E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৫তম জন্মবার্ষিকী

২০১৬ মে ০৮ ১০:৩৯:৪৪
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৫তম জন্মবার্ষিকী

স্টাফ রিপোর্টার :আজ ২৫শে বৈশাখ ।মহাকালের বিস্তীর্ণ পটভূমিতে এক ব্যতিক্রমী রবির কিরণে উজ্জ্বল পঁচিশে বৈশাখ। ১৮৬১ সালের এদিনে কলকাতার জোড়াসাঁকোয় মহর্ষী দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঘর আলো করে জন্ম নিয়েছিলেন বাঙালির কবি - বাংলার কবি, বিশ্বকবি, কবিগুরু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৫তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দের বাংলা ২২ শ্রাবণ মৃত্যুবরণ করলেও বাংলা ভাষার প্রধানতম কবি হয়ে বাঙালির হূদয়ে চির আসন করে নিয়েছেন।

রবীন্দ্রনাথের ধর্মীয় ও দার্শনিক চেতনা ছিল- শুধু নিজের শান্তি বা নিজের আত্মার মুক্তির জন্য ধর্ম নয়। মানুষের কল্যাণের জন্য যে সাধনা তাই ছিল তার ধর্ম। তার দর্শন ছিল মানুষের মুক্তির দর্শন। মানবতাবাদী এই কবি বিশ্বাস করতেন বিশ্বমানবতায়। জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তার কবিতায়, গানে, গল্পে, বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সেই দর্শনের অন্তেষণ করেছেন তিনি। তার কবিতা, গান, সাহিত্যের অন্যান্য শাখার লেখনী মানুষকে আজো সেই অন্তেষণের পথে, তার অন্বিষ্ট উপলব্ধির পথে আকর্ষণ করে। রবীন্দ্রনাথ বাঙালির মন-মানসিকতা গঠনের, চেতনার উন্মেষের অন্যতম প্রধান অবলম্বন। বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যলালিত দর্শন ও সাহিত্য, তার রচনার মধ্য দিয়ে বিশ্বসাহিত্যসভায় পরিচিতি পায়। ১৯১৩ সালে প্রথম বাঙালি এবং এশীয় হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিশ্বজনীন হয়ে উঠেছে রবীন্দ্রনাথের মাধ্যমে। বাংলা সাহিত্যকে তিনি বিশ্বের দরবারে সম্মানের আসনে পৌঁছে দিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বহুমুখী সৃজনশীলতা বাংলা সাহিত্য ও শিল্পের প্রায় সবক’টি শাখাকে স্পর্শ করেছে, সমৃদ্ধ করেছে। কবিতা দিয়ে তার সাহিত্য চর্চা শুরু। তার হাতেই বাংলা ভাষায় প্রথম সার্থক ছোটগল্পের সৃষ্টি হয়েছে। বাংলা উপন্যাসকে তিনি আধুনিক ও সার্থক উপন্যাসে তুলে এনেছেন। শুধু সৃজনশীল সাহিত্য রচনায় নয়, অর্থনীতি, সমাজ, রাষ্ট্র নিয়ে তার ভাবনাও তাকে অত্যন্ত উঁচু স্থানে নিয়ে গিয়েছে। তাঁর লেখা গান বাঙালির হূদয়ে প্রতিধ্বনিত হয় আজো। বাংলাদেশের মানুষের কাছে রবীন্দ্রনাথ প্রেরণাদায়ী পুরুষ। যে কোন রাজনৈতিক অস্থিরতায়, আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথের কবিতা, গান আন্দোলনরত মানুষদের দেখায় পথের দিশা।

রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বাণী দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেন, রবীন্দ্রনাথের বিশালতা এবং তাঁর সৃষ্টির অপূর্ব মাধুর্যকে অন্তরাত্মা দিয়ে উপলব্ধি করতে হলে রবীন্দ্রচর্চার বিকল্প নেই। আমি আশা করব জগত্-সংসারকে গভীরভাবে জানতে তরুণ প্রজন্ম রবীন্দ্র সাহিত্যে অবগাহন করবে, রবীন্দ্রচর্চায় থাকবে ব্যাপৃত।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বব্যাপী দ্বন্দ্ব, সংঘাত ও বৈষম্যের বিলোপ সাধন এবং ধর্ম-বর্ণ-ভাষার বৈচিত্র্য সমুন্নত রাখতে রবীন্দ্রনাথের জীবন ও দর্শন এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের মননে বিশ্বকবির ব্যঞ্জনাময় উপস্থিতি শোষণ, বঞ্চনা, সাম্প্রদায়িকতা, সহিংসতা ও অমানবিকতা প্রতিরোধে বাঙালির অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখবে।

