E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কবি নাজমুল হক নজীর এর কবিতা

২০১৬ জানুয়ারি ০৪ ১১:২০:২১
কবি নাজমুল হক নজীর এর কবিতা






 

তীর্থে চলো সুদর্শন

যখনই কিছু বলতে যাই তুমি শুধু রাঙাও চোখ
মনে হয় আজ তাবৎ পৃথিবীর পরিত্রাণের ভাষা
আমার কাঁধে তুলে দিয়েছে সমস্ত লোক।
আমি যেন যীশু, বুদ্ধ কৃষ্ণ মোহাম্মদ কিংবা মুসা
সংস্কারে নামবো ভাঙ্গবো আঁধার সব !

আমি তো কবি হাতে দন্ড নেই, দন্ডাদেশ নেই
দেখি লোকালয় জুড়ে কেবলি কোলাহল কলরব
শকুনের পাখার শব্দ ছাড়া আর কিছু নেই ।

আমি বলতে পারবো না নুহের প্লাবন হবে কী, আর
কুরুপান্ডব যুদ্ধ, রুক্ত নামবে কী না ফোরাতের তীরে
তবু বুঝি একটা কিছু হবে এবং হওয়া দরকার
শুদ্ধি অভিযানে সুদর্শন হাসবে ঘরে ঘরে।

দীর্ঘকাল অনাবৃষ্টি

আজ তো আমার সেই সময় যখন জন্মদাতাকে
মনে হয় পরম শুত্রু
কামুক রমনীর কাছে
মুখোস্ত করতে হয় ভালবাসার পাঠ।

এ সময় আমাকে কেউ কবিতা লিখেতে বলো না
আজ তো দেশপ্রেম আনে শ্লোগানের ভাষা
বিদ্যালয় শেখায় শব ব্যবচ্ছেদ
মানুষেরা চোখে দেখে না
রঙিন চশমা ছাড়া
তুচ্ছ আজ সভ্যতা রক্ষায় প্রজনন।

এ সময় আমাকে কেউ কবিতা লিখতে বলো না
আমি তো ভুলে গেছি গীতিকবিতায় সন্বোধন
আমি তো ভুলে গেছি বনে বনে পাখির শিস
ঝর্ণা জলের বাঙময়
ভালবাসার মতো ত্রিপল্লীর মাধবীকে
আজ আর মনে পড়ে না একদম মনে পড়ে না।

এ সময় কবিতা হবে একেবারে গদ্যময়
শব্দ হবে গ্রেনেড ফাটার মতো সুন্দর
এ সময়ের তাই শ্রেষ্ঠ কবি হিটলার।


মাছরাঙা

মাছরাঙা স্বপ্ন পড়ে আছে নদী তটে
দখিণা বাতাস জায়গা বদল করে
বধ্যভূমে
গুন্ডা ছেলেরা বলে বেড়ায় সুন্দর দিগম্বর।

আপনারা হয়তো খবর রাখেন
নেত্রীর আজকের সফর তালিকা
উপদ্রুত অঞ্চলে
কতোবার নামবে উঠবে বাসনার বিমান
ত্রাণসামগ্রী ঘোষণার অনবদ্য পাঠ।

অথচ বাংলাদেশ জানে না তৃতীয় বিশ্বে
কেমন আছে
বেহুলা লক্ষ্মীন্দর।


শহীদ মিনার

ভন্ডরা বলে তুই ইট বালি নিকষ পাথর
আমি বলি তোকে অশোক স্তম্ভ
খোদিত ওইখানে বাংলার সিংহ শাবক।

আমি বলি শোকের প্রচ- গর্জন
শকুন তাড়ানো শালগ্রাম শিলা
শুনি অহিংসার পদাবলী, একজন বুদ্ধ দাঁড়িয়ে
ইতিহাস আর পুরাণ
আমি বলি আদিম সেই পাঠ।

