E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

'হারামজাদা বসেই আছে তোমার জন্যে রফিক আজাদ'

২০১৬ মার্চ ১৩ ১২:২৯:০১
'হারামজাদা বসেই আছে তোমার জন্যে রফিক আজাদ'






 

অমিত গোস্বামী

কবি রফিক আজাদ নেই। মন ভালো নেই তাই। ভাল থাকুন তিনি যেখানেই থাকুন।
আমি জানতাম তিনি থাকবেন না। ফিরবেন না সুস্থ্য হয়ে। লাইফ সাপোর্টের ওপর নির্ভর করে কত দিন বাঁচা যায়। বন্ধু ডাক্তার কবি আশরাফ জুয়েল একটা আন্দাজ দিয়েছিলেন। হাসপাতালে দেখার জন্যে গিয়েছিলাম গত ৪ ফেব্রুয়ারি। আই টি ইউয়ের গভীরে তার অবস্থান। পরোয়ানা চাই, কিন্তু অনুমতি নাই। দূর থেকে দেখলাম তাকে। নলের ঘেরাটোপে বন্দী।
তার সাথে প্রথম আলাপ ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪। ঢাকা জাতীয় উৎসবের সন্ধ্যার পার্টিতে। ঢাকা ক্লাবে। 'কবিতা ল্যাখো? ক্যানো ল্যাখো?' প্রশ্নটার সামনে থতমত খেয়ে গেলাম। শ্রীজাত পাশ থেকে আস্তে সটকে গেল। হাতে পানীয় পাত্র। সামনে রফিক আজাদ। 'লিখি কারন লিখতে হয় বলে, না লিখে যে থাকতে পারি না'। বোকাবোকা উত্তর দিলাম।
'মদ খাচ্ছো কেন?'
'উপভোগ করার জন্যে'
'ঠিক, মদ যেমন এনজয় করার জন্যে খাচ্ছো, কবিতাও তেমন এনজয় করার জন্যে লিখবে। দুটোই যেন সলিড কিক মারে মাথায়'
পাশের টেবিলে শঙ্কিত শ্যামলদা (শ্যামল কান্তি দাস), পিতাসমান মৃণালদা (মৃণাল বসু চৌধুরী) বর্তমানে লোকান্তরিত উত্তমদা (উত্তম দাশ) বাংলাদেশের অন্য কবিদের সাথে বসেছেন আর আমাকে প্রম্পট করছেন - ওই টেবিল থেকে ওঠ, না হলে তোকে হোটেলে নিয়ে যেতে পারবো না। ইতিমধ্যে শ্রীজাত ফিরে এসে পাশে বসেছে। হঠাৎবললেন - আমার কবিতা পড়েছো? উত্তরের অপেক্ষা না করে বলে উঠলেন -
ভীষন ক্ষুধার্ত আছি উদরে, শারীরবৃত্ত ব্যেপে
অনুভূত হতে থাকে - প্রতিপলে - সর্বগ্রাসী ক্ষুধা
অনাবৃষ্টি যেমন চরিত্রের শস্যক্ষেত্রে জ্বেলে দেয়
প্রভূত দাহন - তেমনি ক্ষুধার জ্বালা, জ্বলে দেহ
দু'বেলা দু'মুঠো পেলে মোটে নেই অন্য কোনও দাবি
অনেক অনেক-কিছু চেয়ে নিয়েছে, সকলেই চায়
বাড়ি, গাড়ী, টাকাকড়ি- কারো বা খ্যাতির লোভআছে;
আমার সামান্য দাবি পুড়ে যাচ্ছে পেটেরপ্রান্তর-
ভাত চাই-এই চাওয়া সরাসরি - ঠান্ডা বা গরম,
সরূ বা দারুণ মোটা রেশনের লাল চাল হ'লে
কোনো ক্ষতি নেই
মাটির শানকি ভর্তি ভাতচাই
দু'বেলা দু'মুঠো পেলে ছেড়ে দেবো অন্য সব দাবি........
গলা পানীয়ের প্রভাবে একটু উচ্চকন্ঠে উঠে গিয়েছিল তার। আরেক বিখ্যাত কবি সৈয়দ সামসুল হক ডাকলেন তাঁকে। উঠে গেলেন। শ্রীজাত আর আমি শুধু তাকিয়ে থাকলাম পরস্পরের দিকে। ইসস, এমন কবিতা কবির মুখে শুনতে পেলাম না পুরোটা! একটু পরে দূর থেকে হাত দেখালেন - বোসো, আসছি। বেশ কিছুক্ষন পরে এসে বললেন - এখনো তোমরা বসে আছো আমার জন্যে?
একটু আগে একটা টিস্যু পেপারে দুই লাইন লিখেছিলাম তাকে পাঠাবো বলে। সেটা দেখে দেখে বললাম তাকে -

"মানচিত্র গুটিয়ে নিলাম, সাজিয়ে দিলাম একথালা ভাত,
হারামজাদা বসেই আছে তোমার জন্যে রফিক আজাদ"

হা হা হা শব্দে কেঁপে উঠল দেওয়াল। দিলারা ভাবী ছুটে এলেন। আরো কয়েকজন কবি। রফিক আজাদকে সামলানো যাচ্ছে না, তিনি ঘুরে ঘুরে আমার লেখা দুই লাইন পড়ছেন আর সবাই আমার দিকে তাকাচ্ছেন।
শ্যামলদা কানের পাশে মুখ রেখে বললেন - বলেছিলান তোমায় রফিক আজাদের পাল্লায় পোড়ো না।
আমি উত্তর দিলাম - কি করবো শ্যামলদা, পাল্লায় নয়, আমি যে রফিক আজাদের প্রেমে পড়ে গেছি।


(ওএস/এস/মার্চ১৩,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test