওয়া আরো প্রগাঢ়সবুজ ফড়িংয়ের মতো ।

একটি বহুবর্ণ প্রজাপতি উড়ে যেতে যেতে হাতের তালুতে এঁকে গেল পিতলরং শুভেচ্ছাবাণি। মন খুব ভাল।

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test