E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আমিনুল ইসলামের এক গুচ্ছ  কবিতা

২০১৬ জুন ১৫ ১৩:১১:৫২
আমিনুল ইসলামের এক গুচ্ছ  কবিতা






 

নিষেধের সিলেবাস অথবা অবাধ্যতার পাঠ

বুলেটের নিষেধে লেজ ঝুঁকিয়ে ফিলিস্তিনের গান গায়-
যে অ্যারাবিয়ান হুইটীয়ার, সে আমার হাউস টিউটর
তার কাছে প্রাইভেট পড়ে বেহুলার কথা বলি তোমাকে;
কুয়াশার মোহনায় ঝুঁকিছোঁয়া স্বপ্নের শামিয়ানা রচে যে নদী,
ঢেউয়ের বেঞ্চে বসে তার কাছে কোচিং করে
তোমার পরিধি ছুঁয়ে স্বপ্ন রচি আমি;
আমার আরেক শিক্ষক হাওয়া,---যে স্রোতের বিরোধিতা
পায়ে দলে ঢেউয়ের মালা রচে উতলা স্রোতের বুকে।
বুকভরা লাল ত্বরণের চাপ, অথচ সবুজ অভিকর্ষে আকৃষ্ট হবো না,
সে কী করে হয়! সেটা কি অনুমোদন করবে মহাকর্ষ?
ভালোবাসার ভেতরে ধাক্কা, বাইরে টান;
সেই ধাক্কায়--সেই টানে--স্বর্গের মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রপ্রাবল্য ভেঙে
লাফ দেয় সে আসমানের ছাদ থেকে নিচে
বুকে নিয়ে ইস্কেপ ভেলোসিটি অব লাভ;
সে দৃশ্য দেখেছিল সাপ, শয়তান ও বিধাতা;
সেকথা জেনে গেছে যমুনার ঢেউও।
আর তুমি নিষেধাজ্ঞার সিলেবাস ধরিয়ে দিয়ে হাতে, ভাবছো--
তোমাকে আর শুনতে হবে না--মিলনের রিং টোন,
খুলতে হবে না দ্বার, কিংবা
থামাতে হবে না গাড়ি নতুন কোনো গন্দম বাগানের মোড়ে!
কিন্তু নিষেধের ছাদ না ভেঙে--কে হতে পারে আরশছাড়ানো
উন্নতশির কবি--নিউক্লিয়াসবুকে নিয়ে যুদ্ধ ও প্রেমের শিবনৃত্য!
নিষেধের সিন্ধু না পেরিয়ে কে হয়েছে কবে ভালোবাসার সুপারস্টার?
চোখ মেলে দ্যাখো--ঊটের দেশে, রানীর রাজত্বে--
নদীশাসিত নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলে--সর্বত্রই ছড়িয়ে আছে দৃষ্টান্ত--
জ্ঞানী ব্যক্তিদেন জন্য!

তারপরও কি তুমি গোঁয়ারদের মতো অন্ধ রয়ে যাবে--
যাদের হাতে সৃষ্টি হয়েছিল অপ্রেম
আর ধ্বংস হয়েছিল ভালোবাসার শহর--
যেসবের প্রতœ্-খন্ড সংরক্ষিত আজও নক্ষত্রের যাদুঘরে,--মহাকালের মহাফেজখানায়!

কার্ডস ফেভার দি ফুলস


ইয়েস, আই ডু বিলীভ--কার্ডস ফেভার দি ফুলস!
দ্যাখো--পৃথিবীর ছবি আঁকতে গিয়ে আমি একটি
শ্যামল মুখেরই ছবি এঁকেছি; সেটা এই পৃথিবীর
নয়; অথচ সে-ই হয়ে উঠেছে আমার অন্তরঙ্গ
পৃথিবী। মহাবিশ্ব নিয়ে কবিতা লিখতে গিয়ে আমি
শেষ পর্যন্ত একজন মানুষকেই তুলে ধরেছি আমি--
ঢেউয়ের সৌন্দর্য, নাক্ষত্রিক ইমেজ ও মহাশূন্যের
ব্যঞ্জনায়! আহা মানুষ! এখন ভাবছি আর হাসছি--
যার চোখের ক্যামেরায় এত এত পাহাড়- পর্বত-
সমুদ্র-শহরের চাররঙা ছবি আর মেশিন রিডেবল
পাসপোর্টে এত এত ইমিগ্রেশন বিভাগের সীলছাপ,
সে-মানুষ কী করে এঁকে নিতে পারে তার বিশ্ব এতটা
এভাবে এবং কোন হিসাবেইবা তাতেই তার সুখ হয়!

হায় সংজ্ঞা, তুমি চিরদিনই বাড়িয়ে এসেছো বিভ্রান্তি,
তবু আরেকবার তোমাকেই শুধাই--
সখি, ভালোবাসা কারে কয়? কারে বলে সুখ?

পর্বতবিরোধী গান

রোদে ও জোছনায়, আলো ও আঁধারিতে ভাঁজে ভাঁজে খাঁজে খাঁজে
সৌন্দর্যের রহস্যপুরী নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে যে পর্বত তার হৃদয়ের
ঝর্ণাধারায়---শ্রমে ও সাফল্যে ধানে ও কাউনে সবুজের বর্ণমালা
চারপাশের সমতল মাঠ--যেখানে কাকলি ও কলতান, মর্মর ও গুঞ্জনÑ
নিবিড় সুরে ও ছন্দে রচে রেখেছে অর্ধ-অস্বর্গীয় প্রাণের কোরাস।

পর্বতবিষয়ক আমাদের ভাবনার অনুকূলে হোক না হোক
এটাই সত্য যে এবং এটা নিয়ে জটলাও কম নয় যে-
পর্বতটি দু’হাত বাড়িয়ে ছুঁতে যায় সুদূরের সুনীল আকাশ
আরও দূরে--আকাশ ছাড়িয়ে উড়ে যায় তার মাটিগন্ধী মন!

