E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আমি কীভাবে স্বাধীনতা হারালাম

২০১৬ এপ্রিল ১২ ১৩:৫০:৩২
আমি কীভাবে স্বাধীনতা হারালাম

খালেদ হামিদী : এডওয়ার্ড অ্যালবি কর্মস্থলে আসা-যাওয়ার পথে, ট্রেনে, প্রচ- ভিড়ের মধ্যে, এক হাতে হাতল ধরে দাঁড়িয়ে, আরেক হাতে বই খুলে পড়েন ওয়ার অ্যান্ড পিস। অমন আশ্চর্য পাঠক যে আমি হয়ে উঠিনি তা টের পাই, প্রথমবারের মতো ঘর কিংবা গ্রন্থাগারের বাইরে, ৫ এপ্রিল ’১৪ সকাল পৌনে আটটার দিকে, আমার শিশুকন্যার স্কুলের সামনে, ঈষৎ মেঘলা আকাশের নিচে, ফুটওভার ব্রিজের সিঁড়িতে বসে, মজিদ মাহমুদের মাহফুজামঙ্গল-এর মাহফুজামঙ্গল উত্তরখ- পড়তে শুরু করে।

কিন্তু পড়া এগিয়ে নিতে নিতে পাঠনিষ্ঠার গভীর তৃপ্তি সঞ্চারিত হয় আমার চেতনায়। পড়ুয়া হিসেবে অ্যালবির যোগ্য না হলেও তাঁর ঢের দূরের অনুজরূপে নিজেকে চিনে নিতে আমাকে সহায়তা করেন আলোচ্য গ্রন্থের প্রণেতা, কবি মজিদ মাহমুদ। ধাবমান যানবাহনসমূহের আওয়াজ এবং বায়ুদূষণ আমার পাঠে কোনোই ব্যাঘাত ঘটায় না।

উল্লিখিত দূষণ এড়াতে আমার নাকে-মুখে ব্যবহৃত মাস্ক আর নাসিকার ওপর স্থাপিত রিডিং গ্লাসেসই আমাকে নিশ্চিন্ত পাঠকে পরিণত করে কেবল নয়, বইটির নদী কবিতাটি ওই অবস্থায়ও আমাকে, সম্পূর্ণ পরিশ্রুত করে। সত্তার অতল থেকে দুই চোখে উঠে আসে জল। সেই সঙ্গে অনুতাপ হয়, গেলো পঁচিশ বছরেও কেন আমার পড়া হয় না মজিদ মাহমুদের এই অসামান্য মর্মবেদ! অথচ তিনি আমার সমসাময়িক, অর্থাৎ আশির দশকেরই কবি। সকাল সাড়ে দশটার দিকে কন্যার স্কুল ছুটির খানিক আগে কবিকে সেল ফোনে কল করে নিজের এই সন্তাপ এবং লজ্জার কথা জানিয়েও ফেলি। কিন্তু ফোন করায় পাঠতৃষ্ণা ফুরায় না।

৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় পড়তে শুরু-করা বইটির পাঠ শেষ হয় পরের দিন রাতে। বইটির মাহফুজামঙ্গল পূর্ব ও উত্তরখ- হয়ে তৃতীয় ও শেষ অংশ যুদ্ধমঙ্গলকাব্য অব্দি বাঙালির কেবল নয়, সমগ্র দলিত মানবজাতিরই দূর অতীত থেকে ভবিতব্য পর্যন্ত অভিব্যঞ্জিত করে তোলেন মজিদ মাহমুদ। মানুষের সঙ্গে নিসর্গের সেই দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক শুধু নয়, ইতিহাস এবং আর্থ-রাজনীতিক-রাষ্ট্রিক-সামাজিক চলমান বাস্তবতার ভেতর দিয়ে গিয়ে কবি বিরাট মানবগোষ্ঠির সংগ্রামমুখর অভিযাত্রার কাব্যানুবাদে সক্ষম হয়ে ওঠেন এই গ্রন্থে।

