E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

 শাফিকুর রাহী”র চারটি কিশোর কবিতা

২০১৬ জুলাই ০২ ১৪:৫৫:৫৯
 শাফিকুর রাহী”র চারটি কিশোর কবিতা








 


ফুলফসলের ঘ্রাণে

অজ-পল্লী গাঁয়ের কোলে আম-কাঁঠালের ছায়ায় ঘেরা,
টুনটুনি আর বুলবুলিদের মেঠোপথে ঘরে ফেরা।
ফুলফসলের ঘ্রাণে নাচে দোয়েল ফিঙে প্রজাপতি,
সেই দেশ আমার অহঙ্কারী গর্বিনি মা রূপবতি।
তার মমতা পরম পরশ রূপ-লাবণ্যে ঘেরা বঙ্গে
পারুল-পায়রা-পদ্মদীঘি কী অপরূপ সাজলো রঙে
ধানকাউনের মাঠে মাঠে রাইসরিষা তিলের হাঁটে
কৃষক ভাইয়ের স্বপ্নহাসে ধলেশ্বরী-কুমার ঘাটে
শালপিয়ালের নিঝুম নিবিড় বনের ভেতর মাণিক জ্বলে
যে মাটিতে গুপ্তধনের-হীরকখনি সোনা ফলে।

কোন দেশেতে আছে মাগো অমন রূপের স্বর্গশোভায়;
যে দেশেতে শোল-মাগুরে নৃত্য করে প্রবাল ডোবায়।
সাত আকাশের তারায় তারায় পূর্ণিমা রাত চন্দ্রকলায়
খর-স্রোতা ওই সন্ধ্যা-ঘাটে রূপালী মাছ রুই ও কাতলায়
এই অপরূপ রূপের মোহে প্রাণহারালো কোন উদাসী
বসন্তেরই শীতল হাওয়ায় মনের বীণায় বাজলো বাঁশি।
চাঁদনি পসর রাতের জোনাক নীল যমুনার ঢেউয়ের তালে
মিষ্টিমধুর ছড়িয়ে আলো লাগলো দোলা নায়ের পারে।

ফাগুনের আগুন রোদে

কৃষ্ণচূড়ার রঙিন শাখায় পলাশবনের লতায়পাতায়
বসন্ত বাতাসে নাচে পিকপাপিয়া দোয়েল শ্যামায়।
এই ফাগুনের আগুন রোদে শালপিয়ালের গহন বনে
বনহরিয়াল-ঘুঘুর মাতম বাজতে থাকে ক্ষণে ক্ষণে।

পদ্মা-মেঘনা শীতলক্ষ্যায় কী যে দারুণ বাতাস বহে,
কোন সে কবি আকাশ পানে অবাক চোখে তাকিয়ে রহে?
ঋতুরাজ এ বসন্তেগো কী ফুল ফোটে; নাম কী তাহার;
চম্পা-বেলী; কনকচাঁপা; স্বার্ণচাঁপার রূপের বাহার!

আমের বোলে মিষ্টি হাওয়ায় দোয়েল কোয়েল কী গান শোনায়;
টুনটুনি আর বুলবুলিও বসন্ত বৌরিও গায়
কুহুকুহু গানের তানে সুখ-বসন্তে পলাশ ফোটে,
কতো মধুর গানের সুরে আনন্দে মন নেচে ওঠে।

বটবিরিক্ষির শীতল ছায়ায় আমের ডালে বোলের ঘ্রাণে,
আনন্দে মন আত্মহারা লাগলো দোলা সবার প্রাণে।
অমন মধুর রাঙা ফাগুন কমলা রঙের সকাল ফোটে
জাম-জারুলের গভীর বনে দলবেঁধে মৌমাছি ছোটে।