জাতীয় পর্যায়ে উদযাপন করা হবে

জাতীয় পর্যায়ে কবিগুরুর জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার। এ বছর জন্মবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠান হবে ঢাকায়। বিকাল ৩টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। স্বাগত বক্তৃতা প্রদান করবেন সংস্কৃতি সচিব আক্তারী মমতাজ। এবার বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৫তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘একুশ শতকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রাসঙ্গিকতা’। এ বিষয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তব্য দেবেন বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক অধ্যাপক সনত্কুমার সাহা। আলোচনার পর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ৩০ মিনিটের সাংস্কৃতিক পর্ব থাকবে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় এ পর্বে রবীন্দ্রনাথের বাউল ধারার গান পরিবেশন করবেন শিল্পীরা। এছাড়া মূল অনুষ্ঠানস্থলের পাশে রবীন্দ্রনাথের আঁকা চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হবে। ঢাকাসহ কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, নওগাঁর পতিসর এবং খুলনার দক্ষিণডিহি ও পিঠাভোগে স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় কবির ১৫৫তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন করা হবে। এ উপলক্ষে রবীন্দ্রমেলা, রবীন্দ্রবিষয়ক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে স্থানীয় প্রশাসন। এছাড়া সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও বাংলা একাডেমি কবিগুরুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণিকা ও পোস্টার মুদ্রণ করবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যথাযোগ্য মর্যাদায় কবির জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন করবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহ এ উপলক্ষে কর্মসূচি গ্রহণ করছে। যে সকল জেলায় জাতীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন করা হবে না, সে সকল জেলার জেলা প্রশাসকগণ স্থানীয় সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি ও সুধীজনের সহযোগিতায় যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদ্যাপন করবে। জাতীয় পর্যায়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও অন্যান্য অনুষ্ঠানমালা বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি চ্যানেলসমূহ সম্প্রচার করবে। বিকালে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে রবীন্দ্রমেলা। ছায়ানটে সন্ধ্যায় রবীন্দ্র উত্সবে থাকছে কথা, গান, পাঠ, আবৃত্তি ও নৃত্য।

শাহজাদপুর সংবাদদাতা জানান, সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসন কবির স্মৃতিবিজড়িত শাহজাদপুর কাছারিবাড়িতে জাতীয় পর্যায়ে তিনদিনব্যাপী রবীন্দ্র মেলাসহ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন। অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মোঃ বিল্লাল হোসেনের সভাপতিত্বে সম্মানিত অতিথি সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না, সংসদ সদস্য গাজী ম ম আমজাদ হোসেন মিলন, সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম, সংসদ সদস্য আব্দুল মজিদ মন্ডল, সংসদ সদস্য হাসিবুর রহমান স্বপন ও সংসদ সদস্য সেলিনা বেগম স্বপ্না।

প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম দ্বিতীয় দিন এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তৃতীয় দিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন।

আত্রাই সংবাদদাতা জানান, আত্রাই উপজেলার নাগর নদের তীরে পতিসরে জন্মজয়ন্তী সরকারিভাবে পালিত হচ্ছে। আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছে। উদ্বোধন করবেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মুহাঃ ইমাজউদ্দিন প্রামাণিক। প্রধান অতিথি বেসরকারি বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। বিশেষ অতিথি জাতীয় সংসদের হুইপ মোঃ শহীদুজ্জামান সরকার, ইসরাফিল আলম এমপি, আব্দুল মালেক এমপি, সাধনচন্দ্র মজুমদার এমপি, সলিমউদ্দিন তরফদার এমপি, বাসস-এর চেয়ারম্যান কথাশিল্পী রাহাত খান ও নওগাঁ পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক। সভাপতিত্ব করবেন নওগাঁ জেলা প্রশাসক ড. মোঃ আমিনুর রহমান। আলোচক হিসাবে থাকবেন কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক, অধ্যাপক স্বরোচিষ সরকার, অধ্যাপক ড. মুহম্মদ আশরাফুল ইসলাম। শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। উল্লেখ্য, পতিসরে ছিল রবীন্দ্রনাথের নিজস্ব জমিদারি। পতিসরে রবীন্দ্রনাথ প্রথম আসেন ১৮৯১ সালে এবং শেষবারের জন্য আসেন ১৯৩৭ সালে।




(ওএস/এস/মে০৮,২০১৬)
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test