ভ-রা বলে তুই ইট বালি বোবা পাথর
আমি দেখি উনচল্লিশ সওজোয়ান
আমাকে দিয়েছে অনন্ত যৌবন
আমাকে নিয়েছে বহুদুর
আপন স্বরগ্রাম।
যেখানে আমার যাবার, আজন্ম সাহস।


সেই নুপুর

তোমার জন্য দুঃখ হয় আমার হলে না তুমি
তৃষ্ণার ভেতর এতো চাষবাস
হৃৎপিন্ডে চড়ালে পেশীর কতো যে কাঁপন
বুকে রাখলে বুক আমার হলে না তবু।

যুবকেরা নগ্ন ছবি দেখে মিটিয়েছে সাধ
ঘুম ভেঙ্গে নাবালকেরা বলেছে তোমার নাম,
প্রবীণেরা আফসোসে কেবল ফাটায়েছে বুক
চারিত পাখির মতো বলেছে কতোবার
কোথায় নামই বলো এই বয়সের ভার।

জানি না তবু কোনো শরীর হলে না নুপুর
স্বপ্নের ভেতরে চষে স্বজনের আবাস নিবাস
বুকে রাখল বুক
তবু আমার হলে না তুমি।

বন্টন দলিলের শর্তাবলী

কেবল কষ্টগুলো পুরোটাই এই ভাগে
সুখগুলো থাক তোমার,
স্বপ্নের পালকি চড়ে আমি আসি যাই
শরীরটা যে তোমার।

জোছনার আকাশ সবটুকু তোমার থাক
আমার জানালার গ্রিল,
কদম্ব তলায় তুমিই বীজ পুতে রাখো
আমার সবুজ মিছিল।

গোলাপের কানে তুমি বলো সব কথা
আমার জন্য যে ডাল,
চোখ খোলা থাক, চুম্বনে সোহাগে
তুমি হবে শুধু লাল।

যেমন ইচ্ছে রাখো ওই শাড়ির আঁচল
শুধু দক্ষিণে আমি,
নুপুর বাজিয়ে যতো ইচ্ছে নাচো গাও
নাটাই ঘোরাবো আমি।


শোক বয়ে যাই

বুকের পাঁজর খুলে দিচ্ছি
বানাও তরবারি,
অনেক শোকের ভেতর থেকেও
একটু যদি হাসতে পারি।

চোখ দু’টো তো লাল হয়েছে
হাজার চোখেল জন্য,
এই তো হৃদয় বিলিয়ে দিলাম
তোমার পাবার জন্য।

আমি জানি বুকের আগুন
ব্যথার আগুন বড়,
সেই আগুনের অগ্নিদাহে
দেশের মানুষ জড়ো।

ক্রোধের মানুষ কান্নার মানুষ
নির্যাতিত উল্লাস করে,
রাজপথে দাবীর মিছিল
কে ঠেকাতে পারে!

মানুষের ছায়া পেলে

একদা গোলাপকে বললাম বড়ো হবো
বললো সে-
দু’হাতে ছুঁয়ে যাও মাধবীর শরীর।

একদা মাকে বললাম বড় হবো
বললো সে-
মানচিত্র আগলে নাও বুকের ভেতর।

একদা নদীকে বললাম বড় হবো
বললো সে-
আবাদ করো এই উত্তাল জনপদ।

এই ভাবে পাখি আকাশ চাঁদ
শুধাই যতোবার
ততোবার-ই বলে
মানুষের ছায়া পেলে তুমি বড় হবে।


যদি ফিরে আসে

যদি সে ফিরে আসে ঠিকানায়
ভেঙ্গে ভুল
কিম্বা একান্ত ভালবাসায়
এমন কি খেয়ালের বশে।

তাহলে তারে ডেকে বলে দিওঃ মিলন
এই নাও কাস্তে শাবল
প্রয়োজনীয় খড়কুটো
রাস্তার দু’ধারে গড়ো দেবলায়।