রৌদ্র মেঘের লুকোচুরি

আকাশ মেঘের লুকোচুরি মজার খেলা;
বৃষ্টি নামে সকাল দুপুর সন্ধ্যাবেলা।
বনবনানীর শ্যামল ছায়ায় মধুর সুরে,
বাবুই দোয়েল গান গেয়ে যায় উড়ে ঘুরে।
কাশফুলেরই ঢেউ খেলানো ভাদ্র মাসে,
হাওর বাওর ঝিলেবিলে পদ্ম-হাসে।

কী অপরূপ মধ্যদুপুর গাঁয়ের কোলে,
দলবেঁধে সব দুষ্টু কিশোর শাপলা তোলে।
পলাশবনে প্রজাপতি ফিঙে নাচে;
কুটুমপাখি ডাকছে কোথায় গাবের গাছে!
মেঘবলাকার ডানায় কাঁপন নীল আকাশে,
পায়রা-পারুল জলপ্রপাতে চন্দ্র-হাসে।

শরৎ শেষে হেমন্তেতে আবেগ জাগে,
শিল্পী কবির হৃদয় দোলে পুষ্পরাগে।
মাল্লামাঝি কী গান শোনায় ঢেউয়ের তালে;
জলপায়রা নৃত্য করে নায়ের পালে।
স্বর্ণভূমির কলমি ডগায় স্বপ্ন হাসে,
পিয়াল পারুল চালতাফুলে শিশির ভাসে।

রৌদ্র মেঘের লুকোচুরি সারাবেলা
সূর্য রাঙায় ধানশালিকের শেষের মেলা-
অমন মধুর দেশ কি কোথায় আছে বলো;
ইট-পাথরের জীবন ছেড়ে গাঁয়ে চলো।
দেখবে সেথায় পানকৌড়ি খেলছে জলে,
জোনাক-ঝিঁঝির আসর বসে সন্ধ্যা হলে।

মিষ্টি রোদের শরৎ সকাল

শরৎ সকাল শিউলিতলায় প্রজাপতির মেলায়,
টুনটুনি আর বুলবুলিদের লুকোচুরি খেলায়।
শিল্পী কবি ছবি আঁকেন স্বরূপের কল্পনায়,
মিষ্টি মধুর রূপের হাটে শিশিরের আল্পনায়।
মাঝেমধ্যে মেঘের দাপট মাছরাঙারা কাঁপে,
পদ্ম-ঝিলে মাছরা পালায় বিজুলি উত্তাপে।

নদীর ঢেউয়ে গাঙশালিকের কী যে দারুণ খেলায়,
শাপলা বিলে দুষ্ট কিশোর ভাসে কলার ভেলায়।
মেঠোপথে খালের পাড়ে কাশফুলেরই নৃত্যে,
মিষ্টি রোদের ঝিলিক লাগে মৌটুশির- মন চিত্তে।
রঙধনু নীল আকাশ কোলে পড়ন্ত বৈকালে,
হাওয়ার তালে স্বপ্ন ভাসে মাঝির নায়ের পালে।

আকাশ দাওয়ায় মেঘবলাকার কি অপরূপ সাঁঝে,
চন্দ্রকিরণ খেলায় মাতে সন্ধ্যা-নদীর মাঝে।
বৈঠা হাতে মগ্ন নাবিক পদ্মা নদীর কোলে,
নীল সায়রে বাংলা মায়ের হাজার স্বপ্ন দোলে।
অমন দারুণ ঋতুর বাহার পূর্ণিমা সুখ-হাসি,
বুবুর খোঁপায় শিউলি ঘ্রাণে বাতাস বাজায় বাঁশি।

মধ্যরাতে খেঁকশিয়ালের হুক্কাহুয়া- খেয়াল,
ভয়ের চোটে গোবরধনও জড়িয়ে ধরে দেয়াল।
হিজল তমাল বৃক্ষশাখে বাঁশঝাড়েরি মাথায়,
রাতের জোনাক নাচতে থাকে বট-শিমূলের পাতায়।
এই শরতের শান্ত-সবুজ মনমায়াবী ছায়ায়,
কেওড়া ফুলে শিশির দোলে কী অপরূপ মায়ায়।

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test