E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কবি সুফিয়া কামালের আজ ১০৬তম জন্মদিন

২০১৬ জুন ২০ ১২:২০:৩৮
কবি সুফিয়া কামালের আজ ১০৬তম জন্মদিন

স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশের নারী জাগরণের পুরোধা ব্যক্তিত্ব কবি সুফিয়া কামালের ১০৬তম জন্মদিন আজ । ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালের শায়েস্তাবাদে একটি অভিজাত পরিবারে তার জন্ম। সুফিয়া কামাল ছিলেন মানবতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পক্ষে এবং যাবতীয় অন্যায়, দুর্নীতি ও অমানবিকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার একজন সমাজসেবী ও নারীনেত্রী। তিনি ছিলেন বাংলা ভাষার বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিকর্মীদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। বাংলার মানুষ তাকে ‘জননী সাহসিকা’ উপাধিতে ভূষিত করে

তার জন্মদিন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, কবি সুফিয়া কামাল নারী সমাজকে কুসংস্কার আর অবরোধের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করতে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের নারী সমাজের এক উজ্জ্বল ও অনুকরণীয় আদর্শ। দেশের সকল প্রগতিশীল আন্দোলন সংগ্রামে তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, সুফিয়া কামাল ছিলেন একদিকে আবহমান বাঙালি নারীর প্রতিকৃতি, মমতাময়ী মা; অন্য দিকে বাংলার প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে ছিল তার দৃপ্ত পদচারণা।

সুফিয়া কামাল যে পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সেখানে নারী শিক্ষাকে প্রয়োজনীয় মনে করা হতো না। তার বাবা সৈয়দ আবদুল বারী ছিলেন একজন আইনবিদ। মা সাবেরা বেগমের কাছে পড়তে শেখেন তিনি। মাত্র বারো বছর বয়সে সৈয়দ নেহাল হোসেনের সাথে তার বিয়ে হয়। তার স্বামী সাহিত্য পাঠে তাকে আগ্রহী করে তোলেন। যা তাকে পরবর্তীকালে সাহিত্য রচনায় উদ্বুদ্ধ করে তোলে। ১৯২৩ সালে তিনি রচনা করেন প্রথম গল্প ‘সৈনিক বধূ’ যা বরিশালের তরুণ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৯২৬ সালে সওগাত পত্রিকায় তার প্রথম কবিতা বাসন্তী প্রকাশিত হয়। মহাত্মা গান্ধীর সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি কিছুদিন চরকায় সুতা কাটেন। এ সময়ে যোগ দেন নারী কল্যাণমূলক সংগঠন ‘মাতৃমঙ্গল’ এ। ১৯২৯ সালে তিনি বেগম রোকেয়ার ‘আঞ্জুমান-ই-খাওয়াতিন-ই-ইসলামে যোগ দেন। এ সময় বেগম রোকেয়ার আদর্শ তাকে প্রভাবিত করে। ১৯৩১ সালে তিনি মুসলিম মহিলাদের মধ্যে প্রথম ইন্ডিয়ান মহিলা ফেডারেশনের সদস্য নির্বাচিত হন।

তার স্বামীর আকস্মিক মৃত্যুতে ১৯৩২ থেকে ৪১ সাল পর্যন্ত তিনি কলকাতা কর্পোরেশন প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষকতা করেন। এর মাঝে ১৯৩৮ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘সাঁঝের মায়া’ প্রকাশিত হয়। যার ভূমিকা লিখেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর প্রশংসা করেছিলেন। ১৯৩৯ সালে কামালউদ্দীন আহমেদের সাথে তার বিয়ে হয়।

তিনি ছিলেন বেগম পত্রিকার প্রথম সম্পাদক। ১৯৪৭ সালে তিনি সপরিবারে ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তিনি সরাসরি যোগ দেন। ১৯৬৯ সালে মহিলা সংগ্রাম পরিষদ (বর্তমানে মহিলা পরিষদ) গঠিত হলে প্রতিষ্ঠাতা প্রধান নির্বাচিত হন। এছাড়া তিনি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ছায়ানটের সভাপতি ছিলেন।

তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলো হচ্ছে সাঁঝের মায়া, মায়া কাজল, মন ও জীবন, শান্তি ও প্রার্থনা, উদাত্ত পৃথিবী, দিওয়ান, মোর জাদুদের সমাধি পরে প্রভৃতি। গল্পগ্রন্থ ‘কেয়ার কাঁটা’। স্মৃতিকথা ‘একাত্তুরের ডায়েরি’।

সুফিয়া কামাল ৫০টিরও অধিক পুরস্কার লাভ করেছেন। এর মধ্যে বাংলা একাডেমি, সোভিয়েত লেনিন, একুশে পদক, বেগম রোকেয়া পদক, জাতীয় কবিতা পুরস্কার, স্বাধীনতা দিবস পদক উল্লেখযোগ্য। ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে দাফন করা হয়। বাংলাদেশি নারীদের মধ্যে তিনিই প্রথম এ সম্মান লাভ করেন।


দিনের কর্মসূচ:দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বাংলা একাডেমিতে স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করেছে। ছায়ানটে আয়োজন করা হয়েছে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
.
(এসআর/বিএইচ২০জুন২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test