অতএব সিদ্ধান্ত এই যে--ঐ পর্বতটিকে ধ্বংস করা দরকার
কেন ধ্বংস করবে হে ভাই! কেন রে বোন!
সে প্রশ্নের উত্তর সময় ও সভ্যতার এক শ্রেষ্ঠ পরাবাস্তবতা।
ঠিক আছে রাজি, এসো তবে ভাঙি--সবে মিলে!
কিন্তু ভাঙি কি করে? এতো বাবরি মসজিদ নয়!
রে ভাই কামার, ও রে ভাই নাপিত, এ যে--
আর এক হিমালয়!Ñব্যথা লাগে ঘাড়ে! ফিরে আসে চোখ!

অতএব
হে পাখি, হে ঝর্ণা, হে হাওয়া, পর্বতের কোল ছেড়ে চলে এসো!
হে রাখাল, হে প্রেমিক, হে বাউল, না মাড়াইও ঐ পর্বতের ছায়া!
হে আরোহী, হে পর্যটক, হে পাইলট,
দোহাই সূর্যেও,--মাপতে যেও না তার মাথাখারাপ মাথার উচ্চতা!

আর, পুরস্কৃত ঢিবিগুলো উল্লসিত:
আমরাই হিমালয়--, কণ্ঠভোটে প্রমাণিত!

ভালোবাসা ঘুমায়েছে জেগে আছি আমি

ভালোবাসা ঘুমায়েছে--জেগে আছি আমি
আমি কি জাগাবো তাকে
চুমু দিয়ে ঘুমন্ত অধরে?
যদি জেগে যায়--দেখতে পাবো না তার
হাঁটুর ওপরে থাকা নৃত্যগর্ভ তিল
কে বলে সুন্দর শুধু গৌরবর্ণ গাল আর
সোনারঙ ঊরু?
আহা তিল---সোনালি আকাশে
একখানা কালোবর্ণ চাঁদ!
চাঁদমুখে চুমু দিয়ে প্রবেশিতে পারি--
ভালোবাসার সপ্তম জান্নাতে--
যেখানে উধাও হয়
জগতের যাবতীয় বিষয়ীচেতনা
আর শিরায় শিরায় শুধু ছলকে ওঠে
সুনেশায় শিহরণে নিবিড় পুলক!

কিন্তু চুমু দিলে চাঁদে যদি জেগে ওঠে
সমস্ত আকাশ
যদি অপ্রসন্ন হয়,
আমার হবে না যাওয়া স্বর্গের বাড়ি
আমার হবে না দেখা চাঁদ চেয়ে চেয়ে
অতএব সে ঘুমাক্---তাকে জাগাবো না

ভালোবাসা ঘুমায়েছে,---জেগে আছি আমি।

দুঃসময়ের ইনিংস

এবং সেই সুযোগে একটা ডানাভাঙা হাফ সেঞ্চুরী
অতঃপর বোল্ড, ক্লিন বোল্ড!
তারপর--শূন্য রানে--একরানে--দশরানে..
বুঝতেই পারছেন--খেলা থেমে নেই
পক্ষ আছে--প্রতিপক্ষও আছে
দর্শকের কথা বল্ছেন? দেখুন--
গ্যালারিতে ঝড়ের ঢেউয়ের মতন উপচে উঠছে মাথা!

মাল্টি মিডিয়ার সাফল্যে বদলে যায়--
ঘর-ছুঁয়ে-থাকা অশোকপাতার রঙ
রঙহীন জল পায় রঙ ধারণের ক্ষমতা
তো কি করবে থার্ড আম্পায়ারের অনুগত চোখ!

হারতে হারতে হারতে--সময় হয়ে পড়েছে আন্ডারডগ
পরাজয়ে দেখে দেখে বেদনাবিধুর-
দিগন্তের দেয়ালে পিঠ ঠেকা দর্শকসারি
আবার গেঁয়ো গোঁয়ারের মতো কিছুটা নাছোড়বান্দাও
সে ক্কচিৎ হাফ সেঞ্চুরি করলেই দর্শক ভাবে-
এই বুঝি ফিরে এসেছে---ক্লাইভ লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজ!

অভদ্র ভালোবাসা

কিন্তু কাছে যেতেই ইচ্ছেরা ঝড় হয়ে ওঠে!
আমি সেই প্রেমিক--যার পিপাসার টেবিলে
বারবার উল্টে দেয়া হয়েছে
গরম চা এর কাপ: নাও খাও!
জিহ্বা পুড়েছে, পিপাসা মেটেনি।
অথচ কেন যে ভুলে যাও-
পিপাসারও সিলেবাস আছে!

এখন আমার হাঙরেরা ঘুরপাক খাচ্ছে
তোমার জলপ্রাসাদের চারপাশে;
তুমি তাদের হা-এর ক্ষেত্রফল দেখো
আর শোনো উদগ্র ভোস্ভোসানী;
অদেখা আড়ালে রয়ে যায়
মহাশিল্পীর হাতে রচিত নান্দনিক পিপাসার জলছবি।

----------------০০----------------



(এআই/এস/জুন ১৫,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test