নদী কবিতাটি কেন বিশেষভাবে অসাধারণ? বহুলকথিত রাবীন্দ্রিক পথিকচিত্ততা নয়, ঠিক জীবনানন্দীয় নাবিকবৃত্তিও না, মুহূর্তে সারা জীবনকে দেখে ফেলার অসংখ্য-অথচ-অনির্দিষ্ট স্মৃতি-জাগানিয়া এক গভীরতম আনন্দের বেদনা অথবা বেদনার আনন্দ অনুভবে বেজে ওঠে, এই কবিতা পাঠে। এবং চিত্রকল্প-দৃশ্যকল্পের অবারিত সৌন্দর্য এক তীব্রতম মায়া সৃষ্টি করে আর এতৎজনিত কেমন এক কষ্টে পানি চলে আসে পাঠকের চোখে। পুরো কবিতাটাই আবার পড়তে হয় :

সুউচ্চ পর্বতের শিখর থেকে গড়িয়ে পড়ার আগে/তুমি পাদদেশে নদী বিছিয়ে দিয়েছিলে মাহফুজা/আজ সবাই শুনছে সেই জলপ্রপাতের শব্দ/নদীর তীর ঘেঁষে জেগে উঠছে অসংখ্য বসতি/ডিমের ভেতর থেকে চঞ্চুতে কষ্ট নিয়ে পাখি উড়ে যাচ্ছে/কিন্তু কেউ দেখছে না পানির নিচে বিছিয়ে দেয়া/তোমার কোমল করতল আমাকে মাছের মতো/ভাসিয়ে রেখেছে (নদী; মাহফুজামঙ্গল)

ভূমিষ্ঠ হবার আগেও মানুষ মাতৃগর্ভে পানির ওপরে ভাসে। এই স্মৃতিহীন স্মৃতিকেও কি সামনে নিয়ে আসে এই কবিতা? জগতেও বেঁচে থাকাটা আসলে ভেসে থাকার মতোই। হাজারো স্মৃতি যখন মুহূর্তে জীবনকে অনন্ত করে তোলে তখন বুঝতে পারা যায়, কালের তরঙ্গে এবং, একই সঙ্গে গর্ভে, জীবন আসলেই ভাসমান। কিন্তু ওই কোমল করতল কার? একাধিক সম্ভাবনা উল্লেখ না করেও কবি একে বহুমাত্রিক করে তোলেন। এই বিনম্র করতল প্রেয়সীর শুধু নয়, তা মায়ের এবং এমনকি ভূপ্রকৃতি বা অদৃশ্য বিধাতারও হতে পারে। কিন্তু এই উপলব্ধি উপহার দিয়েই কি দায় সারেন কবি? না। বইয়ের পূর্বখণ্ডে মাহফুজাকে সেই বাংলা মঙ্গলকাব্যের সমান্তরাল নতুন কোনো দেবী মনে হওয়ার পরিবর্তে খানিকটা স্বয়ং স্রষ্টা বলেই প্রতীয়মান হয়। কিন্তু লক্ষযোগ্য, ক্রমান্বয়ে ঘটে মাহফুজার মানবিকীকরণ। পূর্বখ- থেকেই অনিবার্য হয় মাহফুজার দ্বান্দ্বিক উপস্থিতি।

মজিদ যখন বলেন- তোমার তো সব ছিল মাহফুজা/তোমার এক্সপেনসিভ পানের জন্য/জমা আছে পেট্রো-ডলার/তোমার আছে বেগিন ব্রেজনেভ রিগান (তোমারই মানুষ; ঐ),