আত্মকাহিনী ও সুসংবাদ

অন্ধের কাছে ক্লিওপেট্রাও অন্ধকার
মাধবীর বেণী গোখরো সাপ
রোদে ভিজে ভিজে যতেই করুক স্নান,
রাজপুত্তুর আনে নোনা জল
মধ্যাহ্নের সূর্য তাই বয়ে যায় পাপ।
অতএব বিনীত প্রার্থনা আর অন্ধ কোরো না
মাধবী কে দেখি চাঁদ সভায়
আর এই বাঙলায়
দিবালোকে দেখি অজ¯্র মানুষ
কেবলি শংকাহীন।


প্রেম বিজ্ঞাপ্তি

প্রেম দেবে না শ্রীমতি
রাঙাও কেনো চোখ,
চোখ টিপে জড়ো করবো
সাত গাঁয়ের লোক।

কসমেটিকে যতোই সাজে
যোগ বিয়োগ গুণ ভাগ,
মুখ থেকে যায়নি মুছে
আমার চুমুর দাগ।

আবার ছাড়পত্র

একদিন ভালবেসে কমলা গলায় দিয়েছিলো বকুল
এখনো সেই আমিরুল
বকুল ঘ্রাণে
তাই চুমু খায় বার বার।

মাতৃগর্ভের দশ মাস দশ দিন
এখনো সেই কমলা
কোনো মা এলো
স্বদেশের মতো নতজানু করে তার মাথা।

তুমি দিলে লাল সূর্য খচিত প্রিয় পতাকা
তুমি দিলে প্রিয়তম স্বাধীনতা
আরো দিলে
জন্মে জন্মে কাঁধে রাখার কঠিন গুরুভার।

অথচ অদ্ভূত অন্ধকারে আজ মগ্ন এই দেশ
দিয়াশলই কাঠি জ্বালাতে তাই
ডজন ডজন সুকান্ত চাই
শেকল ভাংতে চাই
আরো আরো বিদ্রোহী নজরুল।


নোনা জলের বাসিন্দা

ফুল ফুটেছে, জোছনায় ফর্সা আকাশ
কোকিল গাইছে গান
তবু আমি বলতে পারিনা আজ বসন্ত
বলতে পারি না এখন যৌবনকাল।

শকুন দৃষ্টিতে আজও প্রচ- খরা
কসাইয়ের পদচারণায় লন্ডভন্ড বাগান
রাজপথে হট্টগোল
সংসদে সভায় হাতাহাতি,
একমাত্র এফডিসি ছাড়া
কোথাও শুনি না ভালবাসার কোনো গান।

ফুল ফুটেছে জোসনায় কতো ফর্সা আকাশ
তবু আমি বলতে পারিনা আজ বসন্ত
বলতে পারিনা এখন যৌবনকাল।

কারাগারের গোলাপে উদোম শরীর ছাড়া
কোনো ছন্দ নেই।
ঘণিকা জোননায় উজ্জ্বলতা ছাড়া
গৃহপালিত হয় না।
কোলাহলের ভেতর মরমী কন্ঠের ভাটিয়ালী
কেবলি যন্ত্রণা ধ্বনিত হয়।

ফুল ফুটেছে জোসনা ভরা আকাশ
কোকিল গাইছে গলা ছেড়ে গান
তবু আামি বলতে পারি না বসন্ত,
এই দেশে কী শুধু প্রেমিকার আকাল!


কথা ছিলো

কথা ছিলো রাত পোহালে ডাকবো
ঘুম ভাঙ্গলো
মানুষের কোলাহলে।

কথা ছিলো গান গাইবো
মিছিলের কথাগুলি
গান হয়ে ফিরে আসে।

কথা ছিলো জোয়ার এলো ভাসাবো নাও
প্লাবনে ভেসে গেল ঘর
হাতের বৈঠা মুড়ো ঝাড়ন।

কথা ছিলো ফুল দেবো
তুমি আসোনি পাখি ডাকেনি
ফোটেনি কোনো গোলাপ।

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test