তখন মাহফুজা হয়ে ওঠে বিশ্বপুঁজির দোসর বা দ্বিতীয় ভগবতী। আর,
একাত্তরের কালো রাত্রি এখনও আমার বৃুকের ওপর ধরে আছে ছুরি/তবু তোমাকে ভুলিনি মাহফুজা (মাহফুজা; ঐ)
-কবির এই উচ্চারণ মাত্রই মাহফুজা পরিণত হয় হৃত প্রেম কিংবা পুঁজিকবলিত স্বপ্নের আরেক নামে। উত্তরখণ্ডে : অনেক ভুল মানুষের সঙ্গে আলিঙ্গন করেছি/আমার জীবন অসংখ্য অপ্রত্যাশিত ঘটনায় ভরা (হারানো গল্প; ঐ)
এই স্বীকারোক্তিমূলক অনুশোচনার পর গল্প কবিতায় তিনি পুঁজিবাদি বিশ্বরাজনীতির ব্যাপকতর পরিসরে ঢুকে পড়েন আর বলেন :
তবু বহুমাত্রিক সভ্যতা আমাদের দিয়েছে বিচ্ছেদ।
অতঃপর,
আমরা তোমার অসংখ্য নিঃসঙ্গতার পুত্র (নিঃসঙ্গতার পুত্র; ঐ)
বলেই জানান :
অসংখ্য বিষকাঁটা তোমার বেদিতে/ছড়িয়ে দিয়েছি পূজার উপাচারে । (বিষকাঁটা; ঐ)
তারপর খোদ মাহফুজাকেই বলেন :
আমরা ছিলাম জমজ ভাইবোন। (হেয়ারলিপস; ঐ)
এরও পরে কল্পিত-পরিচিত বিধাতাকেই বলার স্বরে এই উচ্চারণে নির্দ্বিধ হন : তবু এক অসীম শূন্যতায় বিদীর্ণ হলে তুমি/সেই নিঃসঙ্গতা তোমার ভূষণ/ষষ্ঠ দিবসে নিজেকে আবিষ্কার করলে আমার ভেতর/অথচ অর্ধেক দিলে তুমি সৃষ্টির ক্ষমতা/বাকি অর্ধেক রেখেছ মাহফুজার ভেতর। (পয়দায়েশ; ঐ)

এভাবে মাহফুজা ঐশ্বরিক কৃপা থেকে ক্রমান্বয়ে মাতৃস্নেহ, বোনের মমতা, প্রিয়ার প্রেম কিংবা প্রেয়সী-স্ত্রী নির্বিশেষে নারীর কামের রূপকে ভাস্বর হয়ে ওঠে। মাহফুজা আসলে স্মৃতি, জীবন-জগতের শক্তি এবং স্বপ্নের নাম। এই স্বপ্ন বঞ্চিতের বলেই মজিদ মাহমুদকে লিখতে হয় যুদ্ধমঙ্গলকাব্য। এর আগে উপর্যুক্ত উত্তরখণ্ডে মাহফুজার আরো নানা মাত্রিক উপস্থিতির সাথে আমরা পরিচিত হতে পারি :
তুমি জাগিয়ে দাও আমাদের ভেতরের মেয়েমানুষ (আদ্যাক্ষর; ঐ)
তুমি আবার একটি পতাকার তলে তাদের স্বপ্ন পল্লবিত করে/মানুষের সন্তানদের করে আনো ঘরের বাহির (প্রোলেতারিয়েত ওম; ঐ)
আদতে তুমি একটি কারখানার ভেতর বেড়ে উঠেছিলে/পাঁজরের অস্থি নিয়ে আমিও অন্ধকারে খেলছিলাম (কারখানা; ঐ)
তুমিই তো ছিলে আমার শৈশবে মাতৃসঙ্গ আর যৌবনে বৈবাহিক অবস্থা (আশ্রয়; ঐ)
আমার পতন আর তোমার উত্থানের মতো/বিভাজিত ঈশ্বরের মতো/তুমি আমাদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছ মাহফুজা (পতনের মতো; ঐ)
মাহফুজা এবার আমি গ্রহণ করেছি ধর্মং শরণং গচ্ছামি; মাহফুজাং শরণং গচ্ছামি/নির্বাণ শরণং গচ্ছামি (মাহফুজাং শরণং গচ্ছামি; ঐ)
যদিও তোমার গর্ভ থেকে উৎপন্ন আমরা সবাই/তবু আমাকেই দিয়েছে তুমি রাজার নিয়তি (রাজা; ঐ)

তাছাড়া এ পর্যায়ে চারপাশ কবিতায় মাহফুজাকে তাকিয়ে দেখতে বলা হয় :
বিশ্বায়নে বেচে দেয়া আমাদের কন্যাদের যৌবনগুলো/নেতাদের পকেটে হারিয়ে যাওয়া আমাদের দেশগুলো।

মাহফুজার নাম উচ্চারিত হয়নি কথা বা বাক্যাংশের পুনরাবৃত্তিময় এমন আরো কিছু কবিতার পাশাপাশি সঙ্গে থাকবে কবিতায় মজিদ মাহমুদ মর্মন্তুদ জিজ্ঞাসায় বিনীত হন : গ্যাং রেপে হারিয়ে যাওয়ার আগে তুমি কি আমার সঙ্গে থাকবে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কবি অধিকাংশ কবিতায় কোনো যতিচিহ্নই ব্যবহার করেননি এবং ছন্দের প্রথাও অস্বীকার করেন প্রায় সর্বাংশেই। বলে রাখা যায়, যুদ্ধমঙ্গলকাব্যের সফল গদ্যকবিতাগুলো ছাড়া গ্রন্থভুক্ত অন্তত বাকি কিছু কবিতায় ছন্দের গণিত মানা হলে সেগুলো ক্লাসিক পর্যায়ে উন্নীত হতে পারতো।

আড়িপাতা কবিতায় মেলে প্রেমের দারুণ মজা : প্রভু তোমার ফেরেশতাদের কিছুদিন ছুটি দাও/মাহফুজার সাথে এবার আমি ঘুরতে যাব... ওরা কি বুঝবে এইসব রসিকতার মানে/সরকারের এজেন্ট ওরা- আড়িপাতা স্বভাব।

মার্ক্সীয় বীক্ষা অনুযায়ী স্বর্গের সাথে বিশ্বাসীর দূরত্ব যে আসলে রাষ্ট্র আর জনগণেরই ব্যবধান এই কবিতাটি তা চমৎকারভাবে মনে করিয়ে দেয়। তাছাড়া উপর্যুক্ত ২-সংখ্যক কবিতাংশে একই বিশ্ববীক্ষণ মুদ্রিত করেন আমাদের কবি। মাহফুজা আবার মনসা, শীতলা কিংবা অন্নদার সমান্তরালে, কিন্তু ঢের দূরে, জনবিচ্ছিন্ন রাষ্ট্রেরও রূপক হয়ে ওঠে : মাহফুজা আমি ভয় পাই প্রধানমন্ত্রীর না পাঠানো/পহেলা বৈশাখ-ঈদগ্রিটিংস (ভয়; ঐ)
ধর্ম, রাষ্ট্র আর জনগণের পারস্পরিক সম্পর্কগত চক্রও মজিদের নজর এড়ায় না :
তুমি নাচো কিংবা কুচকাওয়াজ করো... কোনোভাবেই হবে না আমাদের সম্পর্ক ছেদ (সম্পর্ক; ঐ)

মজিদ মাহমুদে কাব্যিক মজার আরো দৃষ্টান্ত মেলে :
তুমি সত্যিই আছ কিনা তা জানার জন্য সরকার গঠন করেছে এক তদন্ত কমিশন... কিন্তু কীভাবে জানাবো বলো তোমার প্রমাণ/আমি বড় জোর রাস্তার পাশের মসজিদে গিয়ে দিতে পারি আজান...(মন্দির; ঐ)
সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মীয় সংস্কৃতির আশ্রয়ে বিষম সমাজে ধর্ম ও রাষ্ট্রের প্রায় অভিন্ন ভূমিকা এবং অমোঘ সক্রিয়তা অসামান্যরূপে চিত্রিত করেন কবি এই কবিতায়।
তবে আলোচ্যমান গ্রন্থের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ, আমি বলবো, যুদ্ধমঙ্গলকাব্য।

মঙ্গলকাব্যের প্রাচীন দেবীদের স্থলে মাহফুজা এতে ঔপনিবেশিক শক্তির রূপক-প্রতীকেও পরিণত হয়। বইয়ের এই অংশটি পুরো কাব্যকে দান করে মহাকাব্যিক ব্যঞ্জনা। আরো আনন্দের বিষয় এই যে, সিকি শতাব্দী আগে রচিত এই বই এখনো প্রাসঙ্গিক এবং এর আবেদন ফুরোবার নয়। এই পর্যায়ে প্রথমে, ব্যাখ্যা উপস্থাপনের প্রথাবদ্ধ চেষ্টা বাদ রেখেই, কিছু অসামান্য কবিতাংশ পরপর উদ্ধৃত করতেই হয় : যুদ্ধ থেকে আমরা যারা পালিয়ে এসেছিলাম, বল, আমরা কি যুদ্ধ করিনি? (যুদ্ধ ১; ঐ)
মাহফুজা, কথা হলো, কে আমাকে যুদ্ধে নামিয়েছে? (যুদ্ধ ২; ঐ)

সাতচল্লিশের প্রতিশ্রুতি এখনো ভুলি নাই মাহফুজা। মানুষকে করেছিল ভাগ- হিন্দু ও মুসলিম; সেসব বিভক্তকারী মানুষ কী করে হতে পারে নেতা। ...তুমি তো এখনো কালো রমণী, শাদার ভান করে আমাকে রাখছ দূরে। ...আমি তো বৈদ্যনাথ তলায় তখনো দিচ্ছিলাম লাঙল; এখনো তার ফলায় লেগে আছে মাটি। বল, তাহলে আমি কীভাবে স্বাধীনতা হারালাম? (যুদ্ধ ৩; ঐ)

এভাবে ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি প্রাক্তন দুই উপনিবেশ, অতীত ও বর্তমান সাম্প্রদায়িকতা এবং পূর্বাপর রাষ্ট্র ও শ্রেণিবৈষম্যকে, আমাদের কবিতায় অশ্রুতপূর্ব অত্যন্ত ওজস্বী, গুরুত্ববহ আর মারাত্মক সব প্রশ্নে, এই দফায় বিদ্ধ করেন কবি। লক্ষণীয়, সংখ্যাগরিষ্ঠের সাংস্কৃতিক নানা অনুষঙ্গকে অঙ্গীকৃত করেও মজিদ মাহমুদ সংখ্যালঘিষ্ঠের ধর্মীয় ঐতিহ্যের ধারায় সক্রিয় থাকেন মূলত। ব্রহ্ম, বিষ্ণু আর শিব তিন ঈশ্বরই পুরুষ হলেও মাতৃরূপী দেবীগণই পূজিত হন হিন্দু ধর্মে। কিন্তু মজিদ আমাদের জনজীবনে সৃজিত মুসলিম আবহ কাব্যে এনেও তাঁর আরাধ্যকে শারীরিকভাবে পৌরুষদৃপ্ত রাখেননি কেবল নয়, বাংলার লোকধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী পুরুষের ভেতরকার নারীকেও জাগিয়ে তুলতে সক্ষম শক্তিরূপে শনাক্ত করেন মাহফুজাকে। আরবি শব্দ মাহফুজা, যার অর্থ সংরক্ষিতা কিংবা নিরাপত্তা, নিছক বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় মজিদের এই কাব্যে। বরং নামবাচক এই শব্দটি এই বইয়ে হয়ে ওঠে দ্ব্যর্থবোধক, কেননা বঞ্চিত-দলিতের প্রতিনিধি কবি মজিদ মাহমুদ মাহফুজার কাছে নিরাপত্তাই চান নানা ঐতিহাসিক পথ পরিক্রমায়। কিন্তু তা মেলে কি? মিললে কবিকে বলতে হতো না :

একমাত্র গ্রেনেড বিধ্বংসী প্রাণ ছাড়া কার্যত আমাদের হাতে আর কোনো অস্ত্র নেই। (যুদ্ধ ৫; ঐ)
যুদ্ধ মানুষকে কাছে ধরে রাখে... তাই বিচ্ছিন্ন ছিটকে পড়া মানুষ/পরস্পর কাছে আসতে আরেকটি যুদ্ধের/প্রতীক্ষায় থাকে (যুদ্ধ কাছে ধরে রাখে; ঐ)
আমাদের পরস্পরকে ধরাশায়ী করা ছাড়া আর কোনো যুদ্ধ থাকবে না পৃথিবীতে। তুমি তো আমাদের দেশে চিরকাল অচেনা মাহফুজা। ...তুমি শাদা চামড়ার চতুর ব্রিটিশ! তুমি ভয়াল পাঞ্জাবি! তোমাকে পরাস্ত করা ছাড়া আমার রক্তের উদ্দামতা থামে না। (গেরিলা যুদ্ধ; ঐ)

লেখক : আশির দশকের অন্যতম কবি